তাসের ঘরে তুমি আমি পর্ব ৯

তাসের ঘরে তুমি আমি পর্ব ৯
আয়াশ রহমান

বিছানায় এলোমেলো হয়ে শুয়ে রয়েছে পুতুল। জীবনের হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছে। কিছুক্ষণ আগে কি হল সেই নির্মমতার স্মৃতি মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। এসবের জন্য তো সেই দায়ী।
হঠাৎ কি মনে করে মুচকি হাসলো পুতুল।

আর কোনো ভুল করবে না সে। খুব ভেবে চিন্তে জীবনের সিদ্ধান্তগুলো নেবে। যা ভুল হবার তা তো হয়ে গেছে, সেটা তো পালটানো যাবে না। কিন্তু এই সুযোগ আর দেবে না। শানের গিফট করা শিফন শাড়ি টা নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো সে, উদ্দেশ্য শরীরে লেগে থাকা পাপের স্পর্শগুলো ধুয়ে আসা।
রাতে শো করার সময় হঠাৎ কান্নারত মেয়ের ফোন আসলো শানের কাছে।
‘হেলো, আরজে শান হেয়ার,, বলুন কি গান শুনাতে পারি আপনাকে!!’
মেয়েটির হালকা ফুফানোর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘হেলো মিস, ক্যান ইউ হেয়ার মি?’
‘হ্যা শুনছি।’
‘কিভাবে আপনার মন ভালো করতে পারি? কি গান শোনাব? বলুন।’
‘আমার কিছু প্রশ্ন আছে আপনার কাছে।’
‘আমার কাছে!!!’
‘হ্যা, শুধুই আপনি দিতে পারবেন এর উত্তর।’
শান একটু চিন্তায় পড়ে গেলো। কি বলছে মেয়েটি!! গলাটা চেনা চেনা লাগছে।
‘হ্যা হ্যালো।।’

‘বলুন মিস, আমি আপনি সহ সবাই শুনছে আপনাকে, আমরা সবাই আপনার প্রশ্নের উত্তর খুজবো।’
‘আচ্ছা কাউকে ভালোবাসা কি অপরাধ?’
‘না অবশ্যই নয়। ভালোবাসা পবিত্র ঠিক ততসময় যত সময় না আমরা সেটাকে অপবিত্র করি।’
‘তাহলে আমার ভালোবাসা মেনে নিচ্ছেন না কেনো?’
‘এক্সকিউজ মি! আমাকে বলছেন!!’
রেডিওতে সবাই শুনছে। শানের কলিগরাও কান দিয়ে শুনছে সবকিছু। সবাইতো অবাক। এভাবে লাইভে এসে প্রপোজ করছে কেউ??

‘হ্যা আজ সবার সামনে বলছি আপনাকে। জানেন প্রথমে আপনার গলার মোহে পড়েছিলাম। কিন্তু জানতাম এটা তো শুধু আবেগ। আপনি তো মানুষ অন্যরকমও হতে পারেন। তারপর একজনের সাথে আমার দেখা হতে লাগলো প্রতিনিয়ত। তার ব্যবহার, আমার প্রতি কেয়ার সবকিছুতে আমি আবিষ্ট হয়ে গেছিলাম। একটা মেয়ে ঠিক এরকম একটা কেয়ারিং লোকই চায়। কিন্তু পরে জানলাম আমার সেই দুজন পছন্দের লোক একজনই, আপনি। তারপর কিভাবে আমি আপনাকে ভুলব? বলুন!’

শান বুঝে গেছে মিথিলা ছাড়া এটা কেউ নয়। কিন্তু তার পরিচয় তো এভাবে আনা যাবেনা সামনে। তাই সে বলল,
‘যদি সত্যি কাউকে ভালোবাসেন তাহলে সে একদিন না একদিন আপনার হবেই। কিন্তু তারপরও যদি না হয় তবে বুঝবেন তার কোনো কমতি আছে। তাই বলে জীবনকে থামাবেন না। এগিয়ে যাবেন।’
‘তাহলে আজ থেকে আমি অপেক্ষায় থাকলাম সে আমার হলে আমি একদিন তাকে পাবই।’
বলেই ফোনটা কেটে গেলো সাথে সাথে।

স্টুডিওর সবাই অবাক। শোয়ের পর অনেকে প্রশ্ন করছে এই বিষয়ে। শান অতি কষ্টে সেসব সামাল দিয়েছে।
রাতে বাসায় ফিরে শান টেবিলে হরেক রকমের রান্না দেখছে। সে বাসায় ফিরলে প্রথম প্রথম তার মা জেগে থাকতো। কিন্তু শান নিষেধ করায় এখন আর কেউ থাকে না জেগে। তাহলে আজ হঠাৎ!! তার মা বাবাও তো বাসায় নেই৷
হঠাৎ রান্নাঘর থেকে পুতুল বেরিয়ে আসলো। পড়নে তার দেয়া শাড়ি। তাকে দেখেই তার কাছে আসলো।
‘আজ তোমার জন্য রান্না করেছি নিজ হাতে। চলো খাবে।’

‘হাহাহা, আজ এত ঢং কেন হঠাৎ?’
‘আজ না এতদিন ছিল ঢং, সেই ভুল গুলো শুধরে নিয়েছি।’
পুতুলের দিকে ভালো করে খেয়াল করলো শান। গলায় আচড়ের দাগ। চোখ আবার লাল হয়ে উঠলো শানের। খবর পেয়েছে একদুই দিনের জন্য সাব্বির জামিন পেয়েছে। তাহলে কি আবার এসেছিল?
‘সাব্বির এসেছিল জন্যই বোধহয় এরকম আয়োজন?’
‘তুমি কিভাবে জানলে?’

‘গলায় তার আসার ইঙ্গিত ছেড়ে গেছে যে তোমার প্রেমিক। জানবো না?’
‘আসলে আসলে,,,’
‘থাক তোমাদের প্রাইভেট ব্যাপার এসব। আমার থেকে ডিভোর্স নিয়ে তো তার সাথেই থাকবে৷ যদি সে জেল থেকে ছাড়া পায়। হাহাহাহা।’
‘দেখো আমার কথা শোনো। সাব্বির এসেছিল। আমার সাথে জোড় জবরদস্তি করার চেষ্টা করতেই তাকে একটা থাপ্পর দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছি আমি। লোক ডাকার ভয় দেখিয়ে। আমি আর ভুল করতে চাই না। বিশ্বাস করো।’
‘তোমাকে আবার বিশ্বাস? সেটাও আমি?’

‘আমাকে একটা সুযোগ দাও। আমি আর জীবনে ভুল করব না।’
‘আমিও তোমাকে সুযোগ দিয়ে জীবনে আর ভুল করতে চাই না।’
পুতুল কেদেই ফেললো। ‘আচ্ছা মাফ করবে না কি পরে দেখা যাবে। আমি তোমার জন্য এত রান্না করেছি সেই খাবারটা খাও অন্তত। খাবারের অসম্মান করলে তো আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবে।’
শান ভেবে দেখলো খাবার খেলে কি সমস্যা! তার পর তার খিদেও পেয়েছে। সময় হয়নি রাতে খাওয়ার। তার হাত মুখ ধুয়ে এসে খেয়ে নিল সে। পুতুল বেড়ে দিতে চাইলে সে নিজেই অল্প অল্প করে বেড়ে খেয়ে নিল। খাওয়ার সময় পুতুল একদৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছে।

খাওয়া শেষ হলে শান রুমে চলে গেলো। পুতুলও একটু পর রুমে আসলো। দেখে শান বেলকনিতে দাড়িয়ে। চুপি চুপি পিছনে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল পুতুল।
সেকেন্ডে ছাড়িয়ে পুতুলকে ধাক্কা দিল শান।
‘তোমার হাতের খাবার খেয়েছি বলে ভেবো না তোমাকে মেনে নিয়েছি আর না কোনোদিন নেব। এই অপবিত্র হাত দিয়ে আমাকে ছোয়ার দুঃসাহস দেখাবেনা। খবরদার।’
‘তুমি এভাবে বলতে পারলে?’
‘আমার চোখে সামনে থেকে দূর হও।’

বলে পুতুলকে রুমের ভেতরে দিয়ে বেলকনির দরজা লাগিয়ে দিল। পুতুল দরজা ধাক্কাচ্ছে কিন্তু শান খুলছে না। পুতুল দরজার অপাশ থেকে বলছে,
‘একদিন আমাকে মিস করবে তুমি, এই অপবিত্র স্পর্শ কেই মিস করবে। দেখে নিও।’
শান কোনো তোয়াক্কা করলো না ওর কথার। আজ বেলকনিতেই থাকবে সে। শরীর কেমন দুর্বল লাগছে। বেলকনিতে থাকা চেয়ারে বসতেই চোখে ঘুম আসলো শানের। চোখ যেন খুলতেই কষ্ট হচ্ছে এমন।

সকালে অনেক লোকের শোরগোলে ঘুম ভাঙলো শানের। অনেক বেলা হয়েছে ঘুম থেকে উঠতে। দুইতালায় বেলকনি তাদের। নিচে তাকিয়ে দেখে অনেকজন তার দিকে তাকিয়ে আগুন আগুন করে চিল্লাচ্ছে।
মিথিলাও তাদের মধ্যে তাকিয়ে আছে অসহায় ভয়ার্ত মুখ নিয়ে। সেও চিৎকার করছে বাইরে আসার জন্য। ‘শান শান, কি হয়েছে? আগুন লেগেছে আপনি বাইরে আসুন। তাড়াতাড়ি আসুন। দরজা ভিতর থেকে লক করা। শুনতে পাচ্ছেন? এই যে আমি নিচে। শান??’
‘আসছি আসছি।।’

চেয়ার থেকে উঠে সাথে সাথে অন্ধের অভিনয় শুরু করলো সে। নিচে চোখ না দিয়ে উপরে তাকিয়েই হাত নাড়াতে লাগলো । কিন্তু কেমন পোড়া পোড়া আগুনের বিশ্রি গন্ধ ঘর থেকে আসছে।
সেজন্যই কি এরা এরকম করছে!! শান নিজেও ভয় পেল। আগুন আসবে কিভাবে?
বেলকনির দরজা খুলে রুমে গেলো শান। কিন্তু একি? কি দেখছে শান? ফ্লোরে পড়ে থাকা একটা মানুষের টুকরো টুকরো করা দেহে আগুন জ্বলছে। টুকরোর মাঝে মাঝে একটা কাপড়ের ছোট ছোট টুকরোও আছে৷ সেই শিফনের কাপড় যা পুতুল গতকাল পড়েছিল।

শান কি দেখছে নিজেই বুঝতে পারছে না। আগুন প্রায় শেষের দিকে। অনেক আগেই আগুন লাগানো হয়েছে, তাই এখন পোড়া ধোয়াই বেশি।
একটু পাশে খেয়াল করতে দেখলো কাটা দেহের এক টুকরো একটু দূরে পড়েছে বিধায় আগুন লাগেনি।
টুকরোটা একটা মেয়ের হাতের।
শান কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। কিভাবে কি হল?

তাসের ঘরে তুমি আমি পর্ব ৮

সে কাটা হাতটির দিকে এগিয়ে গেলো।
ধোয়ায় রুমে শ্বাস নেয়ায় দুস্কর। এর ভিতরেও খেয়াল করে দেখল হাতটি অতি চেনা পরিচিত। হাতটির অনামিকা আঙুলে জ্বলজ্বল করছে কিছু একটা,,,,
একটা আংটি!!
সেই আংটিটা শানের খুব পরিচিত। এটা সেই আংটি যা পুতুলকে বিয়ের সময় পড়িয়ে দিয়েছিল শান।।।।।

তাসের ঘরে তুমি আমি পর্ব ১০