তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ২০

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ২০
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

রিমি ফারহানের ঘরেই ঢুকতেই,কেউ পিছন থেকে দরজা বন্ধ করে।দরজা বন্ধ করার শব্দে রিমি পিছনে ঘুড়ে অয়ন দেখে চমকে যায় একপ্রকার। ফারহানের ঘরেঅয়নকে কিছুতেই আশা করেনি রিমি। রিমির ঘরে প্রতিটা কোনায় অয়ন সিসিটিভি ক্যামেরা ফিট করে রেখেছিলো। তাই রিমি যখন নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে ফারহানের ঘরে ঢুকেছিলো, সেই দৃশ্যটি অয়ন দেখে ফেলে নিজের ল্যাপটপ দিয়ে। তাই অয়ন তড়িঘড়ি করে ফারহানের ঘরে চলে আসে।অয়ন রিমির দিকে একপ্রকার তেড়ে এসে,রিমির হাতখানা চেপে ধরে রোষপূর্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

‘ এতো রাতে তুমি ফারহানের ঘরে কি করছো রিমিপরী?’
অয়নের প্রশ্নে খানিক্ষন চুপটি থাকে রিমি। রিমি মাঝরাতে নিজের ঘর ছেড়ে ফারহানের ঘরে আসায় বেশ রেগে যায় অয়ন। কি এমন দরকার পরলো রিমির? যার জন্যে রিমিকে ফারহানের ঘরে আসতে হলো। রিমিকে চুপ থাকতে দেখে অয়নের রাগ আরো কয়েকদাপ বেড়ে গেলো। অয়ন উচু্ঁ গলায় ধমক দিয়ে বললো,
‘ কি হলো বলছো না কেন? কেন এসেছিলে এই রুমে? ‘
অয়নের ধমকে রিমি কাঁপাকাঁপা গলায় বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ আমি এখানে বিরাট একটা শব্দ পেয়েছিলাম। তাই ছুটে এসেছিলাম দেখতে। ‘
অয়ন কেমন একটা সন্দেহের দৃষ্টিতে রিমির পানে তাঁকালো। রিমি মাথা নিচু করে ফেললো। রিমির মনে ভয় এসে হানা দিতে লাগলো এই বুঝি অয়ন তার উপর রাগ ঝাড়বে,কিন্তু রিমিকে সম্পূর্ন অবাক করে দিয়ে, অয়ন নরম কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ নেক্সট টাইম শুধু ফারহানের ঘরেই না এই বাড়ির কারো ঘরের আশেপাশেই থাকবে না তুমি বুঝলে? আমার ঘর আছে। আমার ঘরে এসে পড়বে। ‘

রিমি মাথা নাড়ায়। নিজের ঘরে অয়নের তীব্র গম্ভীর কন্ঠের অস্তিত্ব টের পেয়ে, দ্রুত গতিতে নীচ থেকে নিজের ঘরের সামনে আসে ফারহান। হাতে তার এখনো সেই ভাঙ্গা টপ খানা। রিমিকে নিজের ঘরে দেখতে পেয়ে ফারহানের বুঝতে বাকি রইলো না তার
ঘরে ঢুকার জন্যেই রিমি টপখানা ভেঙ্গে ফেলেছে। ফারহানের দৃষ্টি থেকে নিজেকে আড়াল থেকে রিমি অয়নের পিছনে লুকিয়ে পড়লো। অয়ন একপলক ফারহানের দিকে তাকিয়ে, রিমির হাত ধরে বাইরের দিকে নিয়ে গেলো। রিমি পিছনে না ঘুড়লেও দিব্যি বুঝতে পারছে ফারহানের দৃষ্টি তার দিকেই সীমাবদ্ধ।

রিমি নিজের ঘরে বসে পড়ছিলো। অয়ন তাকে গাদা গাদা পড়া দিয়েছে ক্লাসে। এখন তো সে কারো সাহায্যটুকুও নিতে পারবে না। রিমির মাথা ধরে আসছে। এতো পড়া তারমধ্যে আবার হাজারো চিন্তা এসে তার মাথায় ধরা দিচ্ছে। কিছুক্ষন আগের ঘটনায় ফারহান নিশ্চিত থাকে পুরোপুরি চিনে ফেলেছে। তারমধ্যে কালকে কী করে রিমি তার মামার সাথে দেখা করবে তা নিয়েও বেশ চিন্তিত সে।
অয়ন তো তাকে সামান্য অন্য কারো ঘরেই যেতে দিচ্ছে না।

সেখানে কি অয়ন ঢাকা থেকে সেই সদূর সিলেটে রিমিকে যেতে দিবে? কিছুই মাথায় আসছে না রিমির। বার বার রুমের চারদিকে উঁকিঝুঁকি মারছে। কালকে কী করে যাবে তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্ত সে। রিমির ফোনের টুংটান মেসেজের শব্দ আসে। রিমির হাত বাড়িয়ে বইয়ের ফাঁক দিয়ে ফোনটি হাতে নেয়। অতঃপর মেসেজ চেক করে দেখে খুবই পরিচিত নাম্বার থেকে হুমকির মতো একটি মেসেজ এসেছে। যা স্বয়ং অয়ন নিজেই দিয়েছে। মেসেজ স্পষ্ট উল্লেখ আছে,

‘ তিন মিনিটের মধ্যে ছাঁদে চলে আসো। জাস্ট থ্রি মিনিটস। দেরী করলে তোমার ঘরে গিয়ে, কোলে তুলে নিয়ে আসবো। ‘
মেসেজ নামক হুমকিবার্তা পেয়ে চটজলদি উঠে দাঁড়ায় রিমি। অয়নকে কোনপ্রকার বিশ্বাস নেই তার। যা মুখে বলে তা কাজেও করে দেখায়। রিমি গাঁয়ে চাদর জড়িয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। ছাদে আসতেই সে দেখতে পেলো সাদা স্লিভ কটনের শার্ট পড়া এক সুদর্শন যুবক ডিভানে বসে রিমির জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে বসে আছে।

রিমি পায়ের গতি বাড়ালো। দ্রুত গিয়ে অয়নের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। রিমিকে দেখে অয়ন নিজের ঠোটজোড়া দিয়ে সুন্দর নির্মল এক হাঁসি উপহার দিলো রিমিকে। রিমির বুকে গিয়ে যেন লাগলো হাঁসিটি। বুক ভারি হয়ে আসলো। ঘনঘন পাপড়ি ফেলতে লাগলো পরক্ষনেই। অয়ন হাত বাড়িয়ে রিমিকেই একপ্রকার টেনে নিজের কলে বসিয়ে দিলো। রিমি হতভম্ব হয়ে নিষ্প্রান দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অধিক সৌন্দর্যের অধিকারী অয়ন নামক যুবকের পানে। অয়ন রিমির হাতজোড়া নিজের হাতের মাঝে পুরে নেয়। অতঃপর বিশাল আকাশের
দিকে তাকিয়ে থেকে আপনমনেই বলতে থাকে,
‘ আজকে আকাশটা বেশ সুন্দর তাইনা রিমিপরী? ‘

রিমি ছোট্ট করে ‘ হুম ‘ বললো শুধু। সময় বাড়তে থাকলো সময়ের সাথে সাথে অয়নের ভিতরের অস্হিরতাও বাড়তে থাকলো। যা রিমি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে অয়নের অস্হির শুকিয়ে যাওয়া মুখখানা দেখে। অয়ন হুট করে রিমিকে নিজের বুকের মাঝে সীমাবদ্ধ করে ফেললো। একদম শক্ত করে চেপে রাখলো রিমিকে নিজের বুকের মাঝে। যেন হাত একটু আগলা হয়ে গেলেই রিমি ছুটে পালিয়ে যাবে। রিমি অয়নের বুকে মাথা রেখে দিব্যি বুঝতে পারছে অয়নের ভিতরে এক অজানা ঝড় বয়ে চলেছে প্রতিক্ষন। অয়ন খুবই শীতল গলায় রিমির মুখশ্রীর পানে তাকিয়ে বলে,

‘ রিমিপরী! আমার যদি সাধ্যি থাকতো তাহলে তোমাকে আমার বুকের পিঞ্জিরায় বন্দী করে রেখে দিতাম আজীবন। যেন তুমি আমাকে রেখে কোথাও কখনো পালিয়ে যেতে না পারো।’
অয়নের এমন মোহনীয় কথা রিমির শরীরে কম্পন তৈরি করতে যথেষ্ট। রিমি অবুঝের ন্যায় প্রশ্ন করে উঠে,
‘ হঠাৎ এই কথা বললেন কেন ডক্টর এয়ারসি। ‘

অয়নের হাতের বাঁধন শক্ত হলো। কন্ঠ হলো ভারি। অয়ন রিমির হাতে চুমু খেয়ে বললো,
‘ আমি জানিনা রিমিপরী, কিন্তু এক অজানা ঝড় আমার বুকে এসে হানা দিচ্ছে। কিছুটা ভয়ও হচ্ছে। এই প্রথম ডক্টর অয়ন চৌধুরী ভয় পাচ্ছে। তার রিমিপরীকে হারিয়ে ফেলার ভয়। ‘
রিমি অয়নের কথার বিপরীতে কিচ্ছু বললো না। চুপটি করে অয়নের বুকে মাথা রেখে অয়নের সাথে মিশি রইলো। একটা মানুষের ভালোবাসা কতটা প্রখর হলো সে তার প্রিয়তমাকে হারানোর ভয়ে সারাদিন আতন্কিত থাকে। এতোটা পাগলামি করে।
কিন্তু রিমিকে আদোও বুঝবে অয়নের পাগলামির পিছনে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত ভালোবাসাকে?

শীতের সকালে অদ্ভুদ ভালো লাগে রিমির। শীতের ভোরে গাছপালার মৃদ্যু বাতাসটা কেমন নাড়িয়ে তুলে রিমিকে। হীমশীতল হাওয়া বইতে থাকে চারিদিকে। গাছপালা থেকে শিশিড় টুপটুপ করে মুক্তার ন্যায় ঝড়তে থাকে। মাঘ মাস এখন! অন্যান্য দিনের আজকে শীতটা একটু বেশিই পড়েছে। ধীরে ধীরে কুয়াশার আস্তরণ ভেদ করে সূর্যের আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

রিমি সেই আলোর মধ্যেই দেখতে পায় বাগানে অয়ন এতোটা শীতের মাঝেও দিব্যি জগিং করে যাচ্ছে। কিছুক্ষন থেমে একটু জুস পান করে আবারোও বিশাল বাগানে ছুটতে থাকে। কপাল বেয়ে ঘাম তার গাল বেয়ে গলায় এসে পড়ছে। রিমি একপলক অয়নের দিকে তাকিয়ে নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে নিলেই, রিমির চোখ যায় ফারহানের দিকে। ছাদের এক কোণে বসে ছিলো। রিমিকে দেখেই উঠে দাঁড়ায় সে। অতঃপর দূর থেকেই হাত ভাজ করে রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ আমার জন্যে অয়ন চৌধুরীকে গুটি বানিয়ে এই চৌধুরী বাড়িতে ঢুকেই গেলে। গ্রেট জান্নাত! বেশ বুদ্ধিমান হয়েছো তুমি। ‘
রিমির রোষপূর্ন দৃষ্টিতে ফারহানের দিকে তাকিয়ে রোষাক্ত গলায় বলে,
‘ নিজেকে এতোটা গুরুত্বপূর্ণ ভাব্বেন না মিঃ ফারহান চৌধুরী। আমি আপনাকে এতোটা ঘৃণা করে যা আমি এই পৃথিবীর কাউকেই করিনা। ‘
ফারহান স্পষ্ট দেখতে পারছে রিমির চোখে আজ কতটা ঘৃণা তাকে ঘিড়ে। ফারহান শুধু তাচ্ছিল্যের হাঁসি হাসে বিনিময়ে।

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ১৯

রিমি হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে সিলেটের জন্যে রওনা হয়েছে। অনেক কষ্টে সে মহিলা গার্ডসদের চোখে ফাঁকি দিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসেছে, যদিও রিমি জানে এতোক্ষনে অয়ন সবটাই জেনে গিয়েছে। অনেক রাগ ও করবে রিমির উপর কিন্তু এছাড়া রিমির কোন উপায় নেই। তার অসুস্হ মামাকে তো দেখতে যেতেই হবে।

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ২১