তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ২২

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ২২
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

রিমির মামুর জোড় করে রিমির হাতে কলম ধরিয়ে ডিভোর্স পেপারে সাইন করিয়ে দিতে বললেন। রিমি অসহায় দৃষ্টিতে তার মামুর দিকে তাঁকালো কিন্তু রিমির মামার তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি মুখে গাম্ভীর্য এটেঁ রয়েছেন যেন ডিভোর্সটা হয়ে গেলে তারই ভালো। অনেক পরিশ্রম করে তিনি চেয়ারম্যানের পদটা পেয়েছেন। আজ তা রুহানা চৌধুরী কেড়ে নিলে পথে বসে যাবেন তিনি। রুহানা চৌধুরীর ক্ষমতা বেশ অবগত তিনি। আমান ও রিমির পাশে দাঁড়ায়। রিমিকে তাড়া দিতে থাকে রিমির মামু সাইন করানের জন্যে। রিমি তার মায়ের দিকে ব্যাথাতুর দৃষ্টিতে তাকালে তার মা কড়া চোখে রিমির দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ তাড়াতাড়ি সাইন করে দে রিমি। ‘
রিমির কষ্ট বেড়ে গেলো। সাইন করতে ইচ্ছে করছে না। ভিতরে এক অদ্ভুদ দ্বিধায় পিরিত হচ্ছে সে প্রতিনিয়ত। কালকের রাতে কি সুন্দর মুহুর্ত কাটালো রিমি কিন্তু আজ? সবকিছুই কেমন উলোট পালোট হয়ে গেলো মুহুর্তেই! রিমির শ্বাস রোধ হওয়ার অবস্হা হলো। অয়ন ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছে তা মেনে নিতেই বড্ড কষ্ট অনুভব করছে রিমি। কলমটুকু আঙ্গুল দিয়ে ধরা রাখার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। কি অসহ্য বিচ্ছিরি পরিস্হিতি। দ্বিতীয়বারের মতো এমন বিচ্ছিরি পরিস্হিতির স্বাকীর হচ্ছে রিমি কিন্তু প্রথমবার তো তার পাশে অয়ন ছিলো আজ কোথায় গেলো সে? রিমির বুক ভারি হয়ে আসলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অয়নের মুখশ্রীটা মনে পড়তেই,চটজলদি হাতের কলমটা ফেলে দিলো রিমি। রিমির মামুসহ উপস্হিতসহ সবাই হতভম্ব হলো রিমির কান্ডে। রিমি মিনমিনিয়ে বললো,
‘ আমি পারবো না সাইন করতে। আমি কিছুতেই সাইন করতে পারবো না। ‘
রিমির মামু রোষপূর্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রিমির দিকে। যেন কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে রিমিকে। রিমি সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালে নিলে, আমানে কথায় থেমে যায়। আমান খুবই শান্ত সুরে বলে,

‘ রিমিপাখি! তুমি ডিভোর্স দিবে কিনা দিবেনা তা সম্পূর্ন তোমার ব্যাপার কিন্তু তার আগে আমার কিছু কথা তোমাকে শুনতে হবে। আশা করি আজকে তুমি আমাকে কিছু কথা বলার সুযোগ দিবে। দয়া করে একটু সুযোগ দাও আমাকে রিমিপাখি। ‘
আমানের অসহায়মাখা গভীর অনুরোধকে চাইলেও
নাখোচ করতে পারেনা রিমি। মাথা নাড়িয়ে নিজের ঘরের দিকে রওনা হয় রিমি।

পায়েল ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ফটোশ্যাুট করছে এবং রুহানা চৌধুরী এবং তার ছোট ছেলে সবকিছুর তদারকি করছে কিছুক্ষনের মধ্যেই ক্যানাডার বড় বড় ফ্যাশান কম্পানি আসবে রুহানা চৌধুরীর সাথে মিটিং করতে। আজকে যথেষ্ট ব্যস্ত রুহানা চৌধুরী। এতো ব্যস্ততার মাঝেও তিনি এখনো অব্দি রিমির মামুকে ফোন করার সুযোগটুকুও পাননি। রিমি কী আদোও সাইন করেছে? জানেন না রুহানা চৌধুরী তবুও এইটুকু বিশ্বাস আছে রুহানা চৌধুরীর, নিজের পদ হারানোর ভয়ে যেকোন মূল্যে, নিজের ভাগ্নীর ডিভোর্স করিয়ে দিবেন রিমির মামু। রুহানা চৌধুরী ভাবনার মাঝেই বাইরে জিনিসপত্র ভাঙ্গার শব্দ পেতে শুরু করেন তিনি। শব্দের উৎস তীব্র থেকে তীব্রতম হতেই তিনি দ্রুততার সাথে বাইরে বেড়িয়ে দেখে অয়ন তার গার্ডসদের দিয়ে ফটোশ্যুটের সবকিছু ভেঙ্গে ফেলছে কেউ চাইলেও অয়নকে আটকাতে পারছে না। পায়েলসহ অফিসের সকলে হতবাক হয়ে অয়নের কান্ড দেখছে। অয়নের কাকা অয়নের কাছে ছুটে আসে,অয়নের কাধে হাত রেখে বলে,

‘, কি করছো তুমি? এইভাবে সব ভাঙ্গচুড় করছো কেন? আজকে অনেক বড় কম্পানি থেকে আমাদের সাথে মিটিং করতে আসছে। ‘
অয়ন সাথে সাথে হাত সরিয়ে ক্রোধ নিয়ে তীব্র হুংকার ছেড়ে বলে,
‘ আই ডোন্ট কেয়ার! কে আসছে না আসছে। আগে
রুহানা চৌধুরীকে ডেকে আনুন। আমি রুহানা চৌধুরীর সাথেই কথা বলবো। ‘

এই প্রথম অয়নের মুখে নিজের নাম শুনে রুহানা চৌধুরীর ভয়ে গলা শুকিয়ে একপ্রকার কাঠ হয়ে গেলো। তিনি বুঝে গিয়েছেন অয়ন তার হাতছাড়া হয়েছে। রিমির ভালোবাসায় বদ্ধ উম্মাদে পরিনত হয়েছে সে। রুহানা চৌধুরীকে আরেকবার হুংকার দিয়ে ডেকে উঠে অয়ন। রুহানা চৌধুরী বসে থাকেনা
দ্রুততার সাথে অয়নের নিকট পৌঁছে দাম্ভিকতার সাথে বলে,
‘ কি করছো অয়ন? এইভাবে ভাঙ্গচুর করছো কেন? ‘
অয়ন পকেটে হাত ঢুকিয়ে রুহানা চৌধুরীর দিকে ঝুঁকে বলে,

‘ তা তো তোমার সবথেকে বেশি ভালো জানার কথা গ্রেন্ডমা। অয়ন চৌধুরীকে রাগানোর ফল তোমাকে ভোগ করতেই হবে গ্রেন্ডমা! ‘
‘ মানে? ‘
রুহানা চৌধুরীর প্রশ্নে অয়ন অধরের কোণে ভয়ংকর
বিক্ষিপ্ত বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলে,
‘ তুমি আমার থেকে আমার রিমিপরীকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে আর আমি অয়ন চৌধুরী বসে থাকবো? তোমার সব প্ল্যান আমি জেনে গিয়েছে। তোমার পারসোনাল সেক্রিটারিকে ডাবল পেমেন্ট করে। তুমি কীভাবে রিমিরপরীর মামুকে ভয় দেখিয়ে আমার থেকে রিমিপরীকে আলাদা করার চেষ্টা করেছো সব জেনে গিয়েছি আমি। ‘

রুহানা চৌধুরীর ভয়ে তরতর করে ঘামতে থাকে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসে। অয়ন কিছু মহিলা গার্ডদের ইশারা করে, অয়নের ইশারা শুনে মহিলা গার্ডগুলো পায়েলের হাত ধরে ফেলে। পায়েলকে এইভাবে হুট করে আক্রমন করায় ভরকে যায় পায়েল। অয়নের দিকে তাকিয়ে ভয়ার্থ গলায় বলে উঠে,
‘ অয়ন আমাকে ধরছে কেন? ‘

অয়ন কিছু বলেনা শুধু চোখের ইশারায় মহিলাগুলোকে পায়েলকে নিয়ে যেতে থাকে। পায়েল
ভয়ে চিৎকার করে কান্না করতে থাকে প্রতিনিয়ত। অয়নের মতো উম্মাদ ছেলেকে বিয়ে করার ইচ্ছেটা তার জীবনের সবথেকে বড় ভুল মনে হচ্ছে তার। রুহানা চৌধুরী চাইলেও আটকাতে পারেনা অয়নকে।
পায়েলকে নিয়ে যাওয়ার পরে, অয়ন ব্জ্র কন্ঠে বলে,
‘ রুহানা চৌধুরী যার জন্যে আমাকে এবং আমার রিমিপরীকে আলাদা করতে চেয়েছিলেন আজ যদি আমি তাকেই সরিয়ে ফেলি তখন কি করবেন আপন? ‘

রুহানা চৌধুরী হাপাতে হাপাতে প্রশ্ন করে উঠেন,
‘ অয়ন কি বলছো তুমি? তোমার মাথা কী আদোও ঠিক আছে? ‘
অয়ন রুহানা চৌধুরীর প্রশ্নের বিপরীতে কিছু বলেনা শুধু গটগট করে রাগে ফুশতে ফুশতে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে রাগে একটা কাচের জিনিস পিছনের দিকে ছুড়ে মারে যা গিয়ে রুহানা চৌধুরীর কপালে গিয়ে লাগে। রুহানা চৌধুরী কপালে হাত দিয়ে দেখে তার কপাল থেকে রক্ত বেড়োচ্ছে ইতিমধ্যে। রুহানা চৌধুরী ধপ করে বসে পড়ে। অফিসের সবাই গিয়ে তাকে ধরে।
[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]

অয়ন রাগে বেড়োতেই খেয়াল করে দেখে ইতিমধ্যে
প্রেস-মিডিয়া সব জড়ো হতে শুরু করেছে বাইরের দিকে। হয়তো অয়নের ভাঙ্গচুরের খবর পেয়েই তারা ছুটে আসে। এইসব খবর বাতাসের মতো ছড়ায়।
প্রেস-মিডিয়াকে দেখে অয়ন তার গার্ডদের উদ্দেশ্য করে পায়েলকে অন্য রাস্তা দিয়ে নিয়ে যেতে বলে।
প্রেস-মিডিয়াকে অয়নকে দেখে ছুটে আসলে অয়ন তার গার্ডদের দিয়ে, প্রেস-মিডিয়াকে সরিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে। অয়নের থেকে কোনরুপ প্রতিক্রিয়া না পেয়ে, সাংবাদিকগন ক্যামেরার সামনে বলতে থাকে,

‘এইমাত্র পাওয়া খবর! চৌধুরী ফ্যাশন ডিজাইনার ওনার রুহানা চৌধুরীর ছোট নাতী অয়ন চৌধুরী
নিজ অফিস চৌধুরী ফ্যাশনে ভাঙ্গচুর করে গিয়েছেন, কিন্তু কেন? ‘
হাওয়ার মতো খবরগুলো প্রেসমিডিয়া মুহুর্তেই সকলের কাছে পৌঁছে দিলো।
অয়ন গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য গেলো। সেখানে কিছু লোক দাঁড়িয়ে ছিলো। অয়নকে দেখেই তারা অয়নকে তার প্রাইভেট প্লেনটা দেখিয়ে দিলো। অয়ন তড়িঘড়ি করে তার প্রাইভেট প্লেনে উঠে গেলো। তাকে এখন খুব তাড়াতাড়িই সিলেটে পৌঁছাতে হবে,অনেক হিসাব বাকি আছে তার।

রিমি এবং আমান আপাতত রিমির ঘরের বসে আছে। আমান কিছুক্ষন ধরে বেশ অস্হির হয়ে রিমির দিকে আড়চোখে তাঁকাচ্ছে কিন্তু রিমি বেশ স্বাভাবিক হয়েই বসে আছে। নিরবতা ভেঙ্গে সর্বপ্রথম রিমি নিজ থেকেই বলে উঠে,
‘ চুপ করে বসে আছেন কেন আমান? যা বলার বলুন। আজ আমি সব শুনবো। ‘

রিমির কথায় আমান কিছুটা ভরসা পেলো। মুখের জড়তার রেশ নিমিষেই কেটে গেলো। আমান উঠে দাঁড়িয়ে বলতে থাকে,
‘ রিমিপাখি সেদিন বিয়ের আসর থেকে আমি ওভাবে যেতে চাইনি। একপ্রকার যেতে বাধ্য হয়েছি। তুমি তো জানো আমি মধ্যবিত্ত ফ্যামেলি থেকে বিলং করি। বাবা মা এবং ছোট দুই ভাইবোনের পড়াশোনার খরচ আমাকেই বহন করতে হয়। আমি খুব কষ্টে ডাক্তারি পড়ে একটা সরকারী অফিসে চাকরী করি। তবুও নতুন নতুন চাকরী। বেশ হিমশিম খাচ্ছিলাম আমি।
তারমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার একটা বড় হসপিটালে আমি জবের এপ্লাই করি এবং সেই জবটা কনফার্ম হয় আমাদের বিয়ের দিন। আমি যদি সেদিন অস্ট্রেলিয়া না যেতাম তাহলে জবটা পেতাম না আমি। হাতছাড়া হয়ে যেতো আমার। ‘

রিমির আমানের দিকে তাকাতেই আমান মাথানিচু করে বলে,
‘ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে আমি। চাকরী আমাদের কাছে অনেক কিছু। অনেকসময় চাকরীর কাছে আমাদের ভালোবাসা হেরে যায়। এইটাই হচ্ছে কঠিন বাস্তবতা।’
‘ তাহলে ফিরে এলেন কেন? আপনার কাছে তো চাকরীই সব। ‘
রিমির প্রশ্নে আমান সামান্য হেসে বলে,

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ২১

‘ আমার কাছে যেমন চাকরীটা জরুরী ছিলো তেমনি তুমি আমার জীবনেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রিমিপাখি। যখন শুনলাম তোমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে আমার ভিতরটা ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছিলো। তোমাকে হারানো শূন্যতায় আমি প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম তাই তোমাকে পাওয়ার আশায় কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। আমাকে আশাহত করোনা রিমিপাখি। আমি সত্যি তোমায় ভালোবাসি। ‘
আমানের মুখে ভালোবাসি শব্দটা কেন যেন আজ রিমিকে গলাতে পারলো না। রিমির তেমন একটা আলাদা অনুভুতি এলো না মনে। রিমি কিছু বলবে তার আগেই……..

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ২৩