তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ২৪

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ২৪
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

অয়ন রিমিকে নিজের বক্ষে পরম শান্তিতে মিশিয়ে নিলো। রিমিও চুপটি করে মিশি রইলো অয়নের বুকের। অয়ন হঠাৎ রিমিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো। রিমি অবাক হলো এতে। অয়ন তাতে কোনপ্রকার ভ্রুক্ষেপ না করে, অভিমানের সাথে কিছুক্ষন তাঁকিয়ে রইলো তার প্রিয়তমার দিকে,কিন্তু আদোও কি তার প্রিয়তমা তার অভিমানের ভাষা বুঝতে পারছে?জানেনা অয়ন। রিমি শুধু নিষ্প্রান দৃষ্টিতে অয়নের পানে তাকিয়ে আছে। মানুষটারও তবে অভিমান হয়?কই আগে তো জানতো না রিমি। রিমি এবং অয়নকে একসাথে দেখে আমান হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে আসে। অতঃপর হাপাতে হাপাতে বলে,

‘ রিমিপাখি! ‘
আমানের কন্ঠস্বর শুনে রিমি এবং অয়ন একসাথে
আমানের দিকে তাকায়। রিমি একপলক আমান এবং একপলক ভয়ার্থ দৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাকায়। এই বুঝি অয়ন কোন অনার্থ করে ছাড়বে। রিমির ভাবনার মাঝেই, আমান ছুটে এগিয়ে আসে তাদের সামনে। আমানকে এগোতে দেখে অয়ন রিমির হাত শক্ত করে চেপে ধরে,নিজের পিছনে নিয়ে আসে। রিমি স্পষ্ট দেখতে পারছে তার মামু হাতের ব্যাথায় কতটা কাতরাচ্ছে এবং রক্ত অনাবরত হাত থেকে গড়াচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে তো রিমির মামুর অবস্হা গুরুতর থেকে গুরুতর হবে। রিমি অয়নকে ঝাঁকিয়ে বলতে থাকে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ দয়া করে আমার মামুকে চিকিৎসার ব্যাবস্হা করে দিন। আমার মামুর অবস্হা ভালো না। দয়া করুন। ‘,
রিমির গভীর কষ্টমিশ্রিত অনুরোধ হয়তো মন গলাতে পারেনি অয়নের বরং তা অয়নের রাগকে দ্বিগুনভাবে বাড়িয়ে তুলছে সময়ের সাথে সাথে। অয়ন রিমির বাহু চেপে ধরে নিজের কাছে এনে বাজখাই গলায় বলে উঠে,
‘ যারা আমাকে তোমার থেকে আলাদা করতে চায় তাদের জন্যে এতো কিসের দরদ তোমার? সবার সব কষ্ট তুমি দেখতে পাও অথচ আমার বুকের তীব্র ব্যাথা তা দেখতে পাও না তুমি। কেন রিমিপরী আমি কি মানুষ নই? তুমি কি বুঝো না? তোমাকে ঘন্টার পর ঘন্টা না দেখে আমি কতটা পীড়িত হয়েছি আমি কতটা দহনে পুড়েছি তা তুমি জানো না রিমিপরী?কীভাবে জানবে আমার কষ্টটা তো তোমার কখনো চোখেই পড়ে না। ‘

রিমি চুপ হয়ে যায়। গলা থেকে সামান্যটুকু শব্দ ও বের হতে চাচ্ছে না তার। কি একটা বেদনাদায়ক অবস্হা। আজ যেন গলার স্বরও তার সাথে হরতালে নেমেছে। অদ্ভুদ এক হরতালে। অয়ন তার পেশিবহুল হাত দিয়ে এতোটা জোড়ে রিমিকে চেপে ধরেছে, যার ফলে রিমির ব্যাথার নেত্রকোণা ছলছল করছে। আমান হয়তো রিমির অবস্হা বুঝতে পারছে। তাই অয়নের সামনা সামনি দাঁড়িয়ে শক্ত কন্ঠে বলে,
‘ রিমিপাখি ব্যাথা পাচ্ছে। ওকে ছেড়ে দিন। ‘

অয়ন ঘাড় কাত করে অধরের কোণে বেশ ভয়ংকর হাসি ফুটিয়ে শীতল কন্ঠে বলে,
‘ আমার ওয়াইফের চিন্তা আমার থেকে আপনার বেশি মি ডক্টর আমান শিকদার। কিন্তু জানেন তো?
অন্য কারো জিনিস হাত দেওয়া কিংবা অন্য কারো ব্যাপারে ঢুকতে চাওয়াটা অনেক বড় একটা ভুল। সেখানে আপনি অয়ন চৌধুরীর রিমিপরীর দিকে হাত বাড়িয়েছেন সেখানে তো আপনার জীবন নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে।’

কথাটি বলে সঙ্গে সঙ্গে অয়ন আমানের বুক বরাবর লাত্থি দেয়। আমান ছিটকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ঠোট কেটে রক্ত বেড়িয়ে পড়ে। আমানের অবস্হা দেখে আরেকদফা উত্তেজিত হয়ে যায় রিমি। অয়ন রিমির হাত ধরে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে আসে। অতঃপর রিমিকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে গাড়ির ভিতরে ছুড়ে মারে। রিমি নিজেকে কোনরকম সামলায়। অয়ন তার গার্ডসকে কিছু একটা ইশারা করে।।রিমি সেই চোখের ইশারা সহজেই বুঝে যায়।

আমানের সাথে নিশ্চই কিছু খারাপ করবে অয়ন। কথাটি মাথাতে নাড়া দিয়ে উঠলেই, রিমির হাত বাড়িয়ে জানালার কাছ দিয়ে আমানকে এক পলক দেখতে পায়। অয়নের গার্ডসরা নির্মমভাবে মেরে চলেছে আমানকে। আমান চাইলেও আটকাতে পারছে না। রিমি ঢুকরে কেঁদে উঠে। আমান এখন তার প্রাক্তন হলেও, এই কথাটি তো সত্যি। একসময় আমান নামক যুবকের প্রতি তার মনে ভালোবাসা নামক অনুভুতি হয়তো এসে হানা দিয়েছিলো। রিমি ঠোট কামড়ে কান্না আটকানোর প্রচেষ্টায় থাকে। রিমিকে কাঁদতে দেখে অয়ন সজোড়ে কাচে ঘুসি দেয়। গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে। রিমি হচকিয়ে যায়। অয়ন রিমির দিকে তাকিয়ে রিমির চোখের সযত্নে মুছিয়ে, পকেট থেকে টিস্যু বের করে রিমির হাতে ধরিয়ে দেয়। অতঃপর রিমির থেকে মুখ ফিরিয়ে রোষপূর্ন কন্ঠে বলে,

‘ চোখের জল দ্রুত মুছে ফেলো রিমিপরী। তোমার চোখের জল আমার সহ্য হয়না। সেখানে তুমি অন্যকারো জন্যে চোখের ফেলছো। সাহস কি করে হয় তোমার? দ্রুত চোখের জল মুছো।’
রিমি ঝটফট করে টিস্যু দিয়ে চোখের জল মুছলেও, ফুপিয়ে কেঁদে চলেছে। অয়ন সুদীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
‘ আমার সবথেকে বড় আফসোস কি জানো রিমিপরী? তোমার যেই আখিতে আমি নিজের জন্যে
জল দেখতে চেয়েছিলে আজ সেই নেত্রকোনায় অন্য কারো জন্যে জলে পরিপূর্ন। ‘
রিমি কথাটি শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিটে মাথা হেলিয়ে দিয়ে বসে থাকে। অয়নও কথা বাড়ায় না।

পায়েলকে কিছু মেয়ে গার্ডস হাত-পা বেঁধে, অন্ধকার রুম থেকে একটি সুবিশাল রুমে এনে ছুড়ে ফেলে। পায়েল ছিটকে পড়ে যায়। হাত-পা রিতিমত কাঁপছে তার। শরীরে সামান্য পরিমান শক্তিটুকুও নেই উঠে দাঁড়ানোর। মেয়ে গার্ডসগুলো তাকে এতোটাই মেরেছে। অয়ন ভিতরে ঢুকার সাথে সাথেই মহিলা গার্ডসগুলো উঠে দাঁড়িয়ে, অয়নকে কুর্নিশ জানায়। অয়ন পায়েলের সামনে থাকা সোফায় গিয়ে বসে পড়ে পায়ের উপর পা দিয়ে। অয়ন হাতের ইশারায় পায়েলের মুখের এবং চোখের বাঁধনটি খুলে দিতে বলে। মহিলা গার্ডসগুলোও চোখের বাঁধনটি খুলে দেয়। পায়েল চোখের সামনে দ্বিগুনভাবে কাঁপতে থাকে। অয়ন ঝুঁকে পড়ে পায়েলের কাছে।অতঃপর বাঁকা হেসে বলতে করতে থাকে,

‘ পায়েল তুমি কি ভয় পাচ্ছো ডার্লিং! দেখো আমি কিন্তু ভয় পাওয়ার মতো এমন কিছুই করেনি। তাহলে শুধু শুধু ভয় পাচ্ছো কেন? ‘
পায়েল শুকনো ঢুগ গিলতে থাকে।অতঃপর কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে উঠে,
‘ অয়ন আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তুমি আমাকে শুধু কষ্ট দিচ্ছো। কেন করছো এমন? ‘
অয়ন সঙ্গে সঙ্গে পায়েলের গালে সজোড়ে থাপ্পর দেয়। এতোটা জোড়ে থাপ্পর দেওয়ার ফলে পায়েলের গাল লাল হয়ে যায়। অয়ন চিৎকার করে বলে,

‘ ইউ ডাফার গার্ল! এইসব ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয় অন্তত আমার সাথে করতে এসো না। এতোদিন সব জেনেও আমি চুপ ছিলাম। শুধুমাত্র রুহানা চৌধুরীর জন্যে,কিন্তু আমি আজ চুপ থাকবো না। ‘
‘ মিথ্যে ভালোবাসা ‘ শব্দটি অয়নের মুখে শুনে অবাকের শীর্ষে চলে যায় পায়েল। পায়েলের অবাক মুখশ্রী দেখে অয়ন দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘ তুমি কী ভেবেছিলে? এই অয়ন চৌধুরী এতোটাই বোকা? তোমার প্ল্যান সম্পর্কে কিচ্ছুটি জানবে না।
আমি সবকিছুই জানি। তুমি ভেবেছিলে,

তুমি আমাকে বিয়ে করে চৌধুরী ফ্যাশনের পুরো মডেলিং এর পাওয়ার নিজ হাতে নিয়ে নিবে। তারপর পুরো চৌধুরী ফ্যাশন তোমার হাতে। সবাই তোমার হাতের ইশারায় নাঁচবে। চৌধুরী বাড়ির ট্যাগ লেগে গেলেই তো সব পাওয়ার তোমার হাতেই। বাট আফসোস তার আগেই আমার বিয়ে রিমিপরীর সাথে হয়ে গেলো। তাই তুমি রুহানা চৌধুরীকে দিয়ে কন্টিনিউয়াসলি আমার এবং রিমিপরীর মাঝে ঢুকতে চাইছো। ‘

পায়েলের মুখ কালো হয়ে যায়। নেমে আসে তার মুখশ্রীতে ঘোর অন্ধকারের ছাঁয়া। অয়ন আরেকদফা হেসে টিভিটা চালু করে। চোখের ইশারায় পায়েলকে
টিভির দিকে তাকাতে বলে। পায়েলও টিভির পর্দায় চোখ যেতেই আৎকে উঠে। কেননা টিভির পর্দায় স্পষ্ট ব্রেকিং নিউজ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, পায়েলের একটি ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ। যেই ভিডিও তে দেখানো হচ্ছে পায়েল তার সেক্রিটারিকে বলছে সে অয়নকে বিয়ে করতে চায় শুধুমাত্র স্বার্থের জন্যে। সেই ভিডিও টা পাওয়া মাত্র অয়ন মিডিয়ার কাছে পৌঁছে দিয়েছে। মিডিয়ার লোকে মিডিয়াতে রটিয়ে বেড়াচ্ছে,

‘ দেখুন মডেল পায়েলের ভালো মানুষি মুখোশের আড়ালে এক স্বার্থপর লোভী মেয়ের গল্প রয়েছে। ‘
পায়েল মাথা হাত দিয়ে চিৎকার করে বিড়বিড় করতে থাকে,
‘ শেষ! আমার সব শেষ। আমার ক্যারিয়ার। আমার মিডিয়া সব শেষ। ‘
অয়ন শুধু বাঁকা হাসে। হঠাৎ পায়েলের রাগ মাথায় চওরা দিয়ে উঠে। পায়েলের হিতাহিতজ্ঞান প্রায় শূন্য হতে থাকে। পায়েল উঠে দাঁড়িয়ে অয়নের কলার চেপে ধরে।

রিমি আপাতত অয়নের ঘরে বসে আছে। অয়ন তাকে বাড়িতে এনেই, রিমিকে নিজের ঘরে রেখে দরজা বাইরে থেকে আটকে রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছে। রিমি সেই অনেক্ষন ধরে ঘরটায় বসে আছে। কিছুক্ষন আগেও কয়েকজন সার্ভেন্ট এসে রিমির জন্যে খাবার রেখে পুনরায় দরজা বন্ধ করে চলে গিয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে অয়ন আদেশ দিয়ে গিয়েছে,যেন রিমি অয়ন ফিরে আসার আগে সব খাবার খেয়ে নেয়।

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ২৩

রিমির মনের উপর দিয়ে এখন এক বিশাল ঝর বয়ে চলেছে। রিমির বড্ড চিন্তা হচ্ছে নিজের বাড়ির লোকের জন্যে। এমনকি আমানের জন্যেও। অয়ন যা মানুষ আমানকে মেরে ফেলতে তা হাতটুকু কাঁপবে না। রিমি প্রায় একটা দমবন্ধকর অবস্হায় রয়েছে। এমন একটা পরিস্হিতিতে সে চাইলেও তার গলা দিয়ে খাবার নামবে না। রিমির হাতের কাছে ফোনটাও নেই। রিমির নিজেকে বন্দী মনে হচ্ছে,যে অয়নের খাঁচায় চিরতরের জন্যে বন্দী হয়ে গিয়েছে। রিমির ভাবনার মাঝেই, দরজার কাছ থেকে ফারহানের গলার আওয়াজ পায়। ফারহান হাঁটছে এবং ফোনে কাউকে বলছে……

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ২৫