তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ২৬

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ২৬
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

প্রাক্তন প্রেমিকাকে পাওয়ার নিজের করে পাওয়ার লোভটা বড্ড মাথায় চওড়া দিয়ে উঠেছিলো আমানের। তার রিমিপাখির প্রতি ভালোবাসার প্রখরতার জন্যেই এতো মার খাওয়ার পরে সে দিব্যি হেসে যাচ্ছে। গাড়ির এক কোণে আধমোরা অবস্হায় পড়ে আছে আমান। তার অনেকগুলো জায়গা ছিলে রক্ত বেড়িয়ে তা শুকিয়েও গিয়েছে।

অয়নের অনেক গার্ডসরাও বেশ জখম হয়েছে। আমানের মতো সুবিলিষ্ট যুবকের সাথে মারামারি করার সময় বেশ বেগ হয়েছিলো তাদের। তারা অনেকজন মিলেও আমানকে প্রতিহত করতে পারছিলো না। তখন সবাই মিলে একসাথে ঝাপিয়ে পড়েছিলো আমানের উপরে। আমান তখন এতোগুলো গার্ডসদের সাথে পেরে উঠেনি। আমানকে অয়নের গার্ডসরা গাড়িতে করে অয়নের বলা জায়গাটিতে নিয়ে যাচ্ছে। অয়নের গার্ডসরা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে আমানের জীবনটি অয়নের হাতে চলেই যাবে কিছুক্ষন পর কিন্তু আমান! সে কি তা আদোও উপলব্ধি করতে পারছে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

উহু একদমই নয়। তার ধারণা নেই তার জীবনে কত বড ঝড় বইতে চলেছে৷ তার নিষ্টুর নিয়তির সম্পর্কে আমানের কোনপ্রকার ধারনে নেই বলেই, তার অধরের কোণে এতো সুন্দর মিষ্টি হাসি বিদ্যমান।

রুহানা চৌধুরীর অপমানের বিপরীতে রিমি কিছু বলার আগেই, অয়ন তার রুমে গিয়ে,, হকি স্টিক নিয়ে আসে। অতঃপর তা দিয়ে সুবিশাল টেবিলের কাচ সজোড়ে ভেঙ্গে ফেলে। কাচ ভেঙ্গে ফেলায় সকলে দ্রুত সরে আসে। রুহানা চৌধুরী ঘাবড়ে যায়।

পুরো টেবিলের গ্লাস ভেঙ্গে ফেলেছে অয়ন। রিমিকে যখন মেঘ হাত ধরে টেবিলে বসিয়েছিলো, তখন অয়ন বেজায় চটে গিয়েছিলো। রিমি কেন তাকে ছাড়া অন্য কারো সাথে? এতো সাহস কীভাবে হলো রিমির? অয়ন ভেবেছিলে নীচে গিয়েই রিমি এবং মেঘকে শায়েস্তা করবে কিন্তু তার আগেই রুহানা চৌধুরীর অপমানজনক কথা শুনে নিজেকে সামলাতে পারেনা অয়ন। হকি স্টিক দিয়ে টেবিলটাই ভেঙ্গে ফেলে। অয়ন হকি স্টিকটা নীচে ফেলে দিয়ে,
রুহানা চৌধুরীর দিকে রোষপূর্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে, রুহানা চৌধুরীর দিকে এগোতে এগোতে বললেন,

‘ দেখুন রুহানা চৌধুরী! যেই ড্রাইনিং টেবিলের জন্যে আপনি আমার রিমিপরীকে অপমান করলেন, আজ সেই ড্রাইনিং টেবিলটাই ভেঙ্গে জাস্ট গুড়িয়ে ফেলেছি আমি। কিচ্ছু করতে পারলেন না আপনি। ‘
রুহানা চৌধুরী একপ্রকার ভয়েই অয়নের থেকে নিজেকে বাঁচাতে দ্রুত গতিতে পিছিয়ে পড়েন। অয়ন থেমে যায়। পরক্ষনেই ঘাড় কাত করে অধরের কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে রুহানা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে শীতল কন্ঠে বলে,
‘ মাই ডিয়ার গ্রেন্ডমা! আজ থেকে যেন বাড়িতে আর কোন ড্রাইনিং টেবিল না আসে। আজকে থেকে সবাই নিজ নিজ ঘরে খাবে। যদি একসাথে খেতে ইচ্ছে করে,তাহলে মাটিতে বসে খাবে। ‘

রুজা চৌধুরী অবাক হয়ে বলে,
‘ তার মানে আমরা এখন থেকে নীচে খাবো? আমাদের তো নীচে বসার অভ্যাসই নেই। তারমধ্যে মায়ের তো পায়ে সমস্যা। তাহলে নীচে বসে কীভাবে খাবে? ‘
অয়ন খুবই শান্তভাবেই র‍ুজা চৌধুরীর প্রশ্নের সাপেক্ষে বললো,
‘ তা আমার রিমিপরীকে অপমান করার আগে ভাবা উচিৎ ছিলো। এখন থেকে বাড়িতে কোনপ্রকার ড্রাইনিং টেবিলই থাকবে না। ‘

কথাটি বলেই অয়ন রিমির কাছে গিয়ে, রিমির হাতজোড়া নিজের মুঠোয় নিয়ে উপরে নিয়ে গেলো হনহন করে। রুহানা চৌধুরী শুধুমাত্র ফ্যালফ্যালে দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। এই বদ্ধ উন্মাদ প্রেমিককে সামলানো তার কাজ নয়। যদি তিনি অয়নকে ঘাটতে চান, তাহলে অয়ন হীতে বিপরীত করে ফেলবে। বিগত কয়েকদিনের ঘটনায় এইটুকু অভিজ্ঞতা হয়েছে তার।

অয়ন রিমিকে নিয়ে নিজের রুমে নিয়ে বসলো। অতঃপর রিমির দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো,
‘ এতো অবাধ্য কেন তুমি রিমিপরী? আমাকে ভয় করেনা তোমার? আমি কিন্তু তোমার ক্ষতি করে দিতে পারি। ‘
‘ ভয় হয়না আমার। এইটুকু বিশ্বাস আছে আপনার প্রতি। আপনি কখনো আমার ক্ষতি করতে পারবেন না। ‘

রিমির খুব সহজভাবেই কথাটি বললো। অয়ন ক্ষিপ্ত নয়নে রিমির দিকে একপলক তাকিয়ে কিছু একটা বিড়বিড় করতে করতে বেড়িয়ে গেলো। রিমি সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। লোকটার কান্ড তার প্রতি যেমন রিমির মনে ঘৃণায় মায়াজাল বুনে, তেমনি লোকটার অদ্ভুদ ভালোবাসা রিমির মনের সমস্ত ঘৃণাকে নিমিষেই দূর করে দেয়। রিমি যেন এক গোলক ধাঁধায় পড়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। এই মুহুর্তে তার কি করা উচিৎ সেইটাও বুঝতে পারছে না ঠিকমতো। রিমি জানালার দিকে তাকায়। চাঁদ তার আলো দিয়ে কি সুন্দর সৌন্দর্যময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। রিমির মুগ্ধ হয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। রিমির কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে,অয়ন জানালাটা বন্ধ করে দেয়। অয়নের উদ্ভুট কাজে অবাক হয় রিমি। অয়ন তার হাতের ট্রেটি বিছানায় রাখতে রাখতে বলে,

‘ চাঁদের দিকে ওইভাবে তাকিয়ে ছিলে কেন তুমি? এইভাবে তো আমার দিকে কখনো তাকাওনি তুমি।’
অয়নের উদ্ভুদ অভিযোগ শুনে, রিমি হতাশার সুরে বলে,
‘ চাঁদের সৌন্দর্যে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য ডক্টর এয়ারসি। ‘
রিমির কথায় অয়নের কপালের বলিরেখায় বিরক্তির ভাজ পড়ে যায়। নেত্রপল্লবে ক্ষোভ এসে হানা দেয়,যেন রিমির কথাতে বেশ বিরক্ত এবং রাগান্বিত অয়ন। অয়ন রিমির কাছে এগিয়ে, নিজের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে শীতল গলায় বলে,

‘ আমি যে তোমাতে গভীরভাবে নেশাক্ত! সেই খবর রাখো তুমি? তোমার পানে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে চেয়ে থাকি। সেই মুগ্ধতা তোমার চোখে পড়ে না? ‘
রিমি কিছু বলতে পারলো না। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো।
সেই তপ্ত অয়ন তা নিজের গলায় অনুভব করতে পারলো। অয়ন রিমির থেকে দূরে সরে গিয়ে, রিমির দিকে প্লেট থেকে খাবার নিয়ে, রিমির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

‘ নাও হা করো পরী। তুমি তো কিছুই খাওনি। তোমাকে আমি ওর্ডার করে গিয়েছিলাম তাও খাওনি। এইবার চুপচাপ খাবে তুমি। দেখো আমি নিজ হাতে খায়িয়ে দিচ্ছি। ‘
অয়নের শান্ত সুরের ধমকে রিমি অবাকের শীর্ষে চলে যায়। যে ছেলে নিজের হাতে কখনো খায়নি। আজ সে নিজ হাতে খায়িয়ে দিচ্ছে। রিমি চুপচাপ লক্ষ্যি মেয়ের মতো খেয়ে নেয়। অয়নের অধরের কোণে মিষ্টি হাসি বিদ্যমান। রিমিও মুচকি হাসি দেয়।

রিমি গাড়িতে বসে আছে মহিলা গার্ডসদেদ সাথে। আজকেও তাকে গার্ডসদের সাথেই হসপিটালে যেতে হবে। অয়ন সকাল সকালেই কোথায় যেন বেড়িয়ে গিয়েছিলো। এইবার রিমির সাথে দ্বিগুন গার্ডস রয়েছে,যেন রিমি দ্বিতীয়বারের মতো ভুল করতে না পারে। রিমির চোখ হঠাৎ গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে চলে যায়। রিমি স্পষ্ট দেখতে পায় ফারহান গাড়ি থেকে বেড়িয়ে, সামনে থাকা বড় একটি হসপিটালে প্রবেশ করছে। রিমি সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে বলে,

‘ গাড়ি থামান। ‘
রিমির চিৎকারে গাড়ি থামিয়ে দেওয়া হয়। গার্ডসরা অবাক হয়ে বলে,
‘ এনি প্রব্লেম ম্যাম? ‘
‘ আমার পেট অনেক ব্যথা করছে। প্লিয আমাকে এখুনি ডক্টরের কাছে নিয়ে যান। ‘

রিমি মিথ্যে কথাটি বলে যেন তাকে সামনে থাকা হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গেলেই রিমি ফারহানের রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হবে। রিমির কথায় গার্ডসরা উত্তেজিত হয়ে রিমিকে নিয়ে হসপিটালের ভিতরে নিয়ে যায়। রিমি এবং বাকি গার্ডসরা হসপিটালের ভিতরে ঢুকতেই, রিমি সকলের উদ্দেশ্যে বলে,
‘ আপনারা বাইরে দাঁড়িয়েই পাহাড়া দিন। আমি যাচ্ছি ডক্টরের কাছে। ‘
‘ কিন্তু ম্যাম? ‘

‘ কোন কিন্তু নয়। আপ্নারা বাইরে পাহাড়া দিন। আমি বলছি তো আমি পালাবো না। ‘
কথাটি বলেই তড়িঘড়ি করে সামনের দিকে এগিয়ে যায় রিমি। গার্ডসগুলোও কথা বাড়ায় না। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। রিমি আরেকটু সামনে আসতেই খেয়াল করে ফারহান এবং একজন ডক্টর একটি কেবিনের ভিতরে ঢুকে যায়। রিমিও সেদিকে এগিয়ে গিয়ে মুহুর্তেই একপ্রকার থমকে যায়। যেন তার দুনিয়াটিই পাল্টে গিয়েছে। রিমি স্পষ্ট দেখতে পায়
তার মামাতো বড় বোন সুমাইয়া কেবিনের ভিতরে অবস্হায় শুয়ে আছে। নেত্রপল্লব আদো আদো খোলা হলেও, মুখে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া নেই। রিমির মাথা ঘুড়াচ্ছে। রিমি ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে। যাকে এতোদিন মৃত্যু মনে করেছে,আজ তাকে জীবিত অবস্হায় দেখে রিমির সবকিছুই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

অয়ন তার হাতে থাকা রডটা ফেলে দেয়। কপালের বিন্দু বিন্দু জমে থাকা ঘামগুলো মুহুর্তেই আঙ্গুল দিয়ে মুছে ফেলে। অতঃপর ঝুঁকে যায় আমানের দিকে। আমানকে প্রায় আধাঘন্টা ধরে সে মেরেছে। আমানের শ্বাসটু্ুকুও উঠা-নামা করছে শুধুমাত্র। চোখটুকু খুলে রাখার সামর্থটুকুও নেই আমানের মাঝে। এতোক্ষন ধরে মেরেও যেন শান্ত হচ্ছে না অয়ন।

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ২৫

প্রচন্ড রাগ এসে হানা দিচ্ছে মস্তিষ্কে। মস্তিষ্ক যেন বার বার বলছে অয়নকে, ‘ অয়ন চৌধুরী মেরে ফেল আমান শিকদারকে। তোর এবং রিমিপরীর মাঝে আমান বাঁধা হয়ে এসেছে। আমানকে চিরতরের জন্যে সরিয়ে দেয়। ‘ কথাটি মাথায় এসে হানা দিতেই, অয়ন তার পকেট থেকে ধারালো ছুরি বের করে আমানের দিকে নিক্ষেপ করতে চাইলে, অয়নের ফোন বেজে উঠে। অয়ন ফোনটি তড়িঘড়ি করে রিসিভ করে। অতঃপর ওপাশ থেকে এমন কিছু শুনে, যা শুনে মুহুর্তেই তার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। অয়ন ক্ষোভ নিয়ে গর্জে উঠে বলে,
‘ ওহ শিট। ‘
অয়নের হাত থেকে ছুরি খানা পড়ে যায়। অয়ন কিছু না ভেবেই চটজলদি বেড়িয়ে যায়।

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ২৭