তুমিময় বসন্ত পর্ব ১১

তুমিময় বসন্ত পর্ব ১১
writer Mousumi Akter

আয়াসের অফিসকক্ষের রুমে দরজা উঁকি দিতেই দেখি আয়াস নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে খুব মনোযোগ সহকারে একবার ফাইল দেখছে আর একবার ডেস্কটপ এর কি-বোর্ড চাপছে।আমি পাঁচ মিনিট ধরে খেয়াল করছি আয়াসকে।মানুষ টা কাজে কত মনোযোগী।আয়াসের চোখে মুখে গভীর মনোযোগের ছাপ স্পষ্ট লেগে আছে।কপালে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবছে আর ফাইল দেখছে।বারবার ডেস্কটপ এ কিছু চেক করছে। আয়াস কি-বোর্ড এ খুব জোরে চাপ দিয়ে উচ্চারণ করলো ওহ শীট বলেই হাতের ফাইল টা ছুড়ে মারলো।মনে হচ্ছে কোথাও কিছু গড়মিল হয়েছে।কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছে আয়াস।আশে পাশের অনেক মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে দেখছে।সবার ফিসফিস করে বলা কথাও আমার কানে পৌছাচ্ছে।যে কথা আমাকে দেখে ফিসফিস করে বলা হচ্ছে সে কথা যদি আমার কানে পৌছাবে তাহলে বলার কি দরকার।তবে কেউ খারাপ কিছু বলছে না সবাই এটাই বলছে আয়াস স্যার এর ওয়াইফ ভারী মিষ্টি হয়েছে দেখতে।দুজন কে পাশাপাশি দাঁড়ালে মনে হবে যেনো ভাই-বোন এত মিল দুজনের চেহারার।আয়াস কি আমার ছবি দেখিয়ে ঢাক ঢোল পিটিয়ে বলে বেড়িয়েছে এই মেয়েকে আমি বিয়ে করেছি,এইযে আমার বউ।না বললে মানুষ জানলো কিভাবে।
আমি দরজায় উঁকি দিয়ে নরম কন্ঠে বললাম,

‘আসবো। ‘
আমার কন্ঠ শুনে আয়াস অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে।একটা মানুষ ভীষণ অবাক হলে চোখ মুখের ভাব যেমন হয় আয়াসের চোখ মুখের ভাব হুবহু তেমন।আয়াস এক নজরে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমার উপস্হিতি যেনো আয়াসের কাছে স্বপ্ন দেখার মতো।দুই ঠোঁটের মাঝ খানে কিঞ্চিত ফাঁকা অদ্ভুত ভাবে দেখছে আমাকে।আমি আবার বললাম,
‘আসবো।’
আয়াস এবার নড়েচড়ে বসে বললো,
“মুগ্ধতা তুমি।”
ভীষণ অবাক করা ছিলো তার কন্ঠস্বর।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি ভেতরে প্রবেশ করে আয়াসের খুব কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালাম।এতক্ষণ মন ভীষণ ছটফট করছিলো তাকে৷ দেখার জন্য।মনে হচ্ছিলো সে কি খুব অসুস্থ। তার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি ডান হাতে সাদা ব্যান্ডেজের কাপড় দিয়ে ব্যান্ডের করে রাখা।সকালে তো বাসা থেকে ভালো ভাবেই বের হয়েছিলো তাহলে এখন কি হলো।আয়াসের দিকে তাকিয়ে কিছু না ভেবেই আয়াসের কপালে হাত রাখলাম।তাকে ছোঁয়ার ইচ্ছা ছিলো না,তবুও ছুয়ে দেখলাম।এসব ই কেনো জানি অনিচ্ছায় করলাম,আবার না করলেও মনের মাঝে অশান্তি হচ্ছে।জানিনা কেনো ওর ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো ওর কপালে রাত রেখে দেখি ওর কি জ্বর এসছে কিনা, ওর কি শরীর অনেক খারাপ কিনা।আমি আয়াসের কপালে হাত রাখতেই আয়াস যেনো শিউরে উঠলো।আয়াসের শরীরে যেনো অবস হওয়ার উপক্রম।আমি আয়াস কে বললাম,

‘এখন কেমন লাগছে?’
আয়াস তাকিয়ে আছে আমার মুখের দিকে।অন্য মনস্ক ভাবে বললো,
“আগে কেমন ছিলাম জানিনা মুগ্ধতা তবে এখন মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ টা আমি,সব থেকে সুস্থ মানুষ আমি।”
আয়াসের চোখের গভীর চাহনী দেখে দ্রুত হাত সরিয়ে নিলাম আমি।কি ভাবছে আয়াস কি জানি।হুট করেই তার কপালে হাত ছুইয়ে যেনো লজ্জা পেলাম।নিজের ভেতরে জড়তা এসে ভর করেছে।আয়াস এবার ব্যাস্ত হয়ে বললো,

“ঘেমে কি অবস্থা হয়েছে তোমার।রোদের মধ্য দিয়ে এসেছো নিশ্চয়ই, ছাতা ছিলো বাসায় নিয়ে আসলে না কেনো।গরম লেগে যদি জ্বর হয় তোমার।বসো তুমি রেস্ট নাও।পাশের থেকে আরেক টা কালো গদির চেয়ার টেনে আমাকে নিজেই ধরে বসিয়ে দিয়ে আয়াস পকেট থেকে রোমাল বের করে আমার কপালের ঘাম মুছে দিলো।আলতো ভাবে কপালে রোমাল চেপে ধরে ঘাম মুছিয়ে দিতে দিতে বললো,এটা এর আগে কখনো ইউজ করিনি।তোমার কপালের ঘাম মোছানোর জন্য এক্সট্রা কিনে রেখেছিলাম।কখন কাজে লাগে বলা যায়।এইযে এখন কাজে লেগে গেলো।”
আয়াসের কথার মাঝে ভীষন ব্যাস্ততা,আর হ্যাপিনেস।একটা মানুষ ভীষণ খুশি হলে কথা বলতে গিয়ে যেমন একটার মাঝে আরেকটা বলতেই থাকে আয়াস ও হুবহু তাই করছে।ভীষণ আনন্দে ভীষণ এক্সাইটেড ভাবে কথা বলছে।
আমি আয়াস কে বললাম,

“আপনি অসুস্থ শুনে রোদ,নাকি বৃষ্টি খেয়াল ছিলো না।অসুস্থ হয়ে ও এত কাজ করার কি প্রয়োজন।”
“কাজ করাটায় তো আমার ডিউটি।কাজ না করলে কিভাবে হবে মুগ্ধতা।তবে আজ পর্যন্ত কেউ বলেনি এত কাজ করার কি প্রয়োজন।”
“একদিন কাজ একটু কম করলে খুব ক্ষতি হয়ে যাবেনা।রেস্ট নিবেন আজ আপনি।”
“এর আগে কেউ কখনো বলেনি আজ একটু কম কাজ করলে খুব ক্ষতি হয়ে যাবেনা।আজ রেস্ট নাও।”
“কেউ বলে নি তো কি হয়েছে।ডাক্তার কি বললো।”
“তুমি কিভাবে জানলে।”
“জেনেছি।”
“শফিকুল বলেছে। আমি তাকে একটা কাজে পাঠিয়েছিলাম এসব নিউজ পাচার করেছে গিয়ে।”
“ভাজ্ঞিস বলেছে নাহলে আমি জানতাম কিভাবে।আপনি জানেন আপনি অসুস্থ শুনে আমার হঠাত ভীষণ খারাপ লাগছিলো।জানিনা কেনো এমন হলো। ”
আয়াস মৃদু হাসলো,ভীষণ সুন্দর সে হাসি।আয়াস হাসলেই বেশী সুন্দর লাগে।আমি আয়াস কে সহ্য করতে পারিনা বলে কখনো প্রকাশ করিনি।তবে ওর মৃদু হাসিটা বেশী সুন্দর।
আয়াস আমার দিকে তাকিয়ে ডাকলো,

“মুগ্ধতা।”
এই ডাকের মাঝে ভীষন আবেগ আর আকুতি।মায়াবী এক সুর আছে আয়াসের হঠাত হঠাত আমার নাম ধরে ডাকার পেছনে।আমি ডাক শুনলাম।
“হুম।”
“একটা কথা বললো।”
“হুম।”
“তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে মুগ্ধপরী।প্রথম যখন দরজায় উঁকি দিলে তোমার পাতলা গোলাপি ঠোঁটে বললে আসবো। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।আমার দু’চোখ আটকে গিয়েছিলো তোমার মিষ্টি মুখে।মুগ্ধতা তোমার চোখ দুটো ভীষণ টানা টানা কাজল পরলে একটু বেশী সুন্দর লাগে।তোমার আরেক টা জিনিস আরো বেশী নজর কাড়ে মাইন্ড করোনা প্লিজ।তোমার ঠোঁট দেখতে ভীষণ সুন্দর। আমার বার বার তাকাতে ইচ্ছা করে। তোমার নাম টা যে মুগ্ধতা রেখেছে তাকে পৃথিবী শুদ্ধ সব ধন্যবাদ দিলেও কম হবে।কেননা পৃথিবীর সব মুগ্ধতা তোমার মাঝে লুকিয়ে আছে।”
“বেশী বেশী পাম দিচ্ছেন। সব ই আজেবাজে কথা।”

“জানি কারো মুখের উপর প্রশংসা করলে সে খুব লজ্জা পায়।তোমাকে আর লজ্জা দিতে চাইছি না।”
আমি খাবারের বক্স খোলার জন্য উঠে দাঁড়াতেই শাড়ির কুচি খুলে গেলো।কুচি হাতের মুঠোয় ধরে আয়াসের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।আয়াস আমার চাহনি দেখে বুঝে গেলো আমার সমস্যা।আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“শাড়ির কুচি কি খুলে গিয়েছে?”
“মনে হচ্ছে।”
“আমি ঠিক করে দিচ্ছি।তোমার শাড়ি ঠিক করে দেওয়ার বাহানায় তোমাকে একটু ছুঁতে পারি। রোজ ই এলোমেলো শাড়ি পরবে আর আমি ঠিক করে দিবো।”
এটুকু বলেই আয়াস নিচু হয়ে বসে আমার শাড়ির কুচি ঠিক করে বললো,
আমি কি কুচিগুলো গুজে দিবো।বলেই আয়াস উঠে দাঁড়ালো তার ভাবখানা এমন আমি আর দুই সেকেন্ড চুপ করে থাকলেই সে কাজ টা করে বসবে।
আমি ভীষণ লজ্জা পেলাম শুনে।দ্রুত তার হাত থেকে কুচি গুলো কেড়ে নিয়ে গুজে নিয়ে বললাম,
“আপনার জন্য খাবার এনেছি খেয়ে নিন।দুইদিন ঠিকভাবে না খেয়ে আপনি দূর্বল হয়ে গিয়েছেন।”
“কিভাবে খাবো মুগ্ধতা?”
“হাত দিয়ে।”

“আমাকে আরো কতদিন না খেয়ে থাকতে হবে তার ঠিক নেই।দেখো হাত কেটে গিয়েছে,পাতাবাহার গাছ সাইজ করতে গিয়ে।ডাক্তার ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে।কেউ খাইয়ে দিলে খাওয়া যেতো।বাট কেউ কি দিবে খাইয়ে।”
“চামচ দিয়ে খান।”
“আমি চামচ দিয়ে খেতে পারিনা।ওসব বড়লোকী ব্যাপার আমার পোষায় না।বুঝেছি কেউ হয়তো বলবে না আমি খাইয়ে দিচ্ছি।একজন কষ্ট করে খাবার এনেছে না খেলে সে কষ্ট পাবে।আর তার সামান্য কষ্ট আমার কাছে বহুগুন যন্ত্রনার সমান।যেকোনো ভাবে আমাকে খাবার খেতেই হবে।এখানে আমার ফ্রেন্ড আছে সারিকা ওকে বলি ও খাইয়ে দিবে।”

সাথে সাথেই আমার রাগ হয়ে গেলো অজানা কারনে কিন্তু প্রকাশ করতে পারলাম না।রাগে অটোমেটিক শ শরীর জ্বলে উঠলো।ব্যাপার টা মেনে নিতে পারছিনা উনাকে অন্য কেউ খাইয়ে দিবে।আমি উনাকে ভালবাসি আর না বাসি উনি তো আমাকে ভালবাসেন।তাই উনার পাশে অন্য মেয়ে আসুক এটা আমার ভাল লাগছে না।
আমি আয়াস কে বললাম,থাক সারিকা না ফারিকা তাকে ডাকা লাগবে না।আমি খাইয়ে দিচ্ছি।এটা ভাবার কারন নেই যে আমি ভালবেসে খাইয়ে দিচ্ছি।একটা মানুষ না খেয়ে থাকবে আমার কাছে ব্যাপার টা ভালো লাগবে না।যেহেতু আমি আছি তখন আমি খাইয়ে দিচ্ছি।আমি না থাকলে সারিকা না ফারিকা তার থেকে খেয়ে নিয়েন।
আয়াস ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।কিছু সন্দেহ করলো নাতো।ওভাবে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ক্যানো?যে ট্যালেন্ট এমনিতেই ভেবে বাড়তি কয়েকটা বলে বসবে তার ঠিক নেই।আয়াস কে নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দিলাম।যতক্ষণ খাইয়ে দিয়েছি ও এক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে অস্বস্তিতে ফেলেছে আমাকে।
আয়াস কে খাবার খাইয়ে দেওয়ার পর আয়াস বললো,

তুমিময় বসন্ত পর্ব ১০

“ইয়ে মুগ্ধতা কিছু পোড়ার গন্ধ পাচ্ছি।”
‘কি পোড়ার।”
“কারো মন।”
“কার মন।”
“বললে স্বীকার করবে না থাক বলবো না।তবে যেদিন সম্পূর্ণ পুড়বে ঠিক ই বলবো।”
এরই মাঝে একটা মেয়ে ইউনিফর্ম পরে আয়াসের রুমে প্রবেশ করলো।

তুমিময় বসন্ত পর্ব ১২

1 COMMENT

Comments are closed.