সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৫

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৫
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

বাহারি খাবারের গন্ধে চারিদিক মো মো করছে।রান্না প্রায় শেষের দিকে।সব কিছুর তদারকি করছে ফরহাদ নিজে।সায়েবার মা সোফার এক কোনায় মাথা চেপে ধরে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগেই সানোয়ার সাহেব এসেছিল এলাকার কিছু গণ্যমান্য লোকজনদের নিয়ে।এসেই খুব বিনয়ের সঙ্গে সাহেরা বেগমের সাথে কথা বলেছেন তিনি। নিজের কথার জালে এভাবে ফেসে যাবেন তা কল্পনা ও করেন নি সাহেরা বেগম। সানোয়ার সাহেব এসেই তার সাথে কুশল বিনিময় করে বললেন,

— ওইদিনের কথা মনে রাখবেন না আপা।পুরো ঘটনা টাই অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল।আমরা কেউ ভাবি নি লিজা এমন কিছু করবে। আমার স্ত্রী ছেলে কিন্তু আপনাদের হয়ে প্রতিবাদ করেছে। তার পরেও আমি ক্ষমা চাইছি। আমার ছেলেটা অনেক দূরে আছে।খুব আদরে তাদের বড় করেছি আমি।আপনি নিজের চোখেই দেখেছেন কতটা বিলাসিতায় বড় হয়েছে ওরা।আমার সেই ছেলে এখন অন্যের অধিনে চাকরি করছে।যেখানে আমার নিজের কোম্পানি তে সারে চার হাজার এমপ্লয়ি কাজ করে। বাবা হিসেবে নিজেকে ব্যার্থ মনে হয়। আমার একটা ছোট ভুলের জন্য এতো কিছু হচ্ছে। আপনি আর অমত করবেন না। ছেলেটা আমার পাগল হয়ে গেছে। খাওয়া ঘুম সব ছেড়ে দিয়েছে।আপনি কিন্তু কথা দিয়েছিলেন। এবার আপনার মেয়েটাকে আমাকে দিয়ে দিন।আমি তাকে আমার মেয়ের মতো করে রাখবো। তার কোন অসম্মান আমার বাড়ি তে হবে না আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সানোয়ার সাহেবের কথা শুনার পর আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না সাহেরা বেগম। আসলে এই কথার পৃষ্ঠে কি বলা যায় তিনি ভেবে পেলেন না।তার নিরবতা কেই সম্মতি মনে করে সানোয়ার সাহেব সবাই কে তাড়া দিলেন সব কাজ তারাতাড়ি শেষ করার জন্য। সায়েবা কে নিয়ে অনেকক্ষণ আগেই বেরিয়ে গেছে ফায়জা।সায়েবা যদিও যেতে চায় নি।ফায়জা ওকে জোর করে টেনে হিচরে নিয়ে গেছে।সব কিছু আমেরিকা বসে শুনছিলো ফারহান। তাকে ফোনে কানেক্টেড রেখেছে ফরহাদ।সাহেরা বেগমের কথা শুনে আগে থেকেই মিজাজ চড়ে ছিল ফারহানের।তার মধ্যে সায়েবার পার্লারে যাওয়ায় অসম্মতি জানানো আগুনে ঘি ঢালার কাজ করেছে।সামনে পেলে চড়িয়ে লাল করে দিত তাতে কোন সন্দেহ নেই। দাত কিড়মিড় করে বললো,

— এর জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে ধুলোর রানী।তোমার এই সামান্য অসম্মতি আমাকে সব চেয়ে বেশি রক্তাক্ত করেছে।আমি পাগলের মতো সবার সাথে তোমার জন্য লড়াই করছি!আর তুমি সামান্য নিজের মতামত টুকুও আমার পক্ষে দিলে না! অন্তত পক্ষে আমার পাশে তো থাকতে পারতে।তার মানে তোমার আমাকে ছাড়া ও চলবে।তবুও তোমার আমার হতে হবে। কারণ আমার তোমাকে ছাড়া চলবে না। শাস্তি টা না হয় আমার হয়েই ভোগ করলে।বিরহের আগুনে এবার আমার হয়ে তুমিই পুড়ো।আমি নাহয় তুমি আমার বলে নিজেকে শান্তনা দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাবো।

পার্লারে বসে উসখুস করছে সায়েবা।পার্লারের মেয়ে গুলো বিরক্ত হয়ে গেছে সায়েবার নড়াচড়ায়।মেয়েটা এবার বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললো,
— একটু শান্ত হয়ে বসুন ম্যাম।এতো নড়াচড়া করলে সাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
— আমার কিছু ভালো লাগছে না। যেকোনো এক ভাবে সাজিয়ে দিন তো। এতো ভালো করে সাজাতে হবে না।
পার্লারের মেয়াটা অসহায় চোখে তাকালো ফায়জার দিকে।
সায়েবার কথা শুনে বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে তাকালো ফায়জা।মুখ দিয়ে বিরক্ত সূচক শব্দ করে সায়েবার উদ্দেশ্যে বললো,
— তুমি কি বিয়েটা করতে চাইছো না সায়েবা?
সায়েবা অসহায় চোখে ফায়জার দিকে তাকালো। অস্থির গলায় বললো,
— আমি তো চাই বিয়ে টা হয়ে যাক আপুনি। কিন্তু মা তো রাজি নন।মায়ের অমতে,,
মাঝ পথেই থেমে গেলো সায়েবা।চোখ ছলছল করছে ওর।বাকি কথা গলায় আটকে গেলো। কান্না গুলো দলা পাকিয়ে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।
— তোমার মা কে রাজি করানোর দায়িত্ব আমাদের সায়েবা। তুমি আপাতত রেডি হওয়ায় মন দাও।
ফায়জা শান্তনা দিলেও টেনশন কমছে না সায়েবার।এক প্রকার যুদ্ধ করেই সাজানো শেষ করলো। পার্লারের মেয়েগুলো যেন হাফ ছেরে বাচলো।

ফারহান চোখ বন্ধ করে ডিভানে বসে আছে। যথা সম্ভব নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করছে। পরিবার ছেড়ে থাকা পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু নিজের ভালোবাসার মানুষ টাকে বিয়ে করার সময় সেখানে থাকতে পারছে না এই কষ্ট বুকের ভেতর হাহাকার করে তুলছে।আজ থেকে সায়েবা তার হয়ে যাবে।যার উপর একমাত্র তার অধিকার থাকবে।কিন্তু ইচ্ছে করলেই তাকে বুকে জরিয়ে নিতে পারবে না, তাকে সামনে বসিয়ে রেখে মনের তৃষ্ণা মিটিয়ে চোখ ভরে দেখতে পারবে না এটা কতটা কষ্টের তা একমাত্র সেই বুঝতে পারছে।এখন শুধু বধু বেসে তার প্রেয়সীকে দেখার অপেক্ষা।
— কি ভাবছো?
ইউসুফের কথায় চোখ খুলে তাকালো ফারহান। মলিন হেসে নিজের পাসে বসতে ইশারা করলো। ইউসুফ মুচকি হেসে ফারহানের পাশে বসলো।
— খুব চিন্তা হচ্ছে?
— নাহ।আব্বু সব ঠিক করে ফেলবে।
— তাহলে মন খারাপ করে আছো কেন?
— দূরত্ব খুব পোড়াচ্ছে।তাকে দেখার তৃষ্ণা ভিতরে ভিতরে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। যাকে এক মুহুর্ত না দেখে থাকতে পারতাম না তাকে আজ চারমাস হচ্ছে দেখি না। তোমাকে বোঝাতে পারবো না আমি আমার ঠিক কতটা কষ্ট হচ্ছে।

— তুমি কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ঘুরে আসতে পারতে ফারহান।সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তুমি গেলে না।গেলে তো এখন আর এই কষ্ট সহ্য করতে হতো না।
ইউসুফের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ফারহান।মলিন হেসে বললো,
— না ইউসুফ।আমি সায়েবার আম্মু কে কথা দিয়েছি। আমি আমার কথা রাখবো।নিজের যোগ্যতায় আমি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবো। ততদিন আমি বাংলাদেশে ফিরে যাবো না।
ইউসুফ তপ্ত শ্বাস ফেলে ফারহানের দিকে তাকালো। ছেলেটার মুখটা শুকিয়ে গেছে। ইউসুফ জানে ফারহান ভিতরে ভিতরে ভেঙে পরেছে।তবে গম্ভীর ফারহান তা কাওকে বুঝতে দিচ্ছে না। ইউসুফ ফারহান থকে তিন বছরের বড়।ফারহান কে ছোট ভাই হিসেবেই দেখে ও।তাই উইসুফের ও আজ ফারহান কে দেখে খারাপ লাগছে।

বিকেল চার টার দিকে সায়েবাদের বাসায় সব মেহমান চলে এলো। সায়েবা কে আনা হয়েছে আধঘন্টা আগে। সাহেরা বেগম নিরব সম্মতি দিলেও গুম হয়ে আছে। সব কাজ ফারহান আর সানোয়ার সাহেব সামলাচ্ছে। ফারহানা বেগম সমস্ত জুয়েলারি এনে সায়েবা কে পরিয়ে দিয়েছে।সায়েবার সৌন্দর্য যেন প্রতিটি মানুষের চোখ ঝলসে দিচ্ছে। ফায়জা বার বার আফসোস করে বলছে,
— ইসস,আমার ভাইটা না আবার তোমার এই রুপ দেখে হার্ট অ্যাটাক করে বসে।অপুর্ব লাগছে।ছেলে হলে আজ ফারহানের সাথে একটা কম্পিটিশন দেয়া যেত।
ফায়জার কথা শুনে সবাই হাসিতে ফেটে পরলো।সায়েবার বান্ধুরা ও সবাই এসেছে।এই অল্প সময়ের মধ্যে কেউই পরিপাটি হয়ে আসতে পারেনি।তাই নীতি আর সাবা এখানে এসেই নিজেদের সাজ কমপ্লিট করছে।নীল কোন রকম একটা পাঞ্জাবি পরে এসেছে।তিন বন্ধুর কটমট দৃষ্টিতে সায়েবা শুকনো ঢোক গিলছে বারবার।
ওদের হাসাহাসির মধ্যেই আদিব তার দলবল নিয়ে হাজির।সকাল থেকে ফরহাদের সাথে বাজার করে সব কিছু পৌঁছে দিয়ে গেছে।তারপর ওই বিসিএস ক্যাডারের ব্যবস্থা করতে গিয়ে বেচারার অবস্থা নাজেহাল।এসেই ফায়জার পাশে টান টান হয়ে শুয়ে পরলো।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৪

— হাত পা গুলো একটু টিপে দাও তো।আজ অনেক কাজ করেছি।এখন আমি ক্লান্ত।
ফায়জার দিকে উচু করে পা এগিয়ে দিয়ে বললো আদিব।ফায়জা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে আদিবের দিকে। এই ছেলেটা অতিরিক্ত পাকা।যাকে বলে ইঁচড়েপাকা। বেয়াদব টার সাহস কতো। ওকে বলে পা টিপে দিতে।আদিবের কথা শুনে সাবা গদগদ হয়ে বললো,
— আমি টিপে দেই আদিব ভাইয়া?
কথাটা বলেই যেন লজ্জায় মরে যাচ্ছে সাবা।ফায়জা দাত কিড়মিড় করে বললো,
— হ্যা হ্যা টিপে দাও।হাত পায়ের সাথে গলা টাও টিপে দিতে ভুলো না।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৬

2 COMMENTS

Comments are closed.