সায়েবা আসক্তি শেষ পর্ব  

সায়েবা আসক্তি শেষ পর্ব  
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

সাত মাসের উচু পেট নিয়ে ফায়জার রুমে বসে আছে সায়েবা।পার্লারের মেয়েগুলো ফায়জা কে বধু সাজাতে ব্যস্ত।শোয়েবের মৃত্যুর পর থেকে সায়েবা খুব একটা কথা বলে না।সব সময় চুপচাপ হয়ে বসে থাকে।ফারহান অনেক চেষ্টা করেছে সায়েবা কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার।কিন্তু ফলাফল শূন্য। সায়েবা নিজে থেকে কখনো চেষ্টা করে নি স্বাভাবিক হওয়ার। দেশের সবচেয়ে বড় সাইক্রেটিস্ট দেখিয়ে ও কোন লাভ হয় নি। তাই সব বাদ দিয়ে ফারহান নিজেই সায়েবা কে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।ফারহানের বিশ্বাস তাদের সন্তান পৃথিবীতে আসলেই সায়েবা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

আয়নায় সায়েবা কে দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ফায়জা।সায়েবার চোখের নিচে কালি পরে গেছে।গলার হাড় গুলু দূর থেকেই গুনা যাবে।সাহেরা বেগম তার ভাইয়ের কছে ইতালি চলে গেছে।সায়েবার সাথে কোন যোগাযোগ রাখে নি সে।তার ভাষ্যমতে, ফারহানের সাথে সায়েবার বিয়ে না হলে আজ এমন কিছুই হতো না।এই আশংকায় সে ফারহানের সাথে সায়েবা কে বিয়ে দিতে চায় নি।আজ তার আশংকা ই ঠিক হলো। তার বুক খালি করে দিলো ওরা।তার পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করলে সায়েবা আস্তে আস্তে ফারহান কে ভুলে যেতো। তাহলে আজ আর তার শোয়েব কে অন্ধকার কবরে থাকতে হতো না।শোয়েবের মৃত্যুর একমাসের মাথায় সে ইতালি পারি জমায়।যাওয়ার আগে সে কারোর সাথে কোন কথা বলে নি।সারাদিন শোয়েবের কবর থেকে একটু দূরে বসে থাকতো। রাত হলে ফারহান গিয়ে তাকে জোর করে নিয়ে আসতো। সাহেরা বেগম প্রথম প্রথম ফারহান কে সহ্য করতে পারতো না।হাতের কাছে যা পেতো তা দিয়েই আঘাত করতো।কিন্তু হঠাৎ করেই সে চুপ হয়ে গেলো। তার কয়েকদিন পরেই কাওকে কিছু না বলেই ইতালি তার ভাইয়ের কাছে চলে যায়।সায়েবার মামা সায়েবা কে কল করে জানিয়েছে তার ইতালি যাওয়ার কথা। সাহেরা বেগম স্পষ্ট জানিয়েছে তার ছেলের খু*নিদের সাথে সে কোন যোগাযোগ রাখবে না।বাকি জীবন সে এখানেই কাটিয়ে দিবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— তৈরি হবে না সায়েবা?
ফায়জার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো সায়েবা।আস্তে ধিরে চলে গেলো নিজের রুমের দিকে। তার তৈরি হওয়া মানে জিলবাব পড়া।
আজ আদিব আর ফায়জার বিয়ে।অনেক ঝড় ঝাপটা পার করে তারা আজ এক হচ্ছে। ফায়জা লাজুক মুখ দেখেই তার খুশি আন্দাজ করা যাচ্ছে। আদিব নির্লজ্জের মতো ফায়জা কেই দেখে যাচ্ছে। বন্ধুরা কয়েকবার খোচা দিয়ে কিথা বললেও তার সেদিকে কোন হেলদোল নেই।ড্রয়িং রুমের একপাশে সোফায় আফরিন বেগম আর ফরিদ সাহেব বসে আছে। তার বরাবর সানোয়ার সাহেব আর ফারহানা বেগম। নীতি রান্নাঘরে ব্যস্ত।সব কিছুর তদারকি তাকেই কর‍্যে হচ্ছে।

শোয়েবের ঘটনার পর সবার ভিতরেই নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেছে। সাহেরা বেগমের চলে যাওয়ায় সব চেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছে সায়েবা।কয়েকদিন একটানা কান্না করলেও এখন খুব একটা কাদতে দেখা যায় না তাকে।তবে মাঝে মাঝে মাঝ রাতে সায়েবার রুম থেকে চিৎকার করে কান্নার আওয়াজ শোনা যায়।সাথে বাকি সবার দীর্ঘশ্বাস ও।ফায়জার বিয়েতে শাহানা বেগম আসে নি।সে আজ পাচ মাস যাবত লিজা কে খুজে চলেছে।শোয়েবের মৃ*ত্যুর পর থেকে লিজা গায়েব।শাহানা বেগম আর তার স্বামী হাজার খোজাখুজি করেও লিজা কে খুজে পায় নি।হন্যে হয়ে বাংলাদেশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত খুজে চলেছে তারা। শাহানা বেগম কয়েকবার ফারহানের কাছেএসেছিলো।তার দৃঢ় বিশ্বাস ফারহান ই লিজা কে গায়েব করেছে।মেয়ের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত সে।কিন্তু ফারহানের কাছে এসে ও ফলাফল শূন্য। ফারহান মুখ খোলে নি।শক্ত গলায় শাহানা বেগম কে বাইরের রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে। শাহানা বেগম সেই থেকে এ বাসায় আর আসে না। সানোয়ার সাহেব ও বোন কে ডাকে নি আর।

মুখোমুখি বসানো হয়েছে আদিব আর ফায়জা কে।আদিব অবশ্য কয়েকবার নিজের লাজ লজ্জা ভুলে মাঝের পর্দা সরিয়ে ফায়জা কে দেখে নিয়েছে কয়েকবার।ফরহাদ হেসে কুটিকুটি হলেও ফারহান চোখ রাঙিয়ে দমিয়ে রেখেছে আদিব কে।আদিব পারলে ফায়জার কোলে চড়ে বসে থাকে।সবার হাসাহাসি তে ফায়জা লজ্জায় গুটিয়ে যাচ্ছে। মনে মনে কয়েক কোটি বার আদিব কে নির্লজ্জ ঘোষণা করা শেষ।আদিব ফারহানের কানে ফিসফিস করে বললো,
— ভাই বাসর ঘরে কখন যাবো?সময় তো সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। কাজ তারাতাড়ি শেষ কর ভাই।আমার কিন্তু আর তর সইছে না।সবার সামনে চুমু টুমু খেয়ে ফেললে আমাকে কিছু বলতে পারবি না।আমার আবার এতো ধৈর্য নাই।হায় হায়,আমার বউ এতো সুন্দর কেন?দেখেছিস,আমি কতো সুন্দরী বউ পেয়েছি!একেই বলে কপাল।

ফারহান বিরক্তি তে কয়েক বার মাথা নাড়লো। এই ছেলে আর এ জীবনে ঠিক হওয়ার নয়।সব সময় লাগাম ছাড়া কথা। মন চাইছে ঠাটিয়ে এক চড় বসিয়ে দিতে।ফারহান দাতে দাত চেপে কাজি সাহেব কে বললো বিয়ের কাজ শুরু করতে।সায়েবা আর নীতি ফায়জার দুই পাশে বসে আছে।ফায়জা শক্ত করে ওদের হাত ধরে রেখেছে।সাবা ও এসেছে ওর বরের সাথে। নীলের সাথে বিয়ে হয়েছে সাবার।যদিও দুজনের সম্পর্ক সাপে নেউলে।তবে সংসার টা বেশ গুছিয়ে ই করছে দুজন।
অবশেষে বিয়ের কাজ শেষ হয়েছে।ফায়জা সময় নিয়ে কবুল বললেও আদিব কাজি কিছু বলার আগেই কবুল বলে দিয়েছে।তার অনেক তাড়া বাসর ঘরে যাওয়ার।

পুরোটা সময় সায়েবা ছিলো নির্লিপ্ত। ফায়জা কে বিদায় দিয়ে রুমে এসে বসে আছে সে।আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে আদিব ফায়জা কে বিদায়ে কাদা তো দূর কাউকে কিছু বলার ও সুযোগ দেয় নি।পিছে তার পরীর মতো বউ কাদতে কাদতে পেত্নী হয়ে যায়!তাই ফায়জা কে জরুরি কথার বাহানায় বাইরে ডেকে নিয়ে যায়।দরজার বাইরে আসতেই ফায়জা কে টেনে লিফটে ঢুকে পড়ে। ফায়জা আশ্চর্যে হা করে ছিল। সম্ভতি ফিরতেই নিজেকে গাড়িতে আবিষ্কার করলো। আদিব ফারহান কে ম্যাসেজ করে গাড়ি স্টার্ট দিতেই ফায়জা চিৎকার করে গাড়ি থামাতে বললো আদিব কে।জবাবে আদিবের কথা শুনে মুহুর্তে মুখ বন্ধ হয়ে গেলো তার।বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে বসে রইলো সে।তা দেখে বাকা হাসলো আদিব।অনেক জ্বালিয়েছো সোনা।আজ আমার পালা।
ফায়জার গাল রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।ভয়,লজ্জা,উত্তেজনায় বুক কাপছে তার।তখকার আদিবের বলা কথা গুলো ভেবে চোখ বন্ধ করে ফেললো সে।তখন আদিব বলেছে,

— এখনই এতো চিৎকার কেন করছো জান।আমি তো এখনো কিছু করলাম ই না।কিছু চিৎকার রাতের জন্যও বাচিয়ে রাখো। তখন না হয় পরখ করে নিবো তুমি কতো চেচাতে পারো।
ফায়জা চোখ বন্ধ করেই বিরবির করে বললো,
— অসভ্য।

উষ্ণ আলিঙ্গনে কেপে উঠলো সায়েবা।পর পর কয়েকবার পেটে ঠোঁট ছুয়িয়ে উঠে দাড়ালো ফারহান।সময় নিয়ে চুমু খেলো সায়েবার কপালে, গালে,ঠোঁটে। বিউটি বোর্নে গভীর চুমু খেয়ে নিজের বুকে টেনে নিলো সায়েবা কে।শক্ত করে সায়েবার মাথা নিজের সাথে চেপে ধরে সায়েবার কানে ফিসফিস করে বললো,
— তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে রানী সাহেবা।এবার আমি তোমার মুখে তৃপ্তির হাসি দেখতে চাই বউ।তার সমস্ত ব্যবস্থা আমি করে ফেলেছি।কাল ই তুমি তোমার সারপ্রাইজ পেয়ে যাবে।আমি আমার আগের সায়েবা কে ফেরত চাই বউ।যে বারবার আমাকে চোখ রাঙাবে।একটু ভালোবাসা পাওয়ার লোভে আমাকে তার ভালোবাসায় উন্মাদ করে তুলবে।যাকে দেখলে আমার চোখ শীতল হয়ে যাবে।আমি আমার সেই সায়েবা কে ফেরত চাই।কথা দাও,দিবে তো সেই সায়েবা কে?

বাইরের অন্ধকার আকাশের দিকে একমনে তাকিয়ে আছে সায়েবা।এখন কোন কিছুতেই তার খুব একটা আগ্রহ হয় না। মাঝে মাঝে শোয়েবের সাথে করা খুনশুটি গুলো মনে পড়লে ভিতরে ভিতরে গুমরে মরে সে।সব কিছুতেই তিক্ততা। মন থেকে বেচে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে সে।নিজের উপর নিজেই বিরক্ত। কি দরকার ছিল এসব ভালোবাসার।আজ যদি সে ফারহান কে ভালো না বাসতো তাহলে শোয়েব তাদের মাঝে বেচে থাকতো। তার ভালোবাসা ই কাল হয়ে দাড়ালো তাদের জীবনে। এখন ফারহান কে ও অসহ্য লাগে। কাছে আসতে চাইলে গলা টি*পে ধরতে ইচ্ছে করে। এই আদর সোহাগের লোভে পরেই তো ভাই কে হারালো সে।এর চেয়ে ভালো নিজেকে শেষ করে দেয়া।সমস্ত লেটা চুকে যায়।

ফারহান আনমনা সায়েবার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। মেয়েটা কি আর কখনো ঠিক হবে না! এই প্রশ্ন তার শক্ত হৃদয়ে বারবার দুর্বলতা হয়ে আঘাত করছে।নিজেকে ধৈর্য ধরে সামলে রাখা মুশকিল হয়ে পরেছে।
আজ সায়েবা কে নিয়ে একটু উত্তরার দিকে যাচ্ছে ফারহান। পাচ মাস অনেক মেহনত করেছে সে।আজ তার ফলাফল পাওয়ার দিন।সায়েবার মুখের হাসি তাকে লেটার মার্ক নিয়ে উত্তির্ন করবে।
রাত আনুমানিক এগারো টা।উত্তরা শপং কমপ্লেক্স এর সামনে গাড়ি পার্ক করে সায়েবা কে সাবধানে নামালো ফারহান।টিস্যু দিয়ে কপালের ঘাম গুলো মুছে দিয়ে নিকাব টা একটু ঠিক করে দিলো।সায়েবা নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। এই দৃষ্টি বারবার ফারহান কে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়।

শপিং কমপ্লেক্সের সামনের ফুটপাতের দিকে এগিয়ে গেলো ফারহান।সায়েবার হাত তার বলিষ্ঠ হাতের মুঠোয় যত্ন করে আগলে রাখা।সায়েবা ফারহানের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ফুটপাতের কাছে কয়েকজন ভিক্ষুক বসে ভিক্ষা করছে।সবাই বৃদ্ধ হলেও তার মধ্যে একজন কম বয়সী মেয়েও আছে।যার দুটো চোখ ই নেই।এক কথায় পুরো পুরি অন্ধ সে।মেয়েটিও সবার মতো ভিক্ষা চাইছে।দেখে মনে হচ্ছে এ বিষয়ে খুব অভিজ্ঞ সে।ফারহান হাটুতে ভর দিয়ে বসলো মেয়েটার সামনে।পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে হাজার টাকার কয়েকটি নোট রাখলো থালায়। মেয়েটি হাত দিয়ে হাতড়ে বুঝতে পারলো কেউ তাকে অনেকগুলো টাকা দিয়েছে।খুশি তে নেচে উঠলো তার মন। আনন্দে আত্মহারা হয়ে বারবার ধন্যবাদ দিতে লাগলো ফারহান কে। ফারহান বাকা হেসে বললো,

— নতুন জীবন কেমন লাগছে লিজা?কোন অসুভিধা হচ্ছে না তো?
মুহুর্তেই কেপে উঠলো যুবতি।হাতের হাজার টাকার নোট গুলো খসে পড়লো নিচে।ভয়ার্ত মুখে গুটিয়ে নিলো নিজেকে। শব্দ করে হেসে উঠলো ফারহান।সায়েবা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। এই মেয়েটা লিজা কি করে হতে পারে?ছেড়া জামায় অন্ধ মেয়েটি কিছুতেই লিজা নয়! ফারহান সায়েবার অবস্থা বুঝতে পেরে ও কিছু বললো না।ঢাকা শহরে রাত এগারো টা মানে সন্ধ্যা। ফারহান লিজার দিকে তাকিয়ে ফিচলে গলায় বলল,
— বলেছিলাম না,আমার পরিবারের কারোর গায়ে একটা আচড় লাগলেও তোকে দুনিয়াতে জাহান্নাম দেখিয়ে দিবো।তোর কি মনে হয়, আমি আমার কথা রাখতে পেরেছি?
ডুকরে কেঁদে উঠলো লিজা।বারবার মাফ চাইতে লাগলো ফারহানের কাছে।ফারহান একটু ও মায়া দেখালো না।বিমর্ষ গলায় বলল,
— শোয়েব ও এভাবেই আকুতি করেছিলো তাই না রে?
চমকে উঠলো সায়েবা।তার মন বারবার বলছিলো লিজাই কিছু করেছে শোয়েব কে।কিন্তু এটাই যে সত্যি হয়ে যাবে তা সে কল্পনা ও করে নি। চৈত্রের খরার মতো শুকিয়ে যাওয়া চোখ গুলো তে হঠাৎ ই অশ্রুর প্লাবন দেখা দিলো। তবে মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারলো না।

— আমাকে ক্ষমা করে দাও ফারহান।আমাকে যেতে দাও।আমি আর কখনো তোমাদের জীবনে আসবো না।আমি দেশ ছেড়ে চলে যাবো। প্লিজ আমাকে যেতে দাও।
লিজার আর্তনাদে পাত্তা দিল না ফারহান। খুশি খুশি গলায় বলল,
— তা কি করে হয়?এখন তো তোকে আমাদের জীবনে খুব দরকার। আমাদের চোখের শান্তির জন্য হলেও তোকে দরকার।তোর এই করুন পরিনতি দরকার। তোর বাবা তোকে রাজরানী বানানোর আশায় সব কিছু তে তোকে সাহায্য করেছে।এখন তোকে পাগলের মতো যখন চারিদিকে খুজে বেড়ায় তখন আমার মনে শান্তির পরশ দিয়ে যায়।তার মেয়ে যে এখন রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করছে এটা যখন জানবে তখন কেমন হবে বল তো? ভাবতেই তো শান্তি লাগছে।
লিজার কান্নার বেগ বেড়ে গেলো। নাইট ক্লাবে পার্টি করা মেয়েটা আজ রাস্তায় ভিক্ষা করছে। ফারহান তার চোখ গুলো নষ্ট করে দিয়েছে। একটা হাত আর একটা পা ও অকেজো। একটি ছেলে সারাক্ষণ তাকে পাহারা দিয়ে রাখে।যাতে সে কোন ভাবেই পালাতে না পারে।একেকদিন একেক জায়গায় নিয়ে যায় ভিক্ষা করানোর জন্য। সব টা ফারহানের নির্দেশে। শোয়েব কে মা*রার কথা লিজা নিজ মুখে শিকার করেছে।তাকে সাহায্য করেছে তার বাবা।উদ্দেশ্য ছিল সায়েবা,কে সায়েস্তা করা।
— বেচারি কে কিছু টাকা ভিক্ষা দাও সায়েবা।
সায়েবা কিছু না বলে সেখানেই ফারহান কে জরিয়ে ধতে কাদতে লাগলো। কষ্টের পাথর গলতে শুরু করেছে যে।

জানালার পর্দা টা একটু পর পর মৃদু বাতাসে উড়ে উঠছে।দুজন মানব মানবীর ভাড়ী নিশ্বাসে রুমের উষ্ণতা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।এতো বছরের অপেক্ষার শোধ আদিব কড়ায় গন্ডায় উশুল করে
নিচ্ছে। ফায়জা মাঝে মাঝে আর্তনাদ করে উঠলেও সে দিকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না আদিব।সে এখন ফায়জা তে মত্ত।কিছুক্ষণ পর ফায়জা ডুকরে কেঁদে উঠতেই ফায়জা কে ছেড়ে দিলো আদিব।ফায়জার কপালে চুমু খেয়ে নেশালো গলায় বলল,
— বলেছিলাম না, আমাকে দেয়া যন্ত্রণা কড়ায় গন্ডায় ফিরত দিবো।আজ থেকে প্রতি রাতে তুমি ও কাদবে।পার্থক্য শুধু এতটুকু আমি তোমার অবহেলায় কেদেছি,তুমি আমার ভালোবাসায় কাদবে।বুঝেছো সোনা।
ফায়েজা আদিবের বুকে কয়েক ঘা লাগিয়ে উল্টো ঘুরে শুয়ে পরলো।আদিব মুচিকি হেসে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো ফায়জা কে। ফায়জার লম্বা চুলে মুখ ডুবিয়ে গাঢ় চুমু খেয়ে আগলে নিলো তাকে।ফায়জা ও চুপ করে পরে রইলো আদিবের বুকে।
চার বছর পরে,,,,

সায়েবা বিরক্ত হয়ে ফারহান আর তার চার বছরের ছেলে ফারশিতের দিকে তাকিয়ে আছে।দুজনেই গম্ভীর হয়ে ল্যাপটপে কিছু একটা দেখছে।সায়েবা কে কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না।সায়েবা আবার ও প্রেগন্যান্ট। চার মাস চলছে।ফারশিত হওয়ার সময় সায়েবার অনেক প্রবলেম হয়েছিলো। তাই ফারহান আর বাচ্চা নিতে চায় নি।কিন্তু সায়েবার জেদের কাছে হার মানতে হলো তাকে।সাহেরা বেগম মেয়ের এই সময় মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারে নি।সে চলে এসেছে সায়েবার কাছে।ফারশিত হওয়ার পরে তাকে কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। ফারশিত দেখতে অনেকটা শোয়েবের মতো। নাক আর ঠোঁট পুরো শোয়েবের মতো হলেও চেহারার আদল ফারহানের। এ নিয়ে সায়েবার আফসোসের শেষ নেই।ছেলেটা কেন তার মতো হলো না!হয়েছে ও বাপের মতো গম্ভীর। আল্লাহর কাছে বিরবির করে প্রার্থনা করছে সায়েবা।মেয়েটা যেন তার মতো হয়।এতগুলো করলা নিয়ে সংসার করা যায় না।

নীতি আর ফরহাদের এখনো কোন ছেলে মেয়ে হয় নি। তাতে তাদের কোন আফসোস নেই।আল্লাহ যখন চাইবে তখন হবে।নীতি মাঝে মাঝে মন খারাপ করলেও ফরহাদ সামলে নেয়।সাবা আর নীলের এক ছেলে। দুই বছর বয়স।তারা এখন কানাডায় সেটেল্ড হয়ে গেছে।তবে কথা হয় ফোনে নিয়মিত। ফায়জা আর আদিবের টুইন মেয়ে হয়েছে।দেখতে একেবারে পুতুলের মতো। আদিব মেয়ে অন্ত প্রান।মেয়েদের ছাড়া সে অচল।তবে ফায়জার উপর প্রতি*শোধ সে এখনো নেয়।সকালে ফায়জার ফোলা ফোলা লাল লাল চোখ দেখে তৃপ্তির হাসি হেসে বলে, তোমার এই কান্নায় ফুলে যাওয়া চোখের প্রেমে বারবার আছাড় খেয়ে পড়ি বউ।ফায়জা শুধু দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কেন যে এই ছেলে কে বিয়ে করতে গিয়েছিলো!

সায়েবা আসক্তি  পর্ব ৪১

আজ সায়েবার ডেলিভারি। হসপিটালের সামনে গাড়ি থামতেই তৃপ্তির হাসি হাসলো সায়েবা।সামনের রাস্তায় লিজা বসে ভিক্ষা করছে।সে আর ফারহান ছাড়া এ বিষয়ে কেউ জানে না।তাই সেদিকে কারোর ধ্যান নেই। ফারহানের বুকে মাথা রেখে সেদিকে তাকিয়ে রইলো সায়েবা।ভাইয়ের থেতলানো মুখটা ভেসে উঠতেই গাল বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরলো।ফারহান যত্ন সহকারে মুছে দিলো সেই অশ্রু।কপালে চুমু খেয়ে এগিয়ে গেলো হসপিটালের দিকে।যেখানে নতুন এক অধ্যায় তাদের জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে।

সমাপ্ত

3 COMMENTS

Comments are closed.