সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৯

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৯
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আশার সাথে কথা বলছে আদিব।সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ফায়জা।মন কে শান্তনা দিলো,যা হচ্ছে ভালো হচ্ছে। বাস্তবিক অর্থে এটাই হওয়ার ছিলো। পাশাপাশি বারান্দায় দাঁড়িয়ে দুজন। একজন অন্যকে নিয়ে ব্যাস্ত।আরেকজন নিকষ কালো অন্ধকার আকাশ দেখতে।আড়চোখে ফায়জা কে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে আদিব।ফায়জার উদাস দৃষ্টি ভাবিয়ে তুলছে তাকে।সে ডাক্তার না হলেও এটা খুব ভালো করেই জানে ডিপ্রেশন মানুষ যে বারবার আত্মহত্যার দিকে নিয়ে যায়।ফায়জা কে এখন যথেষ্ট হাসিখুশি রাখা উচিত। কিন্তু এই মেয়ে নিজেই ডিপ্রেশন কে আমন্ত্রণ করে বসে আছে। এখানে তার ই বা কি করার আছে!
— ওদিকে এতো কি দেখছো?আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে।
আদিব আতংকিত গলায় বলল,

— দূরে সর। কাজিন জাতি কে আমি খুব ভয় পাই।এই কাজিন জাতির জন্য আমার জীবন সাত তালায় এসে ঝুলে আছে। প্রেমিকার কাজিন যে আগুন লাগিয়েছে তাই এখনো নিভাতে পারলাম না।তুই আবার কোন আগুন লাগাস না বোন।
আশা মুচকি হেসে আদিবের গা ঘেষে দাড়ালো। ফিসফিস করে কানের কাছে বললো,
— তোমার এবার বিয়ে করে ফেলা উচিত ভাইয়া।কানের কাছের দুটো চুল পাক ধরেছে।এর পর আর মেয়ে পাবে না। তাই যা করার তারাতাড়ি করতে হবে। বুঝেছো?
বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়ালো আদিব।কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— কিন্তু বউ তো রাজি না।
আশা চেহারায় গম্ভীর ভাব এনে বললো,
— রাজি না হলে রাজি করাতে হবে। আজকে এর একটা হেস্তনেস্ত করেই আমরা দম নিবো।আজ বিয়ে করবে না হলে জটাধারী হয়ে বাড়ি ছাড়বে।
— এই তুই আমাকে ঘর ছাড়ানোর প্ল্যান করছিস না তো।এই নিষ্ঠুর মেয়ে কোন দিন ও রাজি হবে না।তাহলে আমার বাড়ি ছাড়া অনিবার্য।
আশা কুটিল হেসে আদিব কে বিভ্রান্ত করে ফেললো।
— সে আজ ই তোমাকে বিয়ে করবে।বিয়ের প্রিপারেশন নিয়ে ফেলো।চট করে গিয়ে শপিং টা করে ফেলো। এদিক টা আমি সামলে নিচ্ছি।

আদিব ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো আশার দিকে।এদিকে ফায়জা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাদের দিকেই তাকিয়ে।
আরো কিছুক্ষন কথা বলে আদিব চলে গেলো বারান্দা থেকে। আশা নিজের ফোনে ব্যস্ত হয়ে গেলো। ভাব টা এমন সে ফায়জা কে দেখেই নি।ফায়জার দৃষ্টি আশার দিকে। মেয়েটার হাবভাব ভালো লাগছে না তার কাছে।
আশা আড়চোখে ফায়জার দিকে তাকিয়ে ফোন কানে ধরলো। গোপনীয় ভঙ্গিতে বলতে লাগলো,
— হ্যালো আম্মু।হুম এদিকে সন ঠিক আছে।সব প্ল্যান মতো ই হচ্ছে। আদিব বলেছে ওই মেয়েটা রাজি না হলে সে এবার আমাকেই বিয়ে করে ফেলবে।মেয়েটা রাজি হয়নি বুঝেছো।তাই তারাতাড়ি বিয়েটা সেরে ফেলতে হবে। তারপরেই আমাদের আসল খেলা শুরু। পৈচাশিক হাসি তে ফেটে পড়লো আশা।এদিকে ফায়জা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আশার দিকে।এই মেয়েটার মধ্যে অনেক ঝামেলা আছে নিশ্চিত। আদিবের কোন ক্ষতি করতে চাইছে না তো!ফায়জার মাথা ঘুড়তে লাগলো।তড়িঘড়ি করে কল করলো আদিব কে।কয়েকবার রিং হতেই কল রিসিভ করলো আদিব।

— আসসালামু আলাইকুম আপু।হঠাৎ কল দিলেন!কোন প্রয়োজন ছিলো?
ফায়জা হতভম্ব হয়ে সালামের জবাব দিতে ভুলে গেলো। তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। সম্ভতি ফিরিতেই গম্ভীর গলায় বলল,
— ওয়ালাইকুম আসসালাম।শুনলাম বিয়ে করছো?
— হ্যা।আর কতো অপেক্ষা করবো বলুন?
আদিবের গলায় হতাশা স্পষ্ট। ফায়জা বুঝতে পেরে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। অস্পষ্ট গলায় বলল,
— কাকে বিয়ে করছো?
— আমার কাজিন কে।আশা নাম ওর।চেনো নিশ্চয়ই?
— হুম।
— আশা খুব ভালো মেয়ে।
— আদিব,ঠান্ডা মাথায় আমার কথা গুলো শুনবে। রিয়্যাক্ট করবে না।আশা কি বিয়ে করো না।ও কোন উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য তোমাকে বিয়ে করতে চাইছে।
ফায়জার অস্থির গলা শুনে মলিন হাসল আদিব।মলিন গলায় বলল,
— তুমি ছাড়া আমার জীবনে যদি অন্য কেউ আসে তাহলে সে কি উদ্দেশ্য নিয়ে এলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না।সে যদি আমাকে মেরে ও ফেলে তাতে ও আমার কিছু যায় আসে না। অনুভূতিহীন হয়ে বেচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ই ভালো।
— তাই বলে জেনেশুনে,,,

— শেষ বারের মতো জিজ্ঞেস করছি,বিয়ে করবে আমায়?ভালোবাসার মানুষকে পাওয়া সবার নসিবে হয় না জান।তুমি বারবার তাকে পায়ে ঠেলে দিচ্ছো।ভালোবাসা ছাড়া থাকতে পারবে তো সারাজীবন? কাটাতে পারবে তো একটা জীবন আমিহীন?আমি যদি একবার আশা কে বিয়ে করে নেই তাহলে সারাজীবনের জন্য আমাকে হারাবে।শত ভালোবাসা থাকলে ও ফিরে তাকাবো না তোমার দিকে।তাই ভেবে উত্তর দিয়ো।
চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিলো ফায়জা।সে কিছুতেই আদিব কে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারবে না।সামনে আদিবের বিপদ দেখে তো আরো আগে পারবে না।
— আমি রাজি।
সাথে সাথেই কল কেটেছে ফায়জা।বুক অসম্ভব ভাবে কাপছে।এদিকে মাঝ রাস্তায় টান টান হয়ে শুয়ে পড়েছে আদিব। এই মাঝ রাস্তায় ই তো এতো সুখের একটা মুহুর্ত পেয়েছে সে।ইচ্ছে করছে এখানেই ঘর বাড়ি বানিয়ে সংসার শুরু করতে।আচ্ছা, সরকার কি তাকে দিবে এই রাস্তাটুকু?চারিদিকে এতো সুখ সুখ লাগছে কেন?

–আমি রেগে আছি।
— কেন?
— আপনি আর আমাকে ভালোবাসেন না।
বলতে বলতে ফেচফেচ করে কেদে দিয়েছে সায়েবা।ফারহান হতাশ চোখে তাকিয়ে আছে সায়েবার দিকে।
— তোমার এমন কেন মনে হলো?
— তা নয়তো কি?আমার দিকে ফিরে ও তাকাচ্ছেন না।বিয়ে তো ও নিয়ে যাচ্ছেন না।আমার বেস্টুর বিয়ে।একটু নিয়ে যান না। প্লিজ।
সায়েবার আকুতি কে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে ঘড়ি পরায় মন দিলো ফারহান।সায়েবার কান্না বেড়েই চলেছে। ড্রেসিং টেবিলের থেকে চোখ সরিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে গেলো সায়েবার দিকে।ফোলা ফোলা চোখে সেদিকে তাকিয়ে টিস্যু দিয়ে সর্দি মোছায় ধ্যান দিলো সায়েবা।নাক মুছতে মুছতে লাল করে ফেলেছে সে।সায়েবার আদুরে মুখের দিকে তাকিয়েই কল করলো ফরহাদ কে।
— আমি তোমার বিয়ে তে না থাকলে কি তুমি কষ্ট পাবে ভাই?
ফরহাদ অবাক হয়ে গেলো ফারহানের কথা শুনে। অস্থির গলায় বলল,

— কি হয়েছে ভাই?এ কথা বলছিস কেন?তুই আমার একমাত্র ছোট ভাই।না গেলে খারাপ লাগবে আমার।
সায়েবা কান্না বন্ধ করে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। লোকটার মাথা খারাপ হলো নাকি!কি সব বলছে?
— আমার বউ যেতে পারবে না বলে কেদে কুটে মুখ চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।তাকে এই অবস্থায় রেখে কি করে যাই বলো তো? নিয়ে ও তো যেতে পারবো না।বাইরে খুব গরম।এই অবস্থায় বোরকা পড়ে এতো ভীড়ের মধ্যে কিভাবে থাকবে ও?ডক্টর রেষ্টে থাকতে বলেছে পুরো পুরি।তোমরা চলে যাও।আমি সময় মতো পৌঁছে যাবো।
ফরহাদ ছোট্ট করে হুম বলে কেটে দিয়েছে।ফারহান সায়েবা কে বিছানা থেকে তুলে নিজের কোলে বসালো।লাল লাল গালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে নিজের ফোন ধরিয়ে দিলো সায়েবার হাতে।ভিডিও কলে নীতি আর সাবা কে দেখা যাচ্ছে।
— কাদিস না জানু।কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি ও বাড়ি চলে আসবো। আমার ও খারাপ লাগছে।
নীতির কথা শুনে হাসলো সায়েবা।বন্ধবির মন ভালো করায় লেগে গেল সবাই।ফারহান কে দেখা যাচ্ছে না ভিডিও তে।সায়েবা ওদের সাথে কথা বলে ফোন এগিয়ে দিলো ফারহানের দিকে। ফারহানের ঘোর লাগা দৃষ্টি তার দিকেই।

— ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে তো।
— অসভ্য। এই যান তো আপনি। এখানে কি?
— উহু।এখন তো এসব বললে হচ্ছে না।কাদলে কেন?বলেছি না তুমি কাদলে আমার ভয়ংকর আদর পায়।আদর পাওয়ার এতো বাহানা!
সায়েবা লজ্জা, রাগ,অভিমানের মিশ্র অনুভূতি নিয়ে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। যে এই মুহুর্তে সায়েবা কে ভালোবাসতে ব্যাস্ত।
দরজায় একের পর এক কড়াঘাতে সায়েবা কে ছাড়তে বাধ্য হলো ফারহান।দুজনেরই ঘন নিশ্বাস জানান দিচ্ছে তাদের অস্থিরতা। এদিকে দরজার ওপাসের ব্যাক্তির হয়তো এসবে ধ্যান নেই।ফারহানের কপালে সুক্ষ্ম ভাজ পড়লো। সায়েবা কে কোলে করে ওয়াশরুমে নামিয়ে দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললো। সায়েবা ও সায় দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।নিজেকে গুছিয়ে দরজা খুলতেই সাহেরা বেগম আর্তনাদ করে কাদতে লাগলো। ফারহান আকড়ে ধরলো তাকে।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৮

— কি হয়েছে মা?কাদছেন কেন?(অস্থির হয়ে)
সাহেরা বেগম কাপা কাপা হাতে ফোন এগিয়ে দিলো ফারহানের দিকে। ফারহানের দৃষ্টি ফোনের স্ক্রিনে পরতেই স্থির হয়ে গেলো সে।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৪০