সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৮

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৮
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

একটা ছেলের গা ঘেষে থাকতে তোমার লজ্জা করে না!
ফায়জার গম্ভীর গলায় উক্ত বাক্যটি শুনে লাজুক হাসলো মেয়েটি।চেহারায় ন্যাকা ন্যাকা ভাব এনে বললো,
— এমন ড্যাশিং একটা ছেলের গা ঘেষে থাকতে পারা তো ভাগ্যের ব্যাপার। আমার আদিব কে দারুণ লাগে।অসম্ভব কেয়ারিং একটা ছেলে।এই দেখুন, আমার শাড়ি টা ও নিজে সিলেক্ট করে দিয়েছে।
— পড়িয়ে দেয় নি?(দাতে দাত চেপে)
— ইসস,,কি যে বলেন না আপু!শাড়ির কুচি গুলো তো সে ই ঠিক করে দিয়েছে। আমার তো তখন খুশিতে ম*রে যেতে ইচ্ছে করছিলো।
— তাহলে বেচে আছো কেন?

ফায়জার কথা শুনে হচকচিয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিল সে।কপালের উপর পরে থাকা চুক গুলো কানের পাশে গুজে লাজুক ভঙ্গিতে বললো আশা।সম্পর্কে আদিবের ছোট খালার মেয়ে।তার মা বাবা ইতালি প্রবাসী। সে ও তাদের সাথেই থাকে।কয়েক দিন আগে আদিবের জরুরি তলবে দেশে এসেছে আশা।
ফায়জা কটমট করে তাকিয়ে আছে আশার দিকে। তাতে বিন্দুমাত্র পাত্তা দিচ্ছে না সে।চোখ ঘুড়িয়ে এদিক ওদিক আদিব কে খুজে চলেছে। মনে হচ্ছে আদিব কে এক মুহুর্ত না দেখে সে মা*রা যাচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ফায়জার বিরক্তি এবার আকাশ ছুয়েছে।ছোট ছেলের প্রেমে পড়লে এই এক জ্বালা।রিজেক্ট কি করেছে, সাথে সাথেই আরেক জনের গলায় ঝুলে পড়েছে।আবার শাড়ি ও পড়ানো হচ্ছে। বেহায়া মন টার ও শেষ পর্যন্ত এই ঢিলা ছেলের প্রেমে পড়তে হলো! প্রেমিক হওয়ার বেসিক কোন গুণ ই নেই ফালতু ছেলের।অথচ তার ভাই কে দেখো!বউয়ের প্রেমে দিওয়ানা হয়ে আকাশে বাতাসে উড়ছে।আরেক জন গোপন ভালোবাসার পি এইচ ডি করে ফেলেছে।একমাত্র সে ই এভাবে পাবদা মাছের মতো হা করে আছে। ফায়জা গমগমে পায়ে এগিয়ে গেলো ফারহানা বেগমের দিকে। শাহানা বেগম,সাহেরা বেগম সহ অনেকেই সেখানে গল্প করছে।আফরিন বেগম ও আছেন সেখানে।পাশেই এক ছেলের সাথে কথা বলছে আদিব।সম্ভবত কোন কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে। ফায়জা আগুন চোখে সেদিকে একবার তাকিয়ে ফারহানা বেগম কে ডাকলো।ফারহানা বেগম শুনে ও না শোনার ভান করে আছে।পর পর কয়েকবার ডাকতেই ফারহানা বেগম কপাল কুচকে বললেন,

— ছাগল ছানার মতো ম্যা ম্যা করছো কেন?কি চাই তা বলো।বড় হয়েছো, এখন আর আম্মু কে লাগবে কেন?সব সিদ্ধান্ত তো নিজেই নিতে পারো।
ফায়জা কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো মায়ের দিকে।ফারহানা বেগমের কথা সম্পুর্ন অগ্রাহ্য করে গম্ভীর গলায় বলল,
— তোমার মেয়ে বুড়ো হয়ে যাচ্ছে সে খেয়াল আছে?ছেলে দেখো আমার জন্য। যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে করবো আমি। ,ছেলে যাতে শাড়ী পড়াতে না পারে এমন ছেলে খুজবে।শাড়ি পড়াতে পারা ছেলে আমার একদম পছন্দ না।
ফারহানা বেগম মেয়ের উপর বেজায় বিরক্ত।এ কেমন কথা!এখন কি ছেলে ধরে ধরে জিজ্ঞেস করবে শাড়ি পড়াতে পারো কি না!আমার মেয়ে শাড়ি পড়াতে জানা ছেলে একদম ই পছন্দ করে না।আদিব স্থির চোখে তাকিয়ে আছে ফায়জার দিকে।মনে মনে এই মেয়েকে একশ বার খু*ন করে ফেলেছে সে এতক্ষণে। এখন শুধু হাতে করা বাকি।তবে খু*ন করার আগে সে একটা ভয়ংকর লজ্জাজনক চুমু খেয়ে নিবে।তার সন্দেহ, এতেই এই মেয়ে লজ্জায় ম*রে যাবে। রক্তা রক্তির কোন প্রয়োজন নেই। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে কঠোর গলায় বলল,

— আমাকে শক্ত করে ধরে থাক।যাতে আমি ওই মেয়েটার ধারে কাছে ও এখন যেতে না পারি।আজ যদি মেয়েটা আমার হাতে খু*ন হয় তাহলে তোকে আমি দেখে নিবো।তোর ভুলের জন্য আমি সারা জীবন সিঙ্গেল থাকতে পারবো না।নে ধর,শক্ত করে হাত ধরে থাকবি।
ছেলেটা বোকার মতো তাকিয়ে রইলো কয়েক সেকেন্ড। এখানে তার ভুলটা কি খোজার বিন্দুমাত্র চেষ্টা না করে আদিবের হাত ধরে রাখলো শক্ত করে। আদিবের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফায়জাতে নিবদ্ধ।

সায়েবা অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে।জ্ঞান ফিরতেই সে নিজেকে ফারহানের বাহুবন্ধনে আবিস্কার করেছে।মনের মধ্যে প্রশান্তি বয়ে গেলেও আচানক ফারনার উষ্ণ স্পর্শে কেপে উঠে সে।ফারহান একের পর এক চুমু খেয়ে যাচ্ছে সায়েবার পেটে।এদিকে সুরসুরিতে অবস্থা নাজেহাল সায়েবার।ফারহান কে বলতেই সে চুমুর গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।
— এবার থামুন প্লিজ।কি করছেন কখন থেকে।
— বিবাহিত মেয়েদের সুরসুরি থাকতে নেই বউ। আজ সুরসুরি শেষ করার ব্যবস্থা করছি।আর কোথায় কোথায় সুরসুরি আছে বলে দাও তো।প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সায়েবা কথা বলতেই ভুলে গেলো। মুখ ফুলিয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো। ফারহান পেট থেকে সরে এসে সায়েবার মাথা টা নিজের বুকে চেপে ধরলো। ভরাট গলায় বলল,
— আমাকে এতো খুশি দেয়ার জন্য ধন্যবাদ বউ।আমাকে বাবা ডাক শোনার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমরা পেরেন্টস হচ্ছি।

সায়েবা অবাক চোখে তাকালো ফারহানের দিকে। চোখ থেকে কয়েক ফোটা অশ্রু ঝড়ে গেলো সাথে সাথে। কাপা কাপা হাত টা পেটে রেখে ডুকরে কেদে উঠলো সে।ফারহান আগলে নিলো তার প্রেয়সী কে।শব্দ করে চুমু খেলো সায়েবার মাথায়।আর অপেক্ষা করতে লাগলো সুখের কান্না থামার।এখনো যে ভালোবাসায় সিক্ত হওয়া বাকি।

ফরহাদের ফোন রিসিভ করছে না নীতি। কি নিয়ে রেগে আছে হাজার বার চিন্তা করে ও খুজে পায়নি সে।তাই একের পর এক কল করেই যাচ্ছে। উদ্দেশ্য হবু বউয়ের রাগ ভাঙানো।
— কি সমস্যা??
নীতির প্রশ্নে মুচকি হাসলো ফরহাদ।শান্ত গলায় বলল,।
— কোন সমস্যা নেই তো?
— তাহলে এতো বার কল দিচ্ছেন কেন?(রেগে)
— তুমি বড় আম্মু হচ্ছো সেই সংবাদ দিতে।
— মানে?
— মানে আমি বড় আব্বু আর তুমি বড় আম্মু হবো খুব তাড়াতাড়ি। সায়েবা কনসিভ করেছে।
— সত্যিই!!!
নীতি খুশিতে চিৎকার করে উঠেছে।সাবা ওর পাশেই ছিলো। সে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীতির দিকে।

— আমার আর তর সইছে না।ইসস কখন যেতে পারবো ও বাড়িতে।
শেষের কথাটা মন খারাপ করে বললো নীতি। ফরহাদ মুচকি হেসে মন্থর গলায় বলল,
— তুমি চাইলে এখনি আসতে পারো।আমি বরবেশে তোমার সামনে হাজির হয়ে যাবো।
ফরহাদের কথায় লজ্জায় লাল হয়ে গেলো নীতি। লাজুক গলায় কথা এড়ানোর চেষ্টা করে বললো,
— সায়েবা কোথায়?ও কেমন আছে এখন?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।নিজের রুমে রেষ্ট করছে।
— ও আচ্ছা। আপনি কি এজন্য ই আমার কল রিসিভ করেন নি?(মিনমিনে গলায়)
— হুম।আম্মু আর ফায়জা তো বাসা মাথায় তুলেছিলো। আমি ও ভাগদার হচ্ছিলাম ওদের খুশির। পুরো বিল্ডিং নিজের হাতে মিষ্টি বিলিয়েছি।ছোট ভাই বাবা হয়ে যাচ্ছে,আর এদিকে আমার ঘরে বউ আসার ই খবর নাই।তারাতাড়ি চলে আসো আমার ঘরে। আমি ও ঝটপট বাবা হয়ে যাই।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৭

সাথে সাথে কল কেটেছে নীতি। লোকটা দিন দিন লাগামহীন হচ্ছে।
— কি হয়েছে সায়েবার?
সাবার দিকে তাকিয়ে বিস্তর হাসলো নীতি। হাসি মুখে বললো সায়েবার মা হওয়ার কথা। সাবা কাদো কাদো মুখ বানিয়ে বসে রইলো।
— এভাবে মুখ ফুলিয়ে বসে আছিস কেন? (ভ্রু কুচকে)
— তো কি করবো? এক বান্দপি মা হয়ে যাচ্ছে আরেক বান্দপির বিয়ে খেতে এসে চেপ্টা হয়ে পরে আছি।আমি সিঙ্গেল ই মরবো।এই তোর শ্বশুর আরেকটা ছেলে পয়দা করলে কি তার বিল্ডিংয়ের একতালা আমি নিয়ে নিতাম?(ঝাজালো গলায়)।এখন আমার কি হবে!
নীতি হেসে জড়িয়ে ধরলো সাবা কে।
— তুই সিঙ্গেল ই থাক।আর আমাদের সাথেই থাক।তোর বিয়ে হয়ে গেলে আমাদের কি হবে! তোকে আমি আজীবন সিঙ্গেল ঘোষণা করলাম।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৯