সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৭

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৭
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

ইদানীং সায়েবার শরীর খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। সব সময় ক্লান্তি লেগেই থাকে।কিছুদিন পরেই মাস্টার্সের ফাইনাল এক্সাম শুরু হবে। ফরহাদের আকদের অনুষ্ঠান কাল।অল্প আয়োজন বলে ও প্রায় চার’শ মানুষের আয়োজন করা হয়েছে। শাহানা বেগম আজ সকালেই এসেছে। লিজা কে আসতে নিষেধ করেছে ফারহান। সানোয়ার সাহেব বোন কে বুঝিয়েছে লিজার এখানে আসা এখন ঠিক হবে না। কাল একবারে কমিউনিটি সেন্টারে চলে যাবে।তাহলে আর কোন সমস্যা হবে না আশা করা যায়।শাহানা বেগম ও অমত করেন নি। মেয়ের কীর্তিকলাপের কারনে কিছু বলার মুখ নেই তার।সকাল থেকে ব্যস্ত ছিলো সায়েবা।সবটাই ফারহানের আড়ালে। ফারহান তাকে কোন কাজ করতে সাফ সাফ নিষেধ করে দিয়েছে।সাথে হু*মকি ও দিয়েছে, যদি কোন কাজ করতে দেখে তাহলে তার কপালে খারাপি আছে।ফারহান রুম থেকে যেতেই ফারহানের কথা কে হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়েছে সায়েবা।কোমড় বেধে নেমে পড়েছে শাশুড়ী কে সাহায্য করতে।কিন্তু এখন আর তার পা চলছে না।ক্লান্তিতে তার শরীর ভেঙে আসছে।কিচেনে সবার জন্য নাস্তা সাজাচ্ছিল সায়েবা।সায়েবার কম্পনরত হাতের দিকে তাকিয়ে সুমি এগিয়ে এসে বললো,

— আফনের কি বেশি খারাপ লাগতাছে ভাবি?দেন আমার কাছে দেন।আমি কইরা দেই।
— তোমাকে করতে হবে না সুমি।তুমি আঙুর গুলো ধুয়ে দাও আর নুডলস গুলো সুন্দর করে সাজিয়ে দাও ট্রে তে।
সায়েবার ঘর্মাক্ত মুখের দিকে অসহায় চোখে তাকালো সুমি।কথা না বাড়িয়ে নিজের কাজে লেগে গেলো।
ফারহান কমিউনিটি সেন্টার থেকে মাত্রই বাসায় এসেছে।রুমে ঢুকে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে চারিদিকে চোখ বুলালো। সায়েবা কে রুমে না দেখে মুহুর্তেই মেজাজ খারাপ হলো তার।খুলে ফেলা বোতাম দুটো লাগাতে লাগাতে সায়েবাকে ডাকতে ডাকতে বেড়িয়ে এলো রুম থেকে। ফারহানের গলা শুনে ঘাবড়ে গেলো সায়েবা। ভয়ার্ত চোখে সিরির দিকে তাকালো। ফারহান এদিকেই আসছে।তরিঘরি করে বেরিয়ে আসতে নিতেই পা গুলো টলে গেলো। কম্পনমান দেহ মাটিতে পড়ার আগেই ঝড়ের গতিতে এসে তাকে আগলে নিলো ফারহান। আসে পাসে চোখ বুলিয়ে ততক্ষনাত কোলে তুলে নিলো সায়েবাকে।সুমি আর্তনাদ করে চিৎকার করে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— আল্লাহ গো,,,ভাবীর কি হইছে ছুডো ভাইজান। ও ভাবি কতা কন না কেন?
ফারহান কাপা কাপা গলায় সুমি কে বললো,,
— আম্মু কে ডেকে আন সুমি।আমি ওকে নিয়ে রুমে যাচ্ছি। একদম চেচামেচি করবি না। বাড়ি তে অনেক মানুষ আছে।
সুমি মাথা নাড়িয়ে তৎক্ষনাৎ ছুটেছে ফারহানা বেগমের কাছে।সিরির কাছটায় কেউ নেই তখন। ফারহান দ্রুত পায়ে সায়েবা কে নিয়ে রুমে পৌছালো। সায়েবা কে বেডে শুয়িয়ে দিয়ে লম্বা হিজাব টা খুলে দিলো। এসির পাওয়ার বাড়িয়ে। অস্থির হয়ে সায়েবা কে ডাকতে লাগলো। এসির মধ্যে ও তরতর করে ঘামছে ফারহান। এখন নিজের উপর ই রাগ লাগছে।কেন আম্মুকে সায়েবার অসুস্থতার কথা জানালো না!সায়েবার চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিতেই ফারহানা বেগম হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলেন। তার সাথেই সাহেরা বেগম। মেয়ের অবস্থা দেখে কেদেই দিলেন তিনি।ফারহানা বেগম কে দেখে সরে দাড়ালো ফারহান। আতংকিত গলায় বললো অস্থির হয়ে বললো,

— সায়েবা অজ্ঞান হয়ে গেছে আম্মু।কি হলো দেখো না। ও চোখ খুলছে না কেন?
ফারহানের চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। চোখের কোনে পানির আনাগোনা দেখে ছেলের অস্থিরতা বুঝতে পারলো ফারহান বেগম। সায়েবার পালস রেট চেক করে ফারহান কে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলল।
ফারহান নাছোড়বান্দার মতো দাড়িয়ে। সে কিছুতেই যাবে না। ফারহানা বেগম চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই ফারহান অসহায় গলায় বললো,
— ও আমার বউ আম্মু।একটু থাকি প্লিজ।
ফারহানা বেগম ক্লান্ত চোখে তাকালো ছেলের দিকে।তার এতো বুঝদার ছেলে বাচ্চাদের মতো কথা বলছে!সেও অসহায় গলায় বললো
— ও আমার বউ মা আব্বু তার সাথে পেসেন্ট ও।তুমি থাকতে পারবে না। আমাকে চেক করতে দাও প্লিজ।দুই মিনিটেই হয়ে যাবে।একটু অপেক্ষা করো বাবা।

সাহেরা বেগম সায়েবার মাথার কাছে বসে কেদেই যাচ্ছেন। ফারহান কে জেদ করতে দেখে রাগী চোখে তাকালো সে।ফারহান আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে সুমি কেও নিয়ে গেছে সাথে করে।তার বউ সে যেহেতু থাকতে পারবে না তাহলে সুমি ও থাকতে পারবে না। বাইরে এসে সুমি জোর গলায় কয়েকবার ফারহান কে বলেছে,
— এইডা কিন্তু আমার ভাবি হয় ছুডো ভাইজান। আমি ও থাকমু।
— তোর ভাই যেহেতু থাকতে পারেনি তাহলে ননদ হয়ে তুই ও থাকতে পারবি না।
ফারহানের গম্ভীর গলা শুনে সুমি অসহায় হয়ে ফারহানের সাথেই দাঁড়িয়ে রইলো। এদিকে ফায়জা ও ছুটে এসেছে ডাক্তারি সরঞ্জাম নিয়ে।ফায়জা রুমে ঢুকতেই সুমি বাকা চোখে ফারহানের দিকে তাকালো। ফারহান সুমির দৃষ্টি বুঝতে পেরে অসহায় গলায় বললো,
— আপু ডাক্তার। চেকআপ করতে এসেছে।

মিনিট কয়েক পরেই রুমের ভিতর চিৎকার শুনে ফারহান হুড়মুড় করে ভিতরে ঢুকে পরলো।ফায়জা তার মায়ের গলা ধরে লাফিয়ে যাচ্ছে। সায়েবার জ্ঞান ফিরেনি এখনো। ফারহান আতংকিত গলায় বললো,
— কি হয়েছে আপু?সায়েবা ঠিক আছে তো?
ফারহানের আতংকিত চেহারা দেখে ফারহানা বেগম শব্দ করে হেসে জড়িয়ে ধরলো তাকে। কপালে চুমু খেয়ে বললো,
— ধন্যবাদ আব্বু।আমাকে দাদু হবার সৌভাগ্য এনে দেয়ার জন্য। বাবা হচ্ছো তুমি।
ফারহান ওইখানেই স্তব্ধ হয়ে গেলো। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সায়েবার দিকে। ফায়জা এখনো লাফিয়ে যাচ্ছে বাচ্চাদের মতো। ফারহানা বেগম ছারতেই সে এসে ঝাপিয়ে পরলো ফারহানের উপর। ফারহানের গলা জড়িয়ে ধরেই বললো,
— কনগ্রেচুল্রশনস ভাই।আমি ফুপ্পি হয়ে যাচ্ছি।

সুমি তড়িঘড়ি করে মিষ্টি নিয়ে হাজির হলো তৎক্ষনাৎ। সাহেরা বেগম মেয়ের মাথায় পরম মমতায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন। তার চোখে এখনো পানি।তবে এই পানি আনন্দের। মুহুর্তের মধ্যেই পুরো বাড়ি তে সুখবর ছড়িয়ে পরলো।আপাতত সবাই রুম খালি করে চলে গেলেন। প্রচন্ড দুর্বলতা দরুন সায়েবা এখনো ঘুমাচ্ছে। ফারহান এখনো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক ধ্যানে সায়েবা কে দেখে যাচ্ছে সে।এইটুকু মেয়েটা ও মা হবে!তার অস্তিত্ব নিজের ভিতর বহন করবে!ভাবতেই বুকের মাঝে প্রশান্তির ঢেউ খেলে যায়।যার মাঝে নিজের অস্তিত্ব বিলীন করেছে আজ সে তার অস্তিত্ব কে দুনিয়ার আলো দেখাবে!ধীর পায়ে সায়েবার দিকে এগিয়ে গেলো ফারহান। সায়েবার হাত টা আলতো করে ধরে সময় নিয়ে কপালে চুমু খেলো সে।চোখ থেকে দুই ফোটা আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে পারল সায়েবার কপালে। বিরবির করে দোয়া পড়ে হাত বুলালো সায়েবার পেটে।খুশিতে ডুকরে কেঁদে উঠলো সে।সাথে সাথে দুই রাকাত শুকরিয়া নামাজ আদায় করার জন্য দাঁড়িয়ে গেলো। দ্রুত গতিতে ওজু করে এসে আল্লাহর পায়ে লুটিয়ে পড়লো।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৬

অনেকক্ষণ আগেই এ বাড়িতে আগমন হয়েছে আদিবের।তার পাশেই গা ঘেঁষে বসে আছে এক সুন্দরী রমনী।ভাব দেখে মনে হচ্ছে দুজনেই প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে তলিয়ে যাচ্ছে। আহ আদিক্ষেতা দেখলে বাচি না! মনে বার কয়েক এই বুলি আউড়ানো হয়ে গেছে ফায়জার। এতো ভালো মুডটা এই বদমাশ ছেলে এসে খারাপ করে দিয়েছে।সব কিছু তেতো লাগছে তার কাছে। সেই মুহুর্তে যায়গা ছেড়েছে সে।আদিব সেদিকে না তাকালে ও তার সমস্ত ধ্যান ফায়জার দিকেই ছিলো। বলা বাহুল্য ফায়জা আবার ও তাকে রিজেক্ট করেছে।তাই সে ঠিক করেছে এই মেয়েকে জ্বা*লিয়ে পু*ড়িয়ে মারবে।হিংসায় পুড়তে পুড়তে যখন কয়লা হয়ে তার কাছে আসবে তখন সেও তাকে রিজেক্ট করবে।বৈরাগী হয়ে জীবন কাটাবে।তবুও এই মেয়েকে মেনে নিবে না। না মানে না।কত বড় অমানবিক মেয়ে হলে তার মতো ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশু কে রিজেক্ট করতে পারে! এমন নিষ্ঠুর মেয়ে নিয়ে সে সংসার করবে না। তাতে যতই সে শুকিয়ে ম*রুক।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৮