সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৬

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৬
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

ফরহাদের জন্য মেয়ে দেখতে এসেছে সবাই।ফারহান বেগম আর ফায়জা গম্ভীর চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের সাথে সায়েবা ও যোগ দিয়েছে। ফরহাদ কাচুমাচু করে বসে আছে এক কোনায়। হাতের উল্টো পিঠে কপালের ঘাম মুছে অসহায় চোখে ফারহানের দিকে তাকালো সে।ফারহান নিজেও চোখ মুখ কুচকে তিন রমনীর দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের এই গাম্ভীর্যের কারণ তার নিজের ও অজানা। ফারহানা বেগম গম্ভীর গলায় পাত্রী কে প্রশ্ন করলো,

— নাম কি?
ফারহানা বেগমের প্রশ্নে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো নীতি। অবাক চোখে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বললো,
— তাসনিয়া জান্নাত নীতি।
— রান্না পারো?
— হুম।
— গরুর ভুড়ি পরিস্কার করতে পারো?(তীক্ষ্ণ গলায়)
সায়েবার প্রশ্নে চোয়াল ঝুলে গেলো নীতির। ফায়জা ঠোঁট কামড়ে হাসি সামলানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। ফারহানা বেগম সায়েবা কে সমর্থন করে বললো,
— গরুর পা রাধার ব্যাপার টা ভুললে চলবে না। এটা রাধতে পারো তো?
খুক খুক করে কেশে উঠলো ফরহাদ।ফরহাদের দিকে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো ফারহান। মায়ের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,
— খাসির কথা বলতে ভুলে গেছো আম্মু। আমার বিফে এলার্জি আছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এবার আর হাসি সামলাতে পারলো না ফায়জা।ফিক করে হেসে এক হাতে জরিয়ে ধরলো নীতি কে।বেচারি প্রশ্নের তোপে পরে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। সবাই কে স্বাভাবিক ব্যবহার করতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো ফরহাদ।সায়েবা তো পারলে খুশিতে কেদেই দেয়।প্রিয় বান্ধবি তার জা হয়ে আসছে।সাবা গ্রামের বাড়িতে যাওয়ায় এখানে আসতে পারে নি। আজকেই নীতি কে রিং পড়িয়ে যাবে তারা।সপ্তাহ খানেক পরে আকদ করে নীতি কে নিয়ে যাবে একেবারে।ফায়জার বিয়ের ঘটনার পর থেকে তারা,সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন আর কোন অনুষ্ঠান করবে না। ফায়জার বিয়ের সময় মেয়ে আর বউ দের একসাথে বউ সাজিয়ে বড় করে অনুষ্ঠান করবে। নীতির বাবা মা ও এতে সম্মতি দিয়েছেন। আংটি পড়ানোর পর নীতি আর ফরহাদ কে একসাথে কথা বলতে দিয়ে ছাদে চলে গেলো সায়েবা।

জিলবাব বোরকার সাথে হুডি নেকাব আর হাত মোজা পা মোজা পড়ে হাসফাস লাগছে কিছুটা। এখন গরম পড়ে গেছে চারিদিকে।চৈত্রের প্রখরতা এখন ই টের পাওয়া যাচ্ছে। সায়েবার পিছু পিছু ফারহান ও এসেছে ছাদে।সায়েবার সাথে অভিমানের পালা এখনো চলছে তার।তাই বলে বউয়ের সাথে ছাদে ঘোরা তো আর মিস করা যায় না! সায়েবার পাশাপাশি দাড়াতেই বাকা চোখে তাকালো সায়েবা। ফোস করে নিশ্বাস ফেলে ফারহানের এক হাত জরিয়ে ধরে বুকের কাছে মাথা এলিয়ে দিলো। ফারহান ও পরম মমতায় আগলে নিলো নিজের সহধর্মিণী কে।সায়েবা মুচকি হেসে ফারহানের পেটে খোচা দিয়ে বললো,
— আর কতো দিন এভাবে মুখ ফুলিয়ে রাখবেন?আপনি জানেন?আপনি একজন আস্তো সেয়ানা লোক!
ফারহান ভ্রু কুচকে তাকালো সায়েবার দিকে। গম্ভীর গলায় বললো,
— তাই?তা কি সেয়ানাগিরি করলাম তোমার সাথে?
সায়েবা অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
— ওমা!আপনি জানেন না বুঝি?

ফারহান না বোঝার অভিনয় করে সায়েবা কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বললো,
— উহু।একদম জানি না। তুমিই বরং জানিয়ে দাও।
সায়েবা হালকা চেচিয়ে বললো,
— দেখলেন,দেখলেন।এখনো চুমু খেলেন! কেউ রাগ করলে এভাবে বউ কে চুমু খায়?
ফারহান সায়েবার গালে শব্দ করে চুমু দিয়ে বললো,
— তাহলে এভাবে খায়?
সায়েবা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো। ফারহানের কাছ থেকে ছোটার জন্য ছটফট করতে করতে বললো,
— ছাড়ুন তো।মানুষ দেখলে কি বলবে?আপনার এই রাগের আগা মাথা কিছু বুঝি না আমি।রাতে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে সকালে উঠে বলেন আমি কিন্তু এখনো রেগে আছি।আশ্চর্য! এটা কেমন রাগ হলো?

— তাহলে কি তুমি চাও আমি তোমাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রাখি?ভালোবাসা বন্ধ করে দেই?ভালোবাসাময় আদরে তোমাকে সিক্ত না করি?যদি এমন ভেবে থাকো তাহলে ভুলে যাও।আমি তোমাকে নিজের বুকে বন্দী করেই রাগ দেখাবো।ভালোবাসার সময় ভালোবাসা।আর রাগের সময় রাগ।আর আদরের সময় আদর।
শেষের কথাটা বাকা হেসে বলতেই সায়েবা মুখ ঘুরিয়ে ফেললো। এই লোক দিন দিন লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে। দৃষ্টি দিয়েই তাকে ঘায়েল করে দেয় প্রতিমুহূর্তে। তার দুষ্ট হাতের আনাগোনায় কাপন ধরে সর্বাঙ্গে।
ফারহান সায়েবার লাজুক মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। সায়েবা কে বুকে টেনে নিয়ে আকাশ দেখায় মন দিলো। ভালোবাসার মানুষের সাথে রাগ করা যায়,অভিমান ও করা যায়।কিন্তু তাকে দূরে সরিয়ে রাখা যায় না।

ফরহাদের বিয়ের জন্য ফরিদ সাহেবের বাড়িতে দাওয়াত করতে এসেছে ফারহানা বেগম আর সানোয়ার সাহেব। ভাইয়ের সাথে হালকা পাতলা কথা বললেও আফরিন বেগম কে পুরো পুরি এড়িয়ে গেছেন ফারহানা বেগম। আফরিন বেগম অবশ্য কয়েকবার চেষ্টা করেছে কথা বলার।কিন্তু ফারহানা বেগম তাকে কোন সুযোগ ই দেন নি।ফরিদ সাহেব বোনের শক্ত মুখভঙ্গি দেখে আমতা আমতা করে বললো,
— দেখ ফারু,আমি তোর বড় ভাই।খুব আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছি তোকে।আজ সেই ভাইয়ের দাবি নিয়ে একটা আবদার করবো তোর কাছে। আশা করবো আমাকে ফিরিয়ে দিবি না তুই।
ফরিদ সাহেবের কথা শুনে মুখ বর্ণ পাঙসুটে হয়ে গেলো ফারহানা বেগমের। স্বামীর দিকে অসহায় চোখে তাকাতেই চোখ দিয়ে তাকে আস্বস্ত করলেন সানোয়ার সাহেব।
ফরিদ সাহেব মলিন হাসলো। ফারহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে দৃঢ় গলায় বললো,

— ভয় পাস না।আমি এখনো এতটা দুর্বল হয়ে যাই নি।হয়তো সংসারে অশান্তি হবে ভেবে অনেক সময় চুপ করে থাকি।কিন্তু তোর মেয়ের আর কোন অসম্মান আমার বাড়িতে হবে না। তোর বড় ভাই হয়ে কমি তোকে কথা দিচ্ছি। ফায়জা আদিব থেকে বড় না ছোট তাতে আমার কিছু যায় আসে না। ওরা একে অপরের সঙ্গে ভালো থাকবে এটাই হলো মুখ্য বিষয়। আমার ছেলেটার এমন ছন্নছাড়া ভাব আমি আর সহ্য করতে পারছি না। সেই যে চট্টগ্রাম গেছে আর আসেনি। আমার তো একটাই ছেলে।সে ও যদি এভাবে দূরে থাকে তাহলে আমরা কিভাবে থাকবো বল?আমাকে ফিরিয়ে দিস না বোন।তোর মেয়েটা কে আমাকে দিয়ে দে।
শেষের কথা টা ফারহানা বেগমের হাত ধরে বললো ফরিদ সাহেব। ফারহানা বেগমের চোখ ছলছল করছে। ফরিদ সাহেব সানোয়ার সাহেবের দিকে তাকিয়ে অনুরোধের স্বরে বললো,

— আপত্তি করো না ভাই।ফায়জা আমার মেয়ের মতো করে থাকবে।আমি একটু ও অযত্ন হতে দিবো না ওর।একবার বিশ্বাস করো। আমার ছেলেটা ওকে খুব ভালোবাসে। মাথায় করে রাখবে।
সানোয়ার সাহেব স্বাভাবিক গলায় বললো,
— আমি ফায়জার সাথে কথা বলে আপনাকে জানাবো ভাইজান।আমার এতে কোন আপত্তি নেই। মেয়ে সুখে থাকলেই হলো। একজন বাবার কাছে এর চেয়ে বড় আর কোন চাওয়া নেই।তুমি কি বলো ফারু?
ফারহানা বেগম ও সায় জানালো স্বামীর কথায়। আফরিন বেগম এতক্ষণ চুপ করে বসে ছিলেন।সবার সম্মতি শুনে খুশিতে মিষ্টি আনতে ছুটলো।আদিব কে ও খবর টা জানতে হবে। তাহলে হয়তো ছেলেটা ঘরে ফিরবে।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৫

কিছুক্ষণ আগেই কল করেছিলো আফরিন বেগম। আদিব কথা বলে না তার সাথে। তবে যত বার কল দেয় ততবারই রিসিভ করে আদিব।ফোন কানে ধরে চুপ করে থাকে।আফরিন বেগম নিজে নিজে কথা বলে ফোন রেখে দেয়।ছেলের রাগ সহজে কমবে না সে বোঝে।তবুও প্রতি দিন রাগ ভাঙানোর প্রয়াস চালায়।আজ ও ফোন দিয়ে তার আর ফায়জার বিয়ের কথা জানায় তাকে।তখনও আদিব চুপ করে ছিলো। বিস্ময়ে তার মুখ থেকে কথা বের হচ্ছিলো না।ফায়জা কি রাজি হবে বিয়েতে।নাকি বরাবরের মতো এবারো তার মন ভেঙে দিবে।আদিব সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে,এবার ফায়জা বিয়েতে বাগড়া দিলে তাকে খু*ন করে নিজেও ম*রে যাবে।এভাবে বউ ছাড়া শুকিয়ে ম*রার চেয়ে একেবারে ম*রে যাওয়া ভালো।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৭

1 COMMENT

Comments are closed.