চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ২৭

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ২৭
লেখনীতে- নন্দিনী নীলা

চিৎকার-চেঁচামেচিতে সকালের ঘুম ভাঙলো। স্পর্শ আমাকে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে পড়েছে। আমি নতুন বউ কিভাবে বের হব ভাবছি। সীফা আমাকে নিয়ে এলো বাইরে। ওর থেকে জানতে পেলাম বাড়িতে নাকি পুলিশ এসেছে। পুলিশ এসেছে শুনে আমার শুভ্রতার কথা সবার আগে মনে পড়লো। আমি সীফার জন্য শুভ্রতার কাছে যেতে পারছি না। এসব কি শুভ্রতার বাবাই করল সে স্পর্শের বাড়ি চিনলো কি করে?কি সব ঝামেলা। আজ আমার বৌভাত কোথায় শ্বশুরবাড়িতে একটু লাজুক বউ হয়ে বসে থাকবো। আনন্দ হবে। কিন্তু এই পুলিশ এসে আমার সব মাটি করে দিচ্ছে। এখন যদি স্পর্শ কে পুলিশ অ্যারেস্ট করতে চায়। সব সমস্যা কেন আমাদের বেলায় হয়।

কত অপেক্ষার পর কাল কে রাতে আমরা দুজন কত সুন্দর ভাবে কাটিয়েছি। দুজন দুজনের পাশে ছিলাম। কি সুন্দর সেই সময়টুকু ছিল। সকাল হতেই সব শেষ হয়ে গেল। আবার আতঙ্ক চলে আসলো। এই আতঙ্ক ঝড় কি আমাদের জীবন থেকে যাবে না। আমি চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা স্পর্শ আর পুলিশকে দেখছি। সীফা আমাকে রেখে ফোন আসতেই চলে গেল। আমি সেই সুযোগে শুভ্রতার কাছে চলে এলাম। একি রুম ফাঁকা কেন?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও শুভ্রতা কে খুঁজে পেলাম না। স্পর্শ কি ওকে অন্য কোথাও লুকিয়ে রাখলো নাকি? কিন্তু কখনো রাতে তো তিনি আমার থেকে বের হয়নি। শুভ্রতা তো এখানেই ছিল। আর স্পর্শ এই মাত্র আমার সাথে ঘুম থেকে উঠে নিচে গিয়েছে শুভ্রতা তাহলে কোথায় গেল? টেনশনে আমার মাথা খারাপ হওয়ার অবস্থা। আমি হন্তদন্ত হয়ে নিচে নেমে এলাম। পুলিশ চলে গেছে। স্পর্শ কপালে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে‌। ওনার সামনে বড় ভাই আব্বু আম্মু। সবাই এসব কি ? পুলিশ কেন তার খোঁজ করতে এসেছে এসব নিয়ে নানা প্রশ্ন করে যাচ্ছে। স্পর্শ শুভ্রতার কথা বলে যাচ্ছে।
আমি কোনায় দাঁড়িয়ে কথা শুনছি চিন্তিত মুখে।‌ ভাবি এসে আমাকে বলল,

‘ কি হয়েছে তোমার?’
‘ভাবি কিছু হয়নি।’
‘ পুলিশ দেখে ভয় পেয়েছো তাই না।’
‘ না মানে হ্যা।’
‘ আরে চিন্তা করো না। কিছু হবে না।’
‘ হুম।’
স্পর্শ হঠাৎ আমার নাম ধরে ডেকে উঠে বলল,
‘ মারিয়া যাও তো শুভ্রতাকে ডেকে নিয়ে আসো এখানে।’
স্পর্শের কথা শুনে আমার পিল চমকে উঠলাম‌। তারমানে স্পর্শ জানেনা শুভ্রতা কোথায়।এই মেয়ে কোথায় গেল তাহলে।
আমি নরছি না দেখে স্পর্শ ধমক দিয়ে বলল,
‘ কি হলো এখনো যাচ্ছ না কেন? ‘
আমি হাতের আঙ্গুলে আঁচল মুচড়াচ্ছি। স্পর্শের ধমক খেয়ে ছিটকে উঠলাম। আমি এগিয়ে এসে স্পর্শ কে নিচু স্বরে বললাম,
‘ আপনার সাথে আমার জরুরি কথা আছে একটু এদিকে আসেন প্লিজ।’
স্পর্শ বলল,

‘ তোমার সব কথা পরে শুনবো আগে তুমি শুভ্রতাকে এখানে নিয়ে আসো। ‘
‘ ওকে নিয়েই কিছু বলার ছিল। প্লিজ আসুন না।’
‘ ওকে নিয়ে মানে?’
স্পর্শ অবাক গলায় বলল। আমি শুকনো ঢোক গিলে স্পর্শের বাহু চেপে ধরে সবার থেকে দূরে নিয়ে এলাম।
‘ কি হয়েছে? এমন করছো কেন?’
আমি বললাম, ‘ শুভ্রতা রুমে নাই। আমি সারারুম খোঁজেছি।’
‘ হোয়াট? রুমে নাই ও একা একা কোথায় গেছে। ‘
‘ জানি না।’
‘ কোন ঝামেলায় পরলাম। এই কোন উটকো ঝামেলা ঘারে এসে পড়ল।’

স্পর্শ সবাইকে জানিয়ে দিল শুভ্রতাকে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই মিলেই বাড়ি তন্নতন্ন করে খোঁজা হলো। কিন্তু সারা বাড়িতেও তার টিকিটি অব্দি পাওয়া গেল না। আত্নীয় স্বজনে ভরপুর বাড়িতে। অনেক সকালে পুলিশ আসায়। সবার নজরে পড়েনি। কারণ তারা সবাই তখন ঘুমিয়ে ছিল। কিন্তু এক দুই জন তবু্ও জেগেছিল আর তাদের নজরে এই ঘটনা ঘটে গেছে। আর এতেই সবাই জানতে সময় লাগলো না। একেতে শুভ্রতা কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সেটা নিয়ে আমি স্পর্শ। শ্বশুরবাড়ির সবাই চিন্তিত আছি। আর তাকে স্পর্শ নিয়ে এসেছে পুলিশও এসেছিল সেই জন্য। কিন্তু আমার শাশুড়ি মার চাচাতো ভাই এস আই তার কথা বলে কাটানো গেছে সাথে যথার্থ প্রমাণের অভাবে তারা ফিরে গেছে। কিন্তু এখন শুভ্রতা হারিয়ে তার কিছু হলে তার দায় আসবে স্পর্শের উপর কারণ স্পর্শের সাথেই পালিয়ে এসেছে সে।
আত্নীয় স্বজনরা এখন খালি কানাঘুষা করছে ফিসফিস করে। স্পর্শ কপালে হাত করে বিছানায় বসে আছে। রাতের মধ্যে মেয়েটা গেল কোথায়?

এদিকে মেহমানরা আসা শুরু করে দিয়েছে রিসেপশনের জন্য। আমার রেডি হতে হবে আমি পার্লারের লোকদের সাথে বসে আছি স্পর্শ তাদের দেখে রুম থেকে চলে গেছে। আমি সাজতে বসেও শান্তি পাচ্ছি না স্পর্শের জন্য চিন্তা হচ্ছে।
স্পর্শের নাগাল আর পেলাম না। একেবারে স্টেজে উঠে তার নাগাল পেলাম। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখ বানিয়ে বসে আছে। আর আত্নীয় দের সাথে কথা বলছে জোর করে হাসি ফুটিয়ে।
আমি আসতেই স্পর্শ আমাকে ধরে বসতে সাহায্য করলো। আমি স্পর্শের পাশে বসেই ফিসফিস করে বললাম,
‘ এতো টেনশন করবেন না প্লিজ। আমার ভালো লাগছে না।’
স্পর্শ আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাতের পিঠে চুমু খেয়ে মুখে মৃদু হাসি টেনে বলল,
‘ আই এ্যাম ফাইন। ইউ ডোন্ট ওয়ারি।’

‘ আপনি ঠিক নেয় আমি জানি।’ মন খারাপ করে বললাম।
‘আমি একদম ঠিক আছি আর শুভ্রতার খুঁজে পেয়ে গেছি।’
‘কি?? পেয়ে গেছেন কোথায় শুভ্রতাকে! উনি বাসা থেকে চলে কেন গিয়েছে? কার সাথে গিয়েছে? এখন কোথায় আছে? আমাদেরকে না বলে চলে গেল কেন? উনি….
শুভ্রতা কে পাওয়া গেছে শুনে আমি উত্তেজিত হয়ে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছি। স্পর্শ চেয়েও আমাকে থামাতে পারছেনা। তাই মুখে হাত দিয়ে আমাকে থামাতে সক্ষম। আর বলল,
‘তুমি নতুন ব‌উ! স্টেজে বসে আছো! এখানে যারা আছে সবার দৃষ্টি এখন তোমার উপর। তাই দয়া করে এত এত প্রশ্নের ঝুলি অফ করো। শুভ্রতা কোথায় আছে? কেন গিয়েছে?কিভাবে গিয়েছে?
সেসব বিবরণ আমি তোমাকে পরে দিচ্ছি। এখন দয়া করে শান্ত থাকো।’

আমি উম উম করে যাচ্ছি স্পর্শ তা দেখে মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিল। আমি রাগী চোখে স্পর্শের দিকে তাকালাম।
‘আপনার জন্য আমার সমস্ত সাজ নষ্ট হয়ে গেল। দেখি আপনার হাত।’
বলেই স্পর্শের হাত আমি টেনে সামনে এনে দেখলাম সত্যি লিপস্টিক তার হাতের ছাপ আছে। আমি তাকে দেখিয়ে বললাম,
‘এই দেখুন কি করেছেন? আমার ঠোটে লিপস্টিক সব আপনার হাতে চলে গেছে। এভাবে কেউ মুখ ছেপে ধরে?’
‘ আসলেই কাজটা ভুল হয়েছে। এটা হাত দিয়ে না ধরে মুখ দিয়ে ধরলে ভালো হতো তাই না। তখন হাত নষ্ট হতো না। কিন্তু কি করবো বলো এতো লোকের সামনে যদি তোমায় কিস করতাম তুমি তো লজ্জা পেতে। এতো লিপস্টিক কেউ পরে? তুমি এসব না পরলেই বেশি সুন্দর লাগে।’

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ২৬

‘ ছিহহ কি অশ্লীল কথাবার্তা।’
‘আর এতো প্রশ্ন কেউ করে? মানুষ একটা করে প্রশ্ন করে। আর তুমি তো হাজারটা প্রশ্ন একসাথে করে দাও। উত্তর আর কি দেব! তোমার প্রশ্নের ঝুলি শুনে তো আমার মাথা ঘোরানো শুরু হয়ে যায়।’
‘ আপনি বলছেন আমি কথা বলি! আমি বাচাল!’
‘ নো। তা কখন বললাম আমি। তুমি নিজেই তো বললা।
‘ আপনি এটাই বুঝিয়েছেন।’
‘ জ্বি না। তুমি বেশি বুঝ।’
‘ ধ্যাত।’
বিরক্ত ভাব করে থেমে গেলাম।

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ২৮