চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ২৮

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ২৮
লেখনীতে- নন্দিনী নীলা

চোখ বন্ধ করে হাসছি। হাসতে হাসতে আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে এমন অবস্থা। স্পর্শকে নাকানিচোবানি খেতে দেখে আমার হাসতে হাসতে অবস্থা শেষ। স্পর্শ চোখ রাঙানি দিচ্ছে আমাকে আমি অগ্রাহ্য করে ঠায় দাঁড়িয়ে তার কান্ড কারখানা দেখছি।
স্পর্শ লুঙ্গি পরেছে আজ। এই লুঙ্গি পরে একটু ও হাঁটতে পারছে না হাঁটলেই নাকি মনে হয় এটা খুলে যাবে। এজন্য তিনি খুব কষ্ট করে সোফায় এসে বসেছে তার সাথে বসে আছে আব্বু আর দুলাভাই। এই লুঙ্গি পরার প্ল্যানটা করেছে দুলাভাই। তার নাকি অনেক দিনের শখ লুঙ্গি পড়বে শশুরের সাথে আর সেই শখ টা আজকে আমার জামাইকে দেখে তার মনে হলো।স্পর্শ তো কিছুতেই পড়বেনা পড়বেইনা দুলাভাই কি ভাবে যে তাকে মানিয়েছে আর কি জোড়া জড়ি করেছে সেটা শুধু আমি আর আপু দেখেছি। আর হেসেছি। স্পর্শ শেষে হার মানে আর লুঙ্গি টা পড়ে কিন্তু এই লুঙ্গি পরে একটু হাঁটতে পারে না‌‌। কিভাবে যে হাঁটতেছে! এক জায়গায় শক্ত হয়ে বসে থাকে। অনেক কষ্ট করে বাইরে এসেছে। বসে আছে কাঁচুমাচু মুখে। আর উঠবে না এমন তার মুখ ভঙ্গিমা।

আমি কোমরে হাত রেখে তাদের দিকে‌ই তাকিয়ে আছি। আম্মু এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
‘এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি করছিস? যা চা নাস্তা নিয়ে আয়। খালি মুখে বসে গল্প করছে। একটুও বুদ্ধি সুদ্ধি নাই মাথায়।’
ধমক দিয়ে আম্মু আমাকে রান্নাঘরে পাঠালো সেইখানে আপু চা নাস্তার ব্যবস্থা করছে আমি ট্রে হাতে নিয়ে স্পর্শ দের সামনে এনে রাখলাম।
তিনজনের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিলাম।
তারপর তাদের পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। আব্বু চা শেষ করে রুমে চলে গেল তার আড্ডা দেওয়া শেষ। দুলাভাই স্পর্শ কে টেনে দাঁড় করিয়ে বলল,,
‘ চলো বাইরে থেকে ঘুরে আসি। দুই জামাই।’
স্পর্শ দুলাভাইয়ের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে তাড়াতাড়ি আবার বসে পড়ল।
‘না আমি কোথাও যেতে পারবোনা দুলাভাই। আপনার যেখানে খুশি যান। আমাকে চেঞ্জ করতে দিন। না হলে আমি এখানে এভাবে বসে থাকবো!’
দুলাভাই স্পর্শের কথা শুনে হাসতে হাসতে বলল, ‘টিচার দেখি সামান্য একটা লুংগি সামলাতে পারেনা সে তার ছাত্র ছাত্রীদের সামলায় কি করে? ‘

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমিও হাহা করে হেসে উঠলাম।
স্পর্শ আমাকে হাসতে দেখে বলল নিচু স্বরে, ‘তোমার মতো স্বার্থপর আমি দুটো দেখিনি। হাজবেন্টের বিপদে কেউ এভাবে প্রাণ খুলে হাসতে পারে। কোথায় আমাকে বাঁচাবে তা না তাল মিলিয়ে মজা নিচ্ছ।’
আমিও বললাম, ‘ ঠিক করেছি। আপনি আমাকে বিয়ের আগে অনেক কষ্ট দিয়েছেন সামান্য ভালোবাসি বলতে আপনি ঠিক ছয় বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। আর কতোই না অবহেলা আল্লাহ।’
স্পর্শ আমার কথা শুনে কপালে হাত দিয়ে কপাল চাপড়াতে লাগলো। দুলাভাই আবার কিছু বলতে আসবে তখন সেখানে আপুর আগমন ঘটল। আপু‌ যেই শুনতে পেয়েছে লুঙ্গি পড়ে দুলাভাই বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই থেকে চিল্লাচিল্লি করে দুলাভাইকে টেনে নিয়ে গেছে। আপু কিছুতেই দুলাভাইকে লুঙ্গি পরে বাইরে যেতে দেবে না। কিন্তু দুলাভাই লুঙ্গি পড়ে যাবে তাও স্পর্শকে সাথে নিয়ে।

স্পর্শ যে দেখেছে দুলাভাই আর আপু রুমে চলে গেছে। আর আশেপাশে কেউ নেই সেই আমার বাহু শক্ত করে ধরে টানতে টানতে রুমে চলে এলো। আসার সময় তার লুঙ্গি হাটুর উপরে উঠে গেছে
স্পর্শ এক হাতে আমার হাত ও আরেক হাতে লুঙ্গি সামলিয়ে কোন রকম রুমে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
স্পর্শ খট করে দরজা আটকে আমাকে দরজার সাথে চেপে ধরল।
‘আরে আরে এ কি করছেন আমাকে এভাবে চেপ্টা করে ধরছেন কেন মেরে ফেলবেন নাকি ?
স্পর্শ আমার কোমর খামচে ধরে বলল,
‘ হু মেরে ফেলবো।’
‘ দুই হাত দিয়ে আমাকে চিপকে ধরেছেন। ওদিকে আপনার লুঙ্গি ঠিক জায়গায় আছে তো সেটা ধরেছেন আবার কোন হাত দিয়ে?’বড় বড় চোখে করে স্পর্শর দিকে চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম।
স্পর্শ আমার কথা শুনে ফট করে আমার নাকের মাথায় কামড়ে ধরল। আমি সাথে সাথে চিৎকার করে উঠলাম,
‘ আহ্ আপনি কি রাক্ষস? আমার রক্ত চুষতে চাচ্ছেন এইভাবে কেউ কামড়ে ধরে? আমার নাকটা গেল !
‘আর কখন আমাকে নিয়ে মজা করলে এর থেকেও ভয়ঙ্কর শাস্তি দেবো। স্বামীকে নিয়ে মজা করা হাসাহাসি করা তাই না। বেয়াদব মেয়ে।’

‘ আপনি বেয়াদব! আপনি একটা হনুমান রাক্ষস! ছাড়ুন আমাকে আর আমার কাছে আসবে না। রাক্ষস জানি কোথাকার।’
বলেই স্পর্শকে নিজের দুইহাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।
স্পর্শ ধাক্কা খেয়ে কিছুটা দূরে হেলে পড়ল আর তাতে তার লুঙ্গী জায়গামতো আর থাকলোনা নিচে পড়ে গেল। নিজের দিকে তাকিয়েই স্পর্শ চিৎকার দিয়ে উঠল। আর আমি এসব কিছু না দেখেই দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছি। রাগে আমি নাক ঠলতে ঠলতে বেরিয়ে এসেছি। দরজা খোলা দেখে স্পর্শ চিৎকার করে তাড়াতাড়ি লুঙ্গি ধরে টাউজার খুঁজতে লাগে।
টাউজার পড়ে লুঙ্গি বলের মত বানিয়ে ডিল মেরে বাইরে ফেলে দেয়। সেইটা অসাবধানতায় আমার আম্মুর গায়ে গিয়ে পড়ে । স্পর্শ তা দেখে জিব্বায় কামড় মারে। মুখে হাত দিয়ে বলে হায় সর্বনাশ।
এদিকে আম্মু আমার কাছে ছিলো আমার নাকে লাল হয়ে যেতে দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? আমি রেগে তাকে এক ধমক দিছি। আমার ধমক খেয়ে আম্মু আর আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। তারপর স্পর্শের কিছু লাগবে কিনা জানতে তার কাছে আসছিল তখনই এমন কাণ্ড ঘটে। আর এখন আম্মু লুঙ্গি টা হাতে নিয়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্পর্শ ও থমকে গেছে এমন কান্ড দেখে।

আমি আমার রুমে দরজার সামনে আম্মু হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কোমরে হাত দিয়ে একবার আম্মুর দিকে তো একবার স্পর্শ দিকে তাকাতেই। স্পর্শ আমাকে ইশারায় কাছে ডাকলো আমাকে। আমি কাছে আসতে আমাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো। আর আমার হাসি তো জন্মের হাসি। আমি আবার ও আমি হা হা করে হাসতে লাগলাম। স্পর্শ দৌড়ে আম্মুর সামনে গিয়ে ক্ষমা চাইতে লাগলো। আর আম্মুর হাত থেকে লুংগিটাই টেনে নিজের হাতে নিল। আর আবার সরি বলল। আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল তার পরে চলে গেলো। আমি ও ফিক করে হেসে দিলাম। স্পর্শ বোকা চোখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে রইলো।
আমি এগিয়ে এসে স্পর্শ গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ শাশুড়িকে তো চমকে দিছেন!’
‘ এজন্য আজ থাকতে চাইনি। সব গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছে। ‘
আমি স্পর্শের দুহাতে জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘ আমার খুশির জন্য আপনি এই টুকু করবেন না।’
স্পর্শ গলে ক্ষীর হয়ে গেল। নিজেও আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো কিন্তু আমাদের এই রোমান্টিক মুহূর্তে কার জানি কু নজর পড়লো। শত্রু হয়ে এসে আমাদের ফোন করলো,

স্পর্শ আমাকে ছেড়ে ফোন হাতে চলে গেল। ফোনটা কে করছে জানতে আমিও পেছনে পেছনে আসলাম কথা শুনে বুঝতে পারো এটা শুভ্রতার কল। ওই মাইয়া এখনো কল‌ করছে কেন?
আমাকে কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্পর্শ ইশারায় হাত দিয়ে ভেতরে যেতে আমি বাধ্য হয়ে ভেতরে চলে এলাম। কিন্ত মনে মনে খুব রাগ হলো ওই শুভ্রতার সাথে কথা বলবে সেটা আমি শুনতে পারবো না। আমাকে ভেতরে চলে আসতে বললো। কি এমন গোপন আলোচনা করবে যে আমি শুনতে পারবো না।
আমি পা ঝুলিয়ে বিছানায় বসে আছি। স্পর্শ আমাকে মুখ কালো করে বসে থাকতে দেখে। আমার কাছে এসে কোমর পেচিয়ে ধরে বসলো আর কানে কাছে মুখ নিয়ে বলল,
‘ অভিমানী বেলুন টা কি আবার ফুলে উঠেছে?’

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ২৭

‘ ওই শুভ্রতার সাথে আপনি কি গোপন কথা বললেন যেটা আমি শুনতে পারবো না।’
‘ আমার সব গোপন আলোচনা তো আমি আমার এই ব‌উয়ের সাথে করি আর কারো সাথেই আমার কোন গোপন আলোচনা নাই।’
‘ ওরে মিথ্যা বাদী এই মাত্র বলে আসছেন। এখন অস্বীকার করছেন?’
‘ কোন আলোচনায় করিনি। আসলে তোমাকে আজ এতো সুন্দর লাগছে যে তুমি আমার চোখের সামনে থাকলে আমি আর কোন কথাতে কান দিতে পারিনা।’
আমি স্পর্শের কথা শুনে অবাক দৃষ্টিতে তার মুখের দিকে তাকালাম। স্পর্শ সাথে সাথেই আমার গালে চুমু দিল।

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ২৯