সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৪

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৪
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

ফারহানের আমেরিকা যাওয়ার চার মাসের মাথায় সাহেরা বেগমের মোবাইলে একটা কল এলো। ফোনের ওপাশের মানুষ টার কথা শুনে শীতের মধ্যে ও ঘামতে লাগলো সাহেরা বেগম। তার ঠান্ডা মাথায় কিরা প্ল্যান এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে ভাবতে ও পারেনি সে।
কিছুক্ষণ আগে,,,
— আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
— ওয়ালাইকুম আসসালাম।
— চিনতে পেরেছেন আন্টি? আমি ফারহান বলছি।কেমন আছেন আপনি?
ফারহানের গলা শুনে কপালে ভাজ পরলো সাহেরা বেগমের।
— হ্যা হ্যা চিনতে পেরেছি। কেমন আছো বাবা?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আন্টি।
— তা এতো দিন পরে কি মনে করে কল দিলে?সব ঠিক আছে তো?

— আপনাকে একটা সু খবর দেয়ার জন্য কল করলাম হবু শাশুড়ী মা।আমার ক্যালিফোর্নিয়ায় চাকরি হয়ে গেছে। স্যালারি মাসে চার লাখ টাকা।আপনার কথা মতো নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছি আমি।এখন তো আর মেয়ে বিয়ে দিতে কোন সমস্যা নেই তাই না?(বাকা হেসে)
ফারহানের কথা শুনে ঘাবড়ে গেলো সাহেরা বেগম। আমতা আমতা করে বললো,
— কি বলছো এইসব। এত তারাতাড়ি বিয়ে! আর তুমি তো দেশে না।এভাবে কিভাবে..
সাহেরা বেগমের কথার মাঝেই ফারহান তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
— যে ভাবে বিসিএস ক্যাডারের সাথে বিয়ে ঠিক করেছিলেন ঠিক সেভাবে।(দাতে দাত চেপে)
ফারহানের রাগী কন্ঠ শুনে সাহেরা বেগম থতমত খেয়ে গেলেন। এ কথা ফারহান কিভাবে জানলো ভাবতে ভাবতে তার মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— এখন চুপ করে আছেন কেন শাশুড়ী মা। আপনি কি ভেবেছিলেন,আমি কিছু জানতে পারবো না? আপনি যাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন সে শুধু আপনার মেয়ে না আমার আত্মা।আমার আত্মার খবর আমি রাখবো না তা ভাবলেন কি করে?
— দেখো ফারহান,আমি সায়েবা কে তোমার কাছে বিয়ে দিবো না। সায়েবার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আশা করবো তুমি কোন ঝামেলা করবে না।
— আপনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন সায়েবা কে আমার হাতে তুলে দিবেন।আপনার শর্ত মেনে আমি আমার বাবা মা পরিবার সবাইকে ছেরে এখানে এসেছি।আমার কি কিছুর অভাব ছিল? শুধু মাত্র আপনার কথা শুনে বাবার অঢেল টাকা থাকার পরেও আমার অন্যের অধিনে চাকরি করতে হচ্ছে। এখন আপনি এই কথা বললে তো আমি শুনছি না।আজ বিকেলে আমার পরিবার যাবে আপনার বাসায়।সায়েবা কে বউ সাজানোর দায়িত্ব আমি আপনাকে দিচ্ছি।এর হেরফের হলে খুব একটা ভালো হবে না শাশুড়ী মা।
রাগে ফারহানের মাথা ফেটে যাচ্ছে। শুধু মাত্র সায়েবার মা বলে পার পেয়ে গেলো। না হলে আজ সাহেরা বেগমের সাথে কি হতো তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

সাহেরা বেগমও রেগে গেছেন। ফারহান কে তার অপছন্দ তা নয়।কিন্তু ওইদিন লিজার করা অপমান সাহেরা বেগম কে অনেক বেশি আঘাত করেছে।তাই সে ফারহান কে শর্তে বেধে দিয়ে কোন রকম ওখান থেকে বেরিয়ে এসেছে।নাহলে ফারহানের সাথে সায়েবার বিয়েটা হয়েই যেতো। এতো অপমানের পর মেয়ে বিয়ে দেয়ার প্রশ্নই আসে না। সায়েবা কে সাত পাচ বুঝিয়ে সামলে রেখেছে।ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হয়ে গেলেই ঝামেলা চুকে যেতো। কিন্তু এখন ফারহান সব জেনে গিয়েছে।সাহের বেগমের মাথা কাজ করছে না। সব কিছু এভাবে এলোমেলো হয়ে যাবে সে কল্পনা ও করে নি।সায়েবা এখনো এসবের কিছুই জানে না। সব কিছু জানলে সায়েবা কে সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে।চিন্তায় সাহেরা বেগমের মাথা ভো ভো করছে।

ফারহান ফোন কেটে দিয়েছে অনেকক্ষণ। সাহেরা বেগম এখনো একই জায়গায় থম মেরে বসে আছে। কলিং বেলের আওয়াজে ধ্যান ভাংলো তার।আশেপাশে তাকিয়ে শোয়েব কে খোজার চেষ্টা করলো। কাওকে চোখে না পরায় নিজেই গেলো দরজা খুলতে।দরজা খুলে সাহেরা বেগমের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। দরজার বাইরে ফায়জা আর ফরহাদ দাঁড়িয়ে আছে হাসি মুখে।
— আরে আন্টি ভিতরে তো আসতে দিন।হাত ব্যাথা হয়ে গেলো।
বড় বড় শপিং ব্যাগ হাতে সাহেরা বেগমের পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে গেলো ফায়জা।ফায়জার পিছু পিছু ফরহাদ ও চলে এলো ভিতরে। সাহেরা বেগম এখনো থম মেরে দরজার পাসেই দাঁড়িয়ে আছে। আজ শুধু তার অবাক হওয়ার দিন।
একে একে ডালা এসে ড্রয়িং রুম ভরে গেলো মুহুর্তের মধ্যেই।

— এখানে কি হচ্ছে এসব?
সায়েবা বেগম অবাক হয়ে জানতে চাইলো। ফায়জা ততক্ষণে সোফায় গা এলিয়ে দিয়েছে।সাহেরা বেগমের কথার জবাব না দিয়ে ফায়জা সায়েবা কে ডাকতে লাগলো।
— আরে আরে ওকে ডাকছো কেন?
— না মানে আন্ট সায়েবা কে দেখছিনা তো তাই ডাকছিলাম।এতো কিছুর আয়োজন তো ওর জন্যই।
তা আন্টি সায়েবা কি জানে আজ তার আকদ হচ্ছে? (শয়তানি হেসে)
ফায়জার কথা শুনে ফরহাদ মিটমিট করে হাসতে লাগলো। সাহেরা বেগমের নাজেহাল অবস্থা দেখে ওর খুব হাসি পাচ্ছে। বেচারি! ফরহাদ ফায়জা কে থামিয়ে দিয়ে সিরিয়াস ভাঙিতে বললো,

— আহ ফায়জু থাম তো তুই।আন্টির সাথে আগে আমাদের জরুরি কথা গুলো তো সেরে নেই।তো আন্টি,আসলে আজ সায়েবার আকদ হচ্ছে ফারহান সাদিকের সাথে।আপনি হয়তো জানেন না।তাই আপনাকে জানানোর জন্য আমাদের এখানে আসা। এখানে বিয়ের শাড়ি থেকে শুরু করে সব কিছু আছে।গয়না আম্মু রাতে নিয়ে আসবে সাথে করে।ওগুলো এখনো রেডি হয়নি।আর বাজার সব কিছু রান্না ঘরে রাখা আছে। কিছুক্ষণ পরে বাবুর্চি এসে রান্না করে দিয়ে যাবে।আমরা ও আছি সাহায্য করার জন্য। যদিও মানুষ বেশি হবে না। তবে এলাকার কিছু বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আসবে।আপনি টেনশন করবেন না। আমরা এখানেই আছি আপনাকে সাহায্য করার জন্য। (মুচকি হেসে)
সাহেরা বেগমের বিস্ময় এবার আকাশ ছুলো। তার মেয়ের বিয়ে তার বাইরের মানুষ থেকে জানতে হচ্ছে!এক হিসেবে ওরা ঠান্ডা মাথায় হুমকি দিচ্ছে তাকে। সাহেরা বেগম রেগে মুখ খুলবে তার আগেই ফায়জা তার মুখ বন্ধ করে দিল।

— সায়েবা কোথায় আন্টি? ওকে একটু ডেকে দিন প্লিজ। ওকে ও তো রেডি করতে হবে। ফারহান এখানে নেই তো কি হয়েছে।ভিডিও কলে নিজের বউ কে বউ রুপে না দেখলে আমার ভাইটার আবার মন খারাপ হয়ে যাবে।
শেষের কথা টা ফায়জা মন খারাপের ভান করে বললো। সাহেরা বেগমের এসব আর সহ্য হচ্ছে না। সে এবার চিৎকার করে বললো,
— তোমাদের এসব নাটক বন্ধ করো।আমার মেয়েকে আমি কখনোই বিয়ে দিবো না ফারহানের কাছে।সায়েবার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আর দশ দিন পরেই ওর বিয়ে।তোমরা আসতে পারো এখন।
— মা!!!
বাসার পরিবেশ মুহুর্তেই ঠান্ডা হয়ে গেলো। সাহেরা বেগমের চেহারায় ভয়ের ছাপ দেখে বাকা হাসলো ফায়জা।সাহেরা বেগমের চিৎকার শুনেই রুম থেকে বেরিয়েছিল সায়েবা।কিন্তু বেরিয়ে এমন কিছু শুনতে হবে স্বপ্নে ও ভাবে নি সে।হতভম্ব হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে সায়েবা।

— আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে মানে?(কাপা কাপা গলায়)
সাহেরা বেগম শক্ত গলায় বললো,
— ভিতিরে যাও সায়েবা।
সায়েবা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাহেরা বেগম ধমকে উঠে বললো,
— কি হলো? কথা কানে যায় নি?ভিতরে যাও।
— সায়েবা কোথাও যাবে না আন্টি।সায়েবা এখন আমার সাথে পার্লারে যাবে।আপনি বরং অতিথি আপ্যায়নের ব্যবস্থা করুন।
ফায়জার কথা শুনে ফুসে উঠল সাহেরা বেগম। ক্রুদ্ধ গলায় বললো,

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৩

— তোমরা আমার মেয়েকে জোর করতে পারো না। দেশে আইন কানুন বলেও একটা কথা আছে।আমার অনুমতি ব্যতীত আমার মেয়েকে কিভাবে এখান থেকে নিয়ে যাও তা আমিও দেখবো ?
সাহেরা বেগমের কথা শুনে ফরহাদ হাই তুলতে তুলতে বললো,
— দেশে অবশ্যই আইন কানুন আছে। আপনি বরং এক কাজ করুন আন্টি।আপনার হতে হতে না হওয়ার বিসিএস ক্যাডার জামাই কে কল করুন।আমি আপনার পাশে আছি।প্রয়োজনে আব্বু ও আপনাকে সাহায্য করবে।আমি থানায় কল করে আপনাকে ফোন ধরিয়ে দিচ্ছি। আপনি আপনার অভিযোগ নির্দিধায় জানান।এটা তো আর মগের মুল্লুক না।ফায়জু,তুই বরং সায়েবা কে নিয়ে যা।আন্টিকে সাহায্য করার জন্য আমি আছি এখানে।টেনশন নট।
(?????????সবাই কিছু বলে যান সায়েবার মা কে)

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৫