সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৩

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৩
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

ফারহান আমেরিকা এসেছে আজ চার দিন হলো।আমেরিকার কেলিফর্নিয়ার ফ্লাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতের শহর দেখছে ফারহান।এখানকার আমেরিকান হেরিটেজ ইউনিভার্সিটি তে এডমিশন নিয়েছে ফারহান।ফারহানের সাথে এখানে আরেকজন ছেলে থাকে।ছেলেটা পাকিস্তানি। ফারহান একাই এই ফ্ল্যাটে থাকতো। কিন্তু ফ্লাইটে ইউসুফের সাথে দেখা হওয়ার পর সিদ্ধান্ত বদলেছে ফারহান।ছেলেটার চোখে অন্যরকম মায়া আছে।চেহারার দিকে তাকালেই মনের মধ্যে প্রশান্তি বয়ে যায়। ইউসুফ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার বাবা একজন কাপড় ব্যবসায়ী। স্কলারশিপ পেয়ে আমেরিকা এসেছে।ফ্লাইটে তাদের পরিচয় হওয়ার পর ফারহান তাকে নিজের সাথে থাকার জন্য অফার করে।ইউসুফ প্রথমে রাজি না হলেও ফারহানের জোড়াজুড়ি তে রাজি হতে বাধ্য হয়।ফারহানের ফ্ল্যাট টা মোটামুটি বড় বলা চলে।তিনটা বেডরুম,ড্রয়িং, ডাইনিং, কিচেন সহ একটা মিনি টেরেস আছে।ফারহানা বেগমের চাচার ফ্ল্যাট এটা। ফারহান যতদিন এখানে থাকবে ততদিনের জন্য রেন্টে নিয়ে নিয়েছেন ফারহানা বেগম। তবে ফারহান সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে পড়াশোনার খরচ ও নিজে চালাবে।তার জন্য কোন একটা পার টাইম জব নিয়ে নিবে।ফারহানা বেগম আপত্তি করলেও ফারহানের জেদের কাছে তাকে হার মানতে হয়।
(ফারহান আর ইউসুফের কথাবার্তা ইংলিশে হলেও গল্পের সার্থে আমি বাংলায় দিচ্ছি)

— এখানে কি করছো?
হঠাৎ ইউসুফের কথায় ধ্যান ভাঙে ফারহানের।মুচকি হেসে বলে,
— রাতের শহর দেখছি।
— বাড়ির কথা মনে পড়ছে?
— মনে তো পড়ছে।তাদের মিস করলেও কেউ একজনের শূন্যতা হৃদয়ে আঘাত করছে।
ফারহানের কথা শুনে কপাল কুচকে নিলো ইউসুফ। সন্দিহান গলায় জানতে চাইলো,
— তুমি কার কথা বলছো?
— আমার প্রেয়সীর। যার জন্য আমি আজ সেচ্ছায় নির্বাসন নিয়েছি।
— তুমি কি কারো সাথে রিলেশনশীপে আছো ফারহান?
— নাহ।আমি তাকে ভালোবাসি।তবে আমাদের মধ্যে প্রেমের কোন সম্পর্ক নেই। আমি যেমন তাকে ভালোবাসি সেও তেমন আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু হাতে হাত ধরে প্রেমটা আমাদের ঠিক করা হয়নি কোনদিন। (ম্লান হেসে)
— আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সকল প্রকার হারাম থেকে বিরত রাখুন।আমিন।
ইউসুফের কথা শুনে ফারহান তার দিকে অবাক চোখে তাকালো। কন্ঠে অ আবাকতার রেশ এনে বললো,
— আমি তোমার কথা বুঝতে পারিনি ইউসুফ।
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক আল্লাহ তায়ালা হারাম করেছেন। এটাকে জিনাহ বলে।আল্লাহ তায়ালা বলেন,
‘তোমরা জিনার কাছেও যেও না।কারণ সেটা অশালীন কাজ আর তার পরিণাম খারাপ’
(সুরা বনী ইসরাঈলঃ৩২)

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমরা যখন কোন মেয়ের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি তখন আমাদের মধ্যে তাকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগে।এটাকে চোখের জিনা আর মনের জিনাহ বলে।যখন কেউ তার প্রেমিকাকে ছুয়ে দেয় তখন হাতের জিনাহ হয়।যখন কেউ তার উদ্দেশ্য গমন করে তখন পায়ের জিনাহ হয়।আর একেবারে শেষের ধাপ হচ্ছে শারিরীক সম্পর্ক। তাই আমাদের দৃষ্টি আর কলব কে সামলে রাখতে হবে।জিনাহ্ র শাস্তি ভয়ংকর। জেনাহকারী ইহকাল ও পরকাল দুই জায়গায় ই এই শাস্তি ভোগ করবে।
— আমি তো সায়েবাকে ভালোবাসি।এতে কি আমার জেনাহ হবে?
— ভালোবাসা টাকে পবিত্র রাখো।তবে মার চাওয়া যদি নেক হয় তাহলে তুমি তাকে অবশ্যই পাবে।ভালবাসা গুনাহ না।নিজের সব চাওয়া পাওয়া আল্লাহর নামে করে দাও।তা পুরন করার দ্বায়িত্ব আল্লাহর। এখন নামাজ পড়ে নাও। এশার নামাজের ওয়াক্ত শেষ হতে চললো। (মুচকি হেসে)
ইউসুফের কথা শুনে সময় চেক করলো ফারহান।১১ঃ৩৪ বাজে।তাড়াতাড়ি রুমে চলে গেলো সে।ফারহান আগে থেকেই পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। ওজু করে এসে নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলো সে।আজ থেকে প্রেমটা না হয় রবের সাথেই হোক।ভালোবেসে পরম করুনাময় কে মানিয়ে নাহয় সায়েবা কে চেয়ে নিবে।

আজকাল সায়েবা অনেকটা চুপচাপ হয়ে গেছে। কারো সাথে খুব একটা কথা বলতে দেখা যায় না। বন্ধু মহলের সাথে দেখা করাও কমিয়ে দিয়েছে।ফারহানের চলে যাওয়ার কথা শুনে ভিতরে ভিতরে নিজেকে আরো গুটিয়ে নিয়েছে।সাহেরা বেগম মেয়ের চুপচাপ হয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত। পড়াশোনা বাদে নামাজ আর কোরআন নিয়েই পড়ে থাকে।শোয়েবের সাথেও ঝগড়া করে না।বাড়িটা যেন একেবারে নিরব হয়ে গেছে।
ফারহানের চলে যাওয়ার কথা শুনে ভিতরে ভিতরে গুমরে মরছে সায়েবা।তবে তাকে দেখলে তা বোঝার উপায় নেই। একেই বুঝি বলে প্রণয় বিরহ!বুকের ভিতর এক অসহ্য যন্ত্রণা সারাক্ষণ দম বন্ধ করে দেয়।কান্না করার ও উপায় নেই। মা দেখলে আর রক্ষে নেই। ফারহানের শূন্যতা যেন জেকে ধরেছে সায়েবাকে।নিজের কোন কিছুতে ধ্যান নেই তার।এইযে আজ তিন দিন হলো সে চুল আচরায় না!চুল গুলো জট পাকিয়ে যা তা অবস্থা। এই অবস্থায় ফারহান তাকে দেখলে তুলে আছাড় মারতো।অথচ বেখেয়ালি সায়েবা তার খেয়ালে ডুবেই জটাধারী রুপ ধারণ করেছে!এখন আর কোন কিছুতেই মন বসে না।জোর করে নিজেকে বইয়ের সামনে বসিয়ে রাখতে হয়। বাবা মায়ের স্বপ্ন পুরন করতে হবে যে।অথচ তার মন টা আরেকজন নিয়ে বসে আছে। কি সর্বনাশী ব্যাপার স্যাপার!

ফায়জা দেশে এসেছে আজ একমাস হয়েছে।ফারহান আমেরিকা চলে যাবে শুনে পনেরো দিন আগেই দেশে চলে এসেছে সে।ছোট ভাই চলে গেলে আবার কবে দেশে ফিরবে তার ঠিক নেই।তাই পরিবারে সাথে একসাথে কিছুটা সময় কাটাতে তারাতাড়ি দেশে আসা।দেশে এসে সব কিছু শুনে স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলো ফায়জা।তার বাবার মতো নরম মনের মানুষ এমন কিছু করতে পারে তার বিশ্বাস ই হচ্ছে না!ফারহানা বেগম এখনো কথা বলেন না সানোয়ার সাহেবের সাথে।ফায়জা মনে মনে লিজার উপর প্রচন্ড ক্ষেপে আছে।তার বাবার মতো একজন বিচক্ষণ লোক কিভাবে লিজার মতো একটা মেয়েকে ফারহানের জন্য পছন্দ করতে পারে এটা চিন্তা করেই মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। বাবার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। বাবা মায়ের এই অভিমান ভাঙার ব্যবস্থা করতে হবে। একমাত্র ফারহান ই সব কিছু ঠিক করতে পারবে।
— এতো কি ভাবছিস?

— আব্বু আম্মুর এই মান অভিমানের পালা এবার শেষ হওয়া দরকার ভাইয়া।এগুলো আর নেয়া যাচ্ছে না।
ফায়জার কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ফরহাদ।তার কি বাবা মা কে এভাবে দেখতে ভালো লাগে? কতদিন হলো বাবা মায়ের খুনসুটি ভরা ভালোবাসা দেখে না।বাবার মলিন মুখটা দেখলে বুকের ভেতর চিনচিন ব্যথা করে। বন্ধুর মতো ছোট ভাইটা কতো দূরে আছে!পুরো বাড়িটা যেন শূন্যতায় ভরে গেছে।
— আম্মু তো কোন কথাই শুনতে চাইছে না। আব্বু কতটা শুকিয়ে গেছে খেয়াল করেছিস?আজকাল রাতেও ঠিক করে ঘুমায় না। আম্মুর রুমের সামনে মাঝরাত পর্যন্ত পায়চারি করতে থাকে।
— ফারহান কে বলতে হবে। একমাত্র ফারহান ই আম্মু কে মানাতে পারবে।এসব আর নেয়া যাচ্ছে না। আম্মু ফারহানের জন্য সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে বিপি বাড়িয়ে ফেলেছে।আদরের ছোট ছেলে বলে কথা।আচ্ছা ভাইয়া, আমি চলে যাওয়ার পরেও কি আম্মু এভাবে কেদেছিলো?
— শুনতে চাস না বোন।সহ্য করতে পারবি না।

ফরহাদের দুঃখী দুঃখী চেহারার দিকে তাকিয়ে ফায়েজা আবেগী হয়ে পরলো।আম্মু তার জন্য এতটা মন খারাপ করেছে ভাবতেই চোখ ভরে এলো। কিন্তু মুহুর্তেই মন খারাপ বদলে গেলো ফরহাদের কথা শুনে।
— তুই চলে যাওয়ার পর আম্মু তো হাফ ছেরে বেচেছে।কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে বলে কথা। বন্ধবি দের নিয়ে কিটি পার্টি ও করেছে।তার সে কি আনন্দ!যদিও আম্মু তোকে এসব বলতে নিষেধ করেছে। তবুও বললাম।আমি তো তোকে খুব ভালোবাসি তাই না বল?তোর গা থেকে ডাস্টবিন ডাস্টবিন গন্ধ আসে তাতে কি হয়েছে? আমরা মেনে নিয়েছি তুই আমাদের গন্ধযুক্ত ফায়জা।আমরা তোকে এভাবেই ভালোবাসি।
ফরহাদের কথা শুনে দাত কিড়মিড় করতে করতে ফরহাদের দিকে তাকিয়ে আছে ফায়জা।ছোট বেলা থেকে এসব ফালতু কথা বলে আসছে তাকে।এতো দামী পারফিউম দেয়ার পরেও নাকি ডাস্টবিন ডাস্টবিন গন্ধ আসে! ফরহাদের দিকে কুশন ছুরে মেরে কয়েকটা ভয়ংকর গালি দিলো সে।বোনের গালি শুনে দাত কেলিয়ে হাসছে ফরহাদ।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১২

(একটা দুঃখের গল্প শুনাই।গল্প লেখা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই অবস্থায় অতিরিক্ত স্মার্টনেস দেখাইতে গিয়ে জামাই পুরো গল্প ডিলিট করে দিছে?কেমন ডা লাগে!আবার লিখে পোস্ট করলাম।জানি না কেমন হয়েছে।খারাপ লাগলে দুলাভাই রে বকা দিয়ে দাও।আমি তো আর দিতে পারি না। ভদ্র সেজে থাকি কি না।)

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৪