সায়েবা আসক্তি পর্ব ১২

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১২
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

ফারহানা বেগমের রুমের সামনে অস্থির হয়ে পায়চারী করছে সানোয়ার সাহেব। সে কখন থেকে ডেকে চলছে ফারহানা বেগম কে অথচ তার কোন হেলদোল নেই। মনে সাহস সঞ্চার করে ফারহানা বেগমের দরজায় কড়া নাড়তেই ফারহানা বেগম হুংকার দিয়ে বলেন,
— আমার রুমের সামনে থেকে যাও সানোয়ার।তোমার কোন কথাই আমি শুনতে চাই না। তোমার জন্য আজ আমাকে চরম ভাবে অপমানিত হতে হয়েছে। তা আমি কখনোই ভুলবো না। তুমি নিজের হাতে নিজের ছেলের জীবন দুর্বিশহ করে দিলে।বাবা হয়ে কি করে পারলে এমনটা করতে?আমার ভাবতেই অবাক লাগছে!
ফারহানা বেগমের কথা শুনে সানোয়ার সাহেব অসহায় চোখে স্ত্রীর রুমের দরজার দিকে তাকালো। নমনীয় গলায় বললো,

— আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে।কিন্তু আমি কি করতাম বলো?একমাত্র বোন আমার।বাবা মা মারা যাওয়ার পরে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি।বোনের কান্না মাখা আবদার ফেলতে পারিনি। লিজা ফারহান কে ভালোবাসে।আমি ভেবেছিলাম ওদের বিয়ে হলে ওরা দুজনেই সুখী হবে। ফারহান অন্য কাওকে ভালোবাসে এটা আমি ঘুনাক্ষরে ও টের পাইনি। যখন জানতে পারলাম ফারহান অন্য কাওকে বিয়ে করতে চায় আমি ওদের বোঝাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু লিজা পাগলামি শুরু করলো। সুইসাইড করার ভয় দেখিয়ে আমাকে দমিয়ে দিলো।আমার কোন কথা না শুনেই এ বাড়িতে চলে এলো। আসার আগে হুমকি দিয়ে এসেছে।যদি এ বিয়ে না হয় তাহলে সে সুইসাইড করবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সানোয়ার সাহেবের কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো ফারহানা বেগম। দরজা খুলে বেরিয়ে এসে স্বামীর মুখোমুখি দাড়ালো। কঠিন চোখে সানোয়ার সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো,
— ভাগনির ভালোবাসা টা তোমার কাছে মোক্ষ সানোয়ার!আর আমার ছেলে?তার ভালোবাসার,ভালো থাকার কোন মূল্য নেই!কেমন বাবা তুমি? তুমি ও কিন্তু আমাকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলে।তাহলে আজ ছেলের বেলায় এতো বৈষম্য কেন?তুমি তোমার বিয়ে করা স্ত্রী, যার সাথে তুমি ত্রিশ বছর সংসার করেছো তার সাথে সামান্য একটা দেয়ালের দূরত্ব মেনে নিতে পারছো না!তাহলে আমার ছেলে কিভাবে তার ভালোবাসার এই দীর্ঘ বিচ্ছেদ মেনে নিবে?লিজার জেদ মেনেত না নিয়ে আমাদের সাথে আলোচনা করতে পারতে।আমরা সবাই মিলে একটা সমাধান ঠিক বেড় করে নিতাম।অন্তত ছেলের কাধে ভরসার হাত তো দিতে পারতে।কিন্তু তুমি কি করলে!নিজের জেদি ভাগনির আবদার মেনে নিয়ে আমার ছেলেকে কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে দিলে।তোমার কাছ থেকে এমন কিছু আশা করি নি সানোয়ার। ফরহাদ, ফারহান আমার কলিজার একটা অংশ। তুমি আজ সেখানে আঘাত করেছো সানোয়ার।আমি আমার ছেলে কে সামলে নেবো।তোমার বোন আর ভাগনির তরফ থেকে যদি আর কোন অশান্তি আমার বাসায় আসে তাহলে সেদিন তুমি আমার অন্য এক রুপ দেখবে। কথাটা মাথায় রেখ।
সানোয়ার সাহেব অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে ফারহানা বেগমের দিকে। এ জন্যই বলে,বউয়ের সাথে পাঙা নিতে নেই।তার ভাতে ও মারবে,পানিতে ও মারবে।

বাসায় এসে এক কোনায় জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সায়েবা। তার মা একটু বেশিই শান্ত হয়ে আছে। এমন ব্যবহার করছে যেন কিছুই হয়নি। এদিকে চিন্তায় চিন্তায় তার অবস্থা নাজেহাল। রান্নাঘরে একমনে রান্না করে চলেছে সাহেরা বেগম। মাঝে মাঝে আড় চোখে মেয়ের দিকে তাকাচ্ছে। সায়েবা গুটিশুটি মেরে রান্নাঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। মেয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে সায়েবা কে কাছে ডাকলো সে।
— ফারহান কে ভালোবাসিস?
মায়ের প্রশ্নে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকালো সায়েবা।ফারহান কে সে ভালোবাসে।তবে তার মায়ের থেকে বেশি না।মেয়ের টলমল চোখ দেখে যা বোঝার বুঝে নিলো সাহেরা বেগম।

— আমি বুঝতে পারছি ফারহানের জন্য ভালোবাসা আছে তোর মনে। তবে মা হিসেবে আমি কখনোই এই প্রেম ভালোবাসা মেনে নিবো না। ভালোবাসতে মানা করছি না। তবে সে ভালোবাসা টা হতে হবে পবিত্র। বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক হারাম।আমি ছোট বেলা থেকেই তোমাদের ইসলামের মূল্যবোধ শেখাতে চেষ্টা করেছি।আমার শিক্ষায় হয়তো ত্রুটি ছিলো। তাই বড় হতে হতে তা ভুলতে বসেছিস।মা হিসেবে আমার দায়িত্ব তোদের সঠিক পথে চালিত করা।আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাবো। ফারহান যদি তোর চাওয়া হয়ে থাকে তাহলে তা আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে চেয়ে নিতে হবে। যদি সে তোর ভাগ্যে থেকে থাকে তাহলে সে তোর হবেই।
রক্ষণশীল পরিবারে বড় হয়েও যথেষ্ট স্বাধীনতা পেয়েছিস।আজকে থেকে সেই স্বাধীনতা আর থাকবেনা তোর।পড়াশোনা ছাড়া আর কোন কাজ নেই তোর।

আজকের পর থেকে ফারহানের সাথে কোন যোগাযোগ করবি না।এমনকি ফারহানের সামনে ও যাবিনা।আমি ফারহান কে কথা দিয়েছি সে যদি নিজেকে প্রমাণ করতে পারে তাহলে আমি তার কাছে তোকে বিয়ে দিবো। আমি আমার কথা রাখবো। তার জন্য ফারহান কেও তার কথা রাখতে হবে। এসব চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে পপড়াশোনায় মনোযোগ দে।যা,রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
সায়েবা মায়ের কথায় আর দ্বিরুক্তি করলো না। মাথা নিচু করে নিজের রুমে চলে গেলো। সাহারা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাজে মন দিলেন।

ওই দিনের পর থেকে তিন মাস কেটে গেছে। ফারহানের পরীক্ষা শেষ হয়েছে দুই দিন হলো। ওইদিনের পর থেকে ফারহান আর সায়েবার সাথে কোন যোগাযোগ করার চেষ্টা করে নি।রাগী গম্ভীর ছেলেটা হুট করেই কেমন যেন হয়ে গেলো। আগে থেকেই কথা কম বলতো এখন প্রয়জোন ছাড়া রুম থেকেই বেড় হয় না।ফারহানা বেগম অনেক চেষ্টা করেও ফারহান কে আগের মতো করতে পারেন নি।
ছেলের অবস্থা দেখে সানোয়ার সাহেব ও মনে মনে গুমরে মরছে। ফারহান দেশের বাইরে চলে যাবে কয়েক দিনের মধ্যেই।আজকাল সায়েবার শূন্যতা তাকে পাগল করে দিচ্ছে। এতো কাছাকাছি থেকেও নিজের ভালবাসার মানুষ কে না দেখে থাকার যন্ত্রণা ওকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। প্রতি রাতে বারান্দায় চাতক পাখির মতো দাড়িয়ে থাকে একটা বার সায়েবাকে দেখার আসায়।কিন্তু সায়েবা বারান্দায় আসা তো দূর জানালা টাও খোলে না।নিজেকে ফারহানের এখন পাগল মনে হয়। দূরত্ব যখন হবেই তাহলে সেটা শুধু মনের কেন? মানচিত্রে ও হোক।তাতে অন্তত মন কে শান্তনা তো দেয়া যাবে।

এশার নামাজের পরে পড়তে বসেছে সায়েবা।এখন আর আগের মতো ফাকিবাজি করে না।ফারহান কে সে এখনো খুব ভালোবাসে। তবে তা আর প্রকাশ করে না।প্রতিটা মোনাজাতে তার একটাই চাওয়া। আর তা হচ্ছে ফারহান। সায়েবার ভাবনার মাঝেই রুমে প্রবেশ করে শোয়েব। বোনের দিকে তাকিয়ে বিছানায় টান হয়ে শুয়ে পরে।আজকাল সায়েবা আর তার সাথে রাগ দেখায় না।সে পেছনে লাগলেও সায়েবা চুপ করে থাকে। জীবন টা এখন নিরামিষ নিরামিষ লাগে শোয়েবের কাছে।তবে এখন সে সায়েবার সাথে দুষ্টুমি করতে আসে নি। সে সায়েবাকে একটা খবর দিতে এসেছে।

— আপু।
— শুনছি বল।
— ফারহান ভাইয়া আজ আমেরিকা চলে গেছে।
শোয়েবের কথা শুনে থমকে গেলো সায়েবা। মস্তিস্কে গিয়ে আঘাত করলো কথাটা।কানের কাছে শুধু একটা কথাই বেজে যাচ্ছে, ফারহান ভাইয়া আমেরিকা চলে গেছে। সায়েবা নির্বাক চোখে তাকালো শোয়েবের দিকে। শোয়েব বোনের দৃষ্টি দেখে চোখ নামিয়ে নিলো। তারা সবাই জানতো ফারহান আজ চলে যাবে।গতকাল বিকেলে ফারহান সাহেরা বেগমের সাথে দেখা করতে এসেছিলো। সাহারা বেগমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সায়েবার সাথে একবার দেখা করার কথা বলতেই সাহেরা বেগম সরাসরি নাকচ করে দেয়। ফারহান অনেকবার রিকোয়েস্ট করেও কোন লাভ হয়নি।শোয়েব মায়ের কান্ডে নির্বাক হয়ে ছিল। ফারহান চলে যেতেই সাহেরা বেগম শোয়েব কে কড়া গলায় নিষেধ করে সায়েবা কে এসব জানাতে।তবে কেন জানি আজ শোয়েব চুপ করে থাকতে পারলো না। কিছুক্ষণ আগে জানালে হয়তো দেখা হয়ে যেতো প্রেমিক যুগলের।শোয়েবের এখন খুব আফসোস হচ্ছে। আরেকটু আগে বললেই কি হতো!

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১১

(কিছুটা ইসলামিক ভাবে লিখবো গল্পটা। আমি এটা আগেই ভেবে রেখেছিলাম।সায়েবা আর ফারহানের জীবনে পরিবর্তন আসতে চলেছে।দেখা যাক কি হয়।গল্প দিতে দেড়ি হলো কারণ আমি খুবই অসুস্থ। বুকের হাড় ফুলে গেছে।ব্যাথায় নাজেহাল অবস্থা। সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য। ভালোবাসা সবাইকে। ফি-আমানিল্লাহ্।)

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৩

1 COMMENT

Comments are closed.