তুমিময় বসন্ত পর্ব ১৭

তুমিময় বসন্ত পর্ব ১৭
writer Mousumi Akter

–আমি অয়নের দিকে একবার তাকাচ্ছি আরেকবার বোরকা পরা মহিলার দিকে তাকাচ্ছি কে হতে পারে।অয়ন আবার কাউকে পালিয়ে টালিয়ে নিয়ে আসলো নাতো।মাত্র ই বলতে যাবো কিছু একটা তখন ই মহিলাটি বোরকার নেকাপ তুললেন।সাথে সাথে টাসকি খেলাম আমি।বয়স অনুমান ৫০ এর বেশী হবে।
আয়ন আমাকে বললো,
‘ভাবি উনি আমাদের দাদী হয় সম্পর্কে। উনার মেয়ের বাসা যশোরেই একা একা আসতে পারেনা।তাই আমি সাথে করে নিয়ে এসছি।এখান থেকে উনার মেয়ে নিয়ে যাবে।’
মহিলাটি বেশ রসিক প্রকৃতির আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আয়াস এর সাথে প্রেম করার চান্স পেলাম না তাই এবার ছোট টারে ধরছি।আমরা পালায় এসছি দুজনে।মানিয়েছে না ভালো।’
মহিলার দুই ঠোঁট পানের রঙে লাল টুকটুকে হয়ে আছে।আমি হেসে সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে ভেতরে নিয়ে এলাম।মহিলাটি ভেতরে এসে আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে।উনার দৃষ্টি সারাক্ষণ আমার দিকে।কেমন যেনো অদ্ভুত কোনো কিছু দেখছেন।বেশ কয়েকবার উনার চোখে চোখ পড়েছে আমার।কিন্তু উনি ওইভাবে কি দেখছেন আমার দিকে তাকিয়ে।ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে আমার।এ মহিলার সমস্যা কী বুঝলাম না। অয়ন ওয়াশ রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে এসে ডায়নিং রুমে বসলো আর আমার কাছে তোয়ালে চাইলো।আমি অয়ন কে তোয়ালে দিয়ে নাস্তা আনতে গেলাম।আমি নাস্তা নিয়ে আসতেই আয়াস বাজার থেকে ফিরে এলো।আয়াস এসেই দরজার বাইরে থাকে ডাকছে মুগ্ধতা দ্রুত এসো সব চেক করে দেখো ঠিক না থাকলে আমি এই হাতেই আবার যাবো।আমি আয়াসের ডাকে দ্রুত দরজার কাছে গিয়ে আয়াসের হাত থেকে একটা ব্যাগ নিয়ে বললাম,
‘সব ঠিক না থাকলেও আর যেতে হবেনা আপনাকে।গরমে কি অবস্থা আপনার ঘেমে দেখেছেন।দ্রুত ভেতরে এসে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে নিন।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আয়াস প্রচন্ড গরমেও যেনো শীতলতা অনুভব করলো।আমি কি অন্যরকম কিছু বলেছি।সে অন্যরকম চাহনি তে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি আর একরাশ শুভ্রতা।আমি আবার চোখের ইশারা করলাম ভেতরে আসতে।আয়াস আসতেই মহিলাটি বললো,
‘তোমার বউ কিন্তু ভীষণ সুন্দর হয়েছে। ‘
‘আয়াস হেসে বললো তাইনা ডারলিং।দেখতে হবে বউটা কার।’
‘এইজন্য তুমি আমারে চান্স দিলে না।’
‘তুমি থেকে যাও।নতুন করে আর কি চান্স দিবো।এইভাবে দাদাকে পটাইতে তাইনা বুড়ি।’
‘উনি কয়েক বছর ঘুরে ঘুরে আমাকে পটাইছিলো।’
তাদের আড্ডার মাঝে আমি বিভিন্ন প্রকার ফল,মিষ্টি,নুডুলস, জুস,এনে দিয়ে কিচেনে প্রবেশ করলাম।
এরই মাঝে অয়ন কিচেনে গিয়ে বললো,
‘ভাবি তোমার জন্য আমার পক্ষ থেকে ছোট্ট একটা গিফট আছে।বড়লোক হলে বেশী কিছু দিবো।’
‘আমি হেসে বললাম, কি গিফট এনেছো দাও। ‘

‘অয়ন আমার হাতে একটা ফোন দিয়ে বললো ভাবি আমার ইচ্ছা ছিলো একটা গোল্ডের কিছু দিবো কিন্তু ভাইয়া বললো তোর ভাবির অনেক গহনা আছে পরতে দেখিনা তবে তোর ভাবি গহনার থেকে ফোন পেলে বেশী খুশী হবে।আমার টিউশনির টাকা জমিয়ে জমিয়ে কেনা জাস্ট ফর ইউ।’
আমি ফোনটা হাতে নিয়ে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছি বেশ অবাক হয়ে।

তাদের দুই ভাই এর মুখে ভীষণ সুন্দর হাসি।তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি আমি।দুই ভাই ই হাসছে।মানুষের মন এত ভালো হয় কিভাবে।এতটুক একটা ছেলে তার জমানো টাকা দিয়ে তো আড্ডা ও দিতে পারতো।অনেক কাজে খরচ করতে পারতো।তা না করে ভাই এর বউ এর জন্য ফোন কিনে এনেছে।আসলে আমি কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিনা।তবে আয়াসের সম্মতিতে ফোন দিয়েছে এ জন্য আমি বেশী খুশী হয়েছি।কারণ আয়াস আর রাগারাগি করবে না তাহলে।আয়াসের রাগারাগির পরোয়া যেনো আমি একটু বেশী করছি।সেকেন্ডে সেকেন্ডে তার প্রতি অজানা এক অনুভূতি বেড়েই চলেছে।অয়ন বললো ভাইয়া ভাবির পাশে দাঁড়াও প্লিজ ছবি তুলি দুজনের। আয়াস আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।অয়ন বললো এভাবে না ভাবির ঘাড়ে হাত রাখো।

আয়াস আমার দিকে তাকিয়ে বললো,হাত রাখবো।আয়াসের এই প্রশ্নে মেজাজ ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো আমার।অনুমতি নেওয়ার কি প্রয়োজন।এখন যদি বলি হ্যাঁ রাখুন তাহলে তো ভাববে আমি তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি।কেনো জিজ্ঞেস না করেই হাত রাখা যাচ্ছেনা।আয়াস আবার ও ভ্রু নাচিয়ে বললো,রাখবো।আমি চোখ রাঙিয়ে বললাম না।অয়ন বললো আমার সামনে ভাবি লজ্জা পাচ্ছে।ছবি এডিট করতাম দুজনের।এবার আয়াস অনুমতি না নিয়েই আমার কাঁধে হাত রেখে বেশ ক্লোজলি দাঁড়ালো।অয়ন কতগুলো ছবি তুলে নিলো।আমার হাতে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো।অয়ন বললো,রিসিভ করো আম্মু ফোন দিয়েছে।আমি ফোন রিসিভ করতেই ফোনের ওপাস থেকে শ্বাশুড়ির দীর্ঘনিঃশ্বাস।ভীষণ কাঁদছেন শ্বাশুড়ি আমি খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে মা।আমার শ্বাশুড়ি কিছুই বললো না।শুধু বললো,তুমি সাবধানে থেকো মুগ্ধতা মা।শ্বাশুড়ির বিহেভিয়ার মাঝে মাঝেই অবাক লাগে।অজানা কারনে আমাকে একটু বেশী ভালবাসে।মাঝে মাঝে আমার খুব সন্দেহ হয়।এত ভালবাসার কারণ কী?

ফোন কেটে দিয়ে আবার রান্নায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম।আয়াস আমার পাশে দাঁড়িয়েই হেল্প করছে।
‘আয়াস কে বললাম,আপনার অনুমতি ছাড়া দুজনকে ইনভাইট দিয়েছি আপনি কি রাগ করবেন সেজন্য?’
‘কোন দুজন।’
‘কুসুম ভাবি আর সারফারাজ ভাইয়াকে।’
‘আমি নিজেই তো দাওয়াত দিয়ে এলাম সারফারাজ ভাই কে।তোমার সংসার তোমার যাকে ইচ্ছা তাকে রান্না করে খাওয়াবে আমি রাগ করার কে। ‘
‘যদি রাগ করতেন তাই শুনলাম।’
‘যদি রাগ করতাম তাহলে কি করতে?’
‘এমন ভুল আর করতাম না।’
‘যাক তুমি তাহলে আর অবাধ্য হবেনা আমার নিশ্চিন্ত হলাম।’
এরই মাঝে আয়াস এর ফোন বেজে উঠলো।আমি উঁকি মেরে দেখি সারিকা নামে সেভ করা।আয়াস ফোনটা নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো।পাঁচ মিনিট পর ফিরে এলে বললাম,
‘আড়ালে গিয়ে কি বললেন।’

‘অফিসিয়াল কথা।’
‘অফিসিয়াল কথা কি শুধু সারিকা ই বলে আর কেউ নেই।’
‘হুম আছে তো বাহারুল ভাই,নাহিদ ভাই অনেকেই আছে।’
‘তো অফিসিয়াল কথা কি ছিলো হ্যালো জান কি করছো?’
‘আমাকে বলছো?’
‘তো’কাকে?অন্য কাউকে বলবো।’
‘ওহ হ্যালো!কলিগ আমার।জান টান বলবো ক্যানো?’
‘না বললে আড়ালে গেলেন কি জন্য।’
‘সন্দেহ করছো?’
‘হুম করছি।’
‘কেনো?ভালোবাসো আমায়?’
‘না বাসিনা।’
‘মিথ্যা বলছো কেনো?’
‘সত্যি কে জোর করে মিথ্যা বানালে আমার কি।’
‘তাহলে সন্দেহের কি আছে।’

‘সারিকার টপিক্স ঘুরিয়ে অন্য জায়গা চলে যাচ্ছেন কিন্তু।’
‘সত্যি অফিসের কাজ ছিলো,আর হ্যাঁ রাতে ডিনারে দাওয়াত দিয়েছি।’
‘দুনিয়াতে এত মানুষ রেখে একটা মহিলাকে দাওয়াত দেওয়ার কি প্রয়োজন ছিলো।’
‘কলিগ তো।’
‘পুরুষ ছিলো না।একজন মহিলাকেই দাওয়াত দিতে হলো।’
‘আচ্ছা সারিকার চোখ কেমন?’
‘ভালো।’
‘কেমন ভালো।’
‘তাতো জানিনা তবে ভালো।’
‘সারিকার চোখ কি অনেক ভালো দেখতে।না মানে আপনার কাছে অনেক ভালো দেখা যায়।’
‘হঠাত সারিকার চোখ নিয়ে পড়লে কেনো?’
‘না মানে আগের দিন বললেন তোমার চোখের মনি আরেক টু কালো হলে ভালো হতো।তাই জিজ্ঞেস করলাম।’
‘আরে ওইটা তো এমনি বলেছিলাম।তুমি দেখছি সব কিছুই ফলো করেছো।’
‘না এমনি বললাম আরকি।’

রাতে ডিনারে কুসুম ভাবি আর সারফারাজ ভাইয়া ইয়া বড় একটা গিফট বক্স নিয়ে হাজির হয়েছে।সারিকা ও এসেছে।ডায়নিং এ সবাইকে খাবার দিচ্ছি।সারফারাজ ভাইয়া দেখতে কোনো নায়কের থেকে কম নয়।কিন্তু তবুও নিজের শ্যামবর্নের ওয়াইফ কে কত ভালবাসেন।মাঝে মাঝেই ভাবির কপালের ঘাম মুছে দিচ্ছেন।দুজনে পাশাপাশি বসেছেন উনারা নাকি পাশাপাশি ছাড়া বসেন না।আমার চোখ সারিকার দিকে।সারিকা সুযোগ পেলেই আয়াসের সাথে গল্প করছে।কোনো একটা কারণ পেলেই সে সবাই কে ইগনোর করে আয়াসের সাথে কথা বলছে।এসব দেখলে আমার রাগ হচ্ছে।খাওয়া শেষে সারিকা আমার হাতে একটা গিফট বক্স দিয়ে বললো,খুব ভালো রান্না করো তুমি আমি৷ রেগুলার এসে খেয়ে যাবো।অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিহি হেসে উত্তর দিলাম ওকে আসবেন।অনেক গল্প আর আড্ডা শেষে সবাই বিদায় হলো।তারপর ই অয়নের সাথে থাকা মহিলাটির মেয়ে চলে এলো।মহিলা টি সম্ভবত এখন বিদায় নিবে।উনার মেয়ে এসে ফিসফিস করে বললেন আয়াস কোথায় বিয়ে করেছে।মহিলাটি বললো,

‘আরে আয়াস বিয়ে করছে তুই চিনবি ওর মা বাবার বিয়ের আগেই ওই মেয়ের জন্ম হইছিলো মনে নেই তোর সে কাহিনী।ওর বাবাকে আমি চিনি।আমার বাবার বাড়ির পাশের বাড়ি।মেয়েসহ বিয়ে করে এনেছিলো।তাই নিয়ে এলাকায় অনেক গুজব ছড়িয়েছিলো।কেউ বলেছিলো অবৈধ মেয়ে।’

তুমিময় বসন্ত পর্ব ১৬

তাদের এসব কথা শুনে আমার মাথা যেনো ঘুরতে শুরু করলো।এসব কি আজেবাজে কথা বলছে তারা।আমার মা বাবার বিয়ের আগে আমার জন্ম।তারা বিদায় নেওয়ার পরে আমার ভেতর থেকে অস্হিরতা কমলোনা।মানুষ এত বাজে কথা কিভাবে বলতে পারে।রাগে শরীর রি রি করে জ্বলে যাচ্ছে।এই অসভ্য মহিলা এমন জঘন্য কথা কিভাবে বলতে পারলো।অহনা এক অজানা কৌতুহল মনের ভেতর দিয়ে আমার ঘুন কেড়ে নিয়েছে আর এই আরেক মহিলা আরেক অশান্তি দিয়ে গেলো।আসলে কি হচ্ছে চারপাশে।

তুমিময় বসন্ত পর্ব ১৮