সায়েবা আসক্তি পর্ব ২২

সায়েবা আসক্তি পর্ব ২২
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

সায়েবার অনার্স শেষ হয়ে গেছে। মাস্টার্সের প্রস্তুতি চলছে । সায়েবার রেজাল্ট আউট হওয়ার পর সবাই বাহ বাহ দিলেও ফারহান তাকে কঠিন ঝাড়ি দিয়েছে।এতো খারাপ রেজাল্ট একটা মানুষ কিভাবে করতে পারে তা সে ভেবে পায় না।তার বউয়ের রেজাল্ট দেখে তার মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। তার মতে এতো জঘন্য রেজাল্ট করার জন্য সায়েবা অনেক পরিশ্রম করে পড়া ফাকি দিয়েছে।দেশে থাকলে সে চুমু খেয়ে গাল লাল করে দিতো।একমাত্র বউ কে তো আর মারা যায় না! তাই কষ্ট হলেও চুমু খেয়ে কঠিন শাস্তি দিতো।

ফারহানের কথা শুনে সায়েবা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে ছিল।তার রেজাল্ট এতটা ও খারাপ হয় নি। ফারহানের মতো ভালো ছাত্র না হলেও সে মোটামোটি ভালো ছাত্রী। কিন্তু ফারহানের রিয়্যাকশন দেখে মনে হচ্ছে সে ফেল করে বসে আছে।তাও সব নাম্বারে জিরো পেয়ে।সায়েবার মনটা অসম্ভব রকমের খারাপ হয়ে গেলো। ফারহান অযথাই তার সাথে রাগারাগি করে। একটু ও ভালোবাসে না।সারাটা দিন অভিমানে গাল ফুলিয়েই কেটে গেলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ফারহান তার অভিমান তো বুঝলোই না উল্টো তার গাল ফোলানোর জন্য ধমকা ধমকি করলো। তার হিসেবে সায়েবা গাল ফুলিয়ে ভয়ংকর অন্যায় করে ফেলেছে।এর জন্য তাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। গাল ফুলিয়ে ফুলিয়ে তাকে টর্চার করবে সেটা সে কিছুতেই মেনে নিবে না। এই ফোলানো গাল দেখে যে তার জাপটে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছে করে কিন্তু খেতে পারে না এটা তো কম কষ্টের না!শীতের রাতে ফ্রিজে ঢুকে থাকার মতো কষ্টের! এই মেয়ে সেটা বুঝলে তো! ফারহান ঠিক করে রেখেছে,দেশে গিয়ে সবার আগে এই মেয়ের গালে কুটুস করে একটা কামড় বসিয়ে দিবে।
দুই দিন হলো সায়েবা বাবার বাড়ি গিয়ে বসে আছে। ফারহান কল করে কয়েক দফা হুমকি দিয়েও কাজ হয় নি। সে যাবে না মানে যাবে না। এক সপ্তাহ সে এখানেই থাকবে। ফারহান রেগে আগুন হয়ে কল কেটেছে আর কল করে নি।যদিও ও বাড়ির সবাই সায়েবা কে কিছুদিন এখানেই থাকার অনুমতি দিয়েছে।কিন্তু ফারহান সাফ সাফ মানা করছে।সায়েবা ও অনড়।যে পর্যন্ত ফারহান তার অভিমান না ভাঙ্গাবে সে যাবে না।

চৌধুরী ভিলায় আজ উৎসব মুখর পরিবেশ।বাড়ির ছোট ছেলে আজ বাড়ি ফিরবে এ নিয়ে সবার খুশির শেষ নেই।কিন্তু যার সবচেয়ে বেশি খুশি হওয়ার কথা সে জানে ও না আজ ফারহান ফিরছে!ফারহান সবাইকে কড়া গলায় নিষেধ করেছে সায়েবা কে কিছু জানাতে।সে এসে এই মেয়ের পা ভাঙবে সবার আগে।যাতে যখন তখন বাবার বাড়ি দৌড়াতে না পারে।তার জন্য দরকার হলে সারাজীবন কোলে নিয়ে ঘুরবে।

সকাল সকাল আদিব এসে উপস্থিত হয়েছে ফুপির বাড়ি।আজ তার প্রান প্রিয় বন্ধু আসছে।তাই সে না এসে থাকতে পারে নি। ফায়জার এনগেজমেন্টের পর আদিব আর এ বাসায় আসে নি। ফারহানা বেগম কয়েকবার আসতে বললেও কাজের বাহানা দিয়ে আসে নি সে।এতে ফারহানা বেগম অনেকটা রেগে ছিল তার উপর। কিন্তু আজ আদিব আসতেই রাগ গলে পানি হয়ে গেছে। সে এখন নানান রকম রান্নায় ব্যাস্ত। ফারহান কে রিসিভ করতে কেউ যাবে না। ফারহান নিজেই কাউকে যেতে মানা করেছে।এমনকি ফ্লাইট কয়টার তা ও বলে নি কাউকে।নহলে হাজার নিষেধ সত্ত্বেও সবাই গিয়ে হাজির হতো এয়ারপোর্টে।
আদিব আসার পর থেকেই ফোনের মধ্যে মুখ গুজে বসে আছে। ফরহাদ এসে তার পাসে বসেছে এতে তার কোন খেয়াল নেই।ফরহাদ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে আদিবের দিকে। তার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য গলা খাকারি ফিতেই আদিব হচকচিয়ে তাকালো।সে সত্যিই ফরহাদ কে খেয়াল করে নি।ফরহাদ কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মলিন হেসে বললো,

— কিছু বলবে ভাই?
— কি হয়েছে তোর?
— আমার আবার কি হবে?(জোর করে হাসার চেষ্টা করে)
— কিছুই হয় নি?
— নাহ।
— তাহলে চেহারার এই হাল কেন?
আদিব নিজের দৃষ্টি লুকাতে লাগলো। এদিক ওদিক তাকিতুকি করে তাকিয়ে মিনমিনে গলায় বললো,
— আসলে অফিসে অনেক কাজের প্রেসার তাই,,,
ফরহাদ খ্যাঁক করে উঠলো। রুঢ় গলায় বললো,
— আমাকে কাজের চাপ শিখাস? বারো হাজার স্টাফ আমার আন্ডারে চাকরি করে। আর বাপের আন্ডারে কাজ করে কাজের প্রেসার দেখানো হচ্ছে? মামা তোকে দিয়ে কি কাজ করায় আমি জানি না ভেবেছিস?থাপড়ে গাল ফাটিয়ে দিবো বেয়াদব।
আদিব আর বলার মতো কিছু খুজে পেলো না। মাথা নিচু করে বসে রইলো। আড় চোখে চোখ ঘুরিয়ে কাঙ্খিত মানুষ টা কে না পেয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলো। আজ অনেকদিন হলো ফায়জা কে দেখে না সে।ফায়জা ও তার সামনে আসে নি ওইদিনের পর থেকে। দুজনের মধ্যেই লুকোচুরি চলছে।কিন্তু প্রেমিক মন তো তা মানে না। পাহার সমান অভিমান নিয়েও প্রেয়সীকে দেখার জন্য ব্যকুল হয়ে থাকে।কিন্তু নিষ্ঠুর প্রেয়সী তা বোঝে না।

এয়ারপোর্টের বাইরে এসে প্রান ভরে নিশ্বাস নিলো ফারহান। কতো দিন পরে নিজের দেশের মাটির ঘ্রাণ পেলো সে!বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। ড্রাইভার কে কল করে চলে আসতে বলেছিলো সে।তাই ড্রাইভার ভোর থেকে এসে অপেক্ষা করছে। ফারহান লাগেজ গুলো গাড়িতে তুলে পিছনের সিটে বসে পরলো। গাড়ি চলতে শুরু করতেই চোখ বন্ধ করে নিলো।বাসায় যেতে আধঘন্টার মতো সময় লাগবে।এই আধঘন্টা এক যুগের মতো মনে হচ্ছে ফারহানের।
আটটার মধ্যে বাসায় পৌঁছে গেলো ফারহান। কেয়ারটেকার কে লাগেজ গুলো উপরে তুলে দিতে বলে বাসায় ঢুকে গেলো সে।কলিং বেল বাজাতেই ফারহানা বেগম দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললেন।সামনে ফারহান কে দেখে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলেন না। ছেলেকে জাপটে ধরে কান্না করে দিলেন।ফারহানের চোখেও পানি ভির করেছে।কতদিন পরে মায়ের উষ্ণ আলিঙ্গন পেলো।মায়ের কপালে চুমু খেয়ে তাকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো সে।সানোয়ার সাহেব আসতেই মাকে ছেড়ে বাবা কে জরিয়ে ধরলো।

— কেমন আছো আব্বু?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো। জার্নিতে কোন সমস্যা হয় নি তো?
— না আব্বু।
ফরহাদ অস্থির হয়ে বললো,
— আরে আমরা ও লাইনে আছি।
ফারহান হেসে ভাইকে জরিয়ে ধরলো। আদিব লাফিয়ে গিয়ে পিছন থেকে জাপটে ধরলো ফারহান কে।
সবার সাথে কথা বলে ফারহান ফায়জার কথা জানতে চাইলো।ফারহানা বেগম বললেন, ফায়জা হসপিটালে আছে।ইমার্জেন্সি অপারেশন আছে তার।কিছুক্ষণ পরেই চলে আসবে।
ফারহান নিজের রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। দশ মিনিটের মধ্যে শাওয়ার নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। সবাই দেখেও কিছু বললো না। কারণ তারা জানে ফারহান কোথায় যাচ্ছে।

সায়েবাদের বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতেই সাহেরা বেগম দরজা খুললেন।ফারহান কে দেখে মুচকি হেসে ভিতরে আসতে বললেন। ফারহান সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করে সায়েবার কথা জানতে চাইতেই সায়েবার রুম দেখিয়ে দিলেন তিনি।
দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই সায়েবার ঘুমন্ত মুখশ্রী চোখে পড়লো ফারহানের।বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে সায়েবা।ফারহান সায়েবার আদুরে তেলতেলে মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কয়েক মিনিট। আস্তে করে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। সাহেরা বেগম আর শোয়েব কে তাদের বাসায় আসতে বলে বের হয়ে গেলো সায়েবা কে নিয়ে। সাহেরা বেগম হা করে তাকিয়ে ছিল ফারহানের দিকে।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ২১

সায়েবা কে নিয়ে বাসায় ঢুকতেই সবাই মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলো। সায়েবা এখনো ঘুমিয়ে কাদা।
ফারহান সায়েবা কে বেডে শুইয়ে দিয়ে নিজেও ওর পাসে শুয়ে পরলো।
সায়েবা একটু নড়ে-চড়ে উঠতেই ফারহান তাকে হালকা করে বুকের সাথে চেপে ধরলো। কপালে চুমু খেয়ে গালের মধ্যে কুট করে কামড় বসিয়ে দিলো।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ২৩