সায়েবা আসক্তি পর্ব ২৩

সায়েবা আসক্তি পর্ব ২৩
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

ইদানীং ফারহানের ভাবনা গুলো খু জ্বালাতন করছিলো সায়েবা কে।কয়েক দিন ঠিক করে ঘুম হচ্ছে না। না পেরে রাতে একটা হালকা পাওয়ারের ঘুমের ঔষধ নিয়েছিলো সে।তাই এতো বেলা হওয়ার পরেও ঘুম ভাঙেনি তার।এমনিতেই সায়েবার ঘুম খুব গভীর। ঘুমের মধ্যে নিয়ে ফেলে দিয়ে আসলেও সে টের পাবে না।

মুখের উপর গরম নিশ্বাসের আভাস পেতেই নড়েচড়ে উঠল সায়েবা।মনে হচ্ছে কেউ তাকে বারবার উষ্ণ স্পর্শ দিচ্ছে। তবুও সে চোখ খুলছে না। চোখ মুখ কুচকে নড়েচড়ে আবার ঘুমানোয় মন দিলো। কিন্তু গালে কামড় পরতেই ঘুম কে ছুটি দিয়ে লাফিয়ে উঠলো সায়েবা।হঠাৎ করে এমন হওয়ায় পুরো শরীর কাপছে তার। ফারহান সায়েবার অবস্থা টা বুঝতে পেরে তাকে বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেললো। সায়েবা এখানো ঘোরের মধ্যে আছে। ফারহান আলতো হাতে সায়েবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। একটু স্বাভাবিক হওয়ার পরেই খেয়াল হয় তাকে কেউ আকড়ে ধরে আছে।অবাক হয়ে তার দিকে ঘুরতেই ফারহান কে দেখে স্থির হয়ে গেলো সে।মিনিট কয়েক পলকহীন চোখে তাকিয়ে থেকে ঝাপিয়ে পরলো ফারহানের বুকে।খাটের উপর হেলে পরলো ফারহান।চোখে পানি আর ঠোঁটে হাসি নিয়ে প্রেয়সীর মাথা নিজের বক্ষে চেপে ধরে রইলো। একেই বুঝি পরম সুখ বলে।মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরলো সায়েবা কে। সায়েবা ফুপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। সে জানে না এটা বাস্তব নাকি কল্পনা! যাই হোক না কেন ফারহান তার সামনে আছে এটাই যথেষ্ট।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— আর কতো কাদবে বউ?বর এতো দিন পরে এসেছে, কই জরিয়ে ধরে আদর করবে!তা না করে কান্না করে ভাসিয়ে দিচ্ছো।
ফারহানের কথা শুনে হুস ফিরলো সায়েবার। ঝড়ের গতিতে সরে গেলো ফারহানের কাছ থেকে। এভাবে সরে যাওয়ায় ফারহানের মেজাজ খারাপ হলেও কিছু বললো না। সায়েবা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। হুট করে কান্না টাও বন্ধ হয়ে গেছে। কাপা কাপা হাতে ফারহানের গাল স্পর্শ করতেই চোখ থেকে আবার পানি পরতে শুরু করলো। কান্নার কারণে গলা থেকে স্বর বের হচ্ছে না। ফারহান সায়েবাকে কাছে টেনে সন্তপর্ণে চুমু খেলো তার ললাটে। সায়েবার কান্না মাখা মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো ফারহানের স্পর্শে। সায়েবার আদর মাখা মুখের লজ্জা টুকু নিজের চোখে বন্দী করে নিলো ফারহান। তাকে নিজের কোলে তুলে দিয়ে কাধে ঘারে মুখ গুজে বসে রইলো।

— আমাকে জানালেন না কেন?
সায়েবার অভিমানী গলা শুনে মুচকি হাসলো ফারহান।সায়েবাকে আরেকটু চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বললো,
— সুযোগ দিয়েছিলে বুঝি?খুব তো রাগ করে চলে গিয়েছিলে বাবার বাড়ি। তাহলে আমি কেন বলবো?
সায়েবা আহত গলায় বললো,
— আমি অভিমান করেছিলাম। আপনি আমার অভিমান ভাঙাবেন না?
— আমি ও অভিমান করে আছি।অনেক পুরোনো অভিমান। তুমি ভাঙিয়ে ছিলে?তুমি তো আমার অভিমানের খবর ও রাখো নি।
ফারহানের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো সায়েবা।ফারহানের কথা কিছুই মাথায় ঢুকলো না তার।
— আমি কি কোন ভুল করেছি?
— আমি কেন বলবো?তুমি নিজেই ভাবো তুমি কি ভুল করেছো?এখন নিচে চলো।সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে।
ফারহানের কথায় সায়েবার খেয়াল হলো সে ফারহানদের বাসায়।

— আমি এখানে এলাম কিভাবে?(অবাক গলায়)
— তোমার একমাত্র বরের কোলে চড়ে।
সায়েবা বিস্ফোরিত চোখে তাকালো ফারহানের দিকে।
— সবার সামনে আপনি আমাকে কোলে করে নিয়ে এসেছেন?
— হ্যা।এমন রিয়্যাক্ট করার কিছু হয়নি।এর আগেও আমি তোমাকে রাস্তা ভর্তি লোকের সামনে কোলে নিয়েছি।
— অসভ্য।(বিরবির করে)
— আমি শুনেছি।এখন যদি না চাও অসভ্যগিরি শুরু করি তাহলে তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো।আমি নিচে যাচ্ছি। নিচে ভাইয়া আর আদিব আছে।হিজাবের উপর বড় ওরনা দিয়ে বড় করে ঘোমটা দিয়ে আসবে।আমি যেটা দিয়ে তোমাকে ঢেকে নিয়ে এসেছি ওটাই পড়ে আসো।এটা তুলনামূলক ভাবে বড় আছে।বুঝেছো?
— হুম।
ফারহান সায়েবার অভিমানে ফুলিয়ে রাখা গাল টেনে পর পর কয়েকটা চুমু খেয়ে তড়িৎ গতিতে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। সায়েবা এখনো গালে হাত দিয়ে বসে আছে। আগের গম্ভীর ফারহানের সাথে এ ফারহানের কোন মিল ই নেই।ঘুমের ঔষধের জন্য মাথাটা এখনো ঝিম ঝিম করছে।সায়েবা ওয়াশরুমে চলে গেলো। একটু শাওয়ার নিলে হয়তো ভালো লাগবে।

হসপিটাল থেকে মাত্রই এসেছে ফায়জা।তার সাথে জাবের ও এসেছে।ড্রয়িং রুমে এসে আদিবের মুখোমুখি হতেই চোখ নামিয়ে নিলো ফায়জা।এই ছেলের চোখের দিকে তাকালে কলিজা কেপে উঠে তার।কি ভয়ংকর সে দৃষ্টি। জাবের হাসি মুখে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। ফারহানের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার দিকে। ফারহানা বেগম বাদে জাবেরের উপস্থিতি তে কেউই সন্তুষ্ট নয়।তবুও সবাই তার সাথে হাসি মুখেই কথা বলছে।ফায়জা বিরক্তিতে মুখ কুচকে আছে। এই লোকটা প্রচন্ড গায়ে পড়া।এমন গায়েপড়া মানুষ ফায়জার একদম পছন্দ নয়।হসপিটাল থেকে অনেকটা জোর করেই তার সাথে চলে এলো সে।নুন্যতম আত্মসম্মান বোধ নেই!
ফারহানের কাছে গিয়ে ফারহান কে জরিয়ে ধরলো ফায়জা।কতদিন পরে ছোট ভাই কে কাছে পেলো।
— তুই ঠিক আছিস ভাই?আসতে কোন সমস্যা হয় নি তো?
— উফফ আপু।আমি ছোট বাচ্চা নই।তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। আমরা এক সাথে ব্রেকফাস্ট করবো।
ফায়জা আড়চোখে আদিবের দিকে তাকালো। সে নিজের ফোনে মগ্ন।ফায়জা নামের কেউ তার সামনে আছে যেন তার চোখেই পড়ছে না।

ফায়জার ভাবতে প্রচন্ড লজ্জা হয় এই ছেলেটার জন্য সে রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে পারে না। তার ভাবনা গুলো মন কে এলোমেলো করে দেয়।এখন তো আদিবের চোখের দিকে তাকাতেও ভয় হয়।তার অনুভূতি গুলো না এই ইঁচড়েপাকা ছেলেটা বুঝে ফেলে!
নিজেকে সামলে নিয়ে ফায়জা নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো। আদিব চোরা চোখে একবার তাকিয়ে আবার ফোনে মনোযোগ দিলো। তার মনে এখন ঝড় উঠেছে।আর সেই ঝড় এখন সামনে বসে থাকা মানুষটাকে যে কোন সময় লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখা বড্ড দায় হয়ে পড়েছে। ফারহান ফায়জা আর আদিব দুজনের দিকেই এতোক্ষন খেয়াল করছিলো। দুজনের হাবভাব দেখে মুচকি হাসলো সে। সামনে বসে থাকা মানুষটাকে তার একদম ভালো লাগছে না। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।
আদিব উঠে চলে গেলো দোতালার দিকে।ফরহাদ ফারহান কে খোচা দিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— কি বুঝলি ভাই?
— আরেকটা সুন্নতের অংশ হতে পারবো তা বুঝলাম।
ফরহাদ অসহায় গলায় বললো,
— আমি তোদের সবার বড়!আমার দিকেও একটু ধ্যান দে।
— চিন্তা করো না। তোমাকে আন্তর্জাতিক ব্যাচেলর গ্রুপের সভাপতি করে দেয়া হবে।
— আমার অভিশাপ লাগবে দেখিস।
— লাগবে না। তুমি নিজেই নিজের ব্যবস্থা না করলে আমাদের কি করার আছে।এবার ভাবো তুমি কি করবে?
— দেখে নিবো তোদের।সব-কয়টা মীরজাফর।

ফায়জা ফ্রেশ হয়ে বেরুতেই দেখলো আদিব তার বিছানায় আয়েস করে বসে আছে। আদিব কে দেখে শুকনো ঢোক গিললো ফায়জা।সে রাতের পর থেকে আদিব কে দেখলে ভয় হয় তার।
— এখানে কি করছো তুমি?
ফায়জার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো আদিব। বেড থেকে নেমে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো ফায়জার দিকে। ফায়জা সেখানেই ফ্রিজ হয়ে দাড়িয়ে আছে। আদিব ফায়জার মুখোমুখি দাড়ালো। এক দৃষ্টিতে ফায়জার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুকাল।নিজেদের মধ্যকার দূরত্ব আরেকটু ঘুচিয়ে নেশালো গলায় বললো,
— শাস্তির পরিমান খুব বেশি বাড়িয়ে ফেলছো সোনা।সহ্য করতে পারবে তো?আমি কিন্তু একচুল ও ছাড় দিবো না। কড়ায় গন্ডায় উসুল করে নিবো।তখন আবার আমাকে নিষ্ঠুর বলোনা কিন্তু। আমি মেনে নিবো না।
আদিবের গরম নিশ্বাস ফায়জার মুখের উপর আচড়ে পরছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার।কোন রকম কাপা কাপা গলায় বললো,

সায়েবা আসক্তি পর্ব ২২

— কি বলছো এসব? পাগলামি বন্ধ করো আদিব।সরে দাড়াও।
— আমি কাছে আসলেই ফোসকা পড়ে বুঝি?ওই ডাক্তার কাছে আসলে পড়ে না?
— মুখ সামলে কথা বলো আদিব।কি বলছো খেয়াল আছে? আর সে কাছে আসলে ফোসকা পড়বে কেন।আমার বাগদত্তা সে।কয়েকদিন পরে স্বামী হবে।আমার উপর একদিন সম্পুর্ন অধিকার থাকবে তার। যার বিচরণ আমার সমস্ত সত্ত্বা জুরে থাকবে তার কাছে আসায় ফোসকা পড়ার কথা নয় নিশ্চয়ই।
আদিব শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে ফায়জার দিকে। তবে তার চোখ থেকে আগুন বেরুচ্ছে। দৃষ্টিতে যদি কাউকে জ্বালিয়ে দেয়া যেতো তাহলে সামনে দাড়িয়ে থাকা এই রমনী এতোক্ষণে ভস্ম হয়ে যেতো।
— সেই একদিন টা তোমার জীবনে খুব জলদি আসবে সোনা। আজকের এই কথা গুলোর মাশুল দেয়ার জন্য সেদিন প্রস্তুত থেকো। তোমার সমস্ত সত্ত্বায় বিচরনের ঝড় না তুলে আমি আদিব ক্ষান্ত হবো না। কথা দিলাম।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ২৪

1 COMMENT

Comments are closed.