তুমিময় বসন্ত পর্ব ১৬

তুমিময় বসন্ত পর্ব ১৬
writer Mousumi Akter

আয়াস কে এইভাবে কাশতে দেখে আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে একগ্লাস পানি এনে দ্রুত আয়াসের দিকে ধরলাম।আয়াস ড্যাব ড্যাব চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে চোখে মুখে ভীষণ আশ্চর্যজনক চাহনি।আমি কি পৃথিবীর নবম আশ্চর্যজনক কিছু বলে ফেলেছি যার জন্য আয়াস এমন করছে।আয়াস পানির গ্লাস টা আমার হাত থেকে নিয়ে দুই ঢোক পানি খেয়ে গ্লাস টা আমার দিকে আবার এগিয়ে দিলো।

আমি পানির গ্লাস টা আয়াসের হাত থেকে নিয়ে বললাম,
“কি ব্যাপার আপনি এমন ভড়কে গেলেন কেনো?আমি তো ভালো কথা ই বললাম আপনার যদি শারিরীক কোনো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে ডাক্তার দেখান।তো এতে ঘাবড়ে যাবার কি আছে।”
আয়াস আমার দিকে কপাল টান টান করে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে গভীর কিছু ভাবছে।বাট কি ভাবছে এক্ষুনি আবার উল্টা পাল্টা কিছু বলবে নাতো।কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“আমি তো ভাবতেই পারছি না আমাকে এমন মারাত্মক একটা কথা তুমি বলবে।না মানে তোমার মুখ থেকে এমন কথা বেরোবে ভাবা যাচ্ছেনা।আমার তো ভড়কে যাওয়া টায় স্বাভাবিক মুগ্ধতা।”
“মনে হচ্ছে আমি খুব অশালীন কিছু বলেছি যে আমার মুখ থেকে এমন কথা ভাবা যাচ্ছেনা।”
“যদি কথাটা ব্যাখ্যা করতে যায়,তাহলে কিন্তু অশালীন অনেক তথ্য বেরোলেও বেরোতে পারে।তো মিসেস মুগ্ধতা আয়াস চলো আমরা এবার এর ব্যখ্যা তে যায়।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“কিসের ব্যাখা আশ্চর্য তো।”
“আমার সমস্যা আছে কিনা সেটা বুঝবো কিভাবে।এর ব্যাখা তাহলে স্টার্ট।”
“নো নিড।আপনাকে ব্যাখ্যা করতে কে বলেছে।আপনি ডাক্তার দেখান তাহলেই হবে।”
“আমার মতো ইয়াং,হ্যান্ডসাম একটা ছেলের কোনো প্রব্লেম থাকতে পারে তোমার কি তাই মনে হয়।আমাকে দেখে কি আসলেই মনে হয় কোনো সমস্যা আছে।”
“তো বললেন কেনো যে সন্তান হবে না।”
“সন্তান কি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করবো,নাকি গুগল থেকে।নাকি আকাশ থেকে টুপ করে পড়বে।সন্তান হওয়ার জন্য তো অন্য কিছু লাগবে।”
এবার আমি আয়াসের মতো কাশতে শুরু করলাম।কাশি হয়েই যাচ্ছে।বেশম খেলাম মারাত্মক আকারের।হাতে থাকা গ্লাসের পানি মুখে দিতে গেলেই আয়াস বললো এঁটো পানি আমি খেয়েছিলাম।আমি অন্য গ্লাসে পানি এনে দিচ্ছি।ওয়েট এক মিনিট।আমি আয়াস কে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
লাগবে না এখান থেকেই খেয়ে নিচ্ছি বলেই পানি খেলাম।জীবনে কারো গ্লাসে খাওয়া গ্লাসেও খাই নি।আর আজ আজ আয়াসের খাওয়া পানি খেতেও যেনো ভালো লাগছে।
এবার আয়াস বললো,

“তাহলে মুগ্ধতা আমার সন্তান হবে কিভাবে?সন্তান হওয়ার জন্য ফুলসজ্জা করা লাগে আই থিংক বাকিটা বুঝতে পারছো।নাকি বুঝতে পারছো না।না বুঝলে আরো ভালো আমি প্রাক্টিক্যাল এ বুঝাতে সক্ষম হবো যদি তোমার বুঝতে আপত্তি না থাকে।”
“চোখ রাঙিয়ে বললাম,বাজে কথা যত্তসব বলেই আমি গ্লাস নিয়ে বেরিয়ে গেলাম।”
কিছুক্ষণ পরে নাস্তার টেবিলে বসে আয়াস আর আমি নাস্তা করছি।
নাস্তা করতে করতে আয়াস কে বললাম,
“বাইরের খাবার আর খাবো না।আজ থেকে রান্না, নাস্তা বানানো,চা বানানো সব আমি একাই করবো।বাইরে থেকে খাবার কিনলে অনেক টাকা নষ্ট হচ্ছে।তাছাড়া বাইরের খাবার রেগুলার খাওয়া কি ভালো।মানুষ কি না কি রান্না করে তার ঠিক নেই।”
“তুমি রান্না করতে পারো।?”
“সব তো পারিনা তবে মাছ,মাংস,ডাল আম্মুকে রান্না করতে দেখেছি টুকটাক পারি।খুব ভালো হবেনা হয়তো তবে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।ইউটিউব এর হেল্প নিবো প্রয়োজনে।”
“তুমি নিজেই ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারোতো।”
“আমি কি এসব পারি নাকি।”

“পারোনা পারতে হবে।নিজেকে আর মন ভালো রাখতে অনেক কিছু পারতে হবে মুগ্ধতা।জীবন মানে কি বলো।বিয়ে হয়েছে চারদেওয়ালের মাঝে জাস্ট রান্না করবা আর দুই চারটা বাচ্চা মানুষ করবা এভাবেই চুলে পাক ধরাবা।”
“তাহলে কি করবো?”
“রেজাল্ট দিক সব ভার্সিটি তে পরীক্ষা দিবা।আজ থেকে প্রিপারেশন নাও।”
“আমাকে পড়াবেন আপনি?”
“আশ্চর্য কথা বললে তুমি।তোমাকে পড়াবো না মানে।তুমি আয়াস এর ওয়াইফ বুঝলে।তোমাকে হাইয়ার এডুকেটেড হতে হবে।আমি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেই জবে ঢুকেছি বুঝলে। সো তোমাকে পড়তে হবে।আমার সাথে আজ লাইব্রেরি যাবে,এডমিশন এর যাবতীয় বই আমি কিনে দিবো।”
“এখন কি আর প্রিপারেশণ নেওয়ার টাইম আছে আমার।হয়তো আর পনেরো দিনের মাঝে রেজাল্ট দিয়ে দিবে।আমার দ্বারা কোনো ভালো কোনো ইউনিভার্সিটি চান্স এখন হবেনা।ন্যাশনালেই পড়তে হবে।”

“জীবনে বড় হতে গেলে কি শুধু পাব্লিক ইউনিভার্সিটি তেই পড়া লাগে।সবাই কি সেখানে চান্স পায়।দেশে হাজার হাজার মেধাবী স্টুডেন্ট আছে কিন্তু পাব্লিক ইউনিভার্সিটি তে কি তত গুলো সিট থাকে।তাই বলে কি বাকিরা থেমে থাকে।ন্যাশনালে পড়েও মানুষ বিসিএস ক্যাডার হচ্ছে বুঝলে।তোমার যদি মেধা থাকে কোথায় পড়ছো সেটা ফ্যাক্ট নয়। তোমার মেধা আর চেষ্টা থাকলে ঠিক ই একদিন না একদিন তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবেই।তবে তার জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম।আজ থেকেই প্রিপারেশন নাও ওকে।জাস্ট ফোকাস করো তোমার ক্যারিয়ার এ।তোমাকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।একটা কথা মাথায় রাখবে যে রাঁধে সে চুল ও বাঁধে।এই ঘর সংসার এর পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে।আর তোমার পাশে থেকে যাবতীয় সাপোর্ট আমি দিবো বুঝলে।”
“আপনি সত্যি মানুষের মন ভালো করার ম্যাজিক জানেন।হতাসা থেকে একটা মানুষ কে বেরিয়ে আনার ম্যাজিক আছে আপনার আছে।লাইফে কেউ আমাকে এতটা উৎসাহ দেয় নি।আপনি খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে কথা ও বলতে পারেন আবার বুঝাতেও পারেন।”
“যাক এটাও আমার কাছে ম্যাজিকের মতো লাগছে।অন্তত আমার একটু হলেও প্রশংসা করলে তুমি।”

“প্রশংসার যোগ্য যে তার প্রশংসা তো করতে হবে।”
আয়াসের আনা থ্রি-পিছ গুলো পাশেই এক মহিলার কাছে বানাতে দিয়ে আসলাম।
আয়াসের আনা রেডিমেট থ্রি পিছ থেকে একটা কমলা কালারের থ্রি পিছ পরলাম।আজ বেশ ফ্রেশ লাগছে।এতদিন শাড়িতে কেমন হাঁপিয়ে উঠছিলাম।পড়ন্ত বিকাল সূর্য পশ্চিম আকাশে গোল বৃত্তের মতো দাঁড়িয়ে আছে।ঠিক যেনো আকাশের কপালে টিপ।আয়াস কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।কথা শেষ করে আমাকে বললো,
” অয়ন আসছে আজ।”
“ওএমজি কখন আসছে।”
“সকালে রওনা দিয়েছে চলে আসবে।”
“তো আপনি এমন খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?”
“তো কি করবো আমি?”
“বাজারে যান,অয়নের জন্য রান্না করতে হবেনা।”
“আমি ভেবেছিলাম খাবার কিনে আনবো।”
“কিনে আনবেন,সকালে কি বলেছিলাম।”
“বউটা কালো হয়ে যাবে আগুনের তাপে।সেটা ভেবে খারাপ লাগছে।”
“সিনেমা দেখেন ভালোই তাইনা?”
“কেনো?”

“এইযে সিনেমার ডায়লগ দিচ্ছেন।”
“এটা আমার ওয়ান ক্রিয়েশন ফর ইউ বুঝলে।কোন মুভিতে এই ডায়লগ শুনেছো।”
“না শুনে থাকলেও পরিচালক রা এমন রোমান্টিক আলাপ শুনলে ডায়লগ টা নিয়ে নিশ্চয়ই কোনো সিনেমায় লাগিয়ে দিবে।”
“মুগ্ধতা এই ডায়লগ টা কোন হিরোর মুখে বেশী মানাবে বলোতো।”
“হিরো আলমের হয়েছে।এক্ষুনি বাজারে যান আপনি।”

আয়াস রেডি হয়ে বাজারে চলে গেলো।আয়াস বাজারে যাওয়ার পরে মনে হলো পুরুষ মানুষ সব কি ঠিকঠাক আনতে পারবে।টক দই এর কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।অয়ন নাকি রোস্ট ভালো পছন্দ করে।কিন্তু ফোন পাবো কোথায় আয়াস কে বলার জন্য।পাশের ফ্ল্যাটে এক জোড়া দম্পতি থাকে।আমার সাথে দুই একবার কথা হয়েছে এর আগে।এই দম্পতির স্ত্রীর নাম কুসুম।একদম ই কালো দেখতে বাট ভীষণ সুন্দর মায়াবী দেখতে।কুসুম ভাবির স্বামি একদম ফর্সা, লম্বা দেখতে অবিকল নায়কের মতো।উনি কলেজের প্রফেসর।ওই ভাই নাকি ফর্সা মেয়ে রিজেক্ট করে কুসুম ভাবিকে পছন্দ করেছিলেন।উনার ধারণ সে ফর্সা তার সাথে একটা কালো মেয়েকেই ভালো মানাবে।তাই কুসুম ভাবিকে বিয়ে করেছেন।প্রতিদিন নাকি ভাবিকে বলেন তুমি এত সুন্দর কেনো কুসুম।আমার চোখে তোমাকে ভুবনভোলানো সুন্দরী লাগে জানো তুমি।তাদের ভালবাসা সত্যি দেখার মতো।কুসুম ভাবির মতো যদি সব কালো মেয়ের ভাগ্য হতো তাহলে ভীষণ ভালো হতো।কুসুম ভাবি কাপড় তুলে নিয়ে রুমে যাচ্ছেন।ঠিক তখন ই ডাক দিলাম আমি।আমার ডাক শুনে ভাবি ভীষণ মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,

“আরে মুগ্ধতা ভাবি আপনি?আজ ঘর থেকে বের হয়েছেন তাহলে?”
“হুম,একটু ফোনটা দিবেন।উনাকে ফোন দিতাম।”
“কুসুম ভাবি ফোনটা আমার দিয়েছে ঠিক ই কিন্তু আমি আয়াসের নাম্বার জানিনা।কিভাবে ফোন দিবো।ভাবির দিকে তাকিয়ে বললাম উনার নাম্বার সেভ আছে।থাকলে একটু কল দিয়ে দিন।আমি উনার নাম্বার মুখস্থ করিনি।”
“ভাবি উনার নাম্বার বের করে কল দিয়ে বললেন, আজ ই মুখস্থ করে ফেলুন ভাবি।প্রিয়জনের নাম্বার অন্তরে রাখতে হয়।”
আয়াসের সাথে কথা শেষ করে ভাবিকে ফোনটা দিয়ে দিলাম।ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
এ কদিন আপনাকে ভারী মনমরা লাগতো ভাবি।আজ ভারী সুন্দর লাগছে কিন্তু।
আমি স্বভাবসুলভ হাসলাম আর ভাবিকে বললাম আজ ডিনারে আপনার আর ভাইয়ার দাওয়াত রইলো রাতে কিন্তু রান্না করবেন না ঠিক আছে।

তুমিময় বসন্ত পর্ব ১৫

কিছুক্ষণ পরেই কেউ আবার কলিং বেল চাপলো।আমি উঁকি মেরে দেখি ঘারে ব্যাগ ঝুলানো লম্বা ফর্সা ঠোঁটের কোনায় কালো মিছমিছ একটা তিল সামনের চুল বড় বেশ স্ট্যালিশ একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে পাশে বোরকা পরা একজন মহিলা ও আছে।দরজা খুলতেই ছেলেটি হেসে দিলো আর বললো,
“ভাবি রাইট।”
দরজা খুলে নিশ্চিত হলাম এটা অয়ন।আমি হেসে দিয়ে বললাম অয়ন রাইট।
“অয়ন বললো,জ্বী ভাবি আপনার ছোট ভাই অয়ন।”
কিন্তু পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বোরকা পরা মহিলাটি কে।

তুমিময় বসন্ত পর্ব ১৭