তুমিময় বসন্ত পর্ব ৪

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৪
writer Mousumi Akter

–এক আকাশ অভিমান নিয়ে রওনা হলাম শ্বশুরবাড়ি। প্রচন্ড কাঁন্না পাচ্ছে কষ্ট হচ্ছে তবুও চোখের পানি না ফেলে গাড়িতে গিয়ে উঠলাম।মা বাবার প্রতি রেখে গেলাম ভীষণ রাগ ক্ষোভ আর অভিমান।জীবন টা তো এমন না হলেও পারতো।একটা মেয়ে বোঝে এই কষ্ট নিজের ভালবাসার মানুষ ছেড়ে হুট করে অন্য কারো সাথে বিয়ে হওয়ার কষ্ট।অভির জন্য ভেতর টা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।কেউ আমার মুখে অভির নাম শুনতেই চাইছেনা।

কিছুক্ষণ আগে বিয়ে হওয়া মানুষ টাকে জোর করে জুড়ে দেওয়া হলো আমার জীবনের সাথে।যাকে চাইলেও কখনো ভালবাসতে পারবোনা।মনের মাঝ থেকে অভির নাম কেটে তার নাম কোনদিন লিখতে পারবোনা।তিন অক্ষরের কবুলের এত শক্তি আগে বুঝিনি।যার নামে কবুল পড়েছি আজ আমার ইচ্ছা না থাকলেও তার সাথে যেতে হবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বুকফাটা অার্তনাদ নিয়ে বসে আছি গাড়িতে।বাবা আমার কাছে এসে চোখের পানি ফেলে বললেন,
‘মা একদিন বুঝবি মা বাবা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না।আমাদের উপর অনেক রাগ করেছিস তাইনা।খুব শিঘ্রই তুই বুঝবি আমরা ঠিক ছিলাম।’
বাবার এ কথার কোনো উত্তর আমি দিলাম না।ভীষণ রাগ অভিমানে কোনো উত্তর আমার দিতে ইচ্ছা করলো না।খুব বলতে ইচ্ছা করছিলো এটা কেমন ভালো চাওয়া বাবা।আমার মনের চাওয়ার কি কোনো গুরুত্ব নেই,যেখানে আমি নিজেই হ্যাপি নাহ।কিন্তু কিছুই বললাম নাহ।
আম্মু ওপাসে কাঁদছে,খালামনি বুঝাচ্ছে আম্মুকে।আমার ছোট বোন শ্রুতি ও কাঁদছে খুব।
খালু এগিয়ে এসে বললেন,

‘মা মুগ্ধ একটুও চিন্তা করো না।আমরা সবাই আছি তো।তাছাড়া এই এলাকাতেই তো তোমার বিয়ে হয়েছে।আমি রোজ দু’বার করে যাবো, অরহী যাবে,তোমার খালামনি যাবে।একটুও মন খারাপ করোনা।’
খালুর কথার ও কোনো উত্তর দিলাম নাহ আমি।কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না আমার।এদের থেকে দূরে গেলেই যেনো শান্তি পাবো।

–বিয়ের পর মেয়ের বাড়ি থেকে একজন সাথে যায় আমার সাথে আরহীকে পাঠানো হলো আর শ্রুতিকে।এ ব্যাপার টা আরো অবাক করলো আমাকে।আরহী?যার সাথে আয়াস এর বিয়ে ঠিক হয়েছিলো, বিয়েটা হলোনা অথচ তার বাড়িতে কনের সাথে কিভাবে যাবে। খুব অবাক হয়ে আরহীর দিকে তাকিয়ে আছি আমি।আমার সব প্রশ্নের উত্তর আরহীকে দিতেই হবে।কোন জন্মের প্রতিশোধ নিয়েছে আরহী আমার থেকে।এর উত্তর দিতেই হবে আরহীকে।নিজের জীবনের সব কথা যার সাথে শেয়ার করেছি,সব থেকে ক্লোজ ছিলো যে আমার সাথে সে আমার জীবন নিয়ে গেম খেললো কিন্তু কেনো?কোনো কিছুই আমার মাথায় আসছে না।

গাড়িতে আমি জানালার পাশে বসলাম আমার পাশে আয়াস বসেছে।পেছনের সিটে আয়াসের মা, শ্রুতি আর আরহী বসেছে।ড্রাইভারের পাশে আয়াসের বাবা বসেছেন।আরহীদের বাড়ি থেকে গাড়িতে করে দশ মিনিট ও লাগলো না আয়াস দের বাড়ি।পাশাপাশি এলাকাতেই আরহী আর আয়াস এর বাসা।গাড়ি থেকে সবাই নেমে গেলে ও আমি চুপচাপ বসে রইলাম। আমি আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ভাবছি খেয়াল নেই গাড়ি থেমে গিয়েছে।
আয়াসের মা বললেন,

‘আয়াস বৌমা কে নিয়ে এসো।তুমি নেমে এলে কেনো বৌমা কে রেখে এলে কেনো?’
‘আম্মু তোমার বউমা গাড়ি চালাতে পারে অথচ গাড়ি থেকে নামতে পারেনা।তোমার বউমা কি বাচ্চা যে নামতে পারেনা নিশ্চয়ই অন্য কোনো কারণে বসে আছে।’
‘তুমি ওকে নিয়ে এসো আমরা ভেতরে যাচ্ছি।অনেক রাত হয়েছে সবাই ক্লান্ত।সবার ই রেস্ট আর ঘুমের প্রয়োজন এখন।’

আয়াসের আম্মু সহ সবাই ভেতরে চলে গেলো। আয়াস কপাল কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলছে জিলেপি বানানোর মান্ত্র দিয়ে নিশ্চয়ই মেয়ে মানুষ বানানো।নাহলে এত প্যাচ কেনো আল্লাহ তাদের ভেতরে এটুকু বলেই আমার কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন,
‘সত্যি কি গাড়ি থেকে নামতে পারোনা নাকি এই হ্যান্ডসাম ছেলের কোলে ওঠার জন্য এত বাহানা।একবার কোলে নিয়ে আমার হাত ব্যাথা হয়েছে।আমার পক্ষে আর কোলে নেওয়া কিছুতেই সম্ভব নয় তোমাকে।তুমি যদি ভেবে থাকো রোজ রোজ নায়কদের মতো কোলে তুলে নিয়ে যাবো তোমায় এটা ভাবা কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল।আমি কোনো সিনেমার নায়ক নাহ বুঝলে ডিয়ার মিসেস মুগ্ধতা আয়াস। তাও নেওয়া যেতো কোলে কিন্তু মেয়ে মানুষ যে এত ভারী হতে পারে তা তোমাকে উচু না করলে বুঝতাম নাহ।এত মটু কেনো তুমি হ্যাঁ ?কি খাও তুমি?নিজের ফিগার মেইনটেইন করতে পারোনা।এত মোটা মেয়ে আমার জীবনে দেখি নি।তোমাকে পাঁচবার কোলে নিলেই আমার ইন্না লিল্লাহ হয়ে যাবে সিওর।আর্মি ট্রেইনিং এ পাঠানো প্রয়োজন তোমাকে।’

প্রচন্ড রাগী মুডে আয়াসের দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘আজেবাজে কথা ছাড়া বলতে পারেন না।আমাকে বিয়ে করেছেন কি এইসব আজেবাজে কথা শোনানোর জন্য।’
আয়াস এইবার মাথায় হাত চালিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
‘ ইয়া হাবিবি।যাক মুখ দিয়ে কথা বের হয়েছে।আমিতো ভেবেছিলাম দুই ঠোঁটের মধ্য কি সুপার গ্লু লেগে এটে গিয়েছে নাকি।গাড়িতে একদম মুড অফ করে এলে।বাই দা ওয়ে,
তোমার কি মনে হয়?..

‘আমার মনে হচ্ছে আজেবাজে কথা ছাড়া আর কিছু শোনানোর জন্য আপনি আমাকে বিয়ে করেন নি।এটা ছাড়া আর কোনো কারণ নেই বিয়ে করার।’
‘ওহ রিয়েলি!আজ জানলাম ছেলেরা বিয়ে করে বউকে আজেবাজে কথা শোনানোর জন্য।’
‘সব ছেলের সাথে নিজেকে গোলাবেন না।সব ছেলে আপনার মতো বিদঘুটে আর ঠোঁট কাটা টাইপ হয়না বুঝেছেন।কিছু ছেলে রোমান্টিক ও হয়।’
‘তোমার সো কলড বয়ফ্রেন্ড বুঝি খুব রোমান্টিক ছিলো।’
‘সিওর ছিলো।আপনার মতো পা থেকে মাথা পর্যন্ত জলানো কথা বলতো না।’
‘ওহ আচ্ছা! কি যেনো তার নাম।’
‘অভি।’

‘তোমার জীবন থেকে অভি নাম টা কেটে আয়াস নামটা লিপিবদ্ধ হয়ে গিয়েছে মিসেস মুগ্ধতা। ‘
‘আমার মন থেকে অভি নামটা কোনদিন কাটবে না। ‘
‘তোমার জন্য এটাই ভালো হবে যত দ্রুত অভি নামটা মুছে আমার নাম টা লিখবে।’
‘অভির নাম কোনদিন আমার মন থেকে মুছবে না।’
‘আমি মুছিয়ে দিবো সে নাম।আর আমার নাম টা সারাজীবন এর মতো তোমার মনে লিখে দিবো।’
‘যে নাম ভালবাসা দিয়ে লেখা সেটা মুছে ফেলা যায় না।’
‘মুগ্ধতা তুমিও ভালবাসবে আমায়,আর আমার নাম টা লিখবে।’
‘কোনদিন সেটা হবেনা।’

‘চ্যালেঞ্জ করোনা,তুমি হেরে যাবে।’
‘কেনো কারো সাথে চ্যালেঞ্জ করে আমাকে বিয়ে করেছেন বুঝি।যে আমি আপনার প্রেমে পড়বোই।শুনুন আপনার কি মনে হয় আমি কিছুই জানিনা।’
‘হয়তো অনেক কিছু জানো আবার কিছুই জানোনা।তবে একটু বেশী বোঝো তুমি।বেশী বোঝার জন্য আজ এভাবে বিয়ে হয়েছে তোমার।নো নো চেতে যেও না।যাদের ওজন বেশী তাদের সবার ই এই সমস্যা টা আছে তোমার একার নয়।’
‘সামান্য ৫৪ কেজি ১০০ গ্রাম ওজনের একটা মেয়ে উঁচু করে যে হাঁপিয়ে যায় সে কিনা আর্মি অফিসার।কে দিছে আপনাকে এই জব।’

‘যে দিয়েছে সে কি তাহলে মারাত্মক কোনো ভুল করে ফেলেছে।বলেই আমাকে আবার ও কোলে তুলে গাড়ি থেকে নামিয়ে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেলো।’
–গাজিপুরের শহর থেকে একটু দূরে আয়াস দের বাসা।না শহর না গ্রাম চারদিক দেখে যা মনে হচ্ছে।তবে আয়াস দের বাড়িটা ভীষণ সুন্দর। এক তলা বিশিষ্ট এ বাড়িটা চোখে তাক লাগানোর মতো সুন্দর। আগে কখনো একতলা বাড়ি এতটা সুন্দর দেখিনি।বাড়িতে ঢুকতে বিশাল বড় গেট,গেটের সামনে উঠান,তারপর ই বিল্ডিং টা।বাঙ্গি কালারের ওয়াল বেশ সুন্দর দেখতে।আয়াস আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে করতে বললো,
‘মুগ্ধতা আমার বিশাল কোনো বিল্ডিং নেই গরীবের এই কুড়েঘর কি তোমার পছন্দ হয়েছে।’
তার কথা শুনে মনে হচ্ছে যেনো বাড়িটা আমার জন্য ই বানানো।আমি সাথে সাথেই বললাম,

‘এমন ভাবে বলছেন যেনো বাড়িটা আমার জন্য বানিয়েছেন।”
‘আয়াস মৃদু হেসে বললো,তোমার সিকসেন্স অনেক ভালো।’
–তার কথা আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো।মাঝে মাঝে আজগুবি কিছু কথা বলছে।বিয়ের আগে যে মুড নিয়ে আমাকে ভয় দেখালো তার কোনটায় এখন উনার মাঝে নেই।খুব আশ্চর্য লাগছে আমার কাছে ব্যাপার টা।আমাকে নিয়ে আয়াসের রুমে বসিয়ে দেওয়া হলো।আয়াসের রুমটা ও দেখতে খুব সুন্দর।বেশ বড় একটা রুম সুন্দর খাট, আলমারি,সিঙ্গেল সোফা আয়াসের মতোই পরিপাটি আয়াসের রুম।
আয়াসের মা বাবা আমার পাশে এসে বসে বললেন,

–মা মুগ্ধতা একদম ভেবোনা।জানি তোমার বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে হয়নি।তবে তুমি সব কিছু স্বাভাবিক মনে করো।আজ থেকে আমাদের মা বাবা বলেই ডেকো।এ বাড়িতে কোনো ঝামেলা নেই।আয়াস ছুটিতে এসেছে, ছুটি শেষ হলে আয়াসের সাথে তুমি চলে যেও যেখানে আয়াস থাকে তুমিও সেখানে থেকো।আমার আর একটা ছোট ছেলে আছে তোমার ভাই এর মতো।ও বাড়িতে নেই থাকলে দেখতে ভাবি ভাবি করে পাগল করে ফেলতো।ছোট ছেলেটা বন্ধুদের সাথে পিকনিকে গিয়েছে।আমার এই দুই ছেলে নিয়ে সুখের পরিবার।তুমি আমার মেয়ে আজ থেকে।কখনো কোনো অসুবিধা হলে আমাদের জানাবে ঠিক আছে।মা অনেক রাত হয়ে গিয়েছে অনেক গরম লাগলে ফ্রেশ হয়ে নাও বা গোসল করে নাও দেখবে ভালো লাগবে তোমার।

আয়াসের মা বাবা বাইরে চলে গেলে দেখলাম আয়াস আরহীকে বলছে,
‘ তুমি মুগ্ধতাকে কেনো বলে দিয়েছো যে মুগ্ধতাকে আমার প্রেমে ফেলে ছাড়বো।’
আরহী বললো,
‘আমি এসব বলিনি কিছুই।’
আয়াস রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘তুমি বলোনি তাহলে কে বলেছে।তুমি আর আমি ছাড়া তো এসব কথা পৃথিবীর আর কেউ জানেনা।আমাদের প্লান কি অন্য কারো জানার কথা।’
আরহী আয়াস কে নিয়ে খানিক টা আড়ালে নিয়ে গেলো।আমার মাথায় আসছে না তারা আসলে কি বলাবলি করছে।

তুমিময় বসন্ত পর্ব ২+৩

(আমি ভীষণ ভাবে দুঃখিত।গত দুই পর্বে বারবার নাম ভুল করেছি।হিরোইন এর নাম মুগ্ধতা নিক নেইম মুগ্ধ।আর সাইড চরিত্রর নাম আরহী।আমি ভুল করে অনেকবার অহনা দিয়ে ফেলছি।যদি কখনো মিস্টেক হয় একটু বুঝে নিবেন।তাছাড়া এখন থেকে রি-চেইক করে পোস্ট দিবো।গত দুই-পর্বের জন্য ভীষণ ভাবে সরি।)

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৫