তুমিময় বসন্ত পর্ব ৫

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৫
writer Mousumi Akter

–রুমটা ফাঁকা কোথাও কেউ নেই।আয়াস আরহীর সাথে পাশেই কোথাও গিয়েছে।কেউ নেই সে সুযোগ এ সুটকেস থেকে ফোনটা বের করে পাওয়ার অন করলাম।আর সাথে সাথে অভিকে কল দিলাম।অভির ফোন সুইটস অফ বলছে।অভি নিশ্চয়ই ফোন সুইটস অফ রেখেই ঘুমিয়েছে।অভিকে একটা মেসেজ করলাম,
“অভি তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে।আমার সাথে অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে।সেটা ফোনে বলা সম্ভব নয়।আমার সাথে যে কোনো ভাবে দেখা করো।না হলে আমাদের আর দেখা হবে না।আমি তোমার থেকে অনেক দূর চলে যাবো অভি।প্লিজ আমাকে বাঁচাও।আমি কোথায় ফেঁসে গিয়েছি জানিনা।”

–অভিকে মেসেজ করেই আবার ফোনের সুইটস অফ করে রেখে দিলাম সুটকেস এ।আয়াস কে দেখে যা বুঝলাম আমার বয়ফ্রেন্ড আছে জেনেও যখন বিয়ে করেছে।তার মানে কিছুতেই আমাকে অভির সাথে যোগাযোগ করতে দিবেনা।আমার কাছে ফোন আছে জানলেও ফোন নিশ্চয়ই নিয়ে নিবে।যেভাবেই হোক আমাকে অভির সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।খাটের কোনায় গম্ভীর ভাবে বসে আছি।কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।এরই মাঝে শ্রুতি এলো আমার পাশে।শ্রুতির গায়ে লাল একটা রানী ফ্রক।শ্রুতিকে বললাম,
‘ এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছিস ঘুমোবিনা তুই।’
শ্রুতি বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ঘুম আসছেনা আপুই।এই বড়িটা ভীষণ সুন্দর আমার ঘুরে দেখতে খুব ভালো লাগছে।আর জানো আপুই ওইযে আমার দুলাভাই আছে না মানে আয়াস ভাইয়া কে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে জানো।ভাইয়া খুব সুন্দর ভাবে কথা বলে। তাছাড়া দেখতেও সিরিয়াল এর নায়কদের মতো।আর আয়াস ভাইয়ার যে মা -বাবা আছে না ওনারা আরো ভালো।’
শ্রুতির দিকে তাকিয়ে বেশ বুঝতে পারলাম আয়াস শ্রুতির ব্রেইন ওয়াস ভালোই ওয়াস করেছে।আয়াস এর অতি প্রশংসা এই মুহুর্তে আমার মোটেও ভালো লাগছে না।বেশ বিরক্তি নিয়ে শ্রুতি কে বললাম,
‘মানুষের বাইরের চেহারা টা আসল নয় শ্রুতি ভেতরটায় আসল।তুই এখনো অনেক ছোট মানুষ দেখে কিভাবে বুঝবি কে ভালো আর কে খারাপ।’

‘দেখো আপুই আমি কিন্তু ক্লাস সেভেনে পড়ি একদম ই বাচ্চা না।আমার সব বান্ধবীদের বয়ফ্রেন্ড আছে। তারা বাচ্চা নেওয়ার প্লান ও করছে।আমাকে অতটা বাচ্চা ভাবা ও ঠিক না।তোমার ওই বয়ফ্রেন্ড অভিকে আমার ভালো লাগতোনা তার থেকে আয়াস ভাইয়া অনেক ভালো বুঝেছো।’
শ্রুতির কথা শুনে মাথা ঘুরাচ্ছে আমার।ক্লাস সেভেনে পড়া মেয়ের কিনা বান্ধবীরা বাচ্চা নেওয়ার প্লান করছে।আসলে কোন যুগে এসে পড়লাম।শ্রুতিকে বললাম,
‘বাবা আমার বিয়ে না দিয়ে তোর বিয়ে দিলে ভালো হতো।’
‘বাবাকে বলবো আমার বিয়ে যেনো আয়াস ভাইয়ার মতো কোনো হ্যান্ডসাম এর সাথেই দেয়।আমি তোমার মতো অত রাগারাগি করবো না।’

শ্রুতির কথা শুনে এক চক্কর মাথা ঘুরালো আমার।ভীষণ দুঃচিন্তায় আছি আমি।মানুষের মন বলা তো যায় না আয়াস যদি আমার সাথে ঘনিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করে।আমি তো জোর করে কিছুই করতে পারবো না।এমন কি মানুষ কে বলতেও পারবো না আমার সাথে কি করেছে।নিজেকে বাঁচাতে মনে মনে ভাবলাম শ্রুতিকে আমার কাছে ঘুমোতে বলবো।
শ্রুতিকে বললাম,
‘শোন শ্রুতি আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছি চেঞ্জ করতে তুই কিন্তু আমার পাশেই ঘুমোবি।অচেনা বাড়ি অন্য কারো পাশে ঘুমোতে হবেনা তোর।’
শ্রুতি মাথা নেড়ে বলবো,আচ্ছা আপুই তুমি যাও আমি এখানে সুয়ে পড়ছি।

–ওয়াশরুমে গিয়ে ভারী শাড়ী গহনা চেঞ্জ করে নিলাম।গায়ে একটু পানি লাগতেই ভীষণ ভালো লাগলো।এই মুহুর্তে গোসল করলে বোধহয় বেশী ফ্রেশ লাগবে।ঝরনা ছেড়ে গোসল সেরে নিলাম।কতক্ষণ গোসল করলাম খেয়াল নেই। নতুন বউ সাথে কোনো থ্রী পিছ নেই।যা আছে সব ই শাড়ী।আমি তো শাড়ি পরতে জানিনা।কাকে ডাকবো?শ্রুতি তো শাড়ী পরাতে জানেনা।আরহী কে ডাকবো।ষাড়ের মতো চিৎকার করে নতুন বউ এর ডাকা কি শোভনীয় দেখাবে।মনে মনে ভাবলাম শ্রুতিকে বলবো আরহীকে একটু ডেকে দে।এই সুযোগে আরহীকে সব প্রশ্ন ও করা যাবে।গায়ে খুব ভালোভাবে টাওয়াল পেচিয়ে ওয়াশরুমের দরজা হালকা একটু খুলে ডাকলাম শ্রুতি একটু অহনাকে ডাকবি আমি শাড়ি পরতে পারছি না।কয়েকবার ডাকাডাকির পর শ্রুতির কোনো আওয়াজ না পেয়ে দরজা পুরাটা খুলতেই দেখি আমার সামনে আয়াস দাঁড়িয়ে আছে।আয়াস কে দেখেই মাথা ঘূর্ণিপাকের মতো ঘুরছে।লজ্জায় মন চাচ্ছে ফ্লোর ফাঁকা হয়ে যাক আর আমি ভেতরে চলে যায়।ছিঃউনি আমাকে এই বিশ্রি অবস্থায় দেখে ফেললেন।দ্রুত খুলে রাখা বেনারসি গায়ে জড়ালাম।আয়াস আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে দেখছে।মানুষ এত অসভ্য কিভাবে হতে পারে।আয়াস কে বললাম,

‘একি আপনি না বলে কয়ে নক না করে প্রবেশ করেছেন কেনো?’
আয়াস ভ্রু বাঁকিয়ে বললো,
‘হাউ স্ট্রেইঞ্জ।বউ আমার, রুম আমার, ওয়াশ রুম আমার এখানে কি আসে যায় আমার নক করে আসা আর না আসাতে।আর এখন লজ্জা পেয়ে লাভ কি সুইটহার্ট। যা দেখার দেখা তো হয়েই গিয়েছে।’
‘আ-আপনি এক্ষুনি বেরোন আগে এখান থেকে। আরহীকে ডেকে বলুন আমাকে হেল্প করতে।’
‘আরহী ঘুমিয়েছে।’
‘শ্রুতি কে ডাকুন, শ্রুতি হেল্প করবে।’
‘আমার একমাত্র শালিকা ও ঘুমিয়েছে।’
উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন,ঠিক যেনো আমার চোখের তারার দিকে তাকিয়ে আছেন।অদ্ভুত সে চাহনি।যেনো মনোমুগ্ধকর কিছু দেখছেন উনি।আমার মুখের উপর ভেজা ঝিরি ঝিরি কতগুলো চুল সরিয়ে কানের পিছনে গুজে দিয়ে বললেন,
‘মুগ্ধ।’

‘আমি বেশ অবাক হয়ে বললাম আপনিও আমাকে মুগ্ধ নামে ডাকছেন।’
‘না মানে তোমার পুরাটায় মুগ্ধতায় ভরপুর।তোমার দিকে তাকালে মনে হয় একরাশ মুগ্ধতা ছুঁয়ে গেলো আমাকে।’
আমি চুপচুপ উনার কথা শুনছি।উনাকে ধাক্কা মেরে বললাম,
‘ ফ্লার্টিং করছেন।কি ভেবেছেন আমাকে এসব বলে পটাবেন।মুগ্ধতা অত সহযে কারো ছলনায় ধরা দিবেনা।’
আয়াস আমার এসব কথায় পাত্তা দিয়ে বল লো,
“মুগ্ধতা জাস্ট টাওয়াল পরে শরীর জুরে পানি নিয়ে খোলা চুলে দাঁড়িয়ে আমার দ্বারা অনর্থ করতে চাও নাকি।আমার দ্বারা কোনো অনর্থ হলে আমাকে দোষ দিতে পারবেনা কিন্তু।”
“কিসের অনর্থ শুনি।আপনি ওয়াশরুমে এসেছেন কেনো? আমি কি ডেকেছি নাকি আপনাকে।”
উনি আমার দুই হাতের কব্জি ধরে বললেন,

“একসাথে সাওয়ার নিতে এসেছি।এতে প্রেম ভালবাসা বাড়ে।”
“হেল ইওর ভালবাসা,আমি মাত্রই সাওয়ার নিয়েছি।”
“আরেকবার নেওয়া যাবেনা এমন কোনো রুলস আছে নাকি ডিয়ার মিসেস মুগ্ধতা আয়াস।”
এটুকু বলেই আয়াস পানির ঝরনা ছেড়ে দিলো আর বললো,
“ভুলভাল কিছু বলোনা ফিউচারে তোমাকেই পস্তাতে হবে।যেদিন আমাকে ভালবেসে ফেলবে এসব কথার জন্য নিজেই কষ্ট পাবে ইউ নো হোয়াট।”

–আয়াসের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছি এতটা রহস্যময় কথা কেনো বলেন উনি।আয়াস গায়ের গেঞ্জি খুলে খালি গায়ে সাওয়ার নিচ্ছে।ফর্সা সরু নাকের মাথায় ছোট্ট একটা তিলে আয়াস কে ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে।ভেজার পরে আয়াস কে ভীষণ স্নিগ্ধ লাগছে।আমার মাথায় ও পানি পড়ছে।ইচ্ছা করছে এখান থেকে পালিয়ে যায়।বেশ অস্বস্তি ও লাগছে আমার।আয়াস আমার দিকে তাকিয়ে আমার দুই হাতের দুই কব্জি ধরে বললো,
“পৃথিবীর সব মুগ্ধতা কি তোমার মাঝেই আছে।”
আয়াসের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ভীষণ মায়াভরা চোখেই আয়াস কথাটা বললো।আয়াস এর থেকে বাঁচতে বললাম,
“অসভ্য মানুষ একটা ছাড়ুন আমায়।”
আয়াস আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
“কি ভাবছো তোমার সাথে রোমান্টিক সাওয়ার নিলাম। নোপ মুগ্ধতা, লেডিস ফার্স্ট ব্যাপার টা আমার পছন্দ নয়।এইজন্য আরেকবার ও তোমাকে ভেজালাম।লেডিস ফার্স্ট হতে দিলাম না।এবার সরো আমি বাইরে গিয়ে চেঞ্জ করবো।”

মানুষটার কি অদ্ভুত বিহেভিয়ার। উনি তো বাইরে চলে গেলো আমি ভেজা শরীরে ভেতরে দাঁড়িয়ে আছি।ভেতরে রাখা শাড়ি ও ভিজে গিয়েছে।বাধ্য হয়ে ভিজে চুপচুপে কাপড় এর পানি সহ রুমের ভেতরে প্রবেশ করলাম।ফ্লোর পানিতে ভিজে যাচ্ছে।কিন্তু কিছুই করার নেই।আয়াস কে দেখলাম কালো ট্রাউজার আর কালো গেঞ্জি পরে চুল মুছছে।আমাকে দেখা মাত্রই আয়াস আমার দিকে বললো,
“ষ্টুপিড এর মতো কাজ করছো।নিজেই ওখানে আছাড় খাবে আর আমাকেই নায়কের মতো ধরতে হবে।কোন জন্মের নায়কা হওয়ার শখ মেটাচ্ছো বুঝলাম না।এই পড়ে গিয়ে আমার গায়ের উপর পড়ছো,গাড়ি থেকে কোলে উঠে বাড়িতে প্রবেশ করছো,আবার একসাথে সাওয়ার নিতে প্রায় খালি গায়ে ওয়াশরুমে ওয়েট করছো।এখন আবার চাইছো আমি তোমায় শাড়ি পরিয়ে দেই তাইনা।”

ভীষণ রাগে মনে চাচ্ছে আয়াস এর গলা টিপে দেই।মানুষ এত বানিয়ে বানিয়ে কিভাবে কথা বলতে পারে।আয়াস কে বিরক্তি নিয়ে বললাম,
“আপনার জন্ম কোন লগ্নে হয়েছিলো। বাজে কথা বলার লগ্নে তাইনা?আপনাকে নিয়ে আমি কিছুই ভাবছি না ওকে।”
“আরে থাক বুঝি বুঝি।মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটেনা।আসো আমি তোমায় হেল্প করি।”
“ঘরের মধ্য তাকিয়ে দেখি শ্রুতি নেই।আয়াস কে বললাম,শ্রুতি কোথায়?”
“আরহীর পাশে ঘুমোতে গিয়েছে।”

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৪

শ্রুতি এখানে না ঘুমিয়ে চলে গেলো।আমার কি হবে তাহলে সেটাই ভাবছি।এরই মাঝেই আয়াস আবার বললো,
“এভাবে খাম্বার মতো ভেজা কাপড়ে দাঁড়িয়ে রুমটা বন্যায় না ভাষিয়ে আগে চেঞ্জ করো।জানি নিজে পারবেনা আমি হেল্প করছি।”
“নো নিড ইওর হেল্প।”
“ওকে ফাইন!আমি ঘুমোতে যাচ্ছি।সারারাত এখানে দাঁড়িয়ে থাকো।”

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৬+৭