তুমিময় বসন্ত পর্ব ৬+৭

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৬+৭
writer Mousumi Akter

আয়াস কে দেখে মনে হচ্ছে গভীর ঘুমে বিভোর হয়ে আছে।রুমের সাদা আলোতে আয়াসের ফর্সা গাল আরো সাদা লাগছে।চারদিক নিস্তব্ধতা শুধু ফ্যানের শব্দ ছাড়া চারদিকে আর কোনো শব্দ নেই।আমি কি করবো বুঝতে না পেরে দাঁড়িয়ে আছি।আসলে অপরিচিত জায়গা বেশীরভাগ টাইম ঘাবড়ে যেতে হয়।আমার ক্ষেত্রে ও তার ব্যাতিক্রম ঘটলো না। ঘাবড়ে গিয়ে কি করবো বুঝতে পারছিনা।কখনো কি ভেবেছিলাম জীবনে এমন কঠিন পরিস্হিতি আসবে।

আয়াসের বন্ধ করা চোখ দুটো পাঁচ মিনিট পরে খুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“এই হ্যালো নববধু লাইট অফ না করলে আমার মানে তোমার ডিয়ার হাজবেন্ড এর ঘুম হয়না।শাড়ি পরতে হেল্প করতে দিলে না ওকে ফাইন।আমাকে অন্তত ঘুমোতে হেল্প করো।জাস্ট লাইট টা অফ করো।আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।অনেক ক্লান্ত আমি।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আয়াসের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম তার সত্যি ঘুম পাচ্ছে হয়তো।কাউকে ঘুমোতে দেখলেও মনে হচ্ছে সবার মনে কতটা আনন্দ থাকলে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারে
।আমার চোখের ঘুম চিরদিনের মতো বিলীন হয়ে গিয়েছে।হয়তো এই দু চোখে আর কখনো নিদ্রা আসবে না।ঘুমেরা আর ঘুমের জগতে হাতছানি দিবেনা।যারা আমার চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েচগে তারা নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে।আয়াসের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবতে ভাবতে আয়াসের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে সুটকেস থেকে কালো একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুম গিয়ে নিজের মতো করে কোনরকম শাড়ি পরে মাথায় টাওয়াল পেচিয়ে রুমের ভেতর এসে দাঁড়ালাম।বিয়ের আগে শখ করেও আমার কখনো শাড়ি পরা হয়নি।এই কারণে খুব ভালো অভিজ্ঞতা নেই শাড়ি পরাতে। এইদিকে আমার ও ক্লান্ত লাগছে একটু বিছানায় গিয়ে সুতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু কোথায় কাত হবো সেটায় ভেবে পাচ্ছি না।চেনা নেই জানা নেই অচেনা একটা পুরুষের পাশে গিয়ে সুয়ে পড়বো ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে আমার। যদি সে তার সুযোগ নিয়ে নেই।উনাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই সব কিছু জেনে বুঝে বিয়ে করতে পেরেছে তার পক্ষে সব ই সম্ভভ। যেকোনো মেয়ের কাছে হঠাত একটা পুরুষের সাথে বেড শেয়ার করা অত্যান্ত অস্বস্তির।তবুও যদি আমাদের বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে হতো তাকে মেনে নিতে পারতাম।কোনো ভাবে তাকে সহ্য করতে পারছি না আমি।

এরই মাঝে আয়াস বিছানা থেকে নেমে লাইট অফ করে বললো,
“একটা শাড়ি ও ঠিক ভাবে পরতে পারোনা অথচ বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেছিলে।”
তার এই বিরক্তিকর কথা আমার আরো বেশী খারাপ লাগছে।মুখ গম্ভীর করে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“আপনাকে কে বলেছে আমি বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।”
“তো পাগল হয়েছিলে ছাড়া আর কি।তাহলে প্রেম করতে কেনো?মানুষ কেনো প্রেম করে নিশ্চয়ই বিয়ে করার জন্য।পাগল যখন হওনি তোমার সো কলড বয়ফ্রেন্ড কে বিয়ে করার জন্য বাড়িতে ঘরের দরজা লাগিয়ে অনসন এ বসেছিলে কেনো?এই টুকু মেয়ে কিনা বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছিলো।”
আমার কাছে খুব আশ্চর্য লাগলো ব্যাপার টা।আমার বাড়িতে বিয়ে নিয়ে অশান্তি উনি কিভাবে জানলেন।অভির সাথে বিয়ে নিয়ে তো সত্যি অশান্তি হয়েছিলো সেটা আয়াস কিভাবে জানলো।আয়াসের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমি।

আয়াস আমাকে একটা ধমক দিয়ে বললো,
“একদম চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।যেভাবে শাড়ি পরে আছো এমনিতে খাম্বার মতো লম্বা তুমি।পাঁচ ফিট চার ইঞ্চি মানে প্রায় একটা খাম্বা তুমি।তাতে কালো শাড়ি পেচিয়েছো,রাতে এভাবে দেখলে পটল তুলে ফেলবো নিশ্চিত ভূ*ত ভেবে।সোজা হয়ে দাঁড়াও আমি ঠিক করে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছি।বিয়ে করা বউ তুমি আমার আমি তোমাকে শাড়ি পরালে জাহান্নামে যাবে না বা ইজ্জত চলে যাবেনা।আর হ্যাঁ আমাকে মেয়ে মানুষ পাগল ভেবো না যে সুযোগ পেলেই তার ফায়দা উঠাবো।একদিন নিজেই কত বলবে একটু কাছে আসোনা,এখন আর আগের মতো আদর করোনা কেনো?অন্য কোনো মেয়ের সাথে চক্কর চলছে তাইনা।কাছে না আসলে ভাল না বাসলে অভিমানে গাল ফোলাবে ভবিষ্যত বানী দিয়ে রাখলাম।”

তারদিক তাকিয়ে ভাবছি মানুষ মনউক্তি এত খারাপ কথা কিভাবে বলতে পারে।নিজের মতো করে বকবক করতে করতে শাড়ী পরাচ্ছেন উনি।
আয়াস কে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,
“কনফিডেন্স ভালো অভার কনফিডেন্স ভালো নয়। আপনি যা ভাবছেন তা কোনদিন হবেনা।আমার ভালবাসা আমার স্বপ্ন সবটায় কেড়ে নিয়েছেন আপনি।কোনদিন ক্ষমা করবোনা আপনাকে আমি।আমার মনে যতটা ঘৃনা আপনার জন্য কিভাবে আশা করছেন আমি কখনো এসব বলবো।”
“কনফিডেন্স ই মানুষের শক্তি।যার নিজের উপর কনফিডেন্স নেই সে কেমন মানুষ। বাই দ্যা ওয়ে গুড নাইট,বাট তুমি কি সারারাত জেগে থাকতে চাও নাকি।”

খেয়াল করলাম শাড়িটা পরানো হয়ে গিয়েছে।খুব যত্ন নিয়েই শাড়িটা পরিয়েছে।
আয়াস কে বললাম,
“আমি ঘুমোবো কোথায়?”
“আশ্চর্য বিয়ে করা বউ আমার।আমার পাশে আমাকে চাইলে টাইট হাগ দিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমোতে পারো আমি মাইন্ড করবো না।”
“কিছু না বলে বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকালাম।”
“আমার পাশে ঘুমোবে নাতো কি চিড়িয়াখানার বানরের সাথে ঘুমোবে।”প্রশ্ন বোধক চিহ্ন তার কথায়।
“আপনার পাশে ঘুমোনো ইম্পসিবল।”
“তোমার কোনো চৌধুরী পরিবারে বিয়ে হয়নি এ বেড রুমে সোফা সেট থাকবে যে সোফার উপর ঘুমোবে।একজন সিম্পল আর্মি অফিসারের সাথে বিয়ে হয়েছে।আমার সাথে সুন্দর সিম্পল একটা জীবন কাটানোর জন্য রেডি হও আর চুপচাপ আমার পাশে ঘুমোও।”

কথাটা বলেই আয়াস লাইট অফ করে গিয়ে সুয়ে পড়লো।আমিও আয়াসের পাশে গিয়ে সুয়ে গুটিসুটি মেরে সুয়ে পড়লাম।বিশাল কোলবালিস মাঝে দিয়ে বর্ডার দিলাম।বেডের একদম কর্ণারে এসে সুয়ে আছি আমি।একটু হলেই পড়ে যাবো।অন্য দিকে ঘুরে কাঁদছি আমি।ভীষণ কাঁন্না পাচ্ছে আমার।কোনোভাবে নিজের কাঁন্না আটকাতে পারছি না।অভিকে কি বলবো আমি।অভি যদি সুই*সাইড করে।আমি কি এখন চাইলেই সব কিছু ছেড়ে চলে যেতে পারবো।কি করবো আমি এখন।আমি এখন পালিয়ে গেলে সবাই মা-বাবাকে ছিঃছি করবে।বাবা মানুষের মাঝে মুখে দেখাতে পারবে না।সেকেন্ডে সেকেন্ডে ভীষণ যন্ত্রণায় জ্বলে উঠছে বুক,পুড়ে যাচ্ছে মন।

গভীর রাতে আমার বুক ফাটা আর্তনাদ শোনার জন্য কেউ জেগে ছিলো না।কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে প্রিয় মানুষ টা হারিয়ে গেলো নিজের জীবন থেকে।মেনে নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।নিজেকে শেষ করে দিতে মন চাইছে।প্রিয় মানুষ হারানোর যন্ত্রণা এতটা ভয়াবহ হতে পারে আগে বুঝিনি আমি।নিজেকে শেষ করে দিলেও বাবার সম্মান নষ্ট হবে।কেনো ভাবছি বাবার কথা আমি।বাবা তো একটা বার ও আমার মনের কষ্টের কথা ভাবলো না।মস্তিষ্কে সেকেন্ডে সেকেন্ডে অভির কথা নাড়া দিচ্ছে।ওর হাসি মস্তিষ্কে বিচরণ করছে।কাউকে ভালবাসলে কি সহযে ভোলা যায়।এমন সময় আয়াস আমার মুখের সামনে একটা টিস্যু হাত দিয়ে এগিয়ে ধরে বললো, বালিকা তোমার কাঁন্না শেষ হলে চোখের পানি মুছে নাও।বেহুদা কাঁদছো।দুইদিন পর আবার কাঁদবে কেনো আমি ছাড়া অন্য কারো জন্য কেঁদেছিলে।আয়াসের কথার কোনো পাত্তা না দিয়ে অভির কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।আয়াসের কাজ ই এডভান্স কথা বলা।

–খুব ভোরে কোকিলের ডাকে ঘুম ভাঙলো আমার।চারদিকে কোকিলের মিষ্টি ডাক ভীষণ সুন্দর লাগছে।হালকা শীত এ কোলবালিস জড়িয়ে ধরে বেশ আরামে ঘুমোচ্ছি।হঠাত খেয়াল হলো কারো তপ্ত নিঃশ্বাস আমার মুখে এসে পড়ছে।অচেনা এক শরীরের গন্ধ,অচেনা পারফিউম,হাতের মধ্য ছোট ছোট চুল বাধছে।হঠাত মস্তিষ্ক মাথা নেড়ে উঠলো আমার তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে কাল রাতে আয়াসের পাশে ঘুমিয়েছিলাম।ঘুম থেকে উঠে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আয়াসের বুকে মাথা গুজে আছি আমি,কোলবালিস ভেবে আয়াস কে জড়িয়ে ধরে রেখেছি। আয়াস ও তার হাতের শক্ত বাধনে আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।কি হয়েছিলো কাল রাতে।আমরা এভাবে ঘুমিয়ে আছি কেনো?অন্য কিছু হয়নিতো আবার।দুঃচিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।হঠাত বুক আঁতকে উঠলো অজানা ব্যাথায়।চিনচিন ব্যাথায় কেঁপে উঠলাম আমি।সাথে সাথেই আয়াস এর শক্ত বাঁধন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আড়মোড়া দিচ্ছি তখন ই আয়াস ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,”শুভ সকাল ডিয়ার মিসেস।”

আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে এক ঝাড়ি মেরে বিছানা ছেড়ে উঠে আয়াস কে বললাম,
“আমি আপনার কাছে কিভাবে গেলাম।কোলবালিস নেই কেনো।নিশ্চয়ই আপনি বালিশ সরিয়ে দিয়েছিলেন।”
আয়াস একটা হাই তুলে বললো,
“খুব তো আমাকে ঘৃণা করো আমার কাছে আসবে না কত বাহানা।কাল রাতে তো আমাকে আধমরা বানিয়ে ফেলছিলে।অত জোরে কেউ জড়িয়ে ধরে।আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো।আমার ঘুমের ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছিলে তুমি।তাছাড়া সব কিছুতে আমার দোষ দেওয়ার চেষ্টা করো কেনো?কে কাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো শুনি।”
“বাজে কথা একটুও বলবেন না।আমি কোলবালিস ছাড়া ঘুমোতে পারিনা।আপনাকে কোলবালিস ভেবেছিলাম আমি ব্যাস এই ছাড়া আর কিছু না।”

কিছুটা অস্বস্তি আর কিছুটা লজ্জা মিশে একাকার হয়ে বাজে এক অনুভূতির সৃষ্টি হলো।ফ্রেশ হয়ে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে দেখি শ্রুতি চিপ্স খেয়ে বেড়াচ্ছে।শ্রুতিকে ডেকে বললাম,
“কাল রাতে আমার রুম ছেড়ে চলে এসছিস কেনো? ”
“দুলাভাই আমাকে বললো তোমার আপাই তোমাকে আরহীর পাশে ঘুমোতে বলেছে।তাইতো চলে গেলাম।তাছাড়া আমি এমনিতেই চলে যেতাম।আমি কি আর বুঝিনা বাসর রাতে অন্য কারো নবদম্পতির মাঝে থাকতে নেই।”
“এই তুই এত পেকেছিস কেনোরে শ্রুতি।মানুষটা তো আচ্ছা খারাপ।শ্রুতিকে ইচ্ছা করে ঘর থেকে তাড়িয়েছে।তার মানে বালিস ও উনি সরিয়েছেন।”
আয়াসের মা আমাকে দেখেই বললো,

মা মুগ্ধতা এদিকে এসো।আয়াসের মায়ের সাথে উনার রুমে গেলাম।আয়াসের মা আলমারি থেকে দুইটা বালা বের করে আমার হাতে পরিয়ে দিয়ে বললেন,
“আমার বউমার জন্য আমি নিজে টাকা জমিয়ে বানিয়েছি মা।অনেক ভালবাসা দিয়ে বানানো এ চুড়ি।আজ একশ,কাল,পাঁচশ এভাবে অনেক দিন টাকা জমিয়ে এ চুড়ি আমি বানিয়েছি।আমার তো মেয়ে নেই মা। তুমি আমার মেয়ে।”

–বালা দুটো হাতে পরে দেখলাম সত্যি খুব সুন্দর দেখাচ্ছে হাত।আয়াসের মাকে বললাম অনেক সুন্দর লাগছে মা বালা দুটো।আয়াসের মায়ের মুখ ভরা মমতা।তার কথা বলার ধরনে বুঝতে পারলাম আমাকে সে একদম নিজের মেয়ের মতো করেই ভালবাসছেন।আয়াসের মায়ের ভালবাসায় ঘেরা এ সংসার।প্রতিটি কোনায় কোনায় পরিপাটিভাবে সাজানো।আয়াসের মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে অভির কথা ভাবছি।অভি মেসেজ এর উত্তর দিয়েছে কিনা ভেবে অস্হির লাগছে।নিশ্চয়ই কল দিয়ে দিয়ে পাগল করে ফেলছে।নিশ্চয়ই অনেক মেসেজ দিয়েছে।কি করবো আমি।কারো সামনে তো ফোন বের করতে পারছি না।বিয়ের পরের দিন সারাদিন বাড়িতে মানুষ এসেছে বউ দেখতে।একটা বার ও ফোন দেখার সুযোগ পেলাম না।সারাদিন বউ দেখাদেখির চক্করে কেটে গেলো।
রাতের বেলা আরহী কে ফাঁকা পেয়ে হাত চেপে ধরে আয়াসের ঘরে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম।
আরহী অপরাধীর মতো তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আরহীকে বললাম,

“কেনো করলি এমন?কোন জন্মের প্রতিশোধ নেওয়ার ছিলো।”
“এসব কি বলছিস মুগ্ধ।আমি কিনা তোর থেকে প্রতিশোধ নিবো।”
“কেনো প্লান করে আয়াস এর সাথে আমার বিয়েটা দিয়ে দিলি।কেনো অভির থেকে আমাকে আলাদা করলি।তুই জানতিনা অভি আমার কাছে কত গুরুত্বপূর্ণ। অভিকে ছাড়া আমি মরে যাবো আরহী।”
“আয়াস ও তোকে ছাড়া মরে যাবে মুগ্ধ।”
আরহীর মিথ্যা শুনে ভেতরের কষ্ট আরো বেড়ে গেলো।আয়াস এর উদ্দেশ্য আমাকে তার প্রেমের ফাঁদে ফেলার আমি সেটা নিজ কানে শুনেছি।

“হু ইজ আয়াস আরহী।আমি কি আয়াস কে চিনি।অভি আর আমি দুজন দুজন কে চিনি।”
“হু ইজ আয়াস এখন এই কথাটা বলা মানায় না মুগ্ধ।ও তোর স্বামি।”
“আরহী এই বিয়ে আমার ইচ্ছায় হয়নি তুই সেটা ভালো করেই জানিস।তুই এখন এসব বলছিস।এই বিয়ের পেছনে অন্য রহস্য আছে।বল আমাকে তুই সবটা জানিস।”
“মুগ্ধ যা হয়েছে সব ই পরিস্হিতির চাপে।এখানে কারো কোনো দোষ নেই।আমি এখন কিছুই বলতে চাইনা।সময় হলে নিজেই সবটা বুঝবি।”
“তোর কোনো রহস্য জানার ইন্টারেস্ট আমার নেই আরহী।তোকে হেল্প করতে গিয়ে আমি ফেঁসে গিয়েছি।এখন তুই আমাকে হেল্প করবি।অভির সাথে আমি পালিয়ে যাবো আর তুই হেল্প করবি।তোর আর আয়াস এর এসব ঝামেলায় আমি আর নেই।”

“আয়াস তাহলে কাউকে ছাড়বে না মুগ্ধ।না তুই না অভি তোর ফ্যামিলি।অনেক ঝামেলা হবে মুগ্ধ।”
“কিসের ঝামেলা তোর সাথে না আয়াস এর বিয়ে হবার কথা ছিলো।তুই পালিয়েছিস বলে আয়াস আমাকে বিয়ে করেছে।এখন তুই ফিরে এসছিস বিয়ে কর আয়াস কে।”
“আয়াস তো আমাকে ভালবাসেনা মুগ্ধ।আয়াস তোকে ভালবাসে।মনে আছে মুগ্ধ গতবছর বসন্ত উৎসব এ তুই আর আমি ঘুরতে গিয়েছিলাম।সেখান থেকে আয়াস তোকে দেখেছিলো আর আয়াসের জীবনে বসন্ত হয়ে রং ছড়িয়েছিলি।আয়াস প্রথম দেখাতে তোকে ভালবেসে ফেলেছিলো।ভালবাসা বোধহয় এমন ই মুগ্ধ এক পলকে হয়ে যায়।আয়াস এর ও তাই।আয়াস এর বিয়ে আমার সাথে ঠিক হলেও আয়াস পাগল ছিলো তোর জন্য।ভীষণ পাগল ছিলো।আমি শুধু এটুকু তোকে বলবো মুগ্ধ আয়াস তোকে ভালবেসে বিয়ে করেছে।তবে আর একটা কথা বসন্ত উৎসব এ আয়াস কিন্তু তোকেই দেখতে গিয়েছিলো।জীবনের কিছু ঘটনা গোপনীয় থাকাটায় ভালো মুগ্ধ।কিছু সত্য জানতে নেই, জানলে কষ্ট বাড়ে।”

“বাহ আরহী বা।তাহলে তোর পালানো টা কি নাটক ছিলো।আর তুই নিজেই তো আয়াস কে ভালবাসিস।যাকে ভালবাসিস তার সাথে বিয়ে ঠিক হবার পরেও বিয়ের আসর ছেড়ে পালানোর মানে কি।এসব কি ছিলো আরহী।”
“এই মুহুর্তে আমি আর কিছুই বলতে চাইছি না মুগ্ধ।অনেক কিছু জানার মতো সঠিক সময় এখনো আসেনি মুগ্ধ।জাস্ট এটুকু জেনে রাখ আয়াস কোনো কিছুর রিভেঞ্জ নিতে নয় তোকে ভালবেসে বিয়ে করেছে।”
আরহীর আবার ও মিথ্যা বলআয় ভীষণ অবাক হলাম আমি।কি হাইড করছে আরহী।
“তুই আমার জীবনের এতবড় ক্ষতিটা না করলেও পারতি আরহী।নিজে বাঁচতে আমাকে ফাঁসিয়ে দিলি।তোর সাথে আমার আর কোনো রিলেশন নেই আজ থেকে।আজ থেকে ভুলে যাবো তুই আমার সব থেকে আপনজন ছিলি।আয়াস এর থেকে বেশী ঘৃনা তোর প্রতি হচ্ছে।আরে তোর মতো কাজিন থাকলে পৃথিবীতে মানুষ কাজিন কাজিন দের আর বিশ্বাস করবেনা।”

রুমে এসে দেখি আয়াস ফোনে কথা বলছে লাউড স্পিকারে দেওয়া ফোনটা।ফোনের ওপাস থেকে শোনা যাচ্ছে,
“স্যার প্লিজ কিছু করুন আপনি।পুলিশ এর কাছে কতবার বলেছি এখনো কিছুই করতে পারলো না।আমার ছেলেটা দিন দিন নেশা করে আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে।কার কাছ থেকে মাদক নিচ্ছে আমরা বুঝতে পারছিনা।আমার একটা মাত্র ছেলে স্যার।”
“আমি ডিবি পুলিশ কে কনফর্ম করছি।পুরা এলাকা খোজ নিতে।চিন্তা করবেন না অপরাধী ঠিক ই ধরা পড়বে।”
আয়াস এর ফোন কলের ব্যাপারে আর কিছুই বললাম না আমি।

–পরের দিন রওনা হলাম যশোর ক্যান্টনমেন্ট এর উদ্দেশ্য। পরিবারের সবার থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলাম।ছোট প্রাইভেট কারে আয়াস এর সাথে যশোর এর উদ্দেশ্য পাড়ি জমালাম।কাল কোথায় ছিলাম আর আজ কোথায় চলে যাচ্ছি।জীবন নাটকের মতোই হয়ে যায় মাঝে মাঝে।সারা রাস্তা গাড়ির কাচ সরিয়ে খেয়াল করছিলাম কোথাও অভিকে দেখা যায় না।কিন্তু অভিকে কোথাও দেখতে পেলাম না।নিয়তির এক নিষ্টুর খেলায় কি হেরে যাবে ভালবাসা।গাড়ির কাচ আয়াস উঠিয়ে দিলো।আসার সময় রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম বেধেছে।গাড়ি প্রায় এক ঘন্টা জ্যামে আটকে আছে।আয়াস বাইরে থেকে একটা হাত পাখা কিনে আমাকে বাতাস দিয়ে যাচ্ছে।পুরা এক ঘন্টা আয়াস আমাকে বাতাস দিয়েছে।অথচ নিজে ঘেমে ভিজে গিয়েছে।আয়াসের এই ব্যাবহার টা দেখে ভীষণ অবাক হলাম আমি।নিজে কষ্ট পাচ্ছে অথচ আমাকে কষ্ট পেতে দিচ্ছেনা।

গাড়িতে বসে বসে ভাবছি এই কি সেই ছেলে যার সাথে বিয়ের কথা হয়েছিলো।
হঠাত একদিন কলেজ থেকে এসে শুনি আমার বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে।সেদিন আম্মুকে বলেছিলাম আমার বিয়ে নিয়ে ভেবোনা আম্মু প্লিজ আমি অন্য একজন কে ভালবাসি।আম্মু আমার গালে থাপ্পড় মেরে বলেছিলো তোমার বাবা যেখানে বিয়ে দিবে সেখানেই তোমার বিয়ে হবে।আম্মুর সাথে অনেক রাগারাগির পরে বাবা খালামনি আর খালুকে খবর দিয়েছিলো।খালামনি আর খালু আমাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছিলো।সেদিন অভির জন্য কেঁদে কেটে সুই*সাইড করতে গেছিলাম।তারপর খালামনি আমাকে বলেছিলো ছেলেটাকে নিয়ে এসো আমরা কথা বলি।ভীষণ খুশি হয়ে অভিকে আমার বাসায় ডেকেছিলাম।কয়েকদিন বাড়ির পরিবেশ টা নিরিবিলি ছিলো।অভি যখন বাড়িতে বিয়ের কথা বললো তখন ই খালু বললো,

“মুগ্ধতা ছেলেটাকে তুমি পছন্দ করো ঠিক আছে।আমাদের ও কোনো আপত্তি ছিলোনা।তবে আমরা জেনে বুঝে একটা খারাপ ছেলের সাথে তো তোমার বিয়ে দিতে পারিনা।ছেলেটা বেকার হলেও বিয়ে দিতাম কিন্তু চরিত্র টা ভালো হলে।এই ছেলের চরিত্র ভালো নয় মা মুগ্ধ।খালামনি আম্মু বাবা সবাই আমাকে বুঝিয়েছিলো ছেলেটা ভালো নয়।অভিকে কারোর পছন্দ ছিলোনা।তারা আমাকে বারবার বোঝাচ্ছিলো আমরা যেখানে বিয়ে ঠিক করেছি ছেলেটা অনেক ভালো।তোমাকে ভালো রাখবে।”

বাড়িতে সেদিন ক্লিয়ার ভাবে বলে দিয়েছিলাম অভিকে তোমাদের পছন্দ নয় বলে ওর নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছো।অভি ভালো হোক আর খারাপ আমার অভিকেই লাগবে।বাড়ির মানুষ যখন আমার বিরুদ্ধে চলে গেলো কলেজ যাওয়া অফ করে দিয়েছিলো আমার।অনেক অশান্তির পরে বাবা বলেছিলো আমার এইস এস সি পরীক্ষার পরে অভির সাথে বিয়ে দিবে।কিন্তু এইস এস সি দেওয়ার পর বাবা বললো,

মুগ্ধতা অভির র*ক্ত খু*নির র*ক্ত।ওর বাবা একজন খু*নী ছিলো।ওই ফ্যামিলিতে তোমার বিয়ে কিছুতেই হবে না।
অভির সাথে বিয়েতে কেউ রাজী নাহ।সিদ্ধান্ত নিলাম পালিয়ে যাবো।সাতদিন পরেই পালিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু তার আগেই জীবন টা কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো।পালিয়ে যাবার কথা শুধু আরহী জানতো।

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৫

(বিঃদ্রঃএটা একটা কাল্পনিক গল্প,সব কিছুই কাল্পনিক। অনেক জায়গা ভুল লিখে ফেলি,কাহিনী, চরিত্র সব কিছু পাঠক মহলের মনের মতো ফুটিয়ে তুলতে পারিনা তারজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমা করে পাঠক মহলের সাপোর্ট, ভালোবাসা আর রেসপন্স আশা করছি।)

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৮