তুমিময় বসন্ত পর্ব ৮

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৮
writer Mousumi Akter

টানা ছয়ঘন্টা জার্নির পর গাড়িটা এসে থামলো ক্যান্টনমেন্ট এর গেট এ।গেট এ একজন পুরুষ আর একজন মহিলা আর্মি বসে পাহারা দিচ্ছে।তাদের অনুমতি ছাড়া ভেতরে বাইরে কেউ যাতায়াত করতে পারেনা।আয়াস কে দেখে গেটে ডিউটিরত দুজন আর্মি সালাম দিলো।আয়াস গাড়ি থেকে আমাদের ব্যাগ পত্র নামিয়ে নিলো।গাড়ি থেকে আমাকে নামতে দেখে তারা দুজনে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তারা এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মানে তারা বুঝতে পারছে আমি আয়াসের ওয়াইফ কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছেনা।
আয়াস তাদের মুখভঙ্গী দেখে বললো,
‘আপনাদের ভাবী।’

তারা দুজনে আমায়িক হাসি দিয়ে আমাকে সালাম দিয়ে বললো স্যার খুব মানিয়েছে আপনাদের দুজনকে।আমি সালামের উত্তর দিয়ে আর কিছুই বললাম না।কেননা আমার কিছুই বলতে ইচ্ছা করছে না।এই লোকটার বউ হিসাবে ভাবি ডাক আমার আরো জঘন্য লাগছে।আয়াস যেনো এমন কথা শুনে খুশিতে গদগদ ভাব।মুখে অত্যান্ত মিষ্টি হাসি নিয়ে বললো থ্যাংক ইউ সো মাছ।
আয়াসের সাথে ক্যান্টনমেন্ট এর ভেতরে গেলাম।ক্যান্টনমেন্ট এর এরিয়া যে এত বড় হতে পারে অনুমান ছিলো না আমার।ভেতরে বিভিন্ন ফলের গাছে,পুকুর,ফুলের গাছ অনেক গুলা বিল্ডিং সব মিলিয়ে বিশাল এক এরিয়া।তবে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।
আয়াস কে বললাম,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমরা কি এখানেই থাকবো?
‘না, আমি বাসা নিয়েছি পাশেই সেখানে থাকবো।এখানে আমার কিছু জিনিস আছে সেগুলো নিয়ে একবারে বের হবো।এখানে তো আর থাকবো না তাই জিনিস গুলো রেখে তো লাভ নেই।’
‘ওহ!তাহলে আমাকে একবারে সে বাসায় রেখে আপনার জিনিস নিয়ে যেতেন।’
‘তোমাকে রেখে আসলে গিয়ে যদি আর না পেতাম।’
‘কেনো আমি কি হারিয়ে যেতাম।’
‘তোমার দ্বারা সব ই সম্ভব মেয়ে।’

মানে আমাকে একবিন্দু নিজের থেকে কাছ ছাড়া করছেন না।এভাবে জোর করে আমাকে কতদিন আটকে রাখবেন উনি।ভীষণ অবাক হচ্ছি উনার ব্যাবহারে। সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখছেন আমাকে।ব্যাপারটা আরো বিরক্ত করছে আমাকে।উনার কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আবার বেরিয়ে এলেন।ক্যান্টনমেন্ট থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্বে উনার বাসা।একটা পাঁচতলা বিল্ডিং এর সামনে এসে নামলাম।বিল্ডিং এর সামনে বিশাল বড় ঝাউ গাছ আছে দুইটা।দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ পূরণো।গেটের দারোয়ান গেট খুলতেই লিফট এ উঠে পাঁচ তলায় পৌছালাম।করিডরের ডান পাশের ফ্লাট এ আয়াস থাকে।দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখি বিশাল বড় একটা খাট।উনার বোধ হয় বড় খাট ই বেশী পছন্দ।কেননা উনার বাড়িতেও বড় খাট দেখেছি।
মাথায় যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে আমার অন্য কোনো কিছু আর খেয়াল করলাম না।কিন্তু তার থেকে কোনো হেল্প নিবো না বলে কষ্ট ভোগ করছি তবুও তাকে বলছিনা।আমাকে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে বললো,

“মাইগ্রেন আছে তোমার?”
প্রশ্নটা শুনে ভীষণ অবাক হলাম।সত্যি আছে উনি কিভাবে জানলো।উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“হুম বাট কিভাবে জানলেন।”
আমার সামনে একটা মাইগ্রিক্স ওষুধ এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ টাফনিল এর থেকে এটা বেটার আছে।মাথায় যন্ত্রণা আমার ও হয়।আর আমি জানি এটা অনেক ভয়াবহ পেইন দেয়।’

বলে আয়াস এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো আমার সামনে।মাথার যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে পানির গ্লাস টা নিয়ে ওষুধ টা খেয়ে নিলাম।তারপর ই আয়াস এক গ্লাস সরবত দিয়ে বললো,এটা খেয়ে নাও ভালো লাগবে।শরীর এতটায় খারাপ লাগছে আয়াস এর এই সাহায্য না নিয়ে উপায় নেই আমার।সরবত আর ওষুধ খেয়ে বিছানায় সুয়ে চোখ বুজে রইলাম।আর সাথে সাথেই ঘুমিয়ে গেলাম।আয়াস আমার মাথার সামনে একটা স্ট্যান্ড ফ্যান চালিয়ে দিলো।ঠান্ডা বাতাসে ঘুম যেনো জড় সড় হয়ে এলো।

-যখন ঘুম ভেঙেছে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত।লম্বা ঘুম দিয়ে উঠে দেখি রুমের লাইট জ্বলছে আয়াস রুমে নেই।ফ্লোরে সুটকেস টা পড়ে আছে।সাথে সাথে মনে পড়লো আমার ফোনের কথা।আয়াস আশে পাশে নেই এই সুযোগে অভিকে ফোন করা যাবে।ফ্লোরে নেমে সুটকেস টা খুলে সব কাপড় বের করলাম।ফোনটা যেখানে রেখেছিলাম সেখানে নেই।মনের মাঝে অজানা ভয় আর অশান্তি দানা বেঁধেছে মনে হচ্ছে অনেক মূল্যবান কিছু খুজে পাচ্ছিনা।সমস্ত কাপড় ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেও ফোন মিললো না।মাথায় হাত দিয়ে বসে ভাবছি অন্য কোথাও রেখেছিলাম কি?কিন্তু না এখানেই তো রেখেছিলাম।
এমন সময় আয়াসের পুরুষালী কন্ঠ আমাকে ডেকে বললো,
‘কি খুজছো মুগ্ধতা। ‘

আমি যেনো বৈশাখের কাল বৈশাখী ঝড়ের গতিতে পেছনে তাকালাম।আয়াস বেলকনিতে দাঁড়িয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছছে।আয়াসের ডাকে হৃদপিন্ড ভয়ে কেঁপে উঠলো।এক অজানা জড়তা দানা বাঁধলো আমার ভেতরে।কিন্তু কেনো?কিসের এই জড়তা।কেনো আয়াস কে ভয় পাচ্ছি আমি।আমিতো আয়াস কে আমার প্রতি কোনো অধিকার ফলাতে দিবোনা।আমি তো তাকে ডিরেক্ট বলে দিয়েছি তাকে ঘৃনা করি।তবুও কেনো এমন মনে হচ্ছে আমার সে আমার স্বামি তার সামনে প্রেমিকের নাম উচ্চারণ করা যাবেনা।হঠাত করে এই অদ্ভুত ফিলিংস কেনো জন্ম নিলো আমার ভেতরে।আমি এক্ষুণি আয়াস কে বলবো আমার ফোন খুজছি আমি অভির সাথে কথা বলতে চাই প্লিজ লিভ মি।কিন্তু কিছুতেই আমি পারলাম না আয়াস কে এমন কথা বলতে।আমার ভেতরের অজানা কোনো অনুভূতি আমাকে আটকে দিলো।আমাকে চুপ থাকতে দেখে আয়াস আবার বললো,

‘মুগ্ধতা কিছু খুজছো তুমি?’
আয়াস এর এমন প্রশ্নে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বললাম,
‘ইয়ে মানে।না কিছু নাতো।’
আয়াস মাথা থেকে টাওয়াল টা নামিয়ে হাতে ধরে আমার দিকে প্রখর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
‘মিথ্যা বলছো কেনো মুগ্ধতা।’
বলেই আমার কাছে এসে সামনের ছোট চুলের পানি হাত দিয়ে ঝাঁকালো।সাথে সাথেই দু’ফোটা পানি আমার নাকে এসে পড়লো।আমি আয়াসের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আয়াস সম্পূর্ণ সিওর হয়েই বলছে আমি মিথ্যা বলছি।কিন্তু কিভাবে বুঝে গেলো আমি মিথ্যা বলছি।কিছুটা অবাক হওয়ার ভান করে বললাম,
‘ মিথ্যা বলবো কেনো?’
‘ফোন খুজছো তাইনা?’

সাথেই সাথেই বুকের মাঝে বাড়ি মেরে উঠলো।আয়াস এটা বুঝে গেলো কিভাবে।কিছুটা ভয় ও পেলাম আমি।আমি যে ফোন লুকিয়ে রেখেছিলা বুঝলো কিভাবে আয়াস।টেনশনে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাচ্ছি।ফোনটা কি তাহলে আয়াস এর হাতে।আয়াস কি ফোনের ভেতরে থাকা সব দেখে ফেললো।দেখলে দেখুক আমার কি।সেতো জানেই আমার রিলেশন আছে।তবুও নমনীয় ভাবেই বললাম,
‘না মানে এখানে রেখেছিলাম খুজে পাচ্ছিনা।’
‘ওটা গাজীপুরেই দাফন কাফন করে রেখে এসেছি।’

মাথা চক্রাকারে ঘুরতে শুরু করলো আমার।ওই ফোনের মাঝেই আমার আর অভির হাজার ও স্মৃতি।আমাদের হাজারো ছবি,হাজারো গল্প।ফোনটা না থাকা মানে আমাদের দুজনের সব স্মৃতির চিহ্ন মুছে যাওয়া।আমার করা মেসেজের উত্তর অভি কি দিয়েছিলো ফোন ছাড়া আমার তো জানা হবেনা।মানুষটার প্রতি ঘৃনা আরো তীব্র হলো আরো প্রখড় হলো।আমার সব আনন্দের সামনে কাঁটার মতো এই মানুষ টা দাঁড়াচ্ছে।নিমিষেই চোখে পানি চলে এলো।তীব্র ঘৃনা নিয়ে বললাম,
‘কেনো করেছেন এমন।আপনি জানেন ওই ফোনের মাঝে আমার কত স্মৃতি আছে।একটা পারসোনাল ফোনে মানুষের কতকিছু থাকে।’

‘তুমি আমার ওয়াইফ।তুমি কোনো পাপ করলে সেটার দায়ভার আমার উপর ই পড়বে।আমি চাইনা তুমি কোনো অপবিত্র কাজ করে আমাদের পবিত্র সম্পর্কটা নষ্ট করো।ফোনটা লুকিয়ে রেখে নিজের সো কলড বয়ফ্রেন্ড এর সাথে যোগাযোগ করবে সেটা আমি কিছুতেই মেনে নিবো না।’
‘কেনো নিবেন না মেনে?’
‘বিকজ নাথিং,বাট তোমার রাগ হচ্ছে তোমার হোক।ঘৃণা হচ্ছে আমার প্রতি হোক সমস্যা নেই।আমার ফোনটা তুমি ইউজ করতে পারো কোনো প্রব্লেম নেই। ‘
ভীষণ মন খারাপ করে আবার ও বিছানায় সুয়ে পড়লাম।বিষাক্ত অনুভূতিরা ঘিরে ধরেছে আমাকে।ভীষণ যন্ত্রণায় জ্বলে যাচ্ছে বুক।মন পোড়া আর্তনাদ কাউকে বোঝাতে পারছিনা।এমন কেউ নেই তাকে বলবো ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।এমন সময় আয়াস আমার কাছে খাবার নিয়ে এসে বললো,

‘মুগ্ধতা খাবার খেয়ে নাও।তোমার ফেভারিট ছোলার ডাল আর গরুর মাংস।না খেয়ে থাকলে যুদ্ধ করবে কিভাবে।নিজে না খেয়ে অন্যর উপর প্রতিশোধ নেওয়া যায়না।এটা কিন্তু এক প্রকার বোকামি।’
‘আমি খাবো না খুদা নেই আমার।’
‘আচ্ছা খাবেনা।তুমি যে আমাকে এক দিনেই এতটা ভালবাসবে আমি বুঝতে পারিনি।হাউ লাকি আই এ্যাম। মানুষ যাকে ভালবাসে তার উপর অভিমানে না খেয়ে থাকে এটা যুগে যুগে প্রমানিত। ‘
‘আপনাকে আমি ভালবাসি না ক্লিয়ার।’

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৬+৭

‘তাহলে আমাকে এত ইমপর্টেন্স দিয়ে না খেয়ে থাকার মানে কি।আমি কি ধরে নিবো এটাই ভালবাসা।’
‘নো নেভার।কিসের ভালবাসা।’
‘তাহলে খাচ্ছো না যে।হয় খাবার খাও,না হলে আমাকে জড়িয়ে ধরে আই লাভ ইউ বলো।খাবার না খেলে বুঝে নিবো ভালবাসো।’
খুদা পেটে তাকে ভালবাসি না প্রুভ করতে প্রচুর খাবার খেয়ে নিলাম।তার দিকে তাকিয়ে রাগে রাগে যতটা খাবার ছিলো ফিনিশ করে দিলাম।খাবার খাওয়া শেষে আয়াস আমাকে তার ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘তোমার দেবর কথা বলবে ফোনটা নাও।’

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৯