তুমিময় বসন্ত পর্ব ৯

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৯
writer Mousumi Akter

‘তোমার দেবর কথা বলবে ফোনটা নাও।’
আয়াসের দিকে রইলাম আমি। তার একটা ছোট ভাই আছে শুনেছি। এখনো কথা হয়নি।আয়াস আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখ ইশারা দিয়ে বললো,
‘অয়ন লাইনে আছে কথা বলো।’
আমি নিঃশব্দে ফোনটা কানে নিয়ে?মিহি কন্ঠে সালাম দিলাম।
‘আসসালামু আলাইকুম। ‘
ফোনের ওপাস থেকে বেশ শান্ত কন্ঠের একটা ছেলে উত্তর দিলো,
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম ভাবি।কেমন আছেন?’
‘আলহামদুলিল্লাহ আপনি।’

‘ভাবি আমি আপনার বয়সে বড় হবো।আমি অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ি।তবে আমাকে প্লিজ আপনি করে বলবেন না।আমাকে তুমি করেই বলবেন অনুরোধ রইলো।’
‘বাট আমার থেকে তিন ইয়ারের সিনিয়র তুমি বলতে কেমন বাঁধছে।’
‘ভাবি বড়দের যে তুমি বলা যায় না ব্যাপার টা এমন নয় কিন্তু।আমি আপনার ভাই এর মতো তাই আপনজন মনে করেই তুমি বলে ডাকবেন।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
‘আপনাদের বিয়েতে আমি থাকতে পারিনি খুব খারাপ লাগছে।কলেজের পিকনিক ছিলো সাজেক।অনেক দিনের প্লান তাই যেতেই হয়েছিলো।’
‘মা বলেছিলো তুমি পিকনিকে গিয়েছো।’
‘রাতে খেয়েছেন। ‘
‘হ্যাঁ, তুমি খেয়েছো।’
‘হ্যাঁ খেয়েছি।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এমন সময় আয়াস ফোনটা মিউট করে বললো,
‘অয়ন কে বলো যে পাশে মা -বাবা থাকলে তাদের কাছে দাও।আমার সাথে ফাইট করো ব্যাপার না বাট মা -বাবার সাথে ভালো ব্যবহার করো তারা ভীষণ খুশী হবে।আর আমার মা -বাবা খুশী হলেই আমি খুশী।তুমি জাস্ট তাদের সাথে একটু ভালো ব্যবহার করবে এটা ছাড়া আর কিছু চাইনা আমি।’
আয়াসের কথা শুনে রাগে চোখ পাকিয়ে আয়াসের দিকে তাকালাম আমি।মানে কি আমাকে কি এতই ষ্টুপিড ভাবে যে আমি তার মা -বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করবো।দাঁত কিড়মিড় করে আয়াস কে বললাম,
‘সেটা আপনাকে শিখিয়ে না দিলেও চলবে ওকে।আমি এমনিতেও এখন অয়ন কে বলতাম মায়ের কাছে ফোনটা দিতে।’

আমার কথা শুনে আয়াস এর টেনশনে থাকা মুখটা সাথে সাথেই স্নিগ্ধ হয়ে গেলো।আনন্দে চিকচিক করছে মুখের অদল।আয়াসের মুখে দেখে মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে তাকে পৃথিবীর সর্বোত্তম নিউজ টা দেওয়া হয়েছে।
ফোন আনমিউট করে অয়ন কে বললাম,
‘মা কি পাশে আছেন অয়ন।’
‘জ্বী ভাবি কথা বলবেন।’
‘হ্যাঁ বলবো,তবে তোমাকেও আমাকে আর আপনি আপনি করা চলবে না। আমাকে তুমি করেই বলবে।কি বলবে তো।’
‘হুম।’

‘হুম বললে কাজ হবেনা।আমি শুনেছি তুমি অনেক লাজুক প্রকৃতির একটা ছেলে।কথা একেবারেই কম বলো।’
অয়ন মৃদু হেসে মায়ের কাছে ফোনটা দিলো।
ফোনের ওপাস থেকে মা বললেন,
‘মুগ্ধতা মা কেমন আছো?’
‘জ্বী মা ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?’
‘ভালো আছি মা মুগ্ধতা। বলছি তুমি কখনো মন খারাপ করোনা।আমি বুঝতে পারছি তোমার মন খারাপ।আমার আয়াস অত্যান্ত ভালো ছেলে।কখনো তোমার কোনো কষ্ট হতে দিবেনা দেখে নিও মা।অন্য ছেলেদের মতো তোমার উপর জোর খাটাবে না।তোমাকে ভালো রাখার সব চেষ্টা করবে দেখে নিও।আস্তে আস্তে তুমি নিজেই বুঝতে পারবে। শুধু এটুকু বলবো আমার ছেলেকে ছেড়ে চলে যেওনা। তাহলে আমার ছেলেটা কি করবে তার ঠিক নেই।’

‘জ্বী মা ঠিক আছে।’
ফোনটা আয়াসের হাতে আবার দিয়ে দিলাম।আয়াস কথা বলতে বলতে বাইরে চলে গেলো।আয়াস ফিরে এসে বললো,
‘অয়ন যে ভালোই কথা বললো।ওতো প্রথম পরিচয়ে এতটা ক্লোজভাবে কারো সাথে কথা বলেনা।’
‘আপনার মতো অসভ্য না অয়ন বুঝলেন।ভদ্রতা আছে ওর মাঝে।’
‘শুদ্ধতা শোনো।’
‘বলুন।’
‘একটু অসভ্যতা করতে দিবে প্লিজ।বর হই তো তোমার।একটু অসভ্যতা করলে কি হয়।’
‘মতলব কি আপনার।’

–এটুকু বলার সাথে সাথে আয়াস তার ওষ্ট গাড় ভাবে ডুবিয়ে দিলো আমার গালে।আমি ভীষণ ভাবে কেঁপে উঠলাম।হঠাত যেনো ঠান্ডা হীম হয়ে গেলো আমার শরীর।শরীরের লোমকূপ সব দাঁড়িয়ে গেলো।যেনো মাঘমাসের কড়া শীতে কাঁপছি আমি।জীবনে প্রথম কারো ওষ্টের ছোঁয়ায় হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি।সে ওষ্ট ডুবিয়ে খানিকক্ষণ পরে ছাড়লো।ডান গালে যেনো ভায়াবহ কোনো তুফান বয়ে গেলো আমার।আমি ভীষণ অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম।অথচ তার মুখে ড্যামকেয়ার ভাব।যেনো খুব সাধারণ কোনো কাজ সে করেছে।তাকে দেখে একটুও মনে হচ্ছেনা ভয়ংকর রকমের কোনো কাজ সে করেছে।এ কাজের জন্য একটুও অনুতাপ নেই ভেতরে।

তার স্পর্শ একটুও ভালো লাগলো না আমার।যার জন্য মনে জায়গা নেই তার স্পর্শ কতটা বিরক্তিকর এটা যার সাথে ঘটে সে একমাত্র অনুভব করতে পারে।মনের ভেতরে অভি নামক অনুভূতি আবার ও দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো।অভি ছাড়া কারো স্পর্শ সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।মা -বাবা জেনে বুঝে কেনো আমাকে এই পাপের দুনিয়ায় ভাষিয়ে দিলো।আমি বিবাহিত আমার স্বামির অধিকার আছে আমাকে চুমু দেওয়ার আমাকে স্পর্শ করার।এ সব অধিকার একমাত্র তার ই।কিন্তু আমার মনে তার জন্য জায়গা নেই বলে তাকে মেনে নিতে পারছিনা।এত বাজে অনুভূতি নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে ম*রে যাওয়ায় বেশী ভালো।হাত দিয়ে গাল মুছে আয়াসের দিকে তাকালাম।ইচ্ছা করছে মুখের চামড়া তুলে ফেলি।বারবার ডলাডলি করছি হাত দিয়ে।আয়াসের প্রতি বিরক্তি নিমিষেই আরো কয়েকগুন বেড়ে গেলো।
আয়াস আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘এত ডলাডলি করে কি হবে মুগ্ধতা।মুখের চামড়া তুলে ফেলতে চাও নাকি।কিছুদিন পরে তো চুমু দিতে দিতে আমাকে আহত করে ফেলবে।’
রাগে -দুঃখে, অপমানে,লজ্জায় আমি কোনো কথা বলতে পারলাম না।শুধু বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে রইলাম আয়াসের দিকে।আয়াস আমার মুডের ভাব বুঝে বললো,
‘আমার বউ কোনো পাপ করুক আমি সেটা চাইনা।এখনো অসভ্যতা করিনি।হুদাই অসভ্য বললে তোমার ই পাপ হবে বউ।তোমাকে গুনাহ থেকে বাঁচাতে অসভ্যতামি করলাম কিছুটা।এখন থেকে সারাদিন অসভ্যতার মন্ত্র পড়বে ওকে।এবার গুড নাইট।’

আয়াস ঘুমিয়ে পড়লো।আমিও নিশ্চুপ হয়ে আয়াসের পাশে গিয়ে সুয়ে পড়লাম কিন্তু ঘুন হলোনা।দু’চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে।ইচ্ছা করছে এক ছুটে অভির কাছে চলে যায়।কতকাল যেনো অভির সাথে কথা হয়না আমার।অভিকে দেখার জন্য ছটফট করছে মন।কথা বলা বা দেখার কোনো সুযোগ নেই।
কেটে গিয়েছে দুইদিন আয়াসের করা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য টোটাল একটা কথা ও আয়াসের সাথে বলিনা।আয়াস নিজের মতো বক বক করে কিন্তু আমি কোনো কথা বলিনা।মনে চাইলে খাবার খাচ্ছি,না চাইলে খাচ্ছিনা তবে কথা বলছিনা।

দুইদিন পরে সকালে দেখি আয়াস তার ইউনিফর্ম পরে কিছু খুজছে।আয়াস কে ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে ইউনিফর্ম এ।এমনিতেই আয়াস দেখতে ভীষণ হ্যান্ডসাম।আর্মি পারসন রা বরাবর দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম হয়।সারা বছর ব্যায়াম এ এমনিতেই বডির ফিটনেস ভালো হয়ে যায়।আয়াস হন্য হয়ে খুজে যাচ্ছে কিছু।বুঝতে পারছি ইমপর্টেন্ট কিছু খুজছে আয়াস।আলমারি তন্ন তন্ন করে ফেলছে খুজতে খুজতে।বাবা হলে এত সময় মায়ের সাথে চিল্লসচিল্লি শুরু করতো যে একটা জিনিস ও গুছিয়ে রাখতে পারোনা।মানুষের বাড়িতে কিছু চাইলেই সাথে সাথে পাওয়া যায় কিন্তু আমাদের বাড়িতে পাওয়া যায় না।বাবা সব ছোড়াছুড়ি শুরু করতো।মা দ্রুত গিয়ে সাহায্য করতো।মায়ের কথাটা ভেবে আমিও আয়াস কে হেল্প করতে গেলাম।

কাছে গিয়ে বললাম,
‘কিছু খুজছেন?’
‘আয়াস আমার দিকে না তাকিয়েই বললো,অফিসের একটা ফাইল পাচ্ছিনা।খুব প্রয়োজন।’
আমি আলমারিতে উঁকি মেরেই দেখি হলুদ কালারের একটা ফাইল পড়ে আছে।ফাইল টা হাতে নিয়ে আয়াসের সামনে ধরে বললাম,
‘এটা।’
আয়াস ফাইল টা হাতে নিয়ে বললো,
‘হ্যাঁ এটা।’
‘সামনেই তো ছিলো খুজে পেলেন না যে।’
‘আমি তো এখানেই খুজলাম পেলাম না।’
‘মন কোথায় ছিলো। ‘
‘তুমি কথা না বললে আমার সব এলোমেলো লাগে মুগ্ধতা।আরেক টু হলে হয়তো নিজেকেই হারিয়ে ফেলতাম কোথায় জানিনা।’

‘খেয়ে যাবেন না।’
‘আধাঘণ্টা আগে বললে খেতাম।এখন লেট হয়ে গিয়েছে খাওয়ার সময় নেই।’
‘কাল রাতে ও খান নি,দুইদিন কি রোজা রেখেছেন।’
আয়াস মৃদু হেসে দিলো।আমি দেখি আয়াস রোজ সকালে এক গ্লাস দুধ খেয়ে বের হয়।আয়াস আজ দুই দিন দেখছি খাচ্ছেনা।আমাকে বলেছিলো সে রোজ সকালে দুধ বা জুস কিছু একটা খায়।আয়াস কে বললাম জাস্ট এক মিনিট।এক গ্লাস দুধ এনে আয়াসের সামনে ধরে বললাম এটা খেয়ে বেরোন।আয়াস আমার হাত সহ দুধের গ্লাস ধরে মুখে দিয়ে চুমুক দিলো।তার হয়তো আমার হাতেই খেতে ইচ্ছা করছিলো।বেরোনোর সময় বললো,

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৮

‘ভালোভাবে দরজা লাগাবে।দুপুরে বুয়া এসে রান্না করে দিয়ে যাবে খেয়ে নিও।আলমারির চাবি রাখো টাকা আছে যা লাগে ইচ্ছামতো খরচ করো। তবে একা একা বাইরে যেওনা প্লিজ।যদি তুমি হারিয়ে যাও আমিও হারিয়ে যাবো।’
আয়াস বেরিয়ে গেলো।আমি ওর যাওয়া তাকিয়ে দেখছি। কিছুক্ষণ পরে নিচে এলাম অভিকে ফোন করতে।এটাই সুযোগ অভিকে কল করার।নিমিষেই মন ভালো হয়ে গেলো আমার।হঠাত মনের মাঝে সুখ পাখি ডেকে উঠলো।আনন্দে ছুটতে ছুটতে নিচে গেলাম আমি।

তুমিময় বসন্ত পর্ব ১০