তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫২

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫২
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

রাতের শেষ প্রায়। রিমি আধো আধো চোখ খুলে অয়নকে নিজের পাশে দেখতে না পেয়ে তৎক্ষনাৎ উঠে পড়ে।সঙ্গে সঙ্গে কারো ভয়ংকর গর্জনে কেঁপে উঠে তার সর্বোঙ্গ। রিমি শাড়িটা ভালো করে শরীরে জড়িয়ে নেয়। অতঃপর শব্দের উৎস খুঁজতে ঘর থেকে বাইরে চলে যায়। বাইরে বেড়িয়ে সে স্তব্ধ প্রায়। অয়ন বন্ধুক তাঁক করে অনাবরত গুলি ছুড়ি যাচ্ছে যেখানে পারছে সেখানেই গুলি করছে। দেহরক্ষীগণ
নিজেদের বাঁচানোর প্রয়াসে যে যেমন পারছে ছুটে যাচ্ছে। অয়ন নিজের মাথা চেপে,ভয়ংকর ভাবে গর্জে উঠে বলে,

‘ আজ সবাইকে শেষ করে দিবো আমি। সবাইকে মেরে ফেলবো। আমি কিচ্ছু জানতে চাই যেখান থেকে পারিস আমার মেডিসিন নিয়ে আয়। নাহলে আমি সবাইকে মেরে পুঁতে দিবো। ‘
অয়নের হঠাৎ অদ্ভুদ আচরণে রিমি হতভম্ব হয়ে য়ায়। ইতিমধ্যে অনেক দেহরক্ষীদের গুলি করে দিয়েছে অয়ন। রাগে তার শরীর থরথর করে কাঁপছে। অয়ন তার হাতে থাকা বন্দুকের ট্রিগার পুনরায় চেপে ধরতেই, অয়নের বন্দুকের সামনে রিমি চলে আসে। অয়ন রক্তচক্ষু দিয়ে, রিমির দিকে তাকাতেই, রিমি ছলছলে দৃষ্টিতে অয়নের গালে হাত রেখে বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ কি করছেন ডক্টর এয়ারসি? এইভাবে সবাইকে আহত করছেন কেন? কি হলো হঠাৎ আপনার? ‘
অয়ন রিমির হাত তৎক্ষনাৎ ছাড়িয়ে নেয়। রিমির বাহু চেপে ধরে, বজ্র কন্ঠে আদেশ করে,
‘ আমার সামনে এসো না রিমিপরী। জাস্ট গো ফর্ম এওয়ে। জাস্ট গো। নাহলে আমি কিন্তু তোমার ক্ষতি করে দিবো।’
রিমি এমন ভয়ংকর পরিস্হিতির মাঝে এক চিলতি হাসি দিয়ে বলে,
‘ আপনার ভালোবাসা ভয়ংকর কিন্তু তা কখনো আমাকে আঘাত করবে না। আমার বিশ্বাস আছে আমাদের ভালোবাসার উপর। ‘
অয়ন বন্দুক টা ফেলে দিয়ে, মাটিতে বসে পড়ে। অতঃপর মাথা চেপে ধরে। রিমি বুঝতে পারছে কোন এক কারণে অয়নের মাথায় কোন একটা ব্যাথা হচ্ছে। যা সহ্য করতে পারছে না অয়ন। অয়ন আর্তনাদের সুরে মাথা চেপে বলে,

‘ আহ আমি পারছি না রিমিপরী। প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে।
আমার সহ্য করতে পারছি না। আমার মেডিসিন টা এখুনি লাগবে। ‘
অয়নের ব্যাথাতুর আর্তনাদে কেঁপে উঠে রিমির বুকটা। রিমির কাছে আজ অয়নকে পুরোপুরি অচেনা মনে হচ্ছে। তার ডক্টর এয়ারসি তো সামান্য আঘাতে আর্তনাদ করার মানুষ নয়, তার মানে অয়নের মাথায় মাত্রাধিক ব্যাথা হচ্ছে। রিমিও অয়নের কাছে গিয়ে বসে, অয়নের হাত ধরে অস্হির হয়ে বলে,

‘ আপনার কি খুব কষ্ট হচ্ছে ডক্টর এয়ারসি? আমাকে বলুন? কিসের মেডিসিনের কথা বলছেন আপনি? ‘
অয়ন উত্তর দেয় না। ব্যাথাতুর নয়নে রিমির হাতখানা শক্ত করে, ঢলে পড়ে রিমির কোলে। অয়নের অবস্হা দেখে রিমি মুখ চেপে কেঁদে দেয়। অয়নের নেত্রকোণা আবেশে বুজে ফেলে। রিমি অয়নের হাত ধরে পার্লস চেক করে, ধীর গতিতে চলছে। রিমির ভয় মস্তিষ্ক দ্বিগুনভাবে নাড়া দেয়। আতন্কে ললাটে জমে থাকে ঘাম। রিমি কাঁদতে কাঁদতে গার্ডদের এবং ড্রাইভারদের ডাকতে থাকে এবং তাদের আদেশ করে দ্রুত গাড়ি বের করতে। এখন রিমিকে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। তার স্বামীকে বাঁচাতে হবে। দেহরক্ষী কয়েকজন অয়নকে ধরে গাড়িতে শুয়িয়ে দেয়। রিমিও দ্রুত গাড়িতে উঠে পড়ে। কিছু গার্ডদের যাওয়ার সময় বলে যায়, আহতদের দ্রুত হসপিটালে ভর্তি করানোর জন্যে।

রিমিদের গাড়ি চৌধুরী বাড়ির গেট থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই, আড়াল থেকে একজন বিশাল দেহীর লম্বাটে শ্যাম বর্ন গড়নের যুবক বেড়িয়ে আসে। মুখে তার কুটিল হাসি। লোকটাকে বেড়িয়ে আসতে দেখে, কিছু সার্ভেন্ট তার কাছে যায়। একজন মাথা নিচু করে বলে,
‘ ইশান স্যার আপনার কথামতো, অয়ন স্যারের সমস্ত ওষুধ আমরা ফেলে দিয়েছি। ‘
ইশান হাত ভাজ করে পুনরায় হেসে বিড়বিড় করে বলে,
‘ গুড গুড, ভেইরি গুড। ‘
ইশান তাদের বলে দ্রুত সরে যেতে। তারাও চলে যায়।
‘ ইউর গেম ইজ ওভার নাও মিঃ অয়ন চৌধুরী। ‘
কথাটি বলে ইশান পকেট থেকে সিগারেট বের করে ঠোটে চেপে ধরে। আখিজোড়ায় তার উপচে পড়ছে প্রখোর প্রতিশোধের নেশা। যা শুধুমাত্র অয়নকে ঘিড়ে। বিষাক্ত এক অতীতে অয়নের জন্যে সে এই চৌধুরী বাড়ির মেঝ ছেলে অর্থাৎ রুজা চৌধুরী এবং আশরাফ চৌধুরীর বড় ছেলে হওয়া সত্ত্বেও সর্বদা অবহেলিত হয়েছে। ত্যাজ্য হয়েছে একপ্রকার। আমেরিকায় তাকে পরিবারের থেকে দূরে আলাদা থাকতে হয়েছে। সবকিছুর প্রতিশোধ নিবে ইশান। সেদিন অয়নের সবথেকে বড় দূর্বলতা রিমিকে মারতে চেয়েছিলো ইশান, কিন্তু রিমি হঠাৎ সেদিন জেগে যাওয়ায় ইশান তার উদ্দেশ্যে বিফল হয়ে যায়। ইশান দ্রুত স্হান ত্যাগ করে।

ফারহানের মাথা কাজ করছে না, কে তার সুমাইয়াকে অপহরণ করলো। সানা তো থানায় তবে কে করলো? অন্য কেউ? কিন্ত কে তারা? যারা সুমাইয়াকে মারতে চেয়েছিলো? ফারহান আর কিচ্ছু ভাবতে পারছে না। হুট করে তার ফোন থেকে অজানা নাম্বার থেকে মেসেজ আসে। সেখানে লেখা,
‘ সুমাইয়ার সন্ধান চৌধুরী বাড়িতে পাবে, ঠিক রাত ১০টায়। চিন্তা করো না। সুমাইয়া ঠিক আছে।’
ফারহান মেসেজ টা পড়ে কিছুক্ষন স্তব্ধ থাকে। মুখে তার অজানা চিন্তা খুড়ে খাচ্ছে। কে হঠাৎ তাকে এমন বার্তা পাঠালো?

আমানের গাড়ি এয়ারপোর্টে এসে পোঁছে যায়। এখন প্রায় রাত সারে ২টা বাজে। ৩টার দিকে আমানের ফ্লাইট। মেঘের গাড়িও আমানের গাড়ির পিছনে থেমে যায়। মেঘ তড়িৎ গতিতে নেমে যায়। আমান লাগেজ হাতে চেক পোস্টের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মেঘও দ্রুত দৌড়ে এয়ারপোর্টের সামনে যেতে থাকে, আমান যদি চেক পোস্ট পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে, তবে মেঘ চাইলেও তার কথাগুলো আমানকে বলতে পারবে। আমানের জিনিসপত্র চেক করা শেষে, এয়ারপোর্টের লোকটি বলে আমানকে ভিতরে প্রবেশ করার জন্যে। আমানকে ভিতরে যেতে দেখে, মেঘ আগের থেকেও দ্বিগুন বেগে দৌড়ায়, কিন্তু দৌড়াতে গিয়ে কিছু একটার সাথে পা লেগে সে পড়ে যায়। ব্যাথাকে পরোয়া না করে, পুনরায় মেঘ উঠে দাঁড়ায়।

পা খুড়িয়ে খুড়িয়েই, জোড় গলায় হাক ছেড়ে ডাকলো,
‘ মিঃ আমান শিকদার একটু দাঁড়ান, কিছু বলতে চাই আপনাকে। ‘
আমান প্রায় ভিতরে প্রবেশ করেই ফেলেছিলো, কিন্তু মেঘের আওয়াজ পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে মেঘ দাঁড়িয়ে আছে। বিয়ের সাজসোজ্জা এখনো তার গাঁয়ে। মেঘকে দেখে ভিতর থেকে বাহিরে চলে আসে আমান। মেঘের কাছে দ্রুত গিয়ে, মেঘের দিকে তাকিয়ে অবাকের সুরে বলে,
‘ তুমি এখানে? কি করে এলে? কেন এসেছো তুমি?’
মেঘ আমানের প্রশ্নের বিপরীতে সামান্য হেসে, উত্তর দেয়,
‘ এতো প্রশ্ন একসাথে করলে, কোনটার উত্তর দিবো বলুন? ‘
আমান চুপ হয়ে যায়। মেঘও চুপ থাকে। অনেক্ষন যাবত তাদের মাঝে পিনপিন নিরবতা চলে। নিরবতা ভেঙ্গে সর্বপ্রথম মেঘ আমানকে প্রশ্ন করে,
‘ আমাকে এইভাবে অবহেলা করছেন কেন? আপনার অবহেলা আমাকে অন্তরটাকে প্রতিনিয়ত পীড়িত করে তুলে। ‘

আমান মেঘের প্রশ্নের বিপরীতে কঠোর গলায় উত্তর দেয়,
‘ মেঘ তুমি এখনো অনেক ছোট। আমি জানি এইসব কিছুই তোমার আবেগ। আবেগকে প্রশয় দেওয়ার কোন মানেই হয় না। তুমি এখন ফিরে যাও। ‘
আমান কথাটি বলে পিছনে ঘুড়তে নিলে, মেঘ আমানের হাত শক্ত করে ধরে, কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘ আমার নেত্রপল্লবের অশ্রু দেখতে পারছেন আমান? সব অস্রু তো আপনাকেই ঘিড়ে। আমার ভালোবাসা কোন আবেগ নয়, আমার ভালোবাসা সুপ্ত অনুভুতির ন্যায় শুদ্ধ। এখন তা না বুঝলেও একদিন আপনি ঠিক অনুভব করবেন। ‘
আমান মেঘের হাত ছাড়িয়ে দ্রুত পায়ে ভেতরের দিকে হাটতে থাকে, তখনি তার কানে আসে মেঘের আরেকটি কথা,
‘ আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছেন তো? একটা কথা মনে রাখবেন আমান শিকদার। যেদিন আমার ভালোবাসা গভীরভাবে উপলব্ধি করবেন,সেদিন আপনি ফিরে আসতে বাধ্য। আমি আপনাকে ভালোবাসা, খুব ভালোবাসি। ‘
আমান একপলক মেঘের দিকে তাকিয়ে ভিতরে চলে যায়। মেঘ তার নেত্রকোনে জমে থাকা অস্রু মুছে ফেলে। বিড়বিড় করে আওড়াতে থাকে,
‘ অপেক্ষা করবো জীবনের শেষ প্রহর অব্দি। আমি জানি আপনি ফিরে আসবেন একদিন। ‘

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫১

রিমি অয়নকে অয়নের হসপিটালেই দ্রুত নিয়ে এসেছেন। এখানে কিছু অভিজ্ঞ ডক্টররা অয়নের চেকাপ করছে। রিমি বাইরে পাইচারি করছে। নানা খারাপ চিন্তা তাকে খুড়ে খাচ্ছে। রিমির ভাবনার মাঝেই, একজন ডক্টর বেড়িয়ে বলেন,
‘ আমরা ডক্টর এয়ারসির কিছু টেস্ট করিয়েছি। রিপোর্ট আসলেই, সব বলতে পারবো। ‘
ডক্টরের কথার মাঝে, অয়ন পুনরায়…….

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৩

1 COMMENT

Comments are closed.