তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৩

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৩
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

ডক্টরের কথার মাঝেই, অয়নের চিৎকার শুনতে পায় বাহির থেকে রিমি। রিমি দ্রুত ভিতরের কেবিনে চলে যায়, সেখানে গিয়ে দেখতে পায় অয়ন মাথায় হাত দিয়ে সমস্ত জিনিসপত্র ফেলে দিচ্ছে। নার্সরা চাইলেও সামলাতে পারছে না। অয়ন রাগে চিৎকার করে বলে যাচ্ছে,
‘ আমার মেডিসিন টা এখুনি নিয়ে আসা হোক। নাহলে আমি সব কিছু শেষ করে দিবো। ‘
রিমির নেত্রকোণ বেয়ে টুপটুপ করে জল বেয়ে পড়ছে। গলা ভারি হয়ে আসছে। চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষটার আর্তনাদ, অসহায়ত্ব রিমিকে পুড়াচ্ছে, ব্যাথিত করে তুলছে। অয়ন মাথার ব্যাথা নিয়েই, রিমির দিকে এগিয়ে যায়। হাতের ইশারায় নার্সদের বেড়িয়ে যেতে বলে। নার্সরাও বেড়িয়ে যায়। অয়ন রিমির থুত্নি উচু করে, রিমির আখিজোড়ায় চুমু খায়। রিমি আবেশে নেত্রপল্লবে বন্ধ করে নেয়। অয়ন রিমির ললাটে নিজের কপাল ঠেকিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলে,

‘ কাঁদলে তোমাকে মায়াবতী লাগে রিমিপরী। আরো কিছুক্ষন কাঁদো। আমি প্রানভরে চেয়ে থাকি। তোমার নেত্রপল্লবের অশ্রুও যে আমাকে সুখ দেয়, যখন সেই অশ্রুতে আমি নিজের প্রতি ভালোবাসা দেখতে পাই। ‘
অয়নের কথাতে অবাক না হয়ে পারলো না রিমি। লোকটা সত্যিই পাগল, নাহলে এতোটা যন্ত্রণার মাঝেও এমন কথা বলতে পারে? রিমির ভাবনার মাঝেই পুনরায় ব্যাথায় কাতরে উঠে অয়ন। মাথা চেপে দেয়ালে অনাবরত ঘুষি দিতে দিতে বলে,
‘ আমি সত্যি পারছি না পরী। আমার মেডিসিন টা যেখান থেকে পারো, এনে দাও। ‘
রিমি অয়নের কাছে গিয়ে, অস্হির হয়ে চিন্তিত গলায় প্রশ্ন করে,
‘ আপনি কি সেই ওষুধের কথা বলছেন ডক্টর এয়ারসি? যে ওষুধ আপনি প্রায় খেতেন। কিসের ওষুধ ছিলো সেইটা? আমাকে বলুন। ‘

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অয়নের মুখে অন্ধকার এসে হানা দেয়। চুপসে যায় মুখখানা। রিমির অয়নের মুখের হঠাৎ পরিবর্তন দেখে সন্দেহ খানিক্টা বেড়ে যায়। তার মানে অয়ন তার থেকে কোন ভয়ংকর সত্য লুকাচ্ছে। অয়ন বিছানায় মাথা চেপে বসে থাকে। রিমির প্রশ্নের উত্তর
দেয় না। এড়িয়ে যায় একপ্রকার। রিমি অয়নকে প্রশ্ন করতে নিলে, পিছন থেকে বয়স্ক ডাক্তার বলেন,
‘ মিসেস চৌধুরী, আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো। আমার কেবিনে আসুন। ‘
রিমি একপলক অয়নের দিকে তাকিয়ে, ডক্টরের সাথে চলে যায়। রিমি বেড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই, অয়ন তার পাশে থাকা ব্লেজার টা হাতে নিয়ে, একপ্রকার পাগলের ন্যায় ছুটে কেবিন থেকে বেড়িয়ে যায়। নার্সরাও চাইলেও আটকাতে পারে না অয়নকে। রিমি ডক্টরের কেবিনের গিয়ে বসে পড়ে। ডক্টরও নিজের চেয়ার টেনে বসে পড়ে। অতঃপর গলা খাকারি দিয়ে বলতে থাকেন,

‘ আমি বুঝতে পারছি না ডক্টর এয়ারসি এতো বড় একজন হার্ট সার্জন হয়ে, এতো বড় ভুল করলো কি করে? ‘
ডক্টরের কথায় ভ্রু কুচকে তাকায় রিমি। ভুল বলতে কি বুঝাচ্ছেন ডক্টর? রিমি ডক্টরের দিকে অস্হির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, প্রশ্ন করলো,
‘ আপনি কি বলতে চাইছেন ডক্টর? আমাকে পরিষ্কার করে বলুন। ‘
ডক্টর কিছুক্ষন চুপ থেকে চশমা টা খুলে, হতাশার সুরে বললেন,
‘ অত্যান্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে ডক্টর এয়ারসি ড্রাগ এডিক্টেড। ‘
ডক্টরের কথাটি বিষ্ফোরণের মতো রিমির কানে গিয়ে লাগলো। থরথর করে কাঁপতে লাগলো শরীর। ললাটে বিন্দু বিন্দু ঘামে পরিপূর্ন হয়ে গেলো। শরীরটা যেন নিজের গতিবেগ হারিয়ে ফেলছে সময়ের সাথে সাথে। রিমিকে নিরব থাকতে দেখে, ডক্টর পুনরায় বললেন,

‘ আমি বুঝতে পারছি আপনার মনের অবস্হা মিসেস চৌধুরী কিন্তু তিক্ত হলেও সত্যি যে ডক্টর এয়ারসি মাদকাসক্ত। শুধু আজ থেকে নয় দীর্ঘ ১৪বছর ধরে উনার শরীরে ড্রাগস কোনভাবে প্রবেশ করছে। যার ফলে অয়ন চৌধুরী ধীরে ধীরে মানুষিক রুগীতে পরিনত হচ্ছেন। ‘
রিমি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। তার মানে অয়ন যে ওষুধ টা সেবন করে তা একপ্রকার ড্রাগস। যার জন্যে অয়ন অস্বাভাবিক। কিন্তু অয়ন কি ইচ্ছে করে এতোবছর ধরে ড্রাগস নিচ্ছে, নাকি এর পিছনে অন্য কারো হাত রয়েছে। রিমি আর কিছু ভাবতে পারছে না। নিজের স্বামীর এতো বড় একটা সত্যি জানার পর, নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না সে। অসহায় লাগছে তার। রিমির ভাবনার মাঝেই,

রিমির ভাবনার মাঝেই নার্সগুলো হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে। অতঃপর হাপাতে হাপাতে রিমিকে জানায়, অয়ন কীভাবে উত্তেজিত হয়ে হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে গিয়েছে। ডক্টর টেবিলে হাত বারি দিয়ে চিৎকার করে বলে,
” উনি চলে গেলো আর তোমরা যেতে দিলে? ডক্টর এয়ারসি এখন নিজের মধ্যে নেই। ড্রাগ এডেক্টেড একজন লোক যতক্ষন না ড্রাগ নিতে পারছে, সে তত ভয়ংকর এবং হিংস্র হয়ে উঠে। ‘
সবকিছু শুনে রিমির মাথায় যেন বাজ পড়ে। সে বুঝতে পারছে অয়নের বড় কোন বিপদ হতে চলেছে। সেই বিপদ থেকে অয়নকে যে করেই হোক বাঁচাতে হবে। রিমি হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে যায় দ্রুত হসপিটাল থেকে। অপরদিকে অয়ন লাগামহীন ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে। সামনে কোন কিচ্ছু দেখতে পারছে না সে। তাকে যে করেই হোক চৌধুরী বাড়িতে পৌঁছাতে হবে।

অন্ধকার একটি ঘরের মাঝে পড়ে আছে সুমাইয়া। হাত-পা মুখ তার বাঁধা। মুখে রয়েছে টেপ। সে বার বার চাইছে কাউকে সাহায্যের জন্যে ডাকতে কিন্তু সে ব্যার্থ। সুমাইয়া জানে এই কাজটি কার। সে সুমাইয়াকে মেরে ফেলার জন্যে সুমাইয়াকে
অপহরণ করে নিয়ে এসেছে।
সানাকে জেল থেকে কয়েকজন মহিলা কন্সটেবল বের করে নিয়ে আসে। তারা সানাকে সায়েদের কেবিনে বসিয়ে দিয়ে চলে যায়। সানা বুঝতে পারছে না হঠাৎ তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসার মানে কি? কি কারণে সায়েদ তাকে ডেকেছে? সায়েদ প্রবেশ করে সানাকে নিজের কক্ষে দেখে আলতো হাসে। টেবিলে থাকা পিস্তলখানা হাতে নিয়ে সানার দিকে আলতো হেসে বলে,

‘ মিস সানা আপনি আমার কেবিনে কিছুক্ষনের জন্যে বসুন। আর কিছুক্ষন, তারপর আপনার মুক্তি। ‘
সায়েদের কথায় ভ্রু কুচকে তাকায় সানা। সে বুঝতে পারছে না সায়েদের কথা।
সায়েদ সানার দিকে ঝুঁকে, তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে, ভরসার সহিত বলে,
‘ সানা ম্যাম, এই সায়েদ কখনো নির্দোশ কাউকে বিনা অপরাধে শাস্তি পেতে দেয় না। আমি যখন আপনাকে কথা দিয়েছি, মুক্ত করবো, তার মানে করবোই। জেলে নয়, পাখির ন্যায় মুক্ত আকাশে আপনি উড়বেন। আপনার একজন শুভাকাঙ্ক্ষীর ওয়াদা রইলো। ‘

‘ কেন করছেন আমার জন্যে এতোকিছু? ‘
সানার প্রশ্নে পুনরায় সায়েদ হাসে। যাকে বলে খিলখিলে হাসি। সানা তব্দা খেয়ে যায়। সে হাসির মতো আদোও কিছু বলেছে কি? সায়েদ সানার কানে কানে বলে,
‘ অদ্ভদ এক মায়ার টানে। যে মায়া প্রতিনিয়ত আমাকে আপনার দিকে আর্কষিত করে। আপনি আমার এক অদ্ভুদ মায়া। ‘
সায়েদ কথাটি বলেই বেড়িয়ে গেলো। সানা চেয়ারে বসে রইলো। সায়েদের কথা কিছুই বুঝতে পারছে না সে। লোকটা চাইছে কি?

সুমাইয়ার ভাবনার মাঝেই, অন্ধকারের মাঝে কেউ এসে সুমাইয়ার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। অতঃপর ধীর গলায় বলে,
‘ একদম চিৎকার করবেন না ম্যাম। আমার সাথে আসুন। আপনাকে চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে যাবো।’
‘ কিন্তু কে আপনি? কেন এসেছেন? ‘
সুমাইয়ার প্রশ্নে অগান্গক ব্যক্তিটি অনুরোধের সুরে বলে,
‘ কোন প্রশ্ন করবেন না ম্যাম। আমাদের যে করেই হোক। এখন বের হতে হবে। ‘
সুমাইয়া কথা বাড়ায় না। লোকটার কথামতো পিছন দিয়ে কোনরকম বেড়িয়ে যায়।

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫২

ফারহান মেসেজে অনুযায়ী চৌধুরী বাড়িতে চলে আসে। রুজা এবং আশরাফ ফারহানকে দেখে উঠে দাঁড়ায়।
অপরদিকে চৌধুরী বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে দেয় অয়ন। রিমির গাড়িও অয়নের গাড়ির পিছনে থেমে যায়। অতঃপর….
..তারপর…

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৪