তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৪

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৪
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

অয়ন গাড়িতে বের হয়েই, হাতে থাকা ব্লেজার টা নিয়ে তড়িৎ গতিতে চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করে। রিমিও অয়নের পিছনে পিছনে চৌধুরী বাড়িতে যায়। অয়ন বাড়িতে ঢুকেই লাথি দিয়ে সমস্ত জিনিস ভেঙ্গে ফেলতে থাকে। অয়নের হঠাৎ এমন আচরণে ফারহান অবাক হয়ে, অয়নের কাধে হাত রেখে বলে,
‘ ভাই কি হয়েছে তোর? এমন করছিস কেন? ‘
অয়ন সঙ্গে সঙ্গে ফারহানের হাত ঝাঁটা দিয়ে ফেলে দেয়। অতঃপর হাক ছেড়ে সমস্ত সার্ভেন্টদের ডেকে পাঠায়। অয়নের আদেশে সমস্ত সার্ভেন্টরা জড়ো হয়ে আসে। অয়ন সোফায় গিয়ে, পায়ের উপর পা দিয়ে বসে বলে,
‘ আমার সাথে গেম খেলা? অয়ন চৌধুরীর সাথে গেম খেলা এতো সহজ? সৎ সাহস থাকলে এখুনি বল, কে আমার রুম থেকে মেডেসিন গুলো সরিয়েছিস। ‘

সার্ভেন্টরা সকলের থরথর করে কাঁপতে থাকে। রুজা এবং আশরাফ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। মুখে তাদের একরাশ ভয়। অয়ন পকেট থেকে সেই ওষুধ টা বের করে খেয়ে নেয়।অতঃপর ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের রাগ সংযোতের প্রচেষ্টা করে। অয়ন তার সেক্রিটারিকে দিয়ে দ্রুত ড্রাগস আনিয়ে নিয়েছে।
অয়ন হাতে তালি বাজায়, সঙ্গে সঙ্গে কিছু দেহরক্ষীগণ বাইরে থেকে ইশানের রক্তাক্ত দেহটা ছুড়ে ফেলে মাটিতে। ইশান কোনরকম নিঃশ্বাস নিচ্ছে কেবলমাত্র। পুরো শরীরে মারের দাগ।
কপাল বেয়ে অনবরত রক্ত গড়াচ্ছে। নিজেদের ছেলের এতো করুণ পরিনতি দেখে আশরাফ এবং রুজা ইশানের কাছে ছুটে যেতে নিলে, হাত দিয়ে বাঁধা দেয় অয়ন। অয়নের বাঁধা পেয়ে থেমে যায় তারা। অয়ন পকেটে হাত ঢুকিয়ে, ইশানের কাছে ঝুঁকে, ইশানের গাল চেপে ধরে বলে,
‘ আমার সাথে গেম খেলবি তুই? তুই আমারই লোকদের দিয়ে আমার মেডিসিন সরিয়ে ফেলবি, আমারই জানের দিকে হাত বাড়াবি, আর আমি বসে থাকবো? তুই এবং তোর সো কলড বাবা -মা আমাকে কতটা বোকা মনে করিস? ‘

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইশান কোন কথার উত্তর দিতে পারে না। শুধু নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে ঘন ঘন।
অয়নের কথায় রিমি বিচলিত হয়ে ইশানকে উদ্দেশ্য প্রশ্ন করে,
” আপনি কি বলতে চাইছেন ডক্টর এয়ারসি? ” উনিই বা কে? ”
অয়ন ইশানের পেটে লাথি মেরে, দ্বিগুন ক্ষোভ নিয়ে উত্তর দেয়, ” দুঃখজনক হচ্ছে এই রাস্কেলটা সম্পর্কে আমার ভাই হয়। যে ছোটবেলা থেকে আমার কন্টিনিউয়াসলি ক্ষতি করে যাচ্ছে। আজ যে আমি ড্রাগ এডেক্টেড শুধুমাত্র এদের জন্যে। ‘
অয়ন কথাটি বলে ইশানসহ, রুজা এবং আশরাফ চৌধুরীর দিকে ইশারা করে। রিমি এবং ফারহান বিস্ফোরিত নয়নে তাদের দিকে তাকায়। রুজা এবং আশরাফ একে-অপরের দিকে তাকায়। তরতর ঘামছেন তারা। এই বুঝি তাদের এতোদিনের পর তাদের সমস্ত চক্রান্ত কি ফাঁস হয়ে যাবে? অয়নের কথার মাঝেই, মাটিতে শুয়ে থেকে কোনরকম অপষ্ট গলায় ইশান বলে,

‘ যা করেছি বেশ করেছি আমি। হ্যা আমি তোর রিমিকে মারতে চেয়েছিলাম, আমিই তোর মেডিসিন সরিয়ে ফেলেছি,বিকজ আমি খুব ভালো করে জানি ড্রগস না নিলে, অয়ন ধীরে ধীরে একদম শেষ হয়ে যাবে। একজন মাদকাসক্ত মানুষ কখনোই ড্রাগস ছাড়া বাঁচতে পারে না এন্ড এইসব নিয়ে আমার কোন ক্ষোভ নেই। আমি যা করেছি বেশ করেছি। ‘
ফারহান এইবার নিজের ক্রোধ সামলাতে পারলো না। রাগে ক্ষোভে গিয়ে, ইশানের শার্টের কলার চেপে ধরে। ক্রোধান্তিত হয়ে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,
‘ কেন করছিস এমন? কেন করলি? ‘
ইশান তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। অতঃপর মুখস্রী শক্ত করে, কোনরকম হেলিয়ে শুয়ে উত্তর দেয়,
‘ আমি যা করেছি বেশ করেছি। আজ আমি কেন আমার পরিবারের থেকে দূরে থেকেছি? কেন আমি আজ ত্যাজ্য পুত্র হয়ে রয়েছি। শুধুমাত্র এই অয়ন রওযাক চৌধুরীর জন্যে। ‘

অয়ন ইশানের কথার বিপরীতে কিছু বলতে নিলে, সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে রুহানা চৌধুরী বলতে থাকে,
‘ তার জন্যে কি তুমি দায়ী নও ইশান? তোমার কি আদোও মনে আছে অতীতে করা তোমার কান্ডকলাপ? ‘
রুহানা চৌধুরীর মুখে অতীতের বিষাদময় স্মৃতি রক্তচড়া দিয়ে উঠে অয়নের। অয়ন মাথা চেপে বলতে থাকে সেই ভয়ংকর অতীতের কথা।

অয়নের বয়স তখন ১১ পেরিয়ে ১২ ছুইঁছুই করছে, তখন সদ্য সে তার বাবা – মাকে একসাথে হারায়। হাসজ্বল বালকটি তখন বাবা- মাকে হারিয়ে গভীর পাথরে পরিনত হয়। কাউকে সহ্য করতে পারতো না অয়ন। চোখের সামনে যা দেখতো তাই ছুড়ে ফেলে দিতো। খাবার দিলে খেতো না। সারাদিন ঘরবন্দী হয়ে বসে থাকতো। অয়নের অবস্হা বেগতিক দেখে, আশরাফ চৌধুরী এবং রুজা চৌধুরী অয়নের জন্যে মানুষিক রুগীর ডক্টর দেখালেন, তার কথামতো রুহানা চৌধুরী অয়নকে ওষুধ দিতো। অয়ন বাড়িতে একমাত্র রুহানা চৌধুরীর কথাই শুনতো, তাই বিনাবাক্যে ওষুধ খেয়ে নিতো, কিন্তু রুহানা চৌধুরী জানতো না সে নিজ হাতে ছোট্ট অয়নকে ড্রাগস দিচ্ছে।
ছোট বেলা থেকেই রুহানা চৌধুরীর বড্ড আদরের নাতী ছিলো অয়ন। তার কিছুটা প্রভাব পড়তো ইশানের উপর। ইশান এবং অয়ন বলতে গেলে প্রায় সমবয়সী। অয়নের প্রতি সবার এতো যত্ন, খেয়াল কেন যেন সহ্য হচ্ছিলো না ইশানের। তাইতো একদিন যখন ছাদে একা দাঁড়িয়ে ছিলো অয়ন,সেসময় অয়নকে ছাঁদ থেকে ধাক্কা মারার জন্যে ইশান হাত বাড়ায়, তখনি সেখানে হাজির হয়ে যায় রুহানা চৌধুরী। ব্যাস! তিনি সবকিছু বুঝে গেলেন। ইশান অয়নকে হিংসা করে,যাকে বলে ভয়ংকর হিংসা। তাই অয়নের জীবন রক্ষার্থে ইশানকে চৌধুরী বাড়ির থেকে দূরে পাঠিয়ে দেন তিনি। রুজা এবং আশরাফের আকুতি মিনিতিও মন গলাতে পারে নি রুহানা চৌধুরী, তিনি সেদিন নিজ সিধান্তে অটল ছিলেন।

সমস্ত অতীত শুনে মুখ চেপে কেঁদে উঠে রিমি। অয়নের আজ এমন করুণ অবস্হার জন্যে নিজের আপন চাচা- চাচীই দায়ী? ছোট্ট একজন বালকের হাতে ড্রাগস দিতে তাদের লজ্জা লাগলো না? অয়ন হাত মুঠো করে, নিজের রাগকে কোনরকম নিয়ন্ত্রন করে বলে,
‘ যত দিন যাচ্ছিলো আমি বুঝদার হয়ে উঠছিলাম, আমি বুঝতে পারছিলাম আমি কোন নরমাল মেডিসিন নিচ্ছি না। একটা সময় আমি বুঝে গেলাম আমি আসলে ড্রাগস এডেক্টড, কিন্তু
আমি জানি কোনভাবে এখন আমি আমার নেশাটাকে কাটাতে পারবো না। বিকজ ড্রাগস না নিলে, আমি নিজের মাঝে থাকিই না। আমি এইটাও জানতাম আমাকে ওষুধ টা গ্রেন্ডমা দিলেও, গ্রেন্ডমা এইসব বিষয়ে কিছুই জানেনা, গ্রেন্ডমার মাধ্যমে, অন্য কেউ আমার ক্ষতি করতে চাইছে।’
রিমি অয়নের কথার বিপরীতে তেমন কিছু বলে না। রুজা এবং আশরাফ চৌধুরীর কাছে গিয়ে ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

‘ কেন করলেন এমন জঘন্যতম অপরাধ? কিসের জন্যে বলুন আপনারা? ‘
‘ এই মেয়ে এই মেয়ে! তুমি কি এখন আমাদের জ্ঞান দিবে? আমরা কি করবো না করবো তা তোমাকে বলে দিতে হবে? ‘
রুজা চৌধুরীর কথা শেষ হতে না হতেই, পিছন থেকে কাচের বোতল দিয়ে ইশানের হাতের বরাবর ঢুকিয়ে দেয়। ব্যাথায় কাতড়ে উঠে ইশান। রুজা চৌধুরী চিৎকার করে বলে,
‘ অয়ন ভালো হবেনা বলে না বলে দিচ্ছি, আমার ছেলের গাঁয়ে আরেকটা ক্ষতি করলে, আমি কিন্তু। ‘
‘ কি করবেন আপনি?কি এমন ক্ষমতা আপনার? আপনি তো শুধু পিছন দিয়ে, আঘাত করতে পারেন, পারলে সামনে দিয়ে আঘাত করে দেখুন মিসেস রুজা চৌধুরী। ‘
কথাটি বলতে না বলতেই, অয়ন ইশানের আরেক হাত ধরে বাঁকা হেসে বলে,।

‘ এই হাত দিয়ে সেদিন তুই আমার রিমিপরীর দিকে হাত বাড়িয়েছিলি না? ‘,
ইশান কেঁপে উঠে। অয়নবরাবর কাঁচটি ঢুকিয়ে দেয়। রিমি নেত্রপল্লব বন্ধ করে নেয়, সে বুঝতে পারছে অয়ন নিজের মাঝে নেই, অয়নকে আটকাতে হবে, কিন্ন্রু কি করে আটকাবে রিমি? অয়ন ইশানের হাত থেকে কাঁচটি একটানে খুলে, রুজা চৌধুরীর কাছে গিয়ে, রুজার গালে ইশানের রক্ত লাগিয়ে বলে,
‘ দেখুন রুজা চৌধুরী, আপনার সামনেই আপনার ছেলের রক্ত আপনার গাঁয়ে লাগিয়ে দিলাম, কিন্তু আপ্নারা কেউ কিচ্ছু করতে পারলেন না। ‘
রুজা চৌধুরী তড়িৎ গতিতে অয়নের থেকে সরে আসে। অতঃপর কাঁদতে কাঁদতে আশরাফের কলার চেপে বলে,
‘ তুমি কী এখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে? তোমার সামনেই আমাদের ছেলেটাকে একপ্রকার মেরে ফেলছে, আর তুমি দাঁড়িয়ে আছো? ‘

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৩

আশরাফ ইশানের দিকে করুনভাবে তাকিয়ে হাত মুঠো করে শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকে। আজকে চাইলেও তিনি কিচ্ছু করতে পারবেন না, কেনমা তিমি যে আজ বড্ড অসহায়। অয়ন পুনরায় সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে, সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলে,
‘ চোখের সামনে ছেলের মৃত্যু দেখা ছাড়া আর কোন পথ নেই আপনাদের হাতে, কিচ্ছু করতে পারবেন না আপ্নারা। ‘
‘ নিজেদের স্বার্থের জন্যে উনারা যে কতটা নিকৃষ্ট হতে পারে, তা তোমার ধারণাতেও নেই অয়ন। ‘
পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে রিমি এবং ফারহান উভয়েই পিছনে ঘুড়ে দেখতে পায় সদর দরজায় স্বয়ং সুমাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৫

1 COMMENT

Comments are closed.