তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৫

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৫
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

ফারহানের মৃত্যু স্ত্রীকে জীবিত দেখে অনেকেই হতভম্ব হয়ে যায়। যাকে এতোদিন মৃত্যু জেনে আসা হয়েছে সে আসলে জীবিত একজন মানুষ। মেঘ এবং ইশাসহ সকলের মুখেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তারা সকলেই আশ্চর্যের চরম শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে।
সুমাইয়াকে দেখে ফারহান দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে ধরে
সুমাইয়াকে। সুমাইয়ার সারা মুখে চুমু দিয়ে বলে,

‘ কোথায় গিয়েছিলে সুমু? কে বা কারা তোমার অপহরণ করেছিলো। সব বলো আমায়। ‘
উত্তেজিত ফারহানের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে শান্ত করে সুমাইয়ার। অতঃপর শান্ত গলায় বলে,
‘ শান্ত হও ফারহান। আমি একদম ঠিক আছি। সবকিছু বলবো একটু শান্ত হও। ‘
ড্রইং রুমের সর্বস্হান জুড়ে রয়েছে এসির আনাগনা। তবুও তরতর করে ঘামছে রুজা এবং আশরাফ।
রিমি সুমাইয়ার কাছে গিয়ে সুমাইয়াকে আলতো ভাবে ছুঁইয়ে দেয়। নিজের বোনকে সুস্হ অবস্হায় দেখে, রিমি নিজেকে সামলাতে পারলো না জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। সুমাইয়াও নিজের জান্নাতকে জড়িয়ে ধরে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। রিমি সুমাইয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেই, কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে,
‘ তুমি ঠিক আছো তো আপু? তুমি আবারোও ঠিক হয়ে গিয়েছো, আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। ‘
সুমাইয়া রিমির আখিজোড়ায় লেপ্টে থাকা অশ্রু সযত্নে মুছে দিয়ে, ঘাড় ঘুড়িয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার সুরে বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ তোদের সকলের দোয়া এবং আমার স্বামীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ আমি আল্লাহর রহমতে সুস্হ হয়ে তোদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু এইবার আসি আসল কথায়।’
সুমাইয়া মুচকি হেসে রুজা এবং আশরাফের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘, কি হলো আমাকে বুঝি এইসময় আপনারা আশা করেন নি তাই না? ‘
রুজা চৌধুরী এবং আশরাফ নিরত্তর। কথা বলবেই বা কি করে তাদের সমস্ত রহস্য তো ফাঁস হয়ে গিয়েছে। এখন তারা চাইলেও নিজেদের বাঁচাতে পারবে না। দুজনকে নিরব দেখে ক্ষীন্ন হাসেন রুহানা চৌধুরী। অতি আফসোসের সাথে বলে,

‘ কথা বলবে কী করে? ওদের কি কিছু বলার ভাষা রয়েছে? যাকে মারার জন্যে ওদের এতো আয়োজন সে তো স্বয়ং চলে এসেছে। এইবার কি করে বাঁচবে ওরা? ‘
রুহানা চৌধুরীর কথায় অয়ন বাদে সকলের ভ্রু কুচকে হতভম্ব হয়ে তাকায় রুহানার দিকে। সুমাইয়া সকলের দিকে ঘুড়ে বলতে থাকে,
‘ হ্যা রুজা এবং আশরাফ চৌধুরী মিলে আমাকে মারতে চেয়েছিলেন। আসলে আমি তাদের সমস্ত কৃর্তিকলাপ জেনে গিয়েছিলাম, তাই আমাকে পথের কাটা ভেবে, তারা সরিয়ে দিতে চেয়েছিলো। ‘
‘ কিসের কৃর্তিকলাপের কথা বলছো সুমু? ‘
ফারহানের প্রশ্নে সুমাইয়া উত্তর দেয়,
‘ বলছি, সব বলছি। তোমার মনে আছে একদিন তুমি অফিসের কাজে বাইরে গিয়েছিলে? ‘
‘ হ্যা তো? ‘

‘ সেদিন রাতে হুট করে আমার ঘুম টা ভেঙ্গে যায়, আমি বাইরে কয়েকজনের কথা শুনতে পারি।’
সুমাইয়া সম্পূর্ন অতীত বলতে শুরু করলো, তার ভাষ্যমতে, সেদিন রুজা চৌধুরী এবং আশরাফ নিজেদের রুমে একজন উকিলের সাথে কথা বলছিলো সম্পত্তির ব্যাপারে। আশরাফ উকিলের দিকে তাকিয়ে বলেন,
‘ ফারহানকে নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই, সব সমস্যা হচ্ছে অয়নকে নিয়ে। মায়ের আদরের নাতী অয়ন। মায়ের অবর্তমানে সবকিছু তো অয়নই পাবে।’
রুজা চৌধুরী আশরাফের বিপরীতে বললেন,
‘ তুমি এতো চিন্তা করছো কেন বাপু? অয়নকে ছোট বেলা থেকে আমি ড্রাগস দিচ্ছি, ও একেবারে পাগল হয়ে যাবে। তখন চৌধুরী বাড়ির সবকিছুই তো আমাদের। ‘
উকিল সাহেব কাগজ দেখতে দেখতে বললেন,

‘ আপনারা কোন চিন্তা করবেন না, ডক্টর এয়ারসি পথ থেকে সরে গেলেই, সবকিছুই আপনাদের। ‘
আশরাফ চৌধুরী বিকট শব্দে কুৎসিত হাসি দেয়। বিরাট চৌধুরীর ফ্যাশনের সমস্ত কিছু নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিবে আশরাফ। চৌধুরী ফ্যাশন সর্বপ্রথম রুহানা চৌধুরী তৈরি করলেও,অয়নের বাবা তুষার নিজ হাতে গড়েছিলেন চৌধুরী ফ্যাশনকে। ভাইয়ের ব্যাবসার প্রতি বরাবরই লোভ ছিলো আশরাফের। তুষার যখন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়, তখন স্বামীর শোকে অয়নের মা লামিয়া অসুস্হ হয়ে পড়ে, তখন লামিয়াকেও ইচ্ছে করে ভুল ওষুধ খায়িয়ে মেরে ফেলে আশরাফ। কেননা তুষারের অবর্তমানে লামিসার কাছে ক্ষমতা চলে যাবে। যদিও লামিসার মৃত্যু সকলে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলো।

সুমাইয়া সেদিন আশরাফ চৌধুরীর সমস্ত কুকৃর্তীর কথা জেনে গিয়েছিলো। সুমাইয়া যখন মুখ চেপে নিজের ঘরের দিকে চলে যাচ্ছিলো, তখন বাইরে এসে রুজা চৌধুরী সুমাইয়াকে দেখে নেয়, তার বুঝতে বাকি থাকে না, সুমাইয়া সব জেনে গিয়েছে। তাই তারা সুমাইয়াকেও মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।
সুমাইয়া সে রাতের পর থেকে ফারহানের সাথে তেমন কথা বলতো না। মন মরা হয়ে থাকতো, ফারহান লক্ষ্য করলেও তেমন গুরুত্ব দিতো না। সুমাইয়া একদিন ঠিক করলো ফারহানকে না জানিয়েই, থানায় গিয়ে সবকিছু খুলে বলবে। তাই সকালে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেয়েছিলো, কিন্তু আশরাফ চৌধুরী সেদিন সুমাইয়ার গাড়ির ব্রেক ফেল করায়,যেন সুমাইয়ার এক্সিডেন্টে মারা যায় এবং সুমাইয়ার ফোনে একটি মেসেজ রেখে দেয় ফারহান সম্পর্কে, যদি কেউ কখনো সুমাইয়ার মৃত্যু নিয়ে ঘাটাঘাটি করে, তাহলে যেন ফারহানকে সংদেহ করে, সে অনুযায়ী সুমাইয়ার মেসেজ দেখে রিমিও ফারহানকে সুমাইয়ার খুনি ভাবেছিলো, কিন্তু রুজা এবং আশরাফ যখন লোক লাগিয়ে জানতে পারলো সুমাইয়া বেঁচে আছে এবং সম্পূর্ন সুস্হ হয়ে উঠছে তখন তারা সুমাইয়াকে মেরে ফেলার জন্যে পুনরায় চেস্টা করে।

‘ তার মানে সেদিন সানা নয়? রুজা চৌধুরী তোমাকে মারতে গিয়েছিলো? ‘
ফারহানের প্রশ্নে সুমাইয়া মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে উত্তর দেয়,
‘ হ্যা, শুধু তাই নয়। আমাকে অপহরণও করেছিলো,
উনারা, কিন্তু গ্রেন্ডমা আমাকে সঠিক সময়ে বাঁচিয়ে নেয়। আমাকে যখন অপহরণ করা হয়, তখন খাবারের সময় আমার হাত- মুখের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়েছিলো, তখন আমি কৌশলে
কোনভাবে লুকিয়ে কিডন্যাপদের কাছ থেকে ফোন নিয়ে, গ্রেন্ডমাকে ফোন দিয়ে অর্ধেক কথা জানায়। কেননা আমি জানতাম তখন ফারহানের অবস্হা ছিলো করুন। ‘

সুমাইয়ার কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই, রুহানা চৌধুরী সাম্নের দিকে এগিয়ে বললেন,
‘ তাই আমি অফিসার সায়েদকে দিয়ে আশরাফের লোকেদের অগোচরে সুমাইয়াকে উদ্ধার করেছি। ‘
ফারহান রুহানা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে, কৃতজ্ঞতার সুরে বলে,
‘ তার মানে তুমি আমাকে সেদিন মেসেজ দিয়েছিলে গ্রেন্ডমা? ‘
রুহানা চৌধুরী মাথা নাড়ায়। ফারহান গিয়ে রুহানা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে। কৃতজ্ঞতার তার নেত্রপল্লব জলে পরিপূর্ন হয়ে উঠেছে। রুহানাও তার নাতীকে শক্ত করে জড়িয়ে, নিজের থেকে ছাড়িয়ে, ফারহানের কাঁধে হাত রেখে অপরাধীর ন্যায় বললেন,
‘ আমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই বাচ্চা। আমি আমার পাপের পাশ্চিত্ব করেছি শুধু। নিজের জেদের জন্যে আমি তো কম অন্যায় করে নি সুমাইয়ার সাথে। ‘
কথাটি বলে শেষ করে রুহানা চৌধুরী হাক ছেড়ে ডেকে উঠেন,
‘ অফিসার ভিতরে আসেন। ‘

সঙ্গে সঙ্গে সাদেক প্রবেশ করে, রুহানা চৌধুরীর কথায় সাদেক গিয়ে সুমাইয়াকে উদ্ধার করে, এমনকি আশরাফের লোকেদের গ্রেফতার করে ফেলে। রিমি সবকিছু শুনে ঘৃণাতে মাথা নিচু করে ফেলে। চোখ ছলছল হয়ে উঠে পরক্ষনেই তার। আশরাফ এবং রুজার লোভের জন্যে ছোট্টবেলা থেকে কষ্ট পেয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত অয়ন। আজ অয়নও সকলের মতো স্বাভাবিক হতো কিন্তু আফসোস!

রিমি একপলক নিষ্প্রান দৃষ্টিতে অয়নের দিকে একপলক তাকায়। অয়নের মধ্যে কোনপ্রকার রাগের ছিটাফোটা নেই, অয়ন জানে তার মায়ের মৃত্যুর পিছনে তার নিজের চাচা স্বয়ং দায়ী তবুও তার মাঝে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সে নিশ্চিন্তে ফোন গুতাচ্ছে, যেন এখানে তেমন কিছুই হয় নি। অয়নের শান্ত রুপটাই রিমিকে আরো বেশি ভাবাচ্ছে। অয়নের মতো মানুষের তো শান্ত থাকা কথা নয়। এ যেন ঝড়ের পূর্বভাস। আশরাফ এবং রুজা চৌধুরী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে, এখন তারা চাইলেও কিচ্ছুটি করতে পারবে না। নিজের বাবা- মা এবং ভাইয়ের ঘৃণিত কাজের বর্ননা শুনে, রাগে- দুঃখে লজ্জায় কাঁদতে কাঁদতে উপরে চলে যায় মেঘ। সাদেক কনস্টেবলকে আদেশ দেয় গ্রেফতার করার জন্যে, কিন্তু তার পূর্বেই অয়ন তাদের থামিয়ে দেয়। অধরের কোণে ভয়ংকর হাসি ফুটিয়ে বলে,
‘ অন্যায় যখন আমার সাথে করা হয়েছে, সেই শাস্তি স্বয়ং আমি নিজ হাতেই দিবো। ‘

অয়নের কথার শেষ হতে না হতেই ড্রইং রুমের সমস্ত লাইট অফ হয়ে যায়। সকলে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। কিছুক্ষন এর মাঝেই লাইট চলে আসে, কিন্তু ইশান, রুজা এবং আশরাফ কেউ নেই। সকলে যেন মুহুর্তেই উধাও। অয়নকেও কোথাও দেখা যাচ্ছে না। সকলের বুঝার বাকি থাকে না অয়ন আসলে চাইছে টা কী?
রিমি দ্রুত ফারহানের কাছে গিয়ে কম্পিত গলায় বলে,
‘ ভাইয়া আমাদের এখুনি উনাকে আটকাতে হবে, উনাকে আর কোনপ্রকার খুন করতে দেওয়া যাবে না। ‘

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৪

[ অনেক ভুল থাকবে সবাই ক্ষমার
দৃষ্টিতে দেখবেন বুঝতেই পারছেন আমি লুকিয়ে গল্প লিখছি তার মধ্যে যা প্যাঁচ আমার মাথা শেষ?]

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৬

1 COMMENT

Comments are closed.