তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৬

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৬
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

নিজের স্বামীকে দেখতে না পেয়ে উৎকন্ঠা হয়ে চৌধুরী বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে রিমি। মনে তার ভয়ংকর ভয়, এই বুঝি অয়ন কোন ভয়ংকর কান্ড করে বসবে। রিমির পিছন পিছন সাদেক এবং ফারহান ও বেড়িয়ে আসে। সাদেক তার গাড়ির স্টেরিংএ লাথি মেরে রাগান্বিত সুরে বলে,
‘ আমার নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে, আমি থাকতে ডক্টর এয়ারসি কীভাবে পারলো তিনজন মানুষকে একসাথে গাঁয়েব করতে। আম জাস্ট শকড। ‘
রিমি কম্পিত গলায় সায়েদের দিকে তাকিয়ে, অস্হির ভাবে বলে,

‘ এখন আমাদের এতো কিছু ভাবার সময় নেই অফিসার। আমাদের যে করেই হোক উনার কাছে পৌঁছাতে হবে, নাহলে উনি ভয়ংকর এক ধবংশলীলায় মেতে উঠবেন। ‘
ফারহান দ্রুত মাথা নাড়িয়ে সায় জানায় রিমির কথায়, তাদের এখুনি অয়নকে খুঁজে বের করতে হবে। সায়েদ তাদের ফোর্সদের ফোন করিয়ে জানিয়ে দেয়,যেন তারা অয়নের নাম্বার ট্রেস করে, অয়নের লোকেশনটা জানার প্রচেষ্টা করে, কিন্তু অয়নের নাম্বার বন্ধ, যার কারনে অয়নের লোকেশনটা ট্রেস করা সম্ভব হচ্ছে না। সায়েদ ফারহানদের জানায়, সে অয়নের জায়গার খুঁজ পেলে, তাদের জানিয়ে দিবে।
রিমি সায়েদের আশায় থাকে না, সে সায়েদকে জানায়,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ ততক্ষন আমার পক্ষে অপেক্ষা করা সম্ভব নয়, আপনারা আপ্নাদের মতো উনাকে খুঁজতে থাকুন, আমি আমার মতো করে উনাকে খুঁজে বের করবো। নাহলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। ‘
নিজেই গাড়ির ভিতরে ঢুকে, কোনরকম ড্রাইভ করে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। ফারহান রিমিকে চাইলেও আকটাতে পারে না। নিজেও আরেকটি গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। অপরদিকে সায়েদ অয়নের লোকেসন ট্রেস করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
অন্ধকার একটি ঘরের মাঝে ইশান, রুজা এবং আশরাফকে চেয়ারের সাথে শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে। ইশানের ঠোট ফেঁটে রক্ত বেয়ে পড়ছে অনাবরত। বসে থাকার শক্তিটুকুও নেই ইশানের মাঝে। কোনরকম চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে। আরো কিছুক্ষন থাকলে বোধহয় বলিষ্ট দেহী বিশিষ্ট যুবক অজ্ঞানই হয়ে পড়বে। ছেলের করুণ অবস্হা

দেখে শব্দ করে কেঁদে উঠলো রুজা চৌধুরী। আশরাফ সাহেব মাথা নিচু করে আছেন। নিজেকে ব্যর্থ বাবার উপাধি দিতে ইচ্ছে করছে, সে এতোই অক্ষম যে ছেলের করুন অবস্হা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাডা আর কোন উপায় নেই তার হাতে। কারো পায়ের বিকট শব্দে কেঁপে উঠে তিনজনে একসাথে। তাদের বুঝতে বাকি থাকে অয়ন এসেছে। অয়ন পকেটে হাত ঢুকিয়ে রুজা, আশরাফ এবং ইশানের সামনে দাঁড়ায়। চাহনী তার স্হীর। ফর্সা মুখস্রী অতী শান্ত। বাঘ যেমন তার শিকারকে শিকার করার সময়,
শান্ত থাকে ঠিক তেমনি অয়ন শান্ত হয়ে রয়েছে। অয়নের গাঁয়ে ডক্টরের এপ্রোন। অয়ন হাতের ইশারা দেয়। হাতের ইশারা পেয়ে কিছু দেহরক্ষীগণ একটি সুবিশাল কাঠের উচু চেয়ার নিয়ে আসে। অয়ন বসে ঝিমিয়ে থাকা ইশানের বুক বরাবর পা দিয়ে লাথি মেরে, ইশান তৎক্ষনাৎ অয়নের পায়ের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। অয়ন ইশানের মুখ চেপে ধরে ঠেস লাগিয়ে চেয়ারে বসায়। অতঃপর ইশানের সামনে বরাবর চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে,সিগারেট ঠোটে চেপে বাতাস ছাড়তে ছাড়তে বলে,

‘ অয়ন চৌধুরীর সাথে শত্রুতা করতে চেয়েছিলে, অথচ তার সাথে কথা বলার সময় নেতিয়ে যাচ্ছিস কেন? তোদের মতো খেলোয়ারদের সাথে খেলে লাভ নেই, কেন জানিস? ‘
ইশান অয়নের মুখের দিকে ভিতু নয়নে তাকাতেই,অয়ন সিগারেট টা ফেলে শান্ত গলায় বলে,
‘ গেম খেলতে হয় লেভেলে লেভেলে, খেলায় সহজেই খেলোয়ার যদি অধিক শক্তিশালী হয় তবে গেমে হেরে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে বেশি, কিন্তু
খেলোয়ার যদি নিজের থেকে কম শক্তিশালী হয় তবে, গেম খেলার কোন ইন্টারেস্ট নেই। ‘
ইশান চোখ বন্ধ করে হাত মুঠো করে শ্রবণ করতে থাকে অয়নের প্রতিটি বাক্য, এছাড়া আর কোন উপায়ও যে নেই তার। অয়ন এইবার রুজা এবং আশরাফ চৌধুরীর দিকে ভয়ংকরভাবে দৃষ্টিপাত করে। অয়নের ভয়ংকর চাহনী দেখে থমকে যায় তারা। অয়ন উঠে দাঁড়িয়ে পাশে থাকা একটা ড্রয়ার থেকে ধারালো ছুড়ি খানা বের করে, অতঃপর তাতে পরম যত্নের সাথে হাত লাগাতে লাগাতে বলে,

‘ আগের বার পায়েলকে আস্ত খেতে কিছুটা কষ্ট হয়েছিলো আমার টাইগারের কিন্তু এইবার আমি তাকে সেই কষ্ট করতে দিবো না। সে যাতে আপনাদের তিনজনকে পরম শান্তিতে খেতে পারে, সেই ব্যবস্হা করবো আমি এখন। ‘
অয়নের হাতের ধারালো অস্ত্রটা দেখে ইশান, রুজা এবং আশরাফের বুঝতে বাকি থাকে না অয়নের পরিকল্পনা সম্পর্কে। বাইরে থেকে ক্ষুধার্ত বাঘের ভয়ংকর গর্জনে কেঁপে উঠে তারা তিনজনই। রুজা চৌধুরী কাঁপতে কাঁপতে বলে,
‘ এই ছেলে তো বদ্ধ উম্মাদ, এতো আমাদের কেটে টুকরো টুকরো করে বাঘের পেটে দিয়ে দিবে। কি করবো আমরা এখন?’
আশরাফ চৌধুরী দাঁতে দাঁতে চেপে রুজা চৌধুরীকে বললেন,

‘ অয়নের এই অবস্হার জন্যে তো আমরাই দায়ী। ‘
অয়ন ছুড়িটি নিয়েই প্রথমে আশরাফে হাতে ঢুকিয়ে দেয়। ব্যাথায় কাতরাতে থাকে আশরাফ।রক্ত গুলো মেঝেতে গড়িয়ে পড়তে থাকে। স্বামীর দুদর্দশা দেখে
নেত্রকোণা বন্ধ করে নিরবে জল ফেলতে থাকে, রুজা।
অয়ন শক্ত করে চাকুটা হাত বরাবর ঢুকাতে ঢুকাতে পৈচাশিক হাসি দিয়ে বলে,
‘ মনে আছে আশরাফ চৌধুরী? এই হাত দিয়ে আপনি আমার মাকে ভুল ওষুধ দিয়ে মেরে ফেলেছিলেন, কিছু মনে পড়ছে?’
আশরাফ উত্তর দিতে পারে না, তার পূর্বেই রুজা চৌধুরীর আঙ্গুল বরাবর চাকু লাগিয়ে অয়ন শক্ত করে চেপে ধরে রুজা চৌধুরীর হাত। রুজা চৌধুরী বড় বড় চোখ করে চেয়ে থাকে। ব্যাথা টাই এতোটাই তীব্র যে সে চিৎকার টুকু করার সাহস টুকু পাচ্ছে না।
অয়ন পুনরায় শয়তানী হাঁসি হেসে বলে,

‘, কি হলো রুজা চৌধুরী আপনার নিশ্চয় মনে পড়ছে তাইনা? এই জঘন্য হাত দিয়ে সেই ছোট্ট বালকটিকে নিজ হাতে ড্রাগস সেবন করিয়েছিলেন, কি মনে পড়ছে। ‘
রুজা চৌধুরী ঢলে পড়ে চেয়ারে। তাদের রক্তে ফ্লোর যেন ভিজে যাচ্ছে প্রতিমুহূর্তে।
অয়ন রক্তমাখা ছুড়িখানা নিয়ে, রক্তের দিকে তাকিয়ে হু হা করে হেসে উঠে। তাদের প্রতিটি রক্ত যেন তার বাবা- মায়ের মৃত্যুর কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে। আজ রুজা এবং আশরাফের মতো জঘন্য মানুষের লোভের শিকার হয়ে, অয়ন তার বাবা- মাকে হারিয়েছে, তার শৈশব হারিয়েছে। প্রতিটা মুহুর্তে দগ্ধ হয়েছে ড্রাগসের নেশায়। অয়ন হাসতে হাসতে হুট করে কেঁদে ফেলে। চাকুটা নিজের হাতে শক্ত করে চেপে, হুংকার ছুড়ে রক্তচোখে বলে,
‘ সামান্য পুলিশের কাছে তো আমি আর আপনাদের
তুলে দিতে পারি না, আপ্নাদের তিনজন আজ নিকৃষ্টতম মৃত্যু দিয়ে নিজের বাবা- মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিবো আমি আজ। ‘

অয়ন কথাটি বলে চাকুটা হাতে নিয়ে আশরাফ চৌধুরীর গলা বরাবর ধরতে নিলে, পিছন থেকে রিমির কন্ঠস্বর শুনে থমকে যায়। রিমি পিছন থেকে বলে উঠে,
‘ উনাদের মারবেন না, ডক্টর এয়ারসি। দয়া করে আর কোন খুন করবেন না আপনি। ‘
প্রতিশোধ নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ এক কাজে বিঘ্ন ঘটানোর মতো অপরাধ করায়, চাকুটা হাতে নিয়ে রিমির দিকে একপ্রকার তেড়ে, দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘ কেন এসেছো রিমিপরী? কেন এলে তুমি? এখুনি বেড়িয়ে যাও তুমি। আমার কাজে বিঘ্ন ঘটানোর দুর্সাহস দেখাবে না। এখুনি বেড়িয়ে যাও, নাহলে ফল ভালো হবে না। ‘
রিমি অয়নের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে, অয়নের হাত থেকে ছুড়িটা একপ্রকার কেড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলে,

‘ আজ যাই হয়ে যাক ডক্টর এয়ারসি, আমি আপনাকে আর কোন খুন করতে দিবো না।’
অয়ন তা দেখে ক্রোধান্তিত চাহনীতে রিমির দিকে তাকায়। রাগে থরথর করে শরীর কাঁপছে তার। অয়ন রাগে হাত উচু করে……..

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৫

অনেকেই আমার এক্সামের ব্যাপারে কনফিউজড। তো ব্যাপার ক্লিয়ার করে দেই?অন্যান্য স্কুলের তুলনায় আমাদের স্কুলে একটু বেশিই প্রেশার দিচ্ছে,সপ্তাহ যেতে না যেতেই এক্সাম, কয়েকদিন আগে মাসিক এক্সাম নিয়েছিলো,সেই এক্সামের আবার রিটেক নিয়েছিলো তাই একসাথে আমাকে৪-৬টা এক্সাম দিতে হয়, এখন আবার সিমেস্টার এক্সাম শুরু করে দিয়েছে,রোযার মধ্যেও ছাড় পাচ্ছি না?মানে বুঝুন একে তো রোজা তার মধ্যে সিমেস্টার এক্সাম। কতটা প্যারা তার মধ্যে যখন কিছু মানুষ বলে আমি নাকি এমনি এমনি মিথ্যে বাহানা দিচ্ছি, তখন এক্সামের মাঝে কষ্ট করে দেওয়া গল্পের কষ্টকে বৃথা মনে হয়?‍♀️

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৭

2 COMMENTS

Comments are closed.