পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৪৭

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৪৭
লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া

নিজের কোমড়ের দুই পাশে বলিষ্ঠ হাত জোড়ার স্পর্শ পেয়ে আমি কেঁপে ওঠলাম। নিঃশব্দের উনি আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমার কাধে থুতনি রাখলেন। উনার নিঃশ্বাস আমার কান, গাড় ছুঁয়ে যাচ্ছে। আমার নিশ্বাস দ্রুততর হয়ে আসছে। শরীর অসাড় হয়ে আসছে। আমি দুই হাতে বেলকনির রেলিং খামছে ধরি।
খালামনি, মামা তোমরা কই? এই দেখো আমি চলে এসেছি।
নিধির কন্ঠ শুনে উনি আমার থেকে ছিটকে দূরে সরে গেলেন। নিধি কোমড়ে দুই হাত দিয়ে বেলকনির দরজার সামনে দাঁড়ায়। আমাদের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলে,
তোমরা দুজন এখানে কী করছো বল তো? আমি সেই কখন থেকে তোমাদের ডেকে চলেছি। তোমাদের ডাকতে ডাকতে আমার গলা ব্যথা হয়ে গেলো।

রুদ্র কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো পিছনে ঠেলে দিয়ে এসে নিধিকে কোলে তুলে নিল। নিধির এক গাল টেনে বলে,
আমার মামুনিটা অনেক বড় হয়ে গেছে । তা মামুনি তুমি কেমন আছো?
নিধি রুদ্রর চুল টেনে ধরে বলে, আমি অনেক ভালো আছি। আমি খালামনির কোলে যাব।
রুদ্র একটু অবাক হয়ে বলে, খালামনির কোলে যাবে কীভাবে? তোমার খালামনি কই?
নিধি আমার দিকে ইশারা করে বলে, ঐ তো আমার খালামনি।
ও তো তোমার খালামনি না। ও তোমার মামিমনি।
নিধি চোখ ছোট ছোট করে বলে, তুমি আমাকে উল্টা পাল্টা শিখাচ্ছো। আম্মু বলেছে রিয়া খালামনি আমার খালামনি।
আমি তোমার কী হই?
মামা।
মামার বউ তোমার কী হবে?
মামি।
রিয়া তো আমার বউ। তাহলে রিয়াকে তুমি কী বলে ডাকবে?
খালামনি।
একটু আগে না বললে মামার বউকে মামি ডাকতে হয়। তাহলে রিয়া তোমার খালামনি হয় কী করে হয়? রিয়াও তো তোমার মামি।
রিয়া খালামনি আমার খালামনি, খালামনি, খালামনি।
রুদ্র বিভিন্ন কলা কৌশলে নিধিকে বোঝানো চেষ্টা করছে আমি তার খালামনি না তার মামি। নিধি বুঝতে নারাজ। তার এক কথা আমি তার খালামনি। নিধি আর রুদ্রর কান্ড দেখে আমি ঠোঁট টিপে হাসছি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নিধি আসাতে যেনো বাসাটা পরিপূর্ণ লাগছে। আর যেখানে নিয়াম ভাইয়ার মতো একজন মানুষ সেখানে হই হুল্লোড় হবে না। এটা হতেই পারে না। সবাইকে হাসিয়ে মারার জন্য উনি একাই যথেষ্ট। উনি ভীষণ ভোজন রসিক। তাই তো মামুনি বাহারি রকমের রান্না করেছেন।অবশ্য সবগুলো আইটেমই আমার চেক করা হয়ে গেছে। প্রত্যেকটা আইটেমই জাস্ট অসাধারণ হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাই লাঞ্চ করতে বসে গেছে।
লাঞ্চ করার জন্য আমিই সবার শেষে বসলাম। আম্মু ফোন দিয়েছিল তাই আমার একটু দেরি হয়ে গেছে। আমি আসতেই সবাই খাওয়া শুরু করে দিল। হুট করেই খাওয়ার মাঝেই পায়ে সুড়সুড়ি অনুভব করলাম। আমি টেবিলের নিচে তাকালাম রুদ্র নিজের পা দিয়ে আমার পায়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছেন। উনি বিপরীত দিকে আমার সোজাসুজি বসেছেন। আমি উনার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালাম। কিন্তু কোনো কাজ হলো না। উনার কোনো হেলদুল নেই। উনি এক মনে খেয়ে যাচ্ছেন।

আমি পা টা সরিয়ে নিতে চাইলে রুদ্র নিজের পা দিয়ে আমার পা চেপে ধরেন। আমি একটু খাচ্ছি বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে। মান-সম্মান সব প্লাস্টিক হয়ে যাবে। লজ্জায় আর কারো সামনে আসতে পারবো না। আমি তাড়াহুড়ো করে খাওয়া শুরু করলাম। খাওয়া শেষ করে এখান থেকে যেতে পারলেই বাঁচি। উনি পা ছেড়ে দিয়ে আমার পায়ের ওপর নিজের পা দিয়ে স্লাইড করতে শুরু করলেন। প্লাজু পড়ে থাকাই প্লাজু বেশ খানিকটা ওপরে ওঠে গেলো। আমি চমকে গিয়ে লাফিয়ে ওঠলাম। উনি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। এমন কিছু হবে যে উনি হয়তো ভাবতে পারেননি।
খাওয়ার মাঝে এভাবে লাফিয়ে ওঠায় গলায় খাবার আটকে গেলো। আমি কাশতে কাশতে শুরু করলাম। মামুনি দ্রুত এসে আমার দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল। নিয়াম ভাইয়া হালকা কাশি দিয়ে বলেন,
রিয়া তোমার কথা হয়তো কারো মনে পড়ছে। তুমি হয়তো কারো বুকে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে খেতে বসেছিলে।
নিয়াম ভাইয়া মিটিমিটি হাসছে। কথাটা শোনার সাথে সাথেই মুখ থেকে পানি ছিটকে বেরিয়ে এলো। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না নিয়াম ভাইয়া পুরো বিষয়টা অবলোকন করেছেন। আমার আর এখানে এক দন্ড দাঁড়ানোর সাহস হলো না। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। নিয়াম ভাইয়ার সামনে ছিঃ ছিঃ। সবাই আমাকে পিছন থেকে অনেক ডাকলো কিন্তু আমি কারো কথা পাত্তা না দিয়ে রুমে চলে এলাম।

উনি রুমে আসতেই আমি উনার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম।
আপনার কী হয়েছে বলুন তো? আপনি এমন অদ্ভুত বিহেইভ কেনো করছেন বলুন তো?
আমার কী হয়েছে আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। আমি নিজের হাত, পা, ঠোঁট, নাক, কান, চোখ কিছুই কনট্রোল করতে পারছি না। এই দেখ না তোমাকে দেখেই আমার এখন ঠুস ঠাস চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।
উনার দিকে আমি গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছি। আমি উনার কথা শুনে অবাক হয়নি। মোটামুটি শকড হয়েছি। উনি আমার কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বলেন,
এই ধরো এখন ইচ্ছে করছে তোমাকে জড়িয়ে ধরে……. উনি থেমে গিয়ে চোখ টিপ দিয়ে বলেন, আমি কী মিন করছি তুমি বুঝতে পারছো তো?

ছিঃ কী অশ্লীল কথা বার্তা। আপনি দূরে যান। আপনার ইনটেনশন আমার একদম ভালো ঠেকছে না।
আহা এসব বললে চলে নাকি? এখন কী দূরে দূরে থাকার সময়? এখন তো সময় কাছে আসার।
উনি আমার অনেকটা কাছে চলে আসেন। ঘাড়ের পিছনে এক হাত রাখেন। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। কারো ঝংকার তুলা হাসির শব্দ শুনে ঝটপট চোখ খুলে ফেলি। আমি চোখ খুলতেই উনি হাসি থামিয়ে দিয়ে ঠোঁট চেপে ঠোঁট চেপে ধরে আমার নাকটা হালকা টেনে বলেন,
আমার ইনটেনশন ভালো না নাকি তোমার ইনটেনশন ভালো না? হুম? বাচ্চা মানুষ বাচ্চার মতোই থাকবা। এতো বেশি ভাবতে যেয়ো না।
উনি পকেটে হাত গুঁজে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। আমি আহাম্মকের মতো উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। এতক্ষণ কী হয়েছে কিছুই আমার বোধগম্য হয়নি। উনি কী আমাকে বোকা বানালেন? ছিঃ আমি এসব কী ভাবছিলামা?

ড্রয়িংরুমে আড্ডা বসেছে। আড্ডা দিচ্ছি আমি, রুদ্র , নিয়াম ভাইয়া আর রিদি আপু। নিধি ঘুমিয়ে পড়েছে। আড্ডার মাঝেই নিয়াম ভাইয়া এক গাল হেসে বলেন,
শালাবাবু বেডরুম নামক একটা জায়গা আছে। রোমান্স করার জন্য তোমাদের বেডরুম আছে। রোমান্স বেডরুমে করার জিনিস পাবলিকলি ডাইনিং টেবিলে বসে করার জিনিস না।
নিয়াম ভাইয়ার কথা শোনা মাত্রই লজ্জায় আমার গাল দুটো রক্তিম হয়ে ওঠলো। নিয়াম ভাইয়া যে দুপুরের ঘটনাটাকেই এভাবে টেনে টুনে বলছেন। সেটা আমি বেশ বুঝতে পারছি। রুদ্র একটা গা জ্বালানো হাসি দিয়ে নির্লজ্জের মতো বলে ওঠে,

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৪৬

আমি জানি রোমান্স বেডরুমে করার জিনিস। কী বলো তো বাসায় একটা বাচ্চা আছে হুট হাট রোমান্স টাইমে চলে আসে। বাচ্চাদের সামনে তো আর রোমান্স করা যায় না।
রুদ্রকে বলতে না দিয়েই নিয়াম ভাইয়া বলে ওঠে, আমার দুঃখের কথা তোমাকে আর কী বলবো? মেয়ে হয়ছে না যেনো আমার রোমান্সের শত্রু হয়ছে। ঐ বিচ্ছু মেয়ের জন্য আমি আমার বউয়ের হাতটা পর্যন্ত ধরতে পারি না।
রিদি আপু নিয়াম ভাইয়ার দিকে চোখ রাঙিয়ে বলে, তুমি মুখে লাগাম দিবে। ছোট ভাই-বোনদের সামনে কীসব কথা বার্তা বলছো।
ছোট ভাই বোনদেরই তো মনের দুঃখ শেয়ার করতে হয়। আমার মনে এতো দুঃখ আর আমি ওদের বলবো না।

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৪৮

9 COMMENTS

  1. Apuuuuuuu…plzzzzzzzzzzzzzz next part ta taratari dennnnnnnnnnn?… wait korta korta to buri hoia gelam????????…

Comments are closed.