সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৭

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৭
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

ফারহানের সাথে কথা বলতে বলতে সায়েবা কখন ঘুমিয়ে গেছে নিজেই টের পায়নি। শাড়ি গয়না পরে এতো আরাম করে ঘুমানো যায় সায়েবা কে না দেখলে বুঝতেই পারতো না ফারহান। সায়েবা অবশ্য জানে না তার প্রতিটা মুভমেন্টে কেউ গভীর ভাবে অবলোকন করেছে।জানলে হয়তো বেচারি লজ্জায় কুকড়ে যেত।ফারহানের চোখ আজ নির্লজ্জের মতো একমনে সায়েবা কে দেখে যাচ্ছে।সায়েবার আদুরে মুখটার উপর হালকা বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাচ্ছে। এই ভারি শাড়ি গয়না পরে মেয়েটার হয়তো গরম লাগছে।ফারহান অনলাইনে ঢুকে দেখলো ফায়জা লাইনে আছে কিনা।ফায়জা কে অনলাইনে দেখেই তাকে মেসেজ করলো,

‘আমার রুমের এসি টা একটু ছেরে দিয়ে আসো আপু।প্লিজ ❤️❤️❤️’
ফোন টা আবার কানে ধরে সায়েবার দিকে ধ্যান দিলো ফারহান। মিনিট পাচেক পরেই ফায়জা এলো ফারহানের রুমে। সায়েবা কে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে কপাল চাপড়ালো নিজের।তার ই ভুল!একবার এসে সায়েবা কে ফ্রেশ হতে হেল্প করা উচিত ছিল।ফায়জা সায়েবার কাছে এসে কয়েকবার ডাকলো।সায়েবা এখন গভীর ঘুমে বিভোর। ফারহান কপাল কুচকে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। ফায়জা সায়েবা কে ডাকছে কেন বুঝতে পারছে না সে।বউয়ের ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে বোন!এটা একটা কথা!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ফায়জা ডাকতে ডাকতে হাপিয়ে উঠলেও সায়েবার ঘুম ভাঙলো না।ক্লান্ত চোখে সায়েবার দিকে তাকিয়ে নিজেই সায়েবার গয়না খুলতে লাগলো সে।এক এক করে সমস্ত গয়না খুলে রেখে আচল সরাতেই ফারহান ধপ করে ল্যাপটপ বন্ধ করে দিলো।কি ভয়াবহ অবস্থা! তার বোন এতো ভয়ংকর হলো কবে থেকে? কপালের ঘাম মুছে কল ডিসকানেকট করে ফোন রেখে দিলো ফারহান। আজ আর কল করবে না সে।এখন মনে হচ্ছে ক্যামেরা লাগিয়ে মারাত্মক ভুল করে ফেলেছে সে।আর কি কি ভয়ংকর পরিস্থিতি তে পরতে হবে কে জানে!

কাল রাতে দেরি করে ঘুমানোর দরুন আজ সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে সায়েবার।দশটায় ঘুম ভাঙতেই তড়িঘড়ি করে ফ্রেশ হয়ে ফজরের নামাজ পড়ে নিচে গেলো সায়েবা। কাল সবাই ই ঘুমাতে গিয়েছে দেরি করে। তাই সবাই ই লেট করে উঠেছে।সোফায় বসে আদিব বড় বড় হাই তুলছে।সায়েবা কে দেখতেই মিষ্টি হাসলো আদিব।হাসতে হাসতেই আবার হাই তুললো সে।ঘুম জরানো কন্ঠে বললো,
— ঘুম কেমন হলো ভাবি সাহেবান?
আদিবের অবস্থা দেখে সায়েবা উদ্বিগ্ন হয়ে বললো,
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া।আপনি এভাবে বসে আছেন কেন?রাতে ঘুম হয় নি?
সায়েবার কথা শুনে আদিব মুখটা কাদো কাদো করে ফেললো, আফসোসের স্বরে বললো,

— কি আর বলবো ভাবি সাহেবান।রাতে সব কিছু গুছিয়ে ঘুমাতে অনেক দেড়ি হয়েছে।ভাবলাম সকালে দেড়ি করে উঠলেও কোন সমস্যা নেই।কিন্তু ঘুমাতে পারলে তো!তোমার ননদের নাক ডাকার শব্দে আমার রুম ভুমিকম্পের মতো কেপে উঠে একটু পর পর। ভয়ের চোটে সারা রাত টেবিলের নিচে ঢুকে ছিলাম।একরাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়া যাবে।কিন্তু জীবন তো একটাই বলো?ওই টা চলে গেলে তো আর পাওয়া যাবে না! কোন রকম প্রান বাচিয়ে রাত টা পার করেছি।তাই সকাল সকাল এসে এই সোফায় আশ্রয় নিয়েছি।কি আর বলবো,রাক্ষুসি দের মতো করে নাক ডাকে।তুমি শুনতে পাও নি?
আদিবের কথা শুনে চোয়াল ঝুলে গেলো সায়েবার।চোখ তুল সামনে তাকাতেই শুকনো ঢোক গিলে জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললো,

— কি সব বলছেন ভাইয়া!ফায়জা আপু নাক ডাকেন না।আপনি হয়তো ভুল শুনেছেন।
সায়েবার কথায় ঘোর আপত্তি জানিয়ে আদিব বললো,
— আমি একটু ও ভুল শুনি নি সাহেবান। কি ভয়ংকর শব্দ!আমার ভুল হতেই পারে না।
সায়েবা অসহায় গলায় বললো,
— তাহলে আমি শুনলাম না কেন?
— আল্লাহ বাচাইছে তুমি শুনো নি।না হলে আজ পত্রিকার হেডলাইন বের হতো, ননদের নাক ডাকার শব্দে প্রাণ হারালো এক অবলা বধু।তখন আমাদের ফারহানের কি হতো বলো?তবে আমার চিন্তা অন্য জায়গায়। ধরো তোমার ননদ কে বিয়ে দিলে,কিন্তু পরের দিন খবর এলো তোমার নন্দাই বউয়ের নাক ডাকার শব্দে পটল তুলেছে।সবাই আমার মতো সাহসি না ও হতে পারে। তোমার শশুড় তো আবার ডাক্তার ছাড়া মেয়ে বিয়ে দিবে না। এখন তোমার ননদের জন্য একজন তরতাজা ডাক্তার মরে যাবে এটা মেনে নেয়া যাচ্ছে না। ডাক্তার আমাদের দেশের সম্পদ।তোমার ননদ আমাদের দেশের এতো মুল্যবান সম্পদ নষ্ট করবে তা আমি কোন দিন মেনে নিবো না। তাই দেশের সম্পদ বাচাতে আমি নিজেকে কোরবানি করে তোমার ননদ কে বিয়ে করার ভার নিজের কাধে নিয়েছি।বুঝেছো?

সায়েবার চেহারা আরো করুন হয়ে গেলো। আদিবের দিকে দুঃখ দুঃখ চোখে তাকিয়ে বললো,
— আমি আপনাকে খুব মিস করবো ভাইয়া।আপনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন।এখন কি আর করার!মানুষের হায়াত যতদিন ততদিন ই তো বাচবে।সব আল্লাহর ইচ্ছা। আপনার এই করুন পরিনতি আমি নিজ চোখে দেখতে পারবো না ভাইয়া।আমি বরং রুমে চলে যাই।ওপারে ভালো থাকবেন।
সায়েবার দিকে বোকা চোখে তাকিয়ে আছে আদিব।সায়েবা কথা পুরো তার মাথার উপর দিয়ে গেছে।
— কি বলছো সাহেবান?আমি কিছু ই বুঝতে পারছি না।
সায়েবা মলিন চোখে ইশারায় পেছনে তাকাতে বললো আদিব কে। সায়েবার ইশারায় আদিব পেছনে তাকাতেই ধপ করে সোফা থেকে নিচে পরে গেলো। সায়েবার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আবার ফায়জার দিকে তাকালো। ফায়েজা রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আদিব কাদো কাদো গলায় বললো,

— গুড মর্নিং সোনা।
ফায়জা রাগে নিজের হাতের জুস পুরো টা আদিবের মাথায় ঢেলে দিলো।দাত কিড়মিড় করে বললো,
— বেয়াদব ছেলে।বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না।তোমাকে বলেছি না আমাকে আপু বলে ডাকবে।আমি তোমার চার বছরের বড় সেটা মাথায় আছে?অসভ্যের মতো আচরণ করলে দাত ফেলে দিবো। আজ থেকে যদি আমাকে আপু বলে না ডাকো তাহলে তোমার চেহারার নকশা বদলে দিবো নির্লজ্জ ছেলে।
— দেখো, তুমি মারলে আমি কিছু মনে করবো না। কিন্তু তবুও আমি তোমাকে আপু বলে ডাকবো না।না মানে না।এখন তুমি আমার চেহারার নকশা বদলাও বা মানচিত্র আই ডোন্ট কেয়ার।

কথাটা বলেই আদিব অভিমানী বাচ্চাদের মত মুখ ঘুরিয়ে নিলো।ফায়জা নিজের কপাল চাপড়ালো।এই ছেলেটা ফারহানের ছোট বেলার ফ্রেন্ড। একদিন দুষ্টুমি করে ফারহান বলেছিলো আদিবের কাছে ফায়জা কে বিয়ে দিয়ে তাকে দুলাভাই করে রেখে দিবে।তখন থেকে এই ছেলে হাত ধুয়ে তার পেছনে পরে আছে। তখন ছোট ছিল তাই অবুঝের মতো করলেও মেনে নেয়া যেতো। কিন্তু এখন তো বড় হয়েছে।এখন এমন করার মানে কি। ফায়জা মনে মনে আদিব কে কয়েক দফা পাগল বলে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৬

রুমে আসতেই সায়েবার ফোন বেজে উঠল। ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো সায়েবা।রিসিভ করতেই শোয়েবের অস্থির গলা হাজার খানেক প্রশ্ন হাজির।
— কেমন আছো আপু?নাস্তা করেছো?কোন সমস্যা হচ্ছে না তো?
— আরে থাম থাম।এক সাথে এতো গুলো উত্তর দিবো কিভাবে?তুই এই বাসায় চলে আয়।
— আমাকে ছাড়া ই বিয়ে করে নিলে!আমি তোমাদের কারোর সাথে কথা বলবো না।
শোয়েবের অভিমানী গলা শুনে সায়েবার চোখে ও পানি চলে এলো। তার বিয়ে তে তার একমাত্র ছোট ভাই ছিল না তাতে কি তার কষ্ট হয় নি?

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৮