সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৮

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৮
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

আজ তিন দিন হলো শোয়েব বন্ধুদের সাথে ট্যুরে গিয়েছে।সায়েবার হঠাৎ করে বিয়ে হয়ে যাওয়া সে আসতে পারে নি।যদিও সায়েবার বিয়ে ঠিক হওয়ার খবর টা সে ই দিয়েছে ফারহান কে।তবে ফারহান এভাবে একেবারে বিয়ে ই করে ফেলবে এটা ভাবে নি।তাই সে ফারহানের উপরে ও ভয়ংকর ভাবে ক্ষেপে আছে।
সায়েবা অনেক কষ্টে শোয়েব কে শান্ত করলো। শোয়েব কে প্রমিস করলো শোয়েব আসলে সে যা চায় তাই দিবে তাকে।অনেক চেষ্টার পর শোয়েব শান্ত হলো। বোনের থেকে বিদায় নিয়ে কল কেটে দিতেই নিচ থেকে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ পাওয়া গেলো। বিয়ে তে খুব একটা মানুষ না হলেও গুটি কয়েক আত্মীয় এসেছে।ফারহান খালা, নানা, মামারা সবাই ই এসেছে।তবে ফারহানের ফুপু আর লিজা আসে নি।সায়েবা নিচে যেতে সংকোচ বোধ করছে।যাবে কি যাবে না চিন্তা করতে করতেই তার ফোন আবার বেজে উঠল। স্ক্রিনে hubby নাম টি দেখে সায়েবা তড়িঘড়ি করে কল রিসিভ করলো।

— আসসালামু আলাইকুম।
— ওয়ালাইকুম আসসালাম।খেয়েছো সকালে?
ফারহানের গম্ভীর গলা শুনে সায়েবা তাকিতুকি করতে লাগলো। সে যদি এখন বলে সে খায় নি তাহলে নির্ঘাত ফারহান তাকে দানবীয় ধমক দিবে।আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারহান কোমল গলায় বললো,
— খাও নি কেন সায়েবা?তুমি কি আমাকে অনুতাপের আগুনে মারতে চাও?
ফারহানের কথায় অবাক হয়ে গেলো সায়েবা।দ্বিধা গ্রস্থ গলায় বললো,
— মানে?
ফারহান আগের চেয়েও শীতল কণ্ঠে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— এখন বাংলাদেশ সময় বারোটা এগারো বাজে সায়েবা।তুমি এখনো কিছু খাও নি কাল বিয়ের ঝামেলায় ঠিক মতো খেতে পারো নি।এতক্ষণে তোমার ব্রেকফাস্ট করা উচিত ছিল। আমি থাকলে তোমাকে এভাবে না খেয়ে ঘুরতে দিতাম বলো?জানো ই তো আমাদের বাসার সবাই বিজি।হঠাৎ করে বিয়ে হওয়ায় কেউ ই নিজের কাজ সামলে উঠতে পারে নি। আম্মু সকাল সকাল হসপিটালে চলে গেছে।আব্বু আর ভাইয়া ও অফিসে চলে গেছে।আপু কাল রাতে লেট করে ঘুমানোর দরুন সকাল সকাল উঠতে পারে নি। আম্মু সুমি কে বলে দিয়েছিল তোমাকে ব্রেকফাস্ট দেয়ার জন্য। তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই তোমাকে ডাকতে নিষেধ করেছি আমি।শোন সায়েবা,আমাদের ফ্যামিলির বউ তুমি।তুমি আগে থেকেই আমাদের সম্পর্কে সব কিছু জানো।

তোমাকে নতুন করে জানানোর কিছুই নেই।আমাদের পরিবারের সবাই তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসে। তবে শ-শরীরে হয়তো তোমার খেয়াল তারা রাখতে পারবে না। তাই তোমার উচিত তোমার নিজের সংসারে তুমি যতটা রাজত্ব করে চলবে ততটা রাজত্ব করা।আমার এই ছোট্ট রাজ্যের রানী তুমি।রানীর মতো থাকবে তুমি।পুরো টাই তোমার রাজত্ব। আর নিজের রাজত্বে কি কারোর দ্বিধা বা ভয় থাকে বলো?কোন কিছু নিয়ে হেজিটেট করবে না। তোমার কাছে না থাকা অবস্থায় নিজের অবহেলা করো না রানী সাহেবা। তাহলে আমার খুব অনুতাপ হবে এই দুরত্বে।আমি পাশে থাকা অবস্থায় যত পারো অবহেলা করো।আমি আমার ভালোবাসায় সমস্ত টা পূর্ণ করে দিবো। নিজের খেয়াল রাখবে।সুমি ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসছে।ভালো মেয়ের মতো খেয়ে নিবে। ঠিক আছে?
সায়েবার চোখে অশ্রুরা ভীড় করেছে।এতো ভালোবাসা ও বুঝি নসিবে ছিল। মনে মনে আল্লাহর কাছে হাজার বার শুকরিয়া আদায় করে নিলো। মিনমিনে গলায় বললো,

— আমি খেয়ে নিবো আর নিজের খেয়াল ও রাখবো। আপনি চিন্তা করবেন না। (একটু থেমে)
আপনি খেয়েছেন?
সায়েবার কথা শুনে মুচকি হাসলো ফারহান।সায়েবার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নেশালো গলায় বললো,
— সুন্দর লাগছে বউ।ঠিক আমার স্বপ্নের মতো।
সায়েবা থতমত খেয়ে গেলো। বোকা গলায় বললো,
— এ্যা???আপনি,,,,
সায়েবা কথা শেষ করার আগেই হুড়মুড় করে সায়েবার রুমে ঢুকে পরলো লিজার মা মিসেস শাহানা।তার পিছনে লিজা আর ফায়জা ও এসেছে।ফায়জা বিরক্তি তে মুখ কুচকে রেখেছে।আর লিজা ন্যাকা কান্না করে যাচ্ছে।
সায়েবা এতো গুলো মানুষ কে এক সাথে দেখে হচকচিয়ে গেলো। ফারহান লাইনে আছে বেমালুম ভুলে গিয়ে মিসেস শাহারার সামনে গিয়ে তাকে সালাম দিলো। এদিকে ফারহান নিজের ফুপি কে দেখে চোয়াল শক্ত করে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। শাহারা বেগম সালামের জবাব দিয়ে সায়েবা কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঘুড়িয়ে ঘুরিয়ে দেখছে।তার এমন দৃষ্টি দেখে অস্বস্তি তে সায়েবা নিজেকে গুটিয়ে নিলো। শাহারা বেগম তা দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

— কাক ময়ূরের পেখম লাগিয়েছে।এতো ভালো সাজার নাটক করছো কেন মেয়ে?কতটা নির্লজ্জ হলে একটা মেয়ের বাগদত্তা কে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে বিয়ে করা যায় তা তোমাকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি তোমাদের মা মেয়ের চাটুকারিতা দেখে।ভোলা ভালা সেজে কি ভাবে বড় লোকের ছেলে ফাসাতে হয় তা তোমাদের থেকে শেখা উচিত। দুশ্চরিত্রা মেয়েছেলে। আর কয়জন কে ফাসিয়েছো এভাবে?টাকার এতো লোভ থাকলে আমাকে বলতে। টাকা দিয়ে ভরিয়ে দিতাম।আমার মেয়ে থেকে তার ভালোবাসা কেড়ে নিলে কেন?কি দিয়ে ভুলিয়েছো ফারহান কে? এই রুপ দিয়ে?রুপ দিয়ে ফাসানো কি তোমাদের পেশা নাকি?
সায়েবা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শাহারা বেগমের দিকে দৃষ্টি তার।আজ আর কাদছে না সে।সে ও দেখতে চায় এই মহিলা আর কি কি বলতে পারে।কিন্তু ফায়জা চুপ করে থাকতে পারলো না। শাহারা বেগমের কাছে গিয়ে দাতে দাত চেপে বললো,

— নিজের জবানে লাগাম দাও ফুপ্পি।কোথায় দাঁড়িয়ে কাকে কি বলছো ভেবে দেখেছো।একটা মেয়ে মানুষ হয়ে আরেকটা মেয়ে কে এতো নিচু মানের কথা বলতে লজ্জা করলো না তোমার। ছিঃ।
— তুই চুপ কর।আমি জানি আমি কোথায় দাঁড়িয়ে কথা বলছি।এটা আমার ও বাড়ি।তাই আমার বাড়ি য়ে এই থার্ড ক্লাস মেয়েকে আমি এলাও করবো না। আর আজ ভাইয়ার সাথে আমার বোঝা পরা আছে।
— তুমি ভুল বললে ফুপ্পি।এটা তোমার বাড়ি নয়।এটা আমার বাবার বাড়ি।আমার আব্বু নিজের ইনকামে এই বাড়ি করেছে।আর তোমার নিজের ভাগের সম্পত্তি তুমি অনেক আগেই দাদুভাইয়ের থেকে লিখে নিয়েছো।আমার বাবার সম্পত্তিতে তোমার কোন অধিকার নেই।ভাইয়ের বাড়িতে এসেছো, বেরাবে।এটা তোমার হক।তাই বলে আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের বাড়ির বউকে অপমান করবে তা আমরা মেনে নিবো না।
ফায়জার দিকে দাত কটমট করে তাকালো শাহারা বেগম। ইচ্ছে করছে এই মেয়েকে এক থাপ্পড়ে সব কয়টি দাত ফেলে দিতে।

— বেয়াদব মেয়ে।বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না?
— সেটা নির্ভর করে সে বড় মানুষ টা কে?
লিজা তার মায়ের হাত ধরে টানতে টানতে বেরিয়ে যেতে যেতে সায়বার দিকে তাকিয়ে বললো,
— এই অপমানের বদলা আমি নেব।আমি ও দেখে নিবো তুমি কিভাবে এ বাড়িতে থাকো।
— সেটা নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না। আমার বাবার অনেক বাড়ি আছে।যেটা তে ইচ্ছা থাকবে।
সায়েবা এখনো নির্বাক।বিয়ের পরের দিনই এমন পরিস্থিতিতে পরতে হবে ভাবতে পারে নি সে।ফারহান কল কেটে আবার কল করলো সায়েবা কে। সায়েবা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কল রিসিভ করলো,
— মন খারাপ হয়েছে?
ফারহানের শান্ত গলা শুনে মুচকি হাসলো সায়েবা।দৃঢ় গলায় বললো,
— এইসব ছোট খাটো বিষয় নিয়ে মন খারাপ করলে রানী তার রাজ্য চালাবে কিভাবে?
ফারহান শব্দ করে হেসে ফেললো।
— এই অবস্থায় আর পরতে হবে না। আজ এর স্থায়ী সমাধান হয়ে যাবে।আমার উপর বিশ্বাস আছে তো?
— নিজের থেকে ও বেশি।
— খেয়ে নাও।একটু পরে মা আর শোয়েব আসবে।তাদের সাথে ও বাড়িতে চলে যেও।রাত দশটার দিকে আপু গিয়ে নিয়ে আসবে তোমাকে।আমার এখানে এখন রাত।আমি ঘুম থেকে উঠেই তোমাকে কল করবো।আল্লাহ হাফেজ।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৭

— আল্লাহ হাফেজ।
ফায়জা দুষ্টু হেসে বললো,
— বা বা, এতো প্রেম?
— হুম।অনেক।(মুচকি হেসে)
— ফুপ্পির কথায় কিছু মনে করো না সায়েবা।আর লিজা থেকে একটু দূরে দূরে থেকো।
— আমি কিন্তু এতোটা ও ভালো নই আপু।(শয়তানি হেসে)

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৯

1 COMMENT

Comments are closed.