সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৯

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৯
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

সানোয়ার সাহেব মুখ কুচকে বসে আছেন ড্রয়িং রুমে। তার সামনের সোফায় বসে শাহানা বেগম ন্যাকা কান্না করে যাচ্ছে। ফারহানা বেগম চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ননদ আর ননদের মেয়ের দিকে।দুটো ই পাক্কা অভিনেত্রী।
— তোমার মেয়ে আর ছেলের বউ আমাকে অপমান করেছে ভাই।তোমার মেয়ে বলেছে এটা আমার বাড়ি না।আমার এই বাড়িতে কোন অধিকার নেই।আরো কত কি বলে অপমান করেছে।বাবা মা বেচে থাকলে আজ আমাকে এই দিন দেখতে হতো না। তুমি বদলে গেছো ভাই।অবশ্য তোমার কোন দোষ নেই। মানুষের প্ররোচনায় পরে এমন হয়েছো তা আমি জানি।
শেষের কথাটা ফারহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো শাহানা বেগম।

ফারহানা বেগম আগের মতোই তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সে দিকে চোখ পরতেই থতমত খেয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো শাহানা বেগম।শুস্ক চোখ আচল দিয়ে মোছার ভঙ্গি করতেই পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো ফরহাদ।শাহারা বেগম কৃতজ্ঞতার চোখে তাকিয়ে পানি খেতে নিতেই ফরহাদ বললো,
— খেতে দেই নি ফুপ্পি।আসলে তোমার চোখে তো পানি ছিল না তাই মনে হলো তোমার চোখ ভিজিয়ে নেয়া উচিত। বার বার এভাবে শুকনো চোখ মুছতে থাকলে চামরা উঠে যেতে পারে।
ফরহাদের দিকে কটমট করে তাকালো শাহানা বেগম।সব কয়টা আস্তো বদমাইশ হয়েছে। ফরহাদের কথা শুনে সবাই ঠোঁট চেপে হাসছে। লিজা আর তার মায়ের মুখ অপমানে থমথমে হয়ে আছে।
সানোয়ার সাহেব গম্ভীর গলায় ধমক দিলেন সবাইকে।শাহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— দেখ শাহানা,তুই আমার ছোট বোন।আমি খুব ভালোবাসি তোকে।লিজা কে ও নিজের মেয়ের মতোই মনে করি।তুই আমার কাছে যে আবদার করেছিলি আমি চেষ্টা করেছি তা রাখার।কিন্তু যেখানে আমার ছেলে আর পরিবারের কেউই রাজি না সেখানে আমি তো আর তাদের জোর করতে পারি না।
সানোয়ার সাহেবের কথা শুনে তেতে উঠলেন শাহানা বেগম। রুক্ষ গলায় বললেন,
— তুমি কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছিলে ভাই।লিজার বাবা যদি জানে ফারহান বিয়ে করে ফেলছে তাহলে কি হবে ভাবতে পারছো?সোসাইটি তে সবাই জানে ফারহানের সাথে লিজার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।এখন এসব জানা জানি হলে আমাদের মান সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ভাই?আমার মেয়ে টা কাল থেকে কেদে যাচ্ছে। নাওয়া খাওয়া সব বাদ দিয়ে দিয়েছে।ও যদি ভুল ভাল কিছু করে ফেলে তখন এর দায় কে নিবে।আমি কিন্তু কাউকে ছেড়ে কথা বলবো না বলে দিলাম।
শাহানা বেগমের কথার মাঝেই ঢুলতে ঢুলতে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত হয়েছে আদিব।ঘুম ঘুম চোখে ফারহানা বেগমের গা ঘেঁষে বসে পরলো সে।কিন্তু শাহানা বেগনের শেষের কথা শুনে চট করেই চোখ খুলে ফেললো। সামনে লিজা কে দেখে গদগদ গলায় বললো,

— আরে লিজা যে।এতো সকাল সকাল এখানে কিভাবে? না মানে আমি তো ভাবলাম আজ সারা দিন তোমার চোখ ই খুলবে না।কাল যে পরিমান এনজয় করেছো!এতো ড্রিংক করো না বুঝলে?যতই বয়ফ্রেন্ডের জন্মদিন হোক না কেন। লিমিট বুঝে করবে।তা ছেলেটা কে দেখলাম তোমাকে রুমে নিয়ে যেতে।এমন হুট হাট কারোর সাথে রুমে চলে যাওয়া ঠিক না।মানুষ খারাপ ভাববে।বাই দ্যা ওয়ে,এটা তোমার কতো নাম্বার বি এফ ছিলো?
সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আদিবের দিকে। লিজা তো পারলে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। শাহানা বেগম আড় চোখে মেয়ের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। সবার এমন দৃষ্টি দেখে লিজা আমতা আমতা করে বললো,
— ক কি স সব বলছেন আ আপনি? আ আমি তো এ এস,,,

লিজার পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে আদিব নিজের ফোনে একটা ভিডিও প্লে করে দিলো।ভিডিও দেখে লিজার কথা গলায় ই আটকে গেছে।কপালে সুক্ষ্ম ঘামের রেখা দেখা দিয়েছে।কাপা কাপা চোখে সবার দিকে নজর ঘুরাতেই সবার হিংস্র বাঘের মতো দৃষ্টিতে কাপতে লাগলো সে। শাহানা বেগম স্তব্ধ হয়ে গেছে মেয়ের কার্যক্রম দেখে।লিজা উৎশৃংখল এটা সে জানে কিন্তু সে যে এভাবে ছেলেদের সাথে নোংরামো করে বেরায় এটা সে জানতো না।সানোয়ার সাহেব নিঃশব্দে উঠে রুমের দিকে চলে গেলেন। ফায়জার ফোনের রিংটোন শুনে সবাই দৃষ্টি ঘুরিয়ে তার দিকে তাকালো। ফারহান ভিডিও কল করেছে।ফায়জা রিসিভ করতেই ফারহান তার ফুপির উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলো,

— আশা করি এবার আর তোমার কোন অভিযোগ থাকবে না ফুপ্পি।আমার বউ কে চরিত্রহীন বলার আগে নিজের মেয়ের চরিত্র খতিয়ে দেখা উচিত ছিল তোমার। আর যায় হোক,ফারহান সাদিক এমন চরিত্রহীন মেয়েকে নিজের জীবনে কোন দিন জায়গা দিবে না। আমার বউয়ের নখের যোগ্য ও না তোমার মেয়ে।ওর সামনে যদি কোটিপতি রাজপুত্র ও এনে দাও তাহলেও সে তাদের ছেড়ে আমাকে বেছে নিবে।তাই ফার্দার আমার বউকে বাজে কথা বলার আগে ভেবে নিও।আমি এই কথা গুলো সায়েবার সামনেই বলতে পারতাম।কিন্তু আমি সায়েবার সামনে তোমাদের ছোট করতে চাইনি।আমি আমার বউকে যেমন ভালোবাসি ঠিক তেমনই আমার ফুপ্পিমনি কেও ভালোবাসি।

নিজেকে আর আমাদের কে ওর সামনে ছোট করো না প্লিজ। আমি আশা করবো আমার ফুপ্পি আমাকে নতুন জীবনের জন্য দোয়া করে যাবে।আর লিজা,আমার বউ থেকে দূরে থাকবি।আমার বউয়ের আসেপাশে ও যেন তোকে না দেখি।বউ নিয়ে আমি আবার একটু বেশিই পজেসিভ।আমার বউ যদি চুল পরিমাণ ও কষ্ট তোর জন্য পায় তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না। কথাটা মাথায় রাখিস।
শাহানা বেগম আর লিজার সাথে কথা শেষ করে ফারহান তার মা কে উদ্দেশ্য করে বললো,

— সায়েবা কে রাতে নিয়ে আসবে আম্মু।আর আজকের ঘটনা যেন আর রিপিট না হয় একটু খেয়াল রাখবে।
— চিন্তা করো না আব্বু।আমি খেয়াল রাখবো।
ফারহানের সাথে আরো কিছু কথা বলে ফায়জা কে ফোন দিয়ে দিলো ফারহানা বেগম। ফায়জা ভাইয়ের দিকে হাসি হাসি মুখে তাকাতেই ফারহান গম্ভীর গলায় বললো,
— আমার বিয়ের গিফট কোথায় আপু?
ফায়জা অবাক গলায় বললো,
— এখন আবার কি গিফট চাই তোর?বড় ভাই আর বড় বোন রেখে ছোট ভাই হয়ে বিয়ে করে ফেলেছিস।আবার গিফট চাইতে লজ্জা করে না তোর?
ফারহান স্বাভাবিক গলায় বললো,
— না।তুমি চাইলে আমাদের হানিমুনের টিকিট গিফট করতে পারো।সে ক্ষেত্রে তোমার একটা টিকিটের টাকা বেচে যাবে।
ফায়জা আহত গলায় বললো,

— দেখলে ভাইয়া?কি নির্লজ্জ!
ফরহাদ মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বললো,
– – আইডিয়া মন্দ না।
আদিব চারিদিকে তাকিয়ে খোজার ভঙ্গিতে বললো,
— আরে ওরা কোথায় গেলো।
— অনেকক্ষন আগেই চলে গেছে।
ফারহান আদিবের দিকে তাকিয়ে বললো,
— এই তুই আমার বোনের পাশে কি করিস?তোকে বলেছি না আপুর থেকে দূরে থাকবি।
আদিব আর্তনাদ করে ফায়জার সাথে আরেকটু চেপে বসে বললো,
— এখনো এক আঙুল দূরে আছি।তাতেই আমার কলিজায় কালসিটে দাগ পরে গেছে।এর চেয়ে বেশি দূরত্ব হলে কলিজা কয়লা হয়ে যাবে।তাই না সোনা??

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১৮

শেষের কথা টা ফায়জার দিকে তাকিয়ে বলতেই ফায়জা চিৎকার করে ওর মা কে ডেকে বললো,
— তোমার ভাইয়ের ছেলেকে কিছু বলো আম্মু।না হলে আমার হাতে মার খাবে।
ফরহাদ খিটখিট করে হেসে উঠলো। আদিবের সাথে হাই ফাইভ করে বললো,
— রহিম রুব্বান মেক্স প্রো ভার্সন তোরা।আমি রাজি।বল কবুল।
আদিব তরিঘরি করে বললো,
— আলহামদুলিল্লাহ কবুল।তুমি ও বলো সোনা।আর কত কাল সিঙ্গেল থাকবো?
ফারহান হেসে কল কেটে দিলো।লাইনে থাকলে তাকে ও আজ বকা শুনতে হবে।ফায়জা ভয়ংকর ভাবে রেগে গেছে। আদিবের কি হাল হবে আল্লহ জানে?

সায়েবা আসক্তি পর্ব ২০

2 COMMENTS

Comments are closed.