সায়েবা আসক্তি গল্পের লিংক || লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

রাগে ফোসফাস করতে করতে একটু পর পর ফারহানের দিকে তেড়ে যাচ্ছে সায়েবা।বান্ধবিরা চেয়েও আটকে রাখতে পারছে না। ফারহান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সায়েবার দিকে।এই মেয়েটাই এক সপ্তাহ আগে তাকে সবার সামনে ভালোবাসি বলেছিল।কিন্তু সে সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে।যদিও এটা নিয়ে তার বলেন বন্ধুমহলে অনেকেই হাসাহাসি করেছে।সে বিষয় টি খুব একটা পাত্তা দেয় নি। সুদর্শন হওয়ার দরুন এরকম কতো মেয়েই তাকে ভালোবাসার দাবি করে। তাদের কে পাত্তা দিয়ে লাইফ হেল করার কোন মানেই হয় না।ফারহানের মতে এইসব মেয়েরা ন্যাকা টাইপের হয়।নির্লজ্জের মতো একটা ছেলেকে কখনো কোন ভালো মেয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিবে না। কিন্তু আজ হঠাৎ এই মেয়ের কি হলো? তার দিকে তেড়েই আসছে কেন!
সায়েবার হুংকারে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো ফারহান।

— আপনার মতো থার্ডক্লাশ ছেলে আমি আমার জীবনে দেখি নি।ছেলে মানুষের ব্যক্তিত্ব এতো নিচুমানের কিভাবে হতে পারে! ছিঃ।আপনাকে আমি শুধু ভালোবাসি বলেছিলাম।ভালো লাগতো আপনাকে।কাউকে ভালো লাগা কোন অপরাধ নয়।আমি নিজের ভালো লাগা আপনার কাছে প্রকাশ করেছি মাত্র।তাতে আপনার আকাশে উড়ার মতো কিছু হয় নি।এমন কয়েকটি কনফেশন দৈনিক আমিও পাই।তাই বলে নিজের বন্ধুদের দিয়ে প্রতিদিন আমাকে হ্যারাসমেন্ট করতে বিবেকে বাধে নি আপনার? কি লো মেন্টালিটির মানুষ আপনারা। আমার ভাবতেই অবাক লাগে এমন অসুস্থ মন মানুষিকতা নিয়ে আপনারা এতো বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে টিকে আছেন।শেষ বারের মতো বলছি,আরেক বার আমার পেছনে লাগলে সিনিয়র মানবো না,সব কটাকে পঙু হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। আর আরেকটা কথা, ভাব ওয়ালা মানুষ আমার একদম পছন্দ নয়। ইউজলেস পিপলস।
রাগে আগুন হয়ে কথা গুলো বলে ওখান থেকে চলে যেতে নিতেই ফারহান তাকে থামিয়ে দিলো। সায়েবার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— এতক্ষণ এভাবে অসভ্যের মতো চিৎকার কি তুমি আমার সাথে করলে?
ফারহানের কথা শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো সায়েবার।রেগে কিছু বলতে নিলেই ফারহান তাকে থামিয়ে দিলো। শান্ত কিন্তু শক্ত গলায় বললো,
— দ্বিতীয় বার চিৎকার করার কথা ভুলে ও চিন্তা করো না।আমি শুধু একবার মাফ করি।দ্বিতীয় বার ভুল করলে মেয়ে হিসেবে মাফ পাবে না।তাই সাবধান।ভেবে চিন্তে কথা বলবে।
ফারহানের কথা শুনে শুকনো ঢোক গিললো সবাই।সায়েবাও মনে মনে কিছুটা ভয় পেলো।কিন্তু চেহারায় তার বিন্দুমাত্র আভাস ও আনতে দিলোনা।ফারহানের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো,

— আপনার আমাকে দেখে মনে হচ্ছে আমি আপনার এই লো ক্লাসের ধমকিতে ভয় পাচ্ছি? স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন মি.ফারহান সাদিক।বন্ধুদের আমার পেছনে লেলিয়ে দিয়ে এখন এখানে নাটক করা হচ্ছে? আমরা চরিত্র বিশ্লেষণ করার অধিকার আপনাকে আর আপনার বন্ধুদের কে দিয়েছে?আপনাকে ভালোবাসি বলেছি তাই আমি চরিত্রহীন!তাহলে তো এই পৃথিবীর সমস্ত মানুষ চরিত্রহীন। কারণ প্রত্যেক টা মানুষ কাউকে না কাউকে ভালোবাসে।সে হিসেবে আপনি ও চরিত্রহীন। আপনি ও নিশ্চয়ই কাউকে না কাউকে ভালোবাসেন।
ফারহান চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে সায়েবার দিকে। মেয়েটার সাহস আছে বলতে হবে। তর্জনীর সাহায্যে ভ্রু চুলকে সায়েবার দিকে আবার দৃষ্টি দিলো সে।কালো শার্টের হাতাটা খানিকটা গুটিয়ে নিতেই সবার গলা শুকিয়ে গেলো। সায়েবা ও নিজের শরীরে হালকা কাপন অনুভব করলো।
কয়েক কদম এগিয়ে সায়েবাকে আবারও প্রশ্ন করলো,

— আমি তোমাকে কিছু বলেছি কখনো?
— নাহ।কিন্তু আপনার বন্ধু,,,,
সায়েবা কে থামিয়ে দিয়ে আবার প্রশ্ন করলো ফারহান,
— তাদের কে এবিষয়ে কিছু বলেছ?
— নাহ।আপনার জন্যই তো,,,
— আচ্ছা??? তা তুমি কি করে বুঝলে যে সব আমার জন্য হয়েছে?আমি তো এতো দিন ক্যাম্পাসে আসি নি।তো আমার জন্য কিভাবে হলো?
— ওই দিনের পর থেকে তাড়া আমাকে দেখলে নানান ধরনের বাজে কথা বলছে।আমার চরিত্র নিয়ে ও বাজে কথা বলেছে।আমার লাইফ হেল করে দিয়েছে এই কয়েক দিনে।
ফারহান এবার শক্ত গলায় বললো,

— তো তোমার মনে হলো আমি তাদের এসব করতে বলেছি?নিজেকে একটু বেশিই ইমপোর্টেন্স দিয়ে ফেললে না?তোমার মনে হয় আমার তোমাকে নিয়ে এতটা ভাবার টাইম আছে! তুমি আমাকে সবার সামনে ভালোবাসি বলেছ।বলার আগে এসব ফেস করার কথা চিন্তা করা উচিত ছিল না? আর যারা তোমাকে টিস করছে তাদের কিছু না বলে আমার সাথে এমন অসভ্যতা করার মানে কি?
সায়েবা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। আসলেই তো!সে ওদের কিছু না বলে অযথাই ফারহানের সাথে মিসবিহেইব করেছে।
ফারহান সায়েবার দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর কন্ঠে বললো,

— দেখো মেয়ে,ভার্সিটিতে এসেছো পড়াশোনা করত।তো পড়াশোনা টাই ঠিকঠাক করে করো।এসব ফালতু কাজ বাদ দিয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবো।দ্বিতীয় বার আমার সাথে এমন অসভ্যতামি করলে থাপড়ে দাত ফেলে দিবো।ডিসকাস্টিং।

ফারহান চলে যেতেই সায়েবা ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলো। রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে চোখের পানি মুছছে সে।বাবা বেচে নেই তার।মা আর ছোট ভাই কে নিয়ে ছোট সংসার তাদের।বাবা বেচে না থাকলেও অর্থের অভাব হয়নি কখনো তাদের।বাবা কোটিপতি না হলেও তাদের জন্য চারতলা একটা বাড়ি রেখে গেছেন। নিউমার্কেটে দুটো দোকান আছে। সেখান থেকে মাস শেষে ভালো টাকাই আসে।বাসা ভাড়া আর দোকান ভাড়া মিলিয়ে মাসে লাখের মতো টাক আসে তাদের হাতে।তা দিয়ে আরামসে সংসার চলে যায়। তাদের পাশের বিল্ডিংটা ফারহানদের।দশতালা বিল্ডিংয়ের সাত তালায় ওরা থাকে।বাকিটা ভাড়া দেয়া।ফারহানের বাবা একজন শিল্পপতি। বড় ভাই ফরহাদ আবরার আর বোন ফাইজা নিয়ে তাদের পরিবার। ফারহানের মা একজন ডাক্তার। ফাইজা আমেরিকা আছে পপড়াশোনার জন্য। এতো বড়লোকের ছেলে তাকে কেন ভালোবাসবে?তবু্ও মন তো আর মানে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়িতে চলে গেলো সায়েবা।

পরেরদিন ভার্সিটিতে পা রাখতেই ফারহানের বন্ধুরা একে একে এসে ক্ষমা চাইতে লাগলো। সায়েবা কিছুটা হচকচিয়ে গেলেও তাদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলো। কিছুটা এগিয়ে যেতেই সায়েবার বন্ধবি নিতি বললো,
— ক্ষমা করে দে সাবু।কালকে ফারহান ভাইয়া খুব মেরেছেন ওনাদের।তুই মাফ না করলে আবার মারবে।প্লিজ মাফ করে দে।
সায়েবা অবাক হয়ে তাকালো নীতির দিকে।
— মেরেছে মানে?
— তুই কালকে রাস্তায় ফারহান ভাইয়ার সাথে মিসবিহেব করেছিস তাই ওদের খুব কেলিয়েছে।আহা,,,, জানিস ই তো।ভাইয়া রেগে গেলে কি হয়।আমার মনে হয় ভাইয়া তোর রাগ ওদের উপর দেখিয়েছে। আমি তো বারবার ওদের চেহারায় তোর প্রতিচ্ছবি দেখেছি।মাফ করে দে বইন।না হলে দেখা যাবে এবার মাফ না করার অভিযোগে এসে তোকে কেলাবে।

সায়েবা বোকা চোখে তাকিয়ে রইলো নীতির দিকে।অবাক হয়ে বললো,
— কিন্তু আদিব ভাইয়ারা তো ওনার প্রানের বন্ধু।তাদের কে মারলো?
নীতি বিরক্তিকর চোখে তাকিয়ে বললো,
— তুই ই তো কালকে বললি ওনারা তোকে হ্যারাস করেছে।বেচারা কে পঙু হাসপাতালে পাঠাতে চাইলি।এখন এসব বলছিস কেন?
— তাই বলে মারবে?আদিব ভাইয়াদের জন্য খারাপ লাগছে দোস্ত।
— আরে ধুর,,, আদিব ভাইয়া দের মারবে কেন?মেরেছে মিজানদের।তুই বন্ধুদের কথা বলায় কয়েক ঘা আদিব ভাইয়ারা ও খেয়েছে।পরে জানতে পারলো মিজানরা এ-ই কাজ করেছে।মিজান রা তো ওনার ক্লাসমেট।বন্ধু না।
নীতির কথার মাঝেই আবার মিজান এসে সায়েবার কাছে মাফ চাইলো।প্রমিস করলো আর কখনো তাকে বিরক্ত করবে না। সায়েবা ও মাফ করে দিলো।

মাঠে বসে নিজেদের মধ্যে গল্প করছে সায়েবা,নীতি, নীল, সাবা।চার বন্ধু চারজনের প্রান।তাদের গল্পের মধ্যে হাজির হলো আদিব।সায়েবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
— আপনি তো আমাদের ববন্ধুর হাতে উত্তমমধ্যম খাইয়েছেন সাহেবান।
— সরি ভাইয়া।আমি বুঝতে পারিনি ওনি আপনাদের মারবে।
সায়েবা অপরাধী গলায় সরি বলতেই আদিব হেসে উঠলো।
— সরি বলার কিছু নেই সাহেবান। আমরা কিছু মনে করি নি।
ফারহানের গাড়ি গেট দিয়ে ঢুকতেই আদিব শুকনো ঢোক গিললো।তারাতাড়ি ওদের থেকে বিদায় নিয়ে ফারহানের কাছে চলে গেলো। না হলে দেখা যাবে সায়েবার সাথে হেসে কথা বলার অপরাধে তাকে কেলিয়ে কোমায় পাঠিয়ে দিবে।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ২