তুমি আমি দুজনে পর্ব ১৮

তুমি আমি দুজনে পর্ব ১৮
হুমাইরা হাসান

-কি হলো নামছ না কেনো
প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের মতো ধমকে উঠলো আহান,তুরা খানিক কেঁপে উঠে গাছের ডালটা শক্তপোক্ত করে ধরল, নিচে তাকাতেই আবারও মাথা টা কেমন করে উঠল। এবার তুরার নিজের উপর ই রাগ হচ্ছে কোন দুঃখে গাছে উঠতে এসেছিলো, চুমকি বলেছিল দারোয়ান কে দিয়ে বাঁধিয়ে নিবে,তাও যে কেনো পাকনামি টা করতে গেল।

-আপনি এখানে কেনো এসেছেন?
প্রতুত্তরের বদলে উল্টো নিজেই প্রশ্ন করল তুরা
-তোমাকে দেখতে এসেছি ষ্টুপিড!
দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে বলল আহান। তুরা শুকনো ঢক গিলে বলল
-আপনি এখান থেকে যান
-তোমাকে নামতে বলেছি না?
-আব হ্যাঁ নামছি তো এত চেঁচামেচি করার কি আছে আজব
-সকাল বেলা সকালে বাঁদরের মতো গাছে উঠে বসে আছো আবার বলছ চেঁচামেচি করছি, নামো তুমি আজকে বাঁদরামি বের করছি

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আহানের ধমকানিতে তুরা বোকা বোকা মুখ করে বলল
-স্বামী, আপনি রেগে কেনো যাচ্ছেন গো। সকাল সকাল এত মাথা গরম করলে তো এ্যাসিডিটি হয়ে যাবে
-সাট আপ, লাস্ট বারের মতো বলছি তুমি নামবে নাকি আমি আসব
তুরা চুপচাপ এক হাতে ডাল আঁকড়ে ধরে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো। আহান শান্ত কণ্ঠে টেনে টেনে বলল
-বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে একটা ধিঙ্গি মেয়ে গাছে উঠে বসে আছে, দৃশ্যটা কেমন দেখায় ভাবতে পারছ?

আহানের ধিঙ্গি বলা শুনে তুরা মুখ ফুলিয়ে নিল, তুরার বিপরীত দিকেই দাঁড়িয়ে আছে আহান, অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উল্টো পথে হাঁটা ধরল। আহানের যাওয়ার দিকে চেয়ে তুরা এক হাতে ডাল ধরে নামতে গেলে ভারসাম্য হারিয়ে ধড়াম করে ডাল ভেঙে পরল মাটিতে,,মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো তুরা,চোখ জোড়া চিকচিক করে উঠলো অশ্রুবিন্দুতে। আহান অদূরেই ছিল, দৌড়ে এসে সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল

-শান্তি হয়েছে? হয়েছে শান্তি? একটা না একটা ব্লান্ডার না করলে তোমার হয়না?
তুরা অশ্রুসিক্ত চোখের কান্নাভেজা গলায় বলল
-আমিতো ইচ্ছে করে পরিনি,ডাল ভেঙে গেল

চোখে মুখে ভীষণ বিরক্তি নিয়ে আহান হাত বাড়িয়ে দিলো, তুরা এক হাত এগিয়ে খামচে ধরল আহানের হাত। পরার সময় পা টা বেঁকে গেছিল বলে ব্যাথায় টনটন করছে, গোড়ালির দিকটা লাল হয়ে গেছে। আহানের হাত ধরে উঠে দাড়ালেও হাটতে নিলেই হোচট খেল। আহান রেষ পূর্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে কোলে তুলে নিল তুরাকে। ব্যথায় চোখ মুখ খিচিয়ে রইল তুরা। আহান তুরাকে নিয়ে সোজা ঘরের ভেতর ঢুকলো।

তুরাকে আহানের কোলে দেখে সবাই হতভম্ব হলেও তুরার চোখে মুখ কান্না ভেজা আর এলোমেলো অবস্থা দেখে কপালে ভাজ পরল সবার। রাইমা কেবলই সিড়ি বেয়ে নামছিল,আহানকে এভাবে হন্তদন্ত হয়ে তুরাকে কোলে নিয়ে আসতে দেখে আঁতকে উঠে দ্রুতপায়ে ছুটে এসে বলল

-একি ভাই,তুরার কি হয়েছে, ও কাঁদছে কেন? আর ওকে তুলে এনেছিস কেন? কি হয়েছে ওর?
রাইমার একদমে করা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিল না আহান, এগিয়ে গিয়ে তুরাকে সোফাতে বসিয়ে বলল
-সেসব পরে শুনিস,আগে ফ্রিজ থেকে আইসকিউব আন আপি
আহানের কোলে তুরাকে দেখে আমেনা বেগম মনে মনে আশ্চর্যজনক ভাবে খুশি হলেও পরমুহূর্তেই আঁতকে উঠে, ব্যাথা কাতর হাঁটুতে ভর দিয়েই উঠে এসে তুরার পাশে বসে বলেন

-কি হয়েছে দাদুভাই, একটু আগেও তো ভালো ছিল,পায়ে কি হলো নাতবউয়ের
-কি আর হবে, না এক দন্ড নিজে স্থির বসে না অন্যকে সস্তি দেয়। বাঁদরামি করে গাছে উঠে পরে গিয়ে পা মচকেছে
তুরার ডান পা টা সন্তপর্ণে টি টেবিলের উপরে তুলে রাখতে রাখতে ব্যস্ত স্বরে বলল আহান।
-এই নে আইস কিউব

বলেই বাটিতে রাখা কয়েকটা বরফ আর একটা কাপড় এগিয়ে দিল আহানের সামনে। আহান পাতলা কাপড় টার মাঝে বরফের টুকরো রেখে পেঁচিয়ে খুব যত্নসহকারে ধরল তুরার পায়ের গোড়ালিতে
-বাবু কি হয়েছে বউয়ের,রাইমা বলল পায়ে ব্যথা পেয়েছে নাকি
রান্নাঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আসলো মিনু আর রুবি। বাড়িতে মেহমান আসা উপলক্ষে রান্নাঘর জুড়ে বেশ ব্যস্ততা আজ। তাই রুবি আর চুমকির সাথে মিনুও হাতে হাতে সব কাজ এগিয়ে দিচ্ছিলো। রাইমা তুরার কথা বলে বরফ আনতে গেলে তারাও চিন্তিত হয়ে বেরিয়ে আসে রাইমার পিছু পিছু

-পা টা তো অনেক খানি ফুলে গেছে। কি করে হলো এসব তুরা?
রুবির কথার পৃষ্ঠে তুরা চুপচাপ তাকিয়ে থাকাই উত্তর হিসেবে দিল। আহান পায়ে বরফ চাপতে চাপতে বলল
-গাছ থেকে পরে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে
এক লাইনের উত্তর দিয়েই প্রসন্ন হলো সে। কিন্ত প্রসন্ন হলো না তুরা, সে কি ইচ্ছে করে পরেছে? ডালটাই তো একাই ভেঙে গেল। সে কি বলেছিলো ডাল তুই ভেঙে পর সাথে আমাকেও ফেল, অত্যন্ত ব’জ্জাত লোকটা। তার উপর পায়ে বরফ চাপায় ভীষণ যন্ত্রণাও করছে৷ কিন্তু একটা টু শব্দ করার সাহস হচ্ছে নাহ,একবার পা সরিয়ে নিতে নিলেই চোখ রাঙানো খেয়েছে আহানের।

-কি যে কর তুমি বউ,সবসময় ছুটোছুটি। এই যে এখন মেহমান এসে দেখবে বাড়ির বউ পা ভেঙে বসে আছে, এসব কি ভালো দেখায়
মিনুর কথার প্রেক্ষিতে শুধু দীর্ঘশ্বাস ই ফেললো রুবি। তুরা চোখ ভরা পানি নিয়েই বলল
-কিন্ত আমারতো পা ভাঙেনি ফুফু আম্মা, শুধু একটু মচকেছে।
-ওমা দেখ মেয়ের কথা। বলি টাসটাস কথা না বলে একটু দেখে শুনে চললেও তো পারো
তুরা কিছু বলতে নিবে তার আগেই আহান বলে উঠলো
-স্প্রে করলে ব্যথা চলে যাবে। উঠতে পারবে তুমি?

তুরা সামান্য ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিলেও উঠে একপার বেশি এগোতে পারল না, ব্যথাটা গোড়ালি তে হওয়ায় দাড়াতে অক্ষম হলো। আহান ভীষণ বিরক্তি নিয়ে ওর দিকে চেয়ে ‘স্টুপিড মেয়ে’ বলে বিড়বিড়িয়ে ভরা ডাইনিং রুমে মা ফুফু দিদুন কাওকে তোয়াক্কা না করে তুরাকে আবারও কোলে তুলে গটগট করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। ঘরে এসে তুরাকে খাটের উপর বসিয়ে, ড্রয়ার থেকে স্প্রে বের করে পায়ে স্প্রে করে দিয়ে তুরার সামনে দাঁড়িয়ে বলল

-দিস ওয়াজ দ্যা লাস্ট টাইম। এরপর থেকে যদি আর কোন রকম পাকনামি করেছ তো আমার চেয়ে খারাপ কেও হবে নাহ,মাইন্ড ইট
বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো আহান। তুরা আহানের যাওয়ার পানে হা করে চেয়ে ভ্রু কুচকে বলল
-এমনেও আপনার চেয়ে খারাপ কেও নাই ও। ব’জ্জাত বেডা মানুষ

বাথরুমের দরজা খুলে এক হাতে দেওয়ালে ভর দিয়ে এক পা উচিয়ে খুব আস্তে ধীরে বেরোলো
তুরা, আস্তে আস্তে খাটের কাছে এসে বসে চুলের পানি গুলো মুছতে লাগল। ঘড়ির কাটার স্থান ঠিক দুপুর একটা জানান দিচ্ছে। তুরার পায়ের ব্যথাটা অনেকটাই কমে এসেছে, সকালের পর আর ঘর থেকে বের হয়নি সে,হয়নি বলতে আহান বেরোতে দেয়নি। ওর খাবার রাইমা এনে দিয়েছে উপরে। এতক্ষণ রাইমা ওর সাথেই ছিল,কিন্তু দুপুর হওয়াই সেও গোসলে গেছে, মেহমান আসার সময় ও হয়ে এসেছে। কোথায় ভেবেছিল আজ মা কে সব রান্নায় সাহায্য করবে উল্টো নিজেই পা তুলে বসে আছে খাটে, নিজের কাজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে তুরার।

-আসব তুরা?
নারী কণ্ঠের কথায় তুরা চুল মুছা থামিয়ে দরজায় তাকিয়ে দেখল রুবি খাতুন দাঁড়িয়ে আছে, গাল প্রসারিত করে হেসে তুরা বলল
-মা,আসুন না। অনুমতি নেওয়ার কি আছে
-অবশ্যই আছে, প্রত্যেকের ই প্রাইভেসি থাকে। যাই হোক গোসল হয়েছে?
কথা বলতে বলতে তুরার পাশে বসল রুবি।
-জ্বি মা হয়েছে
-পায়ে কি এখনো ব্যাথা করছে?

-না মা ঠিক আছে, শুধু হাঁটতে গেলে একটু চিনচিন করছে আরকি,কাল সকাল হতে এটুকুও চলে যাবে
-গেলেই ভালো, হ্যাঁ যেটা বলতে এসেছি। তোমাদের বিয়ের তো অনেকদিন ই হলো। বিয়ের পর তো নিয়মানুযায়ী তোমাকে কিছুই তো দেওয়া হয়নি। এটা নাও
বলেই তুরার হাতে একটা মোটা পারের সোনালী সুতির কাজ করা খয়েরী রঙের শাড়ি তুলে দিলো। যেটা রুবি আসা থেকেই তুরা লক্ষ্য করছিল।
-এটা কি মা?

-এই শাড়িটা তোমার দিদুন দিয়েছিল আমায় বৌভাতের দিন। সেই সূত্রানুসারে এটা আমার তোমায় আরও আগেই দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তোমাদের বিয়েটা কিভাবে হয়েছে তা তো জানোই,সেরকম পরিস্থিতি হয়ে ওঠেনি।
তুরা কোনো উত্তরহীনা রুবির কথা শুনছে, সে আবারও বলল

-আজ রাইমার হবু শ্বশুরবাড়ি থেকে লোক আসবে, আহানের বিয়ের ব্যাপার টা সম্পর্কে তারাও অবগত। তুমি রাইমার ভাবি আর এ বাড়ির একমাত্র পুত্রবধূ। তাই আমি চাই আজ তোমাকে তারাও বাড়ির বউ বেশেই দেখুক। এই শাড়িটাই আজ পরবে কেমন? ব্লাউজ আর পেটিকোট এর ভেতরেই আছে, মাপ টা তোমার শরীরে বেমানান হবে নাহ হয়ত। তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?

-না না মা। এ তো আমার সৌভাগ্য, এটাকে আমি আপনি আর দিদুনের আশির্বাদ স্বরূপ নিলাম।অবশ্যই পরব আমি।
হাস্যজ্বল চেহারায় তুরার উত্তরে বেশ সন্তুষ্ট হলেন রুবি,যেন এমনটাই আশা করেছিলেন, মিষ্টি হেসে তুরার কপালে মমতাময়ী একটা চুমু দিয়ে বলল
-তুমি তাহলে তৈরি হয়ে নাও। আহানকে পাঠিয়ে একটু পর তোমায় নিচে নিয়ে যাব কেমন?

ছেলের মতই চাপা স্বভাবের রুবি খাতুন, তুরাকে মনে মনে স্নেহ করলেও বাহ্যিক ব্যবহারে তার প্রকাশ কম ই করে, আজ প্রথম শাশুড়ীর কাছে মায়ের আদর পেয়ে তুরাও অনেক বেশি আপ্লুত হয়। প্রজ্ব্যলিত হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।
রুবি খাতুন আর সময় ব্যয় না করে বেরিয়ে আসে,নিচে এখন অনেক কাজ তার।
রুবি বেরতেই তুরা এক হাতে ভর দিয়ে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়িটা নিজের গায়ে ধরলো। পাতলা সুতি কাপড়ের উপর খুব সুন্দর ডিজাইনের কাজ করা, আগের যুগের হলেও শাড়িটি বেশ নজরকাড়া। কিন্তু কথা হচ্ছে শাড়ি তো সে পরতে পারেনা,তখন রুবিকে তো বললও না সে,এখন কি করবে?

কিছুক্ষণ চিন্তিত হয়ে ভেবে তুরার মনে হলো সেদিন আহান যখন শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছিল পরার ধরন টা সে দেখেছে ভালো করে, চেষ্টা করলে নিশ্চয় পারবে। শাড়ির ভাজের ভেতর থেকে ব্লাউজ আর পেটিকোট বের করে পরে নিল। ব্লাউজের ফিটিং খারাপ না,তবে তার গায়ের মাপের ও নাহ। গলা টা বেশ বড়,, কাধ বেয়ে নেমে যাচ্ছে। তবুও আঁচল দিয়ে তো ঢেকেই রাখবে এই ভেবে শাড়িটা হাতে নিয়ে পরতে শুরু করল। বেশ কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে শাড়ির এক পাশ কোমরে গুঁজলো।

দীর্ঘ বিশ মিনিট সময় ব্যয় করে হাজার বার পরে খুলে অবশেষে শাড়িটা কোন রকমে পরতে স্বার্থক হলো তুরা। খুব একটা ভালো করে পরেনি তবে খারাপ ও লাগছে নাহ। কাধ থেকে আঁচল টা নামিয়ে আঙুলের ভাজে এক এক কুচি করে কাধের উপর রাখল। সব শেষে চুল গুলো আচড়ে নিয়ে কানের দুল পরতে নিলে খট করে দরজার নব মুচড়ানোর শব্দ হলো। আহান ঘরে ঢুকে শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে তুরার দিকে এক পলক চেয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আবারও ধপ করে তাকালো। গাঢ় খয়েরী রঙের শাড়ি তুরার ফর্সা গায়ে বেশ নজরকাড়া লাগছে, কোমর সমান চুলগুলো দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে, মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে রইলো আহান,ইদানীং মেয়েটাকে যেন তার চোখে একটু বেশিই সুন্দর লাগে।পরমুহূর্তেই আবার নিজের ভাবনার ইতি টেনে ঘুরে অন্যদিকে পা বাড়াল আহান

-শুনুন?
তুরার ডাকে থেমে তাকায় আহান,তুরা একটু এগিয়ে এসে আহানের সামনে বরাবর দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল
-আমাকে কেমন লাগছে?
তুরার নিকট হতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্ন শুনে আহান কিছুক্ষণ প্রতিক্রিয়া হীন তাকিয়ে থেকে বরাবরের মতো ছোট শব্দে উত্তর দিল
-যেমন লাগে

এত টুকুই বলে যেন সে প্রসন্ন, আহানের এই স্বভাব টা তুরার ভীষণ অপছন্দ। সবসময়ই এমন ছোট ছোট গোমড়া কথা বলা লাগে, একটু ভালো করে তো দেখলও নাহ। শেষে যদি ক্যাবলাকান্ত সেজে মেহমানের সামনে যাই তো তারই তো প্রেস্টিজ খারাপ হবে, বউ তো তার

-একটু ভালো করে দেখে বলুন নাহ।
ভালো মতো উত্তর না দিলে যে এই মেয়ে চুপ করবে না সেটা বুঝতে পেরে বিরক্তি নিয়ে তাকাল তুরার দিকে, হঠাৎ তুরার পেছনের আয়নায় চোখ যেতেই নজর আটকে গেল আহানের। ঢিলেঢালা ব্লাউজের ফিতা না লাগানোর ফলে পিঠের অর্ধেকাংশই উন্মুক্ত। টকটকে রঙের আবরণে মেদহীন বাকানো পিঠ একদম জ্বলজ্বল করে উঠল আহানের চোখে। দৃষ্টি সরিয়ে নিল তৎক্ষনাৎ
অন্যদিকে ফিরেই বলল

-আ আম,ওইটা ঠিক করো
আহানের এমন আমতাআমতা কথার মানে না বুঝে তুরা বলল
-কি ঠিক করব?
-উফ তুমি আসলেই ইরিটেটিং যেটা পারো না পরতে যাও কেনো
তুরা মুখটা শুকনো করে বলল

-কিন্তু আমিতো ঠিকঠাক ভাবেই পরলাম
-হ্যাঁ তো পেছনের মানচিত্র যে পুরোটাই দেখা যাচ্ছে সেটা ঢাকবে কে
আহানের এমন কথার জন্য তুরা মোটেও প্রস্তুত ছিল না, হাত বাড়িয়ে পিঠের পেছনে হাত দিতেই দেখল বড় গলার ব্লাউজ টার পিঠ বেশিরভাগ ই উন্মুক্ত যার ফলে পিঠ সহ তার ভেতরের অন্তর্বাস টাও স্পষ্ট। তড়িৎ গতিতে ঘুরে দাঁড়ালো তুরা,লজ্জায় তার গাল গরম হয়ে গেলো।

কিন্তু তুরা পিঠ লজ্জা থেকে বাচতে আয়নার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালেও অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ানোর ফলে পিঠ টা আহানের দিকেই করে রেখেছে। আহান ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল। এই মেয়ে তাকে পাগল করে ফেলবে! শুকনো ঢক গিলে গলা ভিজিয়ে এগিয়ে এলো। কাঁপা হাতেই তুরার ব্লাউজের ফিতায় হাত দিতে কেঁপে উঠলো তুরা। ঘাড় ঘুরিয়ে আহানের চোখে চেয়ে আবারও মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মিনমিন করে বলল

-আ আমি পারব,থাক।
-সাট আপ, মুখটা বন্ধ রাখো
বলেই ব্লাউজের ফিতাটা বেধে দিলো। আহানের উষ্ণ গরম শ্বাস আর ঠান্ডা হাতের মৃদু স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছে তুরা। পুরুষালি স্পর্শে বারবার তার শরীরে ঝংকার তুলছে,চোখ মুখ খিঁচিয়ে খামচে ধরল পরনের শাড়ি -কি হলো নামছ না কেনো
প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের মতো ধমকে উঠলো আহান,তুরা খানিক কেঁপে উঠে গাছের ডালটা শক্তপোক্ত করে ধরল, নিচে তাকাতেই আবারও মাথা টা কেমন করে উঠল। এবার তুরার নিজের উপর ই রাগ হচ্ছে কোন দুঃখে গাছে উঠতে এসেছিলো, চুমকি বলেছিল দারোয়ান কে দিয়ে বাঁধিয়ে নিবে,তাও যে কেনো পাকনামি টা করতে গেল।

-আপনি এখানে কেনো এসেছেন?
প্রতুত্তরের বদলে উল্টো নিজেই প্রশ্ন করল তুরা
-তোমাকে দেখতে এসেছি ষ্টুপিড!
দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে বলল আহান। তুরা শুকনো ঢক গিলে বলল
-আপনি এখান থেকে যান
-তোমাকে নামতে বলেছি না?
-আব হ্যাঁ নামছি তো এত চেঁচামেচি করার কি আছে আজব
-সকাল বেলা সকালে বাঁদরের মতো গাছে উঠে বসে আছো আবার বলছ চেঁচামেচি করছি, নামো তুমি আজকে বাঁদরামি বের করছি
আহানের ধমকানিতে তুরা বোকা বোকা মুখ করে বলল

-স্বামী, আপনি রেগে কেনো যাচ্ছেন গো। সকাল সকাল এত মাথা গরম করলে তো এ্যাসিডিটি হয়ে যাবে
-সাট আপ, লাস্ট বারের মতো বলছি তুমি নামবে নাকি আমি আসব
তুরা চুপচাপ এক হাতে ডাল আঁকড়ে ধরে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো। আহান শান্ত কণ্ঠে টেনে টেনে বলল
-বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে একটা ধিঙ্গি মেয়ে গাছে উঠে বসে আছে, দৃশ্যটা কেমন দেখায় ভাবতে পারছ?

আহানের ধিঙ্গি বলা শুনে তুরা মুখ ফুলিয়ে নিল, তুরার বিপরীত দিকেই দাঁড়িয়ে আছে আহান, অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উল্টো পথে হাঁটা ধরল। আহানের যাওয়ার দিকে চেয়ে তুরা এক হাতে ডাল ধরে নামতে গেলে ভারসাম্য হারিয়ে ধড়াম করে ডাল ভেঙে পরল মাটিতে,,মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো তুরা,চোখ জোড়া চিকচিক করে উঠলো অশ্রুবিন্দুতে। আহান অদূরেই ছিল, দৌড়ে এসে সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল

-শান্তি হয়েছে? হয়েছে শান্তি? একটা না একটা ব্লান্ডার না করলে তোমার হয়না?
তুরা অশ্রুসিক্ত চোখের কান্নাভেজা গলায় বলল
-আমিতো ইচ্ছে করে পরিনি,ডাল ভেঙে গেল

চোখে মুখে ভীষণ বিরক্তি নিয়ে আহান হাত বাড়িয়ে দিলো, তুরা এক হাত এগিয়ে খামচে ধরল আহানের হাত। পরার সময় পা টা বেঁকে গেছিল বলে ব্যাথায় টনটন করছে, গোড়ালির দিকটা লাল হয়ে গেছে। আহানের হাত ধরে উঠে দাড়ালেও হাটতে নিলেই হোচট খেল। আহান রেষ পূর্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে কোলে তুলে নিল তুরাকে। ব্যথায় চোখ মুখ খিচিয়ে রইল তুরা। আহান তুরাকে নিয়ে সোজা ঘরের ভেতর ঢুকলো।

তুরাকে আহানের কোলে দেখে সবাই হতভম্ব হলেও তুরার চোখে মুখ কান্না ভেজা আর এলোমেলো অবস্থা দেখে কপালে ভাজ পরল সবার। রাইমা কেবলই সিড়ি বেয়ে নামছিল,আহানকে এভাবে হন্তদন্ত হয়ে তুরাকে কোলে নিয়ে আসতে দেখে আঁতকে উঠে দ্রুতপায়ে ছুটে এসে বলল

-একি ভাই,তুরার কি হয়েছে, ও কাঁদছে কেন? আর ওকে তুলে এনেছিস কেন? কি হয়েছে ওর?
রাইমার একদমে করা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিল না আহান, এগিয়ে গিয়ে তুরাকে সোফাতে বসিয়ে বলল
-সেসব পরে শুনিস,আগে ফ্রিজ থেকে আইসকিউব আন আপি
আহানের কোলে তুরাকে দেখে আমেনা বেগম মনে মনে আশ্চর্যজনক ভাবে খুশি হলেও পরমুহূর্তেই আঁতকে উঠে, ব্যাথা কাতর হাঁটুতে ভর দিয়েই উঠে এসে তুরার পাশে বসে বলেন

-কি হয়েছে দাদুভাই, একটু আগেও তো ভালো ছিল,পায়ে কি হলো নাতবউয়ের
-কি আর হবে, না এক দন্ড নিজে স্থির বসে না অন্যকে সস্তি দেয়। বাঁদরামি করে গাছে উঠে পরে গিয়ে পা মচকেছে
তুরার ডান পা টা সন্তপর্ণে টি টেবিলের উপরে তুলে রাখতে রাখতে ব্যস্ত স্বরে বলল আহান।
-এই নে আইস কিউব

বলেই বাটিতে রাখা কয়েকটা বরফ আর একটা কাপড় এগিয়ে দিল আহানের সামনে। আহান পাতলা কাপড় টার মাঝে বরফের টুকরো রেখে পেঁচিয়ে খুব যত্নসহকারে ধরল তুরার পায়ের গোড়ালিতে
-বাবু কি হয়েছে বউয়ের,রাইমা বলল পায়ে ব্যথা পেয়েছে নাকি
রান্নাঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আসলো মিনু আর রুবি। বাড়িতে মেহমান আসা উপলক্ষে রান্নাঘর জুড়ে বেশ ব্যস্ততা আজ। তাই রুবি আর চুমকির সাথে মিনুও হাতে হাতে সব কাজ এগিয়ে দিচ্ছিলো। রাইমা তুরার কথা বলে বরফ আনতে গেলে তারাও চিন্তিত হয়ে বেরিয়ে আসে রাইমার পিছু পিছু

-পা টা তো অনেক খানি ফুলে গেছে। কি করে হলো এসব তুরা?
রুবির কথার পৃষ্ঠে তুরা চুপচাপ তাকিয়ে থাকাই উত্তর হিসেবে দিল। আহান পায়ে বরফ চাপতে চাপতে বলল
-গাছ থেকে পরে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে
এক লাইনের উত্তর দিয়েই প্রসন্ন হলো সে। কিন্ত প্রসন্ন হলো না তুরা, সে কি ইচ্ছে করে পরেছে? ডালটাই তো একাই ভেঙে গেল। সে কি বলেছিলো ডাল তুই ভেঙে পর সাথে আমাকেও ফেল, অত্যন্ত ব’জ্জাত লোকটা। তার উপর পায়ে বরফ চাপায় ভীষণ যন্ত্রণাও করছে৷ কিন্তু একটা টু শব্দ করার সাহস হচ্ছে নাহ,একবার পা সরিয়ে নিতে নিলেই চোখ রাঙানো খেয়েছে আহানের।

-কি যে কর তুমি বউ,সবসময় ছুটোছুটি। এই যে এখন মেহমান এসে দেখবে বাড়ির বউ পা ভেঙে বসে আছে, এসব কি ভালো দেখায়
মিনুর কথার প্রেক্ষিতে শুধু দীর্ঘশ্বাস ই ফেললো রুবি। তুরা চোখ ভরা পানি নিয়েই বলল
-কিন্ত আমারতো পা ভাঙেনি ফুফু আম্মা, শুধু একটু মচকেছে।
-ওমা দেখ মেয়ের কথা। বলি টাসটাস কথা না বলে একটু দেখে শুনে চললেও তো পারো
তুরা কিছু বলতে নিবে তার আগেই আহান বলে উঠলো

-স্প্রে করলে ব্যথা চলে যাবে। উঠতে পারবে তুমি?
তুরা সামান্য ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিলেও উঠে একপার বেশি এগোতে পারল না, ব্যথাটা গোড়ালি তে হওয়ায় দাড়াতে অক্ষম হলো। আহান ভীষণ বিরক্তি নিয়ে ওর দিকে চেয়ে ‘স্টুপিড মেয়ে’ বলে বিড়বিড়িয়ে ভরা ডাইনিং রুমে মা ফুফু দিদুন কাওকে তোয়াক্কা না করে তুরাকে আবারও কোলে তুলে গটগট করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। ঘরে এসে তুরাকে খাটের উপর বসিয়ে, ড্রয়ার থেকে স্প্রে বের করে পায়ে স্প্রে করে দিয়ে তুরার সামনে দাঁড়িয়ে বলল

-দিস ওয়াজ দ্যা লাস্ট টাইম। এরপর থেকে যদি আর কোন রকম পাকনামি করেছ তো আমার চেয়ে খারাপ কেও হবে নাহ,মাইন্ড ইট
বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো আহান। তুরা আহানের যাওয়ার পানে হা করে চেয়ে ভ্রু কুচকে বলল
-এমনেও আপনার চেয়ে খারাপ কেও নাই ও। ব’জ্জাত বেডা মানুষ

বাথরুমের দরজা খুলে এক হাতে দেওয়ালে ভর দিয়ে এক পা উচিয়ে খুব আস্তে ধীরে বেরোলো
তুরা, আস্তে আস্তে খাটের কাছে এসে বসে চুলের পানি গুলো মুছতে লাগল। ঘড়ির কাটার স্থান ঠিক দুপুর একটা জানান দিচ্ছে। তুরার পায়ের ব্যথাটা অনেকটাই কমে এসেছে, সকালের পর আর ঘর থেকে বের হয়নি সে,হয়নি বলতে আহান বেরোতে দেয়নি। ওর খাবার রাইমা এনে দিয়েছে উপরে। এতক্ষণ রাইমা ওর সাথেই ছিল,কিন্তু দুপুর হওয়াই সেও গোসলে গেছে, মেহমান আসার সময় ও হয়ে এসেছে। কোথায় ভেবেছিল আজ মা কে সব রান্নায় সাহায্য করবে উল্টো নিজেই পা তুলে বসে আছে খাটে, নিজের কাজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে তুরার।

-আসব তুরা?
নারী কণ্ঠের কথায় তুরা চুল মুছা থামিয়ে দরজায় তাকিয়ে দেখল রুবি খাতুন দাঁড়িয়ে আছে, গাল প্রসারিত করে হেসে তুরা বলল
-মা,আসুন না। অনুমতি নেওয়ার কি আছে
-অবশ্যই আছে, প্রত্যেকের ই প্রাইভেসি থাকে। যাই হোক গোসল হয়েছে?
কথা বলতে বলতে তুরার পাশে বসল রুবি।
-জ্বি মা হয়েছে
-পায়ে কি এখনো ব্যাথা করছে?

-না মা ঠিক আছে, শুধু হাঁটতে গেলে একটু চিনচিন করছে আরকি,কাল সকাল হতে এটুকুও চলে যাবে
-গেলেই ভালো, হ্যাঁ যেটা বলতে এসেছি। তোমাদের বিয়ের তো অনেকদিন ই হলো। বিয়ের পর তো নিয়মানুযায়ী তোমাকে কিছুই তো দেওয়া হয়নি। এটা নাও
বলেই তুরার হাতে একটা মোটা পারের সোনালী সুতির কাজ করা খয়েরী রঙের শাড়ি তুলে দিলো। যেটা রুবি আসা থেকেই তুরা লক্ষ্য করছিল।
-এটা কি মা?

-এই শাড়িটা তোমার দিদুন দিয়েছিল আমায় বৌভাতের দিন। সেই সূত্রানুসারে এটা আমার তোমায় আরও আগেই দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তোমাদের বিয়েটা কিভাবে হয়েছে তা তো জানোই,সেরকম পরিস্থিতি হয়ে ওঠেনি।
তুরা কোনো উত্তরহীনা রুবির কথা শুনছে, সে আবারও বলল
-আজ রাইমার হবু শ্বশুরবাড়ি থেকে লোক আসবে, আহানের বিয়ের ব্যাপার টা সম্পর্কে তারাও অবগত। তুমি রাইমার ভাবি আর এ বাড়ির একমাত্র পুত্রবধূ। তাই আমি চাই আজ তোমাকে তারাও বাড়ির বউ বেশেই দেখুক। এই শাড়িটাই আজ পরবে কেমন? ব্লাউজ আর পেটিকোট এর ভেতরেই আছে, মাপ টা তোমার শরীরে বেমানান হবে নাহ হয়ত। তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?

-না না মা। এ তো আমার সৌভাগ্য, এটাকে আমি আপনি আর দিদুনের আশির্বাদ স্বরূপ নিলাম।অবশ্যই পরব আমি।
হাস্যজ্বল চেহারায় তুরার উত্তরে বেশ সন্তুষ্ট হলেন রুবি,যেন এমনটাই আশা করেছিলেন, মিষ্টি হেসে তুরার কপালে মমতাময়ী একটা চুমু দিয়ে বলল
-তুমি তাহলে তৈরি হয়ে নাও। আহানকে পাঠিয়ে একটু পর তোমায় নিচে নিয়ে যাব কেমন?

ছেলের মতই চাপা স্বভাবের রুবি খাতুন, তুরাকে মনে মনে স্নেহ করলেও বাহ্যিক ব্যবহারে তার প্রকাশ কম ই করে, আজ প্রথম শাশুড়ীর কাছে মায়ের আদর পেয়ে তুরাও অনেক বেশি আপ্লুত হয়। প্রজ্ব্যলিত হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।
রুবি খাতুন আর সময় ব্যয় না করে বেরিয়ে আসে,নিচে এখন অনেক কাজ তার।
রুবি বেরতেই তুরা এক হাতে ভর দিয়ে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়িটা নিজের গায়ে ধরলো। পাতলা সুতি কাপড়ের উপর খুব সুন্দর ডিজাইনের কাজ করা, আগের যুগের হলেও শাড়িটি বেশ নজরকাড়া। কিন্তু কথা হচ্ছে শাড়ি তো সে পরতে পারেনা,তখন রুবিকে তো বললও না সে,এখন কি করবে?

কিছুক্ষণ চিন্তিত হয়ে ভেবে তুরার মনে হলো সেদিন আহান যখন শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছিল পরার ধরন টা সে দেখেছে ভালো করে, চেষ্টা করলে নিশ্চয় পারবে। শাড়ির ভাজের ভেতর থেকে ব্লাউজ আর পেটিকোট বের করে পরে নিল। ব্লাউজের ফিটিং খারাপ না,তবে তার গায়ের মাপের ও নাহ। গলা টা বেশ বড়,, কাধ বেয়ে নেমে যাচ্ছে। তবুও আঁচল দিয়ে তো ঢেকেই রাখবে এই ভেবে শাড়িটা হাতে নিয়ে পরতে শুরু করল। বেশ কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে শাড়ির এক পাশ কোমরে গুঁজলো।

দীর্ঘ বিশ মিনিট সময় ব্যয় করে হাজার বার পরে খুলে অবশেষে শাড়িটা কোন রকমে পরতে স্বার্থক হলো তুরা। খুব একটা ভালো করে পরেনি তবে খারাপ ও লাগছে নাহ। কাধ থেকে আঁচল টা নামিয়ে আঙুলের ভাজে এক এক কুচি করে কাধের উপর রাখল। সব শেষে চুল গুলো আচড়ে নিয়ে কানের দুল পরতে নিলে খট করে দরজার নব মুচড়ানোর শব্দ হলো। আহান ঘরে ঢুকে শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে তুরার দিকে এক পলক চেয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আবারও ধপ করে তাকালো। গাঢ় খয়েরী রঙের শাড়ি তুরার ফর্সা গায়ে বেশ নজরকাড়া লাগছে, কোমর সমান চুলগুলো দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে, মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে রইলো আহান,ইদানীং মেয়েটাকে যেন তার চোখে একটু বেশিই সুন্দর লাগে।পরমুহূর্তেই আবার নিজের ভাবনার ইতি টেনে ঘুরে অন্যদিকে পা বাড়াল আহান

-শুনুন?
তুরার ডাকে থেমে তাকায় আহান,তুরা একটু এগিয়ে এসে আহানের সামনে বরাবর দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল
-আমাকে কেমন লাগছে?
তুরার নিকট হতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্ন শুনে আহান কিছুক্ষণ প্রতিক্রিয়া হীন তাকিয়ে থেকে বরাবরের মতো ছোট শব্দে উত্তর দিল

-যেমন লাগে
এত টুকুই বলে যেন সে প্রসন্ন, আহানের এই স্বভাব টা তুরার ভীষণ অপছন্দ। সবসময়ই এমন ছোট ছোট গোমড়া কথা বলা লাগে, একটু ভালো করে তো দেখলও নাহ। শেষে যদি ক্যাবলাকান্ত সেজে মেহমানের সামনে যাই তো তারই তো প্রেস্টিজ খারাপ হবে, বউ তো তার
-একটু ভালো করে দেখে বলুন নাহ।

ভালো মতো উত্তর না দিলে যে এই মেয়ে চুপ করবে না সেটা বুঝতে পেরে বিরক্তি নিয়ে তাকাল তুরার দিকে, হঠাৎ তুরার পেছনের আয়নায় চোখ যেতেই নজর আটকে গেল আহানের। ঢিলেঢালা ব্লাউজের ফিতা না লাগানোর ফলে পিঠের অর্ধেকাংশই উন্মুক্ত। টকটকে রঙের আবরণে মেদহীন বাকানো পিঠ একদম জ্বলজ্বল করে উঠল আহানের চোখে। দৃষ্টি সরিয়ে নিল তৎক্ষনাৎ
অন্যদিকে ফিরেই বলল

-আ আম,ওইটা ঠিক করো
আহানের এমন আমতাআমতা কথার মানে না বুঝে তুরা বলল
-কি ঠিক করব?
-উফ তুমি আসলেই ইরিটেটিং যেটা পারো না পরতে যাও কেনো
তুরা মুখটা শুকনো করে বলল
-কিন্তু আমিতো ঠিকঠাক ভাবেই পরলাম

-হ্যাঁ তো পেছনের মানচিত্র যে পুরোটাই দেখা যাচ্ছে সেটা ঢাকবে কে
আহানের এমন কথার জন্য তুরা মোটেও প্রস্তুত ছিল না, হাত বাড়িয়ে পিঠের পেছনে হাত দিতেই দেখল বড় গলার ব্লাউজ টার পিঠ বেশিরভাগ ই উন্মুক্ত যার ফলে পিঠ সহ তার ভেতরের অন্তর্বাস টাও স্পষ্ট। তড়িৎ গতিতে ঘুরে দাঁড়ালো তুরা,লজ্জায় তার গাল গরম হয়ে গেলো।

কিন্তু তুরা পিঠ লজ্জা থেকে বাচতে আয়নার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালেও অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ানোর ফলে পিঠ টা আহানের দিকেই করে রেখেছে। আহান ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল। এই মেয়ে তাকে পাগল করে ফেলবে! শুকনো ঢক গিলে গলা ভিজিয়ে এগিয়ে এলো। কাঁপা হাতেই তুরার ব্লাউজের ফিতায় হাত দিতে কেঁপে উঠলো তুরা। ঘাড় ঘুরিয়ে আহানের চোখে চেয়ে আবারও মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মিনমিন করে বলল

তুমি আমি দুজনে পর্ব ১৭

-আ আমি পারব,থাক।
-সাট আপ, মুখটা বন্ধ রাখো
বলেই ব্লাউজের ফিতাটা বেধে দিলো। আহানের উষ্ণ গরম শ্বাস আর ঠান্ডা হাতের মৃদু স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছে তুরা। পুরুষালি স্পর্শে বারবার তার শরীরে ঝংকার তুলছে,চোখ মুখ খিঁচিয়ে খামচে ধরল পরনের শাড়ি

তুমি আমি দুজনে পর্ব ১৯