প্রেমের পরশ শেষ পর্ব 

প্রেমের পরশ শেষ পর্ব 
লেখিকাঃ দিশা মনি

সময় বহমান। সময়ের স্রোত এগিয়ে চলে আপন গতিতে। কারো জন্য অপেক্ষা করে না বা কারো আশায় বসেও থাকে না। এভাবেই গড়িয়ে গেছে ৫, ৫ টি বছর।
ছোয়া আজ একটি স্বনামধন্য স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে চাকরি করছে। নিজের বাবার ইচ্ছা সে পূরণ করতে পারছে৷ এজন্য অনেক বেশি খুশি সে।

আমানও খুব খুশি নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর এই সাফল্যে। তবে এত সুখের মাঝেও তাদের মধ্যে এতদিন একটা অপূর্ণতা ছিল। সেটা হলো অনেক চেষ্টা করেও ছোয়ার কিছু সমস্যা থাকায় সে সন্তান গর্ভধারণ করতে পারে নি। তবে অনেক ডাক্তার দেখিয়ে অবশেষে ছোয়ার সমস্যা দূর হয়েছে। এখন ছোয়া কনসিভ করার জন্য একেবারে উপযুক্ত। তাই আমান ও ছোয়া চেষ্টা করছে একটি নতুন প্রাণ পৃথিবীতে আনতে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এতকিছুর মধ্যে আবার আলিয়ার বিয়ের কথাও তুলছেন আব্দুল হোসেন। আজকাল তার শরীর বেশি ভালো যাচ্ছে না। দু দু-বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। তার মনে হয়, তার আয়ু আর বেশিদিন নেই। তাই নিজে বেচে থাকতেই নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে চান তিনি।
তবে হুট করে নিজের মেয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে তার বিয়ে দিতে চান নি আব্দুল হোসেন। তাই তো আলিয়াকে নিজের রুমে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলেন,

‘আমি তোর বিয়ে দিতে চাই মা। কিন্তু তার আগে মনে হয় তোর সাথে কথা বলে নেয়া জরুরি। কারণ তুই বড় হয়েছিস। তোরও তো কোন পিছব অপছন্দ থাকতে পারে। আচ্ছা আলিয়া তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?’
আলিয়া কি উত্তর দেবে বুঝতে না পেরে চুপ করে থাকে। কারণ সে তো শাহিনকে পছন্দ করে। কিন্তু শাহিনের কথা আর বাবাকে কিভাবে বলবে বুঝতে পারছে না। অন্যদিকে শাহিন এতগুলো দিন থেকে আলিয়ার জন্য প্রতীক্ষা করেছে তাই তাকেও নিরাশ করতে চায় না আলিয়া। তাই নিজের সাথে একপ্রকার যুদ্ধ করেই সে বলে ওঠে,

‘আমি একজনকে পছন্দ করি আব্বু৷ তার সাথে আমার অনেক দিনের সম্পর্ক।’
আব্দুল হোসেন মৃদু হেসে বললেন,
‘এমন কিছুই ভাবছিলাম আমি। আমি কিন্তু অন্য বাবাদের মতো না যে তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করব। তুই যাকে পছন্দ করিস সে বড়লোক কি ধনী, চাকরি করে কি না এসব কিছু আমি দেখব না। শুধু দেখব তার চরিত্র কেমন। আমি চাই একজন সৎ চরিত্রবান ছেলের সাথে তোর বিয়ে দিতে চাই। কারণ আমি মনে করি চরিত্র সুন্দর তো সব সুন্দর।’
নিজের বাবার কথায় আলিয়ার ভয় অনেকটাই দূর হলো। তাই সে সাহস করে বলল,

‘আমি যাকে পছন্দ করি তাকে তুমি চিনো আব্বু।’
আব্দুল হোসেন কৌতুহলী হয়ে জানতে চান,
‘কে সে?’
আলিয়া কিছুটা সময় নিয়ে বললো,
‘তোমার কোম্পানিরই আস্থাভাজন একজন কর্মচারী শাহিন খান।’

আব্দুল হোসেন অবাক হন প্রচুর। তার নাকের ডগায় তার মেয়ে তারই কোম্পানির একজনের সাথে প্রেম করল অথচ তিনি ধরতেও পারলেন না। তবে তিনি খুশিই হলেন। কারণ শাহিনকে তিনি চেনেন। শাহিন মানুষ হিসেবে এবং স্বামী হিসেবে নিঃসন্দেহে সেরা হবে। তাই আব্দুল হোসেন আপত্তি করলেন না মোটেই। দ্রুত বলে উঠলেন,

‘ঠিক আছে। আমি শাহিনের সাথে কথা বলে দেখব। প্রয়োজনে কালই শাহিনকে স্বপরিবারে আসতে বলব। সেখানে সবার সম্মতিক্রমেই নাহয় তোমাদের বিয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা আগাবো।’
আলিয়া খুশি হয়ে আব্দুল হোসেনকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘ধন্যবাদ আব্বু। তুমি এই পৃথিবীর বেস্ট আব্বু।’

রাতে ডিনারের সময় আলিয়ার সাথে শাহিনের সম্পর্কের ব্যাপারে কথা বললেন আব্দুল হোসেন। সাথে এও বললেন তার এই সম্পর্কে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু জান্নাতুল খাতুন এবং আমান প্রবল আপত্তি তুললো এই সম্পর্ক নিয়ে। এর মূল কারণ আলিয়া এবং শাহিনের বয়সের তফাৎ। জান্নাতুল খাতুন বললেন,
‘শাহিন ছেলে হিসেবে নিঃসন্দেহে ভালো। কিন্তু ওর বয়সটাও তো দেখতে হবে। আলিয়ার থেকে কম করে হলেও ১০ বছরের বড় হবে। তাই এই বিয়ের পক্ষে আমি নই।’

মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমানও বললো,
‘হুম আম্মু একদম ঠিক বলেছে। আমিও আম্মুর সাথে একমত।’
আব্দুল হোসেন তাদের কিছু বোঝাতে যাবেন তার আগেই আলিয়া অভিমান করে খাবারের টেবিল থেকে উঠে যায়৷ অতঃপর নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে কাদতে থাকে।

ডাইনিং টেবিলে থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কেউই খাওয়া সম্পূর্ণ করতে পারে না।
রাতে নিজেদের রুমে এসে ছোয়া আমানকে বুঝিয়ে বলে,
‘দেখো, ভালোবাসা কিন্তু কোন অন্যায় নয়। আর ভালোবাসা যে কারো সাথে হতে পারে। যদি দুজন মানুষ একে অপরের সাথে সুখী হতে পারে তাহলে এতে সমস্যা কোথায়?’
আমান বললো,

‘মানছি তোমার কথা ঠিক। কিন্তু ওদের বয়স,,,’
ছোয়া মাথায় হাত দিয়ে বলে,
‘এতক্ষণ কি বললাম আপনাকে। ভালোবাসার ক্ষেত্রে এটা ফ্যাক্ট না। দুজনের মধ্যে যদি ভালো বোঝাপড়া থাকে তাহলে সম্পর্ক ঠিকই টিকে থাকবে। আর আমি তো আলিয়ার কাছে শুনেছি ওদের দীর্ঘ ৫ বছরের সম্পর্ক। এতদিন যখন টিকেছে সামনেও ভালো হবে নিশ্চয়ই।’

আমান বুঝল ব্যাপারটা। অতঃপর বললো,
‘হুম তুমি ঠিকই বলেছো৷ যাইহোক আজকে রাতে আবার জেগে থাকার প্রস্তুতি নিয়েছ তো?’
ছোয়া লজ্জায় লাল হয়ে বলে,
‘যাহ, এত দিন হয়ে গেল বিয়ের তবুও তুমি আর বদলালে না।’
‘বদলাতে চাইও না। তোমায় সবসময় এভাবেই প্রেমের পরশে মুড়িয়ে রাখতে চাই।’
অতঃপর চলে আসে আরেকটি সুন্দর রাত। যেই রাত সাক্ষী হয় পবিত্র ভালোবাসার।

গতকাল রাতে আব্দুল হোসেন নিজের স্ত্রী জান্নাতুল খাতুনকে বুঝিয়ে বলেছেন আলিয়া ও শাহিনের ব্যাপারে। তাই এখন তারও কোন আপত্তি নেই।
সবাই যেহেতু রাজি আছে তাই আজকেই শাহিনকে পুরো পরিবার সমেত ডাকা হলো। দুই পরিবার মিলে বিয়ের কথাবার্তা বলতে নিতেই এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল যা অবিশ্বাস্য। শাহিনের মা নেই, অনেক আগেই মারা গেছেন। শাহিনের বাবাও অনেক অসুস্থ। শাহিনের বাবা বললেন,

‘আমি তো এতদিন নিজের ছেলেকে বিয়ের কথা বলে বলে বিরক্ত হয়ে গেছিলাম কিন্তু ও বিয়ে করতেই চায়নি। মাঝখানে তো মনে হয়েছিল ও বিয়েই করতে চায়না। তবে এখন বুঝলাম ও কেন এতদিন বিয়ে করতে চায়নি। আমার অনেক গুরুতর রোগ হয়েছে, ডাক্তার বলেছে জীবনের কোন গ্যারান্টি নেই। এমনো হতে পারে কালকে সকালে সূর্য আমি নাও দেখতে পারি। তাই আমি চাই,সবকিছু যখন ঠিকই আছে তাহলে আজই কাজি ডেকে ওদের বিয়ে পড়িয়ে দেই।’

তার এই অনুরোধ ফেরালেন না আব্দুল হোসেন। আমান,জান্নাতুল খাতুন যদিও এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাইছিলেন না কিন্তু আব্দুল হোসেন তাদের বুঝিয়ে রাজি করিয়ে নিলেন। অতঃপর কাজি ডেকে এনে নির্বিঘ্নেই তাদের বিয়ে হয়ে গেলো।
বিয়ে হয়ে গেলেও আপাতত আলিয়া নিজের বাপের বাড়িতে থাকবে। সেই হিসেবে বাপের বাড়িতেই তার বাসরের আয়োজন করা হলো। এভাবেই মিলিত হলো দুজন ভালোবাসার মানুষ।

ছোয়ার শরীর কিছুদিন ধরে ভালো যাচ্ছিল না। মাথাব্যথা, বমি, পেটে ব্যাথা লেগেই ছিল। তাই ছোয়া আর দেরি না করে ডাক্তার দেখাল৷ আর এতে এমন কিছু সামনে এলো যা ছোয়াকে খুশি করে দিল৷ সে মা হতে চলেছে। মা হওয়া একটি মেয়ের কাছে কত আনন্দের তা ভাষায় বহিঃপ্রকাশ করা যাবে না।
বাড়িতে ফিরে সাথে সাথেই আমানকে খুশির খবরটি দিলো ছোয়া। আমান সাথেই সাথেই ছোয়াকে কোলে তুলে নিলো। ছোয়ার পে’টে চুমু খেয়ে বললো,

‘এই দিনটার জন্য তো কতদিন অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে আমি বাবা ডাক শুনতে পাবো। আমি যে কত খুশি তা বলে বোঝাতে পারব না। আজ আমার নিজেকে এই পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে।’
ছোয়া আমানের হাত নিজের পেটে রেখে বলে,

‘আমাদের সন্তান আসছে, তার জন্য আমাদের ভালো মা-বাবা হতে হবে। আমরা কি পারব?’
আমান উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে,
‘পারবো। পারতে আমাদের হবেই।’
এভাবেই দুজন নিজেদের অনাগত সন্তানের জন্য আনন্দিত হয়ে সুন্দর মুহুর্ত ভাগ করে নেয়। এভাবেই প্রেমের পরশ দুজন মানুষকে সুখ এনে দেয়।

প্রেমের পরশ পর্ব ৩২

অবশেষে গল্পটা আমি শেষ করলাম। গল্পটা কেমন লাগল জানাবেন। গল্প সম্পর্কে আপনার ভালো লাগা খারাপ লাগা সব কিছু শেয়ার করতে পারেন নিদ্বিধায়। এছাড়া গল্পটা সম্পর্কে আপনার মতামত দিতে পারেন যে কিভাবে করলে আরো ভালো হতো। যাতে পরবর্তী গল্পে সেগুলো খেয়াল রাখতে পারি।

সমাপ্ত