প্রেমের পরশ পর্ব ৩২

প্রেমের পরশ পর্ব ৩২
লেখিকাঃ দিশা মনি

ছোয়া সকালে ঘুম থেকে উঠে অবলোকন করল যে আমান তার পাশে নেই। ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে ছোয়া। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে সকাল ৯ টা বেজে গেছে। ছোয়ার আপনা আপনি মাথায় হাত উঠে যায়। সে জিভ কে’টে বলে,
‘ইস এত দেরি করে ফেললাম। ভার্সিটিতে মনে হয় এতক্ষণে ক্লাসও শুরু হয়ে গেছে। কেউ আমাকে ডাকলোও না।’

ছোয়া আর বেশি সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিল। অতঃপর রওনা দিল ভার্সিটির দিকে। ছোয়া ভার্সিটিতে পৌছানো মাত্রই আমান তাকে কল দিল। ছোয়া ফোন রিসিভ করেই নিজের সব ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলল,
‘তুমি আমায় ডাকলে না কেন? তোমার জন্য আমার ভার্সিটিতে পৌছাতে দেরি হয়ে গেল।’
আমান মশকরা করে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘আসলে সারারাত তুমি যেভাবে কষ্ট করে জেগে কা’টিয়ে দিয়েছ তাই আমি তোমার মায়াবী চেহারা দেখে তোমার ঘুম ভাঙ্গাই নি।’
আমানের কথায় ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল ছোয়া। তার মানসপটে ভেসে উঠলো গত কালকের রাতের মধুর স্মৃতি। আমান মৃদু হেসে ফোন রেখে দেয়। কারণ সে বুঝতে পেরে গেছে ছোয়ার এখন লজ্জায় রাঙা অবস্থা হয়ে গেছে।
ছোয়া নিজেকে দ্রুত সামলে নিয়ে ভার্সিটিতে ক্লাসের দিকে রওনা দিলো। ইতিমধ্যে দুটো ক্লাস হয়ে গেছে। ছোয়ার আফসোসের পরিমাণ বাড়ল।

ক্যান্টিনে মুখোমুখি বসে আছে ছোয়া ও নাদিয়া। ক্লাস শেষ হওয়া মাত্রই ছোয়াকে একপ্রকার জোরপূর্বক টেনে ক্যান্টিনে নিয়ে এসেছে নাদিয়া। ছোয়া বিরক্তির সুরে বলল,
‘কি জন্য আনলি এখানে বলবি তো।’
নাদিয়া বলতে শুরু করল,

‘তুই তো স্বামীকে পেয়ে বেস্টুকে ভুলে গেছিস। না বলেছিস নিজের বিয়ের কথা আর না হানিমুনের। আমাকে কি তুই নিজের বান্ধবী মনে করিস না?’
ছোয়া আমতাআমতা করে বলল,
‘আসলে সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল যে,,,আচ্ছা যাইহোক তোকে কেন জানি খুব সিরিয়াস লাগছে। কিছু কি হয়েছে?’
নাদিয়া ছোয়ার প্রশ্নের জবাবে বিষন্নতা নিয়ে বলল,

‘জানিস আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে, আগামী সপ্তাহেই আমার বিয়ে।’
ছোয়া খুশি হয়ে গিয়ে বলে,
‘বাহ, এটা তো দারুণ খবর। তোর বিয়েতে কিন্তু অনেক মজা করব।’
‘মজা পরে করিস। আগে আমার কথা শোন। আমি বিয়ে নিয়ে অনেক দ্বিধা দ্বন্দে আছি। কারণ যার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে তাকে চিনি না পর্যন্ত। বাবার নাকি কোন বন্ধুর ছেলে। বারকয়েক দেখা হয়েছে তার সাথে। ছেলেটা এমনিতে ভালো, একজন ডাক্তার। কিন্তু এভাবে কি বিয়ে হয়?’

‘কেন হয়না?’
নাদিয়া আফসোস করে বলল,
‘এই দেখ যেমন তোর সাথে তোর চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে হলো৷ তোরা আগে থেকেই একে অপরকে চিনতি, তাই তো এত ভালো বোঝাপড়া তোদের মধ্যে।’
ছোয়া নাদিয়াকে বুঝিয়ে বলল,
‘দেখ এরেঞ্জ ম্যারেজ খারাপ কিছু না। বিয়ের আগে যতটুকু খোজ নেওয়া সম্ভব নে। একে অপরের ভালো লাগা, মন্দ লাগা জেনে নে। এটুকুই এনাফ। এমন হতে পারে বিয়ের পর তোদের মধ্যে অনেক ভালো সম্পর্ক হবে। প্রেমের পরশে স্নিগ্ধ হবি দুজনে।’

নাদিয়া সহমত প্রকাশ করে বলে,
‘হয়তো তুই ঠিকই বলছিস।’
অতঃপর দুজনে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ে।

এক সপ্তাহ যেন চোখের নিমেষেই অতিবাহিত হলো। আজকে নাদিয়ার গায়ে হলুদ। সেই উপলক্ষে নাদিয়ার বাড়িতে এসেছে ছোয়া৷ তবে একা আসেনি৷ সাথে করে নিয়ে এসেছে আলিয়াকেও। জান্নাতুল খাতুনই তাকে আসতে বলেছে কারণ পড়াশোনা নিয়ে সারাদিন এত ব্যস্ত থাকে যে অন্য কোথাও মনও দেয় না।
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে এসে শাহিনকে দেখে অবাক হয়ে যায় ছোয়া। পরবর্তীতে জানা যায় শাহিনের চাচাতো ভাইয়ের সাথেই নাদিয়ার বিয়ে হচ্ছে।

শাহিন গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে এসেছে থেকে আলিয়াকেই দেখে যাচ্ছে। আলিয়াও এক সময় তাকায় শাহিনের দিকে। মেয়েদের দৃষ্টি অনেক সজাগ হয়। আলিয়ার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু ঘটে নি। সে শাহিনের চোখের দৃষ্টি দেখেই বুঝে ফেলেছে তার মনের কথা। তাই তো তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে। শাহিনের দৃষ্টির অগোচরে যাওয়ার জন্য নাদিয়ার বাড়ির ছাদে চলে আসে আলিয়া।

তবে কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয়, সেখনেই সন্ধ্যা হয়। এক্ষেত্রেও তাই হলো। শাহিনও আলিয়ার পিছু পিছু ছাদে চলে এলো। আলিয়া একটু স্পষ্টবাদী মেয়ে। তাই সে সরাসরি শাহিনের সামনে গিয়ে বললো,
‘আপনি কি আমায় পছন্দ করেন?’
শাহিন থতমত খেয়ে গেল৷ তবে নিজের মনের কথা লুকিয়ে রাখার অভিব্যক্তি তার ছিল না৷ সেই কারণে স্বীকার করে নেয় নিজের অনুভূতি। শাহিন বলল,

‘হ্যা পছন্দ করি।’
আলিয়া নিজের চোখের চশমা ঠিক করে নিয়ে বলে,
‘এটাই সন্দেহ করেছিলাম। হোয়াটএভার, ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমি এসব প্রেম ভালোবাসা পছন্দ করি না। আমি মন দিয়ে স্টাডি করতে চাই। তাই ভালো হবে যদি আপনি আমার পিছু নেয়া ছেড়ে দেন।’
কথাটা বলেই ছাদ থেকে নেমে আসে আলিয়া। শাহিন আনমনে হেসে দেয়। নিজে নিজেই বিড়বিড় করে বলে,
‘বাহ, তোমার এই তেজ দেখে তো আরো বেশি প্রেমে পড়ে গেলাম। এখন আমার কি হবে? হাটুর বয়সী একটা মেয়ের প্রেমে এভাবে হাবুডুবু খেতে হবে ভাবতেও পারিনি।’

নাদিয়ার বিয়ে হয়ে গেল! বেশ জাকজমক ভাবেই বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো। বিয়েতে ছোয়া, আমান, আলিয়া সকলেই উপস্থিত ছিল। আলিয়া আজও লক্ষ্য করেছে শাহিন তাকে বারবার দেখছে৷ ব্যাপারটায় খুব বিরক্ত বোধ করল সে। তাই বিয়ের পাট মিটতেই আলিয়া শাহিনের কাছে এলো। শাহিনের চোখে চোখ রেখে রাগী গলায় বলল,
‘আপনাকে কাল কি বলেছি মনে নেই? দূরে থাকুন আমার থেকে।’
‘আমি তোমার কাছে কখন গেলাম?’
‘অদ্ভুত,,আমার দিকে তাকাচ্ছিলেন কেন?’
শাহিন বললো,

‘এমনিই। তোমাকে আমার আর ভালো লাগে না। তোমার পাশে যেই মেয়েটা দাড়িয়ে ছিল তাকে ভালো লেগে গেছে।’
আলিয়া একবার পিছনে ফিরে তাকায়। সে যেখানে দাড়িয়ে ছিল তার পাশেই খুব রূপসী একটি মেয়ে দাড়িয়ে। আলিয়ার হিংসা হলো এবার। সে কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
‘আপনি কেমন মানুষ? কালকে বললেন আমাকে ভালোবাসেন আজকে আবার অন্য মেয়ের উপর ফিদা হয়ে যাচ্ছেন?’
শাহিন অনেক কষ্ট করে নিজের হাসি দমিয়ে রেখে বললো,

‘তুমি তো আমায় পাত্তা দিলে না। তাই,,,’
আলিয়া এবার বললো,
‘আমারও আপনাকে ভালো লেগেছে কিন্তু আমার পড়াশোনা,,’
‘আমি তোমার পড়াশোনায় ডিস্টার্ব করব না, বরং কোন হেল্প লাগতে করতে পারি। আমি কিন্তু অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম।’
আলিয়া গলে গেল যেন। চটপট করে নিজের ফোন নম্বর বিনিময় করে নিল শাহিনের সাথে। এখান থেকেই যেন মন বিনিময়ের শুরুটা হয়ে গেল।

ছোয়া খুব টেনশনে আছে। সামনে তার ইয়ার চেঞ্জিং এক্সাম। কিন্তু পড়াশোনার অবস্থা খুব খারাপ। মাঝে যেই ঘাটতি তৈরি হয়েছে সেটা পূরণ করার জন্য অনেক পড়তে হবে তাকে।
আমান এক কাপ কফি এনে ছোয়ার ডেস্কে রাখল। অতঃপর বলল,
‘আমার ভরসা আছে তোমার উপর। তুমি চাইলেই সব পড়া কমপ্লিট করতে পারবে। আর রেজাল্টও ভালো হবে।’
ছোয়া বলল,

প্রেমের পরশ পর্ব ৩১

‘হুম আমাকে পারতেই হবে। আমার আব্বুর ইচ্ছা পূরণ করতে হবে। আমি চাই পড়াশোনা কমপ্লিট করে উচ্চশিক্ষিত হয়ে কোন জব করতে।’
আমান ছোয়ার হাতে হাত রেখে বলে,
‘আমি সবসময় তোমার পাশে আছি। তোমার স্বপ্ন শুধু তোমার নয় আমারও।’

প্রেমের পরশ শেষ পর্ব