প্রেমের পরশ পর্ব ৩১

প্রেমের পরশ পর্ব ৩১
লেখিকাঃ দিশা মনি

ছোয়াকে নিয়ে লোকগুলো যাবে তার আগেই পুলিশের আগমন ঘটলো সেই স্থলে। পুলিশ এসেই থাই ভাষায় কিছু একটা বলল যা ছোয়া কিছুই বুঝতে পারল না। তবে এটুকু বুঝল যে, পুলিশরা হয়তো এখন তাকে বাচানোর জন্য দূত হয়ে এসেছে। ছোয়া মনে মনে আল্লাহকে লাখো শুকরিয়া জ্ঞাপন করল এই জন্য।
পুলিশের সদস্যরা সবগুলো লোককেই ধরে নিয়ে গেল। লোকগুলো অনেক অনুরোধ করেও কোন লাভ পেল না।
একজন পুলিশ অফিসার ছোয়ার কাছে এসে ইংরেজিতে বলল,

‘আপনি ঠিক আছেন তো? ঐ লোকগুলো নারীদের নিয়ে ব্যবসা করে, আপনাকে দেখে তো বিদেশি মনে হচ্ছে, তাহলে আপনি কি কোনভাবে ওদের জালে ফেসে গেছেন?’
ছোয়া বুঝল এখন যদি সে সব সত্য বলে তাহলে তার বিপদ হতে পারে। কেননা, তার কাছে এই দেশের পাসপোর্ট ভিসা কিছুই নেই। তাই সে কিছুটা ছল করে বলল,
‘আমাকে আমার দেশ থেকে এখানে পাচার হয়েছে। আমি একজন বাংলাদেশী। প্লিজ আমাকে আমার দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করুন।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পুলিশ অফিসার তখন বলে,
‘আপনি একটু অপেক্ষা করুন। এটা যেহেতু খুব সিরিয়াস একটি বিষয় তাই এত সহজে মিটমাট করা যাবে না। আমাদের দেশের সরকার আপনাদের দেশের সরকারের সাথে কথা বলার মাধ্যমে আপনাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারে।’
ছোয়া এবার একটু ভরসা পেলো। এই ভিনদেশে সে সত্যিই ভীষণ অসহায়। এখন এখান থেকে দেশে ফিরতে হবে সবার প্রথমে। অতঃপর আমান ও আব্দুল হোসেনকে কিভাবে বের করে আনা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।

আকাশের কালো মেঘ যেমন দূর হয়ে যায় মানুষের জীবনে বিপদও তেমনি ঠিকই একসময় দূর হয়ে যায়। সুখের পরেই দুঃখ, এবং দুঃখের পরেই সুখ-কথাটা মিথ্যা নয় মোটেই। সুখ-দুঃখ মিলিয়েই তো আমাদের জীবন তাই তো বিপদে দিশেহারা হতে নেই। ধৈর্য ধরলে বিপদ ঠিকই দূর হবে।

ছোয়া ভালো ভাবে দেশে ফিরে আসার কিছুদিনের মধ্যেই আমান ও আব্দুল হোসেনও সম্পূর্ণ নিরপরাধ প্রমাণিত হয়ে সসম্মানে দেশে ফিরে আসে। দেশের মধ্যেই তাদের একটি প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি বিদেশী কোম্পানির সাথে সব চক্রান্ত করেছিল তবে এখন সব সমস্যার অবসান ঘটে গেছে। এর সমস্ত কৃতিত্ব আব্দুল হোসেনের কোম্পানির ম্যানেজার শাহিনের। সেই সমস্ত প্রমাণ জোগাড় করে বাচিয়ে নিয়েছে। নাহলে যে কি হতো! তাই তো আব্দুল হোসেন তাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। এমনকি আজকে নিজেদের বাড়িতে ডিনারেও ইনভাইট করেছে।

রাতে খাবারের টেবিলে উপস্থিত হয়েছে বাড়ির সবাই। ছোয়া, মতিয়া বেগম এবং জান্নাতুল খাতুন সবাইকে খাবার দিচ্ছে। এর মধ্যে সবার মধ্যে কথাবার্তাও চলছে। আব্দুল হোসেন শাহিনের ভূয়সী প্রশংসা করে বললেন,
‘তুমি অনেক ভালো কাজ করেছ। তোমার প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব শাহিন।’
শাহিন মৃদু হেসে বলে,

‘কি যে বলেন না স্যার! আমি আপনার কোম্পানির একজন সাধারণ কর্মচারী। আপনার জন্য এটুকু তো করতেই পারি। আমার জন্য আপনি কি করেছেন সেটা তো আমি এত সহজে ভুলব না। আমি যেই সময় বেকার হয়ে ঘুরছিলাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকার পরেও পরিচিত কোন চাচা,খালু না থাকায় চাকরি পাচ্ছিলাম না সেইসময় আপনি আমায় নিজের কোম্পানিতে চাকরি দিয়েছেন। সেখানে আপনার বিপদের সময় যদি আমি কিছু না করতাম সেটার জন্য আমি নিজেই অনেক আফসোস করতাম।’

এভাবে টুকটাক কথা চলতে থাকে। তন্মধ্যে আলিয়া নিজের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে। আলিয়া আসতেই তার দিকে তাকায় শাহিন। মুহুর্তেই একরাশ ভালো লাগা এসে গ্রাস করে তার মনকে। ‘লাভ এট ফাস্ট সাইট’ বা প্রথম দেখায় ভালোবাসা নামক এক অনুভূতি খেলে যায় শাহিনের মনে। আলিয়া ডিনার টেবিলে এসে শাহিনের সামনেই একটি ফাকা সিটে বসে পড়ে।

আলিয়া সেখানে আসতেই আব্দুল হোসেন তাকে জিজ্ঞেস করে,
‘তোর আসতে এত দেরি হলো কেন?’
আলিয়া চোখের চশমা ঠিক করে জিভ কে’টে বলে,
‘সামনে তো আমার পরীক্ষা। তাই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম একটু।’
আব্দুল হোসেন খাবার গলঃধরণ করতে করতেই বলেন,

‘আমি জানি তুই পড়াশোনার ব্যাপারে অনেক সিরিয়াস। কিন্তু তাই বলে এভাবে নাওয়া খাওয়া ভুলে পড়লে তো চলবে না।’
জান্নাতুল খাতুন তাদের মাঝে বলে উঠল,
‘এটা তুমি কেমন কথা বলছ? আগামী সপ্তাহ থেকে ওর প্রি টেস্ট পরীক্ষা। সামনের বছরেই এসএসসি দেবে। এখন যদি ভালো করে না পড়ে তাহলে ভালো রেজাল্ট করবে কিভাবে?’
‘পড়াশোনা করা অবশ্যই প্রয়োজনীয় কিন্তু নিজের ডেইলি রুটিনও ঠিক রাখতে হবে। যাইহোক আলিয়া তুই খাওয়া শুরু কর।’

আলিয়া আর কথা না বাড়িয়ে খেতে শুরু করল। শাহিন আলিয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিল অপলক। যদিও তার একটু কেমন জানি লাগছে কারণ মেয়েটা দশম শ্রেণীতে পড়ে তার মানে শাহিনের থেকে ১০ বছরের ছোট। তবুও কেন জানি শাহিন নিজের বেহায়া চোখকে সরিয়ে নিতেই পারছিল না!

রাতে আমান ও ছোয়া একই সাথে রুমে চলে এলো। আমান রুমে এসেই ছোয়াকে বলল,
‘তোমার জন্য একটা উপহার আছে।’
ছোয়া ভ্রু কুচকে জানতে চায়,
‘কি উপহার?’

আমান ধীরে ধীরে ছোয়ার কাছে আসে। অতঃপর ছোয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে তাকে কাছে টেনে নিয়ে ভালোবাসার উষ্ণতায় ঠোট ডুবিয়ে দেয় ছোয়ার ঠোটে। ছোয়া উপভোগ করতে থাকে আমানের প্রত্যেকটি স্পর্শ। সময় যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। এভাবে কিছু সময় সুন্দর ভাবে অতিবাহিত হওয়ার পর আমান ছোয়াকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়। অতঃপর ছোয়ার হাতে একটি ডায়মন্ড রিং পড়িয়ে দিয়ে বলে,
‘এটা তোমার জন্য। হানিমুনেই দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু যা সব হয়ে গেল,,’

ছোয়া মাদকতামিশ্রীত কন্ঠে বললো,
‘অতীত নিয়ে আর না ভাবি৷ অতীতের কালো ছায়া দূর হয়ে যাক আমাদের জীবন থেকে৷ এটাই আমার প্রত্যাশা।’
আমান ছোয়ার গালে, কপালে অনবরত চুম্বন খেতে লাগল। অতঃপর নেশাতুর গলায় বলল,
‘আজ কত দিন পর তোমায় পাশে পেলাম। আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না। তোমাকে খুব করে কাছে পেতে ইচ্ছা করছে।’

ছোয়া আমানের হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললো,
‘আমি তো তোমারই। আমাকে যখন খুশি, যতো খুশি কাছে টানতে পারো। কোন বাধা তো নেই।’
‘তবুও, আমি তোমার অনুমতি চাইছি।’
ছোয়া মুচকি হেসে বললো,

‘অনুমতির দরকার নেই। আমার কাছে আসার জন্য কোন অনুমতি লাগবে না।’
আমান যেন খুব খুশি হলো। অতঃপর একটু শয়তানী করে বললো,
‘আজ সারারাত কিন্তু তোমাকে জ্বালাবো, একটুও ঘুমাতে দেব না।’
ছোয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
‘আমিও প্রস্তুত আছি, সারা রাত জেগে কা’টিয়ে দেওয়ার জন্য।’

প্রেমের পরশ পর্ব ৩০

ব্যস, শুরু হলো আরেকটি মধুচন্দ্রিমার রাত। ছোয়া এবং আমানের মিলনের সাক্ষী হলো আরো একটি রাত। বাইরে জোনাকিরা জ্বলছে তো নিভছে এ যেন এক ভালোবাসার সাক্ষ্য দিচ্ছে। যেই ভালোবাসার মাঝে হারানোতেই লিপিবদ্ধ প্রকৃত সুখ। যেই ভালোবাসায় হারাতে চায় প্রত্যেকটা মানব-মানবী।

প্রেমের পরশ পর্ব ৩২