মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৩৫

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৩৫
সাদিয়া জাহান উম্মি

লজ্জা,ভয়,অসস্থি নিয়ে অথৈ বসে আছে মির্জা বাড়ির বসার ঘরে।রিতিমতো সে নার্ভাসন্যাসে ঘামছে।এইভাবে না বলে হুট করে নিজের শশুড়বাড়িতে আসা একটা লজ্জাকর পরিস্থিতি।অথৈয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে আরহাম সাহেব হাসলেন।নরম কণ্ঠে নিজের পুত্রবধুর উদ্দেশ্যে বলে উঠেন,’ অথৈ তুমি তোমার নিজ বাড়িতেই এসেছ।বাড়িটা যেমন রোজার, তেমন তোমারও।এইভাবে লজ্জা পাচ্ছ কেন মা?তোমার কি আমাদের জন্যে অসস্থি হচ্ছে?’

অথৈ শশুড়ের মুখে এতো স্নেহময়ী বাক্য শুনে যেন শান্তি পেল।ওর এতোক্ষণের লজ্জা,ভয়,অসস্থি সবটা যেন কোথায় ঘায়েব হয়ে গেল।এই বাড়ির লোকগুলো এতো ভালো কেন?মাঝে মাঝে ভাবে অথৈ। বাড়ির পুত্রবধুদের এতো আদর,যত্ন,স্নেহ আর ভালোবাসা দিতে সচরাচর কোনো ফ্যামিলিদের দেখা যায় না।আর এই বাড়ির লোকগুলো তো রিতিমতো বাড়ির বউদের নিজেদের মেয়ের থেকেও বেশি ভালোবাসেন তারা।অথৈ হালকা আওয়াজে বলে,’ আসলে আংকেল।প্রথমবার এসেছি তো এই বাড়িতে।তাছাড়া আপনার ছেলে যে এইভাবে আমাকে না জানিয়ে এই বাড়িতে নিয়ে আসবে আমি নিজেও বুঝতে পারিনি।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরহাম সাহেব কপাল কুচকালেন অথৈয়ের কথায়।তাকে এইভাবে নিজের দিকে তাকাতে দেখে অথৈ বলে,’ কি হলো আংকেল?’
আরহাম সাহেব গম্ভীর স্বরে বলে,’ শশুড়কে কেউ আংকেল বলে?তাহলে কি আমি মেনে নিবো যে তুমি এখনও এই পরিবারের লোকদের আপন করে নিতে পারোনি।নিজেকে এই পরিবারের অংশ ভাবো না।’
অথৈ থতমত খেয়ে গেল আরহাম সাহেবের এহেন কথায়।অথৈ আসলে বুঝতে পারেনি।আর তাছাড়া এইভাবে হুট করে তো বাবা বলে সম্বোধণ করা যায় না।একটু সময় তো লাগবেই।আচ্ছা, তিনি কি রাগ করলেন অথৈয়ের উপর।অথৈয়ের কণ্ঠে স্পষ্ট মন খারাপের আভাস।

‘ আমি সরি। আসলে আমি বুঝতে পারেনি।আপনি কি রাগ করেছেন আং…না মানে বাবা?’
অথৈয়ের মুখে ‘ বাবা ‘ ডাক শুনে আরহাম সাহেব প্রশান্তির হাসি দিলেন।বলেন,’ একটু আধটু রাগ করেছিলাম।তবে এই যে এখন তুমি আমায় বাবা বলে ডাকলে।এখন আর রাগ নেই।’
অথৈয়ের ঠোঁটের কোণেও হাসি ফুটে উঠল।এদিকে আরিয়ান আসল দোতলা থেকে নেমে।সাথে রোজাও আছে।আরিয়ান অথৈয়ের কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।অথৈ সালাম দিলো ওকে।আরিয়ান সালামের জবাব দিয়ে বলে, ‘ কেমন আছ অথৈ? বাড়ির সবাই ভালো আছে তোমার।

‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া।বাড়ির সবাইও ভালো আছে।আপনি কেমন আছেন?’
‘ আলহামদুলিল্লাহ। সরি বোন প্রথম আসলে বাড়িতে।তাও আমি তোমাকে বেশি সময় দিতে পারলাম না।দুপুরে লাঞ্চ করে সময় থাকেই অল্প একটু।তোমায় দেখেই রোজা ছুটে গিয়েছে আমায় ডাকতে।অফিসে চলে যাবো তাই দেখা করে নিলাম।’
আরিয়ানের আদর পেয়ে অথৈয়ের ইহানের কথা মনে পরে গেল।

ইহানও তাকে ঠিক এইভাবে আদুরে হাতে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।আরহাম সাহেব আর আরিয়ান অথৈয়ের সাথে আরেকটু কথাবার্তা বলে অফিসে চলে গেল।আতিক মাহাবুব মির্জা তিনি বাড়িতে নেই।কিছু কাজে বাহিরে গিয়েছেন।রোজা ফোন করে তাকে জানিয়েছে অথৈ এই বাড়িতে এসেছে।তিনি এই কথা শুনে পারলে তখনই উড়ে চলে আসেন।তবে রোজা তাকে আস্তে ধীরে আসতে বলেছে।সে আসা না পর্যন্ত অথৈকে যেতে দিবে না এটাও জানিয়েছে।এদিকে সবাই চলে যাওয়ায় বাড়িটা চুপচাপ হয়ে গিয়েছে।অথৈ হাশফাশ করতে লাগল।না পেরে অবশেষে প্রশ্ন করেই বসল,’ রোজা আপু?এতো বড়ো একটা বাড়িতে আপনি এমনভাবে থাকেন কিভাবে?’

রোজা হতাশ কণ্ঠে বলে,’ কি আর বলবো বোন।এইভাবেই আমায় থাকতে হয়।বাড়ির সব কর্তরা চলে যান যার যার কাজে বাহিরে।দাদুর একটু বেশি থাকা পরে বাড়িতে।তবে তার সাথে কি চব্বিশ ঘন্টা গল্প করা যায় বলো?সে তো বয়স্ক মানুষ।তার বিশ্রামের প্রয়োজন হয় এখন বেশি।’

একটু থেমে তারপর আবার অভিমানি গলায় বলে,’ তোমার বড়ো ভাইয়াটাও অনেক খারাপ জানো? বিগত একটা বছর যাবত বলছি।চলো আমরা একটা বেবি নেই।কিন্তু না সেই যে ডাক্তারের কাছে চেক-আপ করিয়ে জানতে পেরেছে আমার নাকি প্রচুর রক্তশূন্যতা।কমপক্ষে এক, দেঢ় বছরের মধ্যে বেবি নিতে না।আগে রিকেভর করবো পুরোপুরি এরপরেই নাকি নিতে বলেছেন।বলো তো?একটা বেবি থাকলে কি আমার এতো একা একা লাগতো?কখনও লাগতো না।এক বছর পেরিয়ে গেছে।আর আমিও পুরোপুরি ঠিক আছি।তবে জনাব মানছেই না।তিনি আরও কয়েকদিন ওয়েট করতে বলেছেন।এই লোকটাকে নিয়ে আমি আর পারি না।আর আমার বাবামশাই,দাদু আর রুদ্রিকও আরিয়ানের কথার তালে তালে সায় দিয়ে যাচ্ছে।উফ!’

রোজা অভিযোগগুলো শুনে মুচকি হাসলো অথৈ। ঠিক কতোটা সুখে রোজা আছে তা তার কণ্ঠ শুনলেই বোঝা যায়।অথৈ নিজেও যে রোজার মতো একজন ভাগ্যবতী।এটা ভাবতেই মনেপ্রাণে আলাদা শিহরণ বয়ে যায়।আল্লাহ্’র দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করে সে।
রোজা আর অথৈ অনেকক্ষণ বসে বসে গল্প করল।ওদের কথার মাঝে হঠাৎ একজন সার্ভেন্ট আসল।সে বলে,’ বড়ো বউমনি ছোটো ভাইজান কফি বানিয়ে ছোটো বউমনিকে দিয়ে তার রুমে পাঠাতে বলেছে।আর ছোটো বউমনিকেই কফি বানাতে বলেছে।’

রোজা সব শুনে মুচকি হেসে বলে,’ হ্যা আপনি যান। ‘
সার্ভেন্ট চলে যেতেই রোজা অথৈয়ের দিকে তাকালো।অথৈয়ের মুখে এক্সপ্রেসন দেখেই রোজা কিটকিটিয়ে হেসে উঠল।এদিকে অথৈ হতবুদ্ধুর মতো বসে।লজ্জায় তার গালজোড়া ফুলে ফেঁপে উঠেছে।এই লোক এতো নির্লজ্জ কেন?এইভাবে কেউ কাউকে এসব বলে?রোজা হাসি দেখে এখন তার আরও বেশি লজ্জা লাগছে।

অথৈকে লজ্জা পেতে দেখে রোজা হাসি থামিয়ে বলে,’ থাক আর লজ্জা পেতে হবে না।অভ্যাস করে নেও।যেমনটা আমি করেছি।দু ভাই-ই একরকম তারা।আমারও প্রথম প্রথম আরিয়ানের এইসব কান্ডে যে কি পরিমান লজ্জা লাগতো বলে বোঝাতে পারবো না।তবে এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।যখন তুমি পার্মান্যান্টলি এই বাড়িতে এসে পরবে।তোমারও অভ্যাস হয়ে যাবে।এখন চলো তোমায় কিচেনে নিয়ে যাই।ছোটো নবাবজাদা আবার দেরি হলে রেগে যাবে।’

অথৈ মাথা দুলিয়ে রোজার পিছন পিছন রান্নাঘরে আসল।রোজা তাকে কফি বানানোর সব উপক্রম এগিয়ে দিয়েছে।আরিয়ান ফোন করায় সে রুমে চলে গিয়েছে।অবশ্য সে যেতে চাচ্ছিলো না।আরিয়ান বার বার ফোন দেওয়ায় অথৈ জোড় করে পাঠিয়ে দিয়েছে।অথৈ সুন্দরভাবে এককাপ কফি বানিয়ে নিলো।তারপর পা বাড়ালো রুদ্রিকের রুমের দিকে।কিন্তু রুদ্রিকের রুম কোনটা সে তো জানে না।হঠাৎ একজন সার্ভেণ্টকে দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলে।

সে অথৈকে দেখিয়ে দেয় রুদ্রিকের রুম।অথৈ রুদ্রিকের রুমের সামনে এসে থম মেরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো।ভাবল অনেককিছু।কোনো একদিন এই রুমটা তার হবে।ভাবতেই অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে হৃদয় জুড়ে।অথৈ লম্বা শ্বাস ফেলে রুদ্রিকের রুমে প্রবেশ করল।কফিটা নিয়ে টি-টেবিলের উপর রেখে চারদিকে চোখ বোলালো।পুরো রুমটা গ্রে কালারের পেইন্ট করা।রুমের মাঝে রাউন্ড বেড।তার সাথে দুই সাইডে দুটো এটাচ্ড ছোটো টেবিল।একটা ড্রেসিংটেবিল,আলমারি আর একটা সোফাসেট।ব্যস এইগুলোই আছে রুমটায়।তবে রুমটা ভীষণ সুন্দরভাবে ডেকোরেট করা।অথৈয়ের ভীষণ ভালো লাগলো।

‘ রুমটা যেভাবে দেখছ।আমাকেও তো সেভাবে কোনোদিন দেখোনি।অথৈ আ’ইম ফিলিং জেলাস।’
নিরবতার মাঝে হঠাৎ গম্ভীর কণ্ঠস্বরে ভয় পেয়ে গেল অথৈ।আর একটু হলেই তো সে হার্ড এট্যাক করে বসত।অথৈ বিরবির করে রুদ্রিককে বকা দিলো।রুদ্রিকের গম্ভীর গলা ফের শোনা যায়,

‘ আমাকে না বকে।কফিটা নিয়ে ব্যালকনিতে এসো।কফিটা যে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল আছে তোমার?’
অথৈ মুখ ভেংচি কাটলো।তারপর কফিটা নিয়ে এগিয়ে গেল বারান্দার দিকে।যেতেই একরাশ মুগ্ধতা এসে ভর করল ওকে।এতো সুন্দর ব্যালকনি।অনেক বড়ো রাউন্ড শেইপের একটা ব্যালকনি।ব্যালকনিটার একপাশে ছোটো পুরো কাচের তৈরি একটা রুম দেখা যাচ্ছে।

একেবারে ছোটো সেখানে শুধু সিংগেল বেডের সমান একটা ফ্লোর বেড বিছানো।রুমটায় স্লাইডিং ডোর দেওয়া।সেটা খোলা তাই সব দেখতে পেয়েছে অথৈ। অপরপাশে ছোটো একটা জানালাও আছে।পুরো ব্যালকনিতে শতো ধরনের ফুল গাছ আছে।অথৈয়ের বেডরুম থেকে ব্যালকনিটাই বেশি ভালো লাগলো।হঠাৎ রুদ্রিকের কথা মনে আসতেই ব্যালকনির চারদিকে চোখ বুলালো অথৈ। কিন্তু রুদ্রিককে কোথায় দেখতে পেলো না।

আশেপাশে তাকাতে থাকা অথৈ হঠাৎ নিজের ঘাড়ের কাছে কারো উষ্ণ নিঃশ্বাসের উপস্থিতি টের পেলো।আএ সে কেউটা যে রুদ্রিক ছাড়া কেউ না।তাও ভালোভাবে জানে সে।রুদ্রিক আরেকটু ঘনিষ্ঠ হলো অথৈয়ের সাথে।অথৈয়ের পিঠ গিয়ে লাগল রুদ্রিকের প্রসস্থ,চওড়া বক্ষে।অথৈয়ের শরীর মৃদ্যুভাবে কাঁপছে।এই লোকটা এমনভাবে তার কাছে আসলেই ওর সব এলোমেলো হয়ে যায়।মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে যায়।

রুদ্রিক একটু আগেই গোসল দিয়েছে।তাই ওর শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে।রুদ্রিক ওর শীতল হাতটি দিয়ে অথৈয়ের হাতে স্লাইড করতে লাগলো।ধীরে ধীরে হাতটি গিয়ে ঠেকল অথৈয়ের ধরে থাকা কফির উপর।রুদ্রিক অথৈয়ের হাত থেকে কফিটা নিয়ে নিলো।চুমুক বসালো কফিটায়। নাহ,পুরপুরি ঠান্ডা হয়ে যায়নি কফি। রুদ্রিক আধঠান্ডা কফিটাকে একনিঃশ্বাসে খেয়ে নিলো।কফির মগটা নাগালে একটা চেয়ার আছে সেখানে রেখে দিলো।এইসবে রুদ্রিকের নজর বিন্দুমাত্র সরে যায়নি অথৈয়ের উপর থেকে।রুদ্রিক ঠোঁট এলিয়ে অথৈয়ের কানে ফিসফিস করে বলে,’ ঠান্ডা হয়ে যাওয়া কফি খাইয়েছ আমায়।বিনিময়ে তোমাকে কি শাস্তি দেওয়া যায় বলো তো?’

গলা শুকিয়ে আসল অথৈয়ের।এই লোক এতো কাছে আসছে কেন ওর?আর এইভাবে কথা বলায় রুদ্রিকের ঠোঁটের স্পর্শ লাগছে অথৈয়ের কানের লতিতে।অথৈয়ের পায়ের তলা শুধু শিরশির করছে।অথৈ কাঁপা গলায় বলে,’ আ…আমার কি দোষ?আপ…আপনাকেই তো খুঁজে পাচ্ছিলাম নাহ।’

বিনিময়ে রুদ্রিক ওর হাতখানা এনে রাখল অথৈয়ের পেটের উপর।শক্ত হাতে চেপে ধরলো।আকস্মিক রুদ্রিকের এহেন কাজে।নিঃশ্বাস আটকে গেল অথৈয়ের।খামছে ধরল ওর পেটের উপরে রাখা রুদ্রিকের হাত।রুদ্রিক অন্যহাতে অথৈয়ের ঘাড়ের চুলগুলো সরিয়ে দিলো।রুদ্রিকের একেকটা স্পর্শে পাগল হয়ে যাচ্ছে অথৈ। তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে মনের মধ্যে।

রুদ্রিক অথৈয়ের ঘাড়ে নরম অধরের ছোঁয়া দিতে লাগল।জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে অথৈ। রুদ্রিকের অধরের একেকটা স্পর্শে যেন অথৈয়ের মনে হচ্ছে রুদ্রিক ওর শরীরের সব শক্তি শুষে নিচ্ছে।অথৈ আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না।শরীরের ভড় ছেড়ে দিলো রুদ্রিকের উপর।রুদ্রিক বাহুডোরে আগলে নিলো অথৈকে।পর পর পাঁজাকোলে নিয়ে নিলো।অথৈ লজ্জায় চোখ খুলতে পারছে না।মুখ লুকালো রুদ্রিকের বুকের মাঝে।

রুদ্রিক অথৈকে কোলে নিয়েই বসে পরল ব্যালকনিতে রাখা একটা বেতের চেয়ারে।অথৈ দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরল রুদ্রিকের। মুখ লুকানো রুদ্রিকের বুকে।রুদ্রিক মাদকতা ভড়পুর কণ্ঠে বলে,’ অথৈ তোমাকে ছাড়া আমি আর থাকতে পারছি না।তুমি কাছে আসলেই আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। তোমাকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে খুব করে।এতো এতো অপেক্ষা আমি কিভাবে করব অথৈ?’

শেষ বাক্যটা করুন শোনালো রুদ্রিকের।রুদ্রিকের এহেন কথায় চোখ পিট পিট করে তকালো অথৈ। রুদ্রিকের লাল হয়ে যাওয়া চোখজোড়া দেখে বুকের বা পাশটায় ব্যথা অনুভব করল।ঠিকই তো বলে রুদ্রিক।মুখে না বলুক তবে অথৈ জানে রুদ্রিক তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।আর ভালোবাসার মানুষ যদি তার পাশে থাকে।তাহলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক কষ্টসাধ্য।তা একটু হলেও বুঝতে পারছে অথৈ।

আবার তার উপর ও রুদ্রিকের সহধর্মিণী। ওর উপর সম্পূর্ণ অধিকার আছে রুদ্রিকের।কিন্তু লোকটা শুধু ওর কারনে।ও যেন কষ্ট না পায় সেই কারনে নিজের ইচ্ছা,ইমোশন,কষ্ট সব লুকিয়ে রাখে।অথৈয়ের খারাপ লাগছে।ও নিজেও রুদ্রিকের কাছে পার্মানেন্টভাবে এসে পরতে চায়।কারন ও নিজেও যে ভালোবেসে ফেলেছে লোকটাকে।লোকটাকে কষ্ট পেতে দেখতে পারে না ও।ভাবনার মাঝে রুদ্রিকের আদুরে কণ্ঠের ডাক শুনতে পেলো।

‘ অথৈ, শোনো।’
রুদ্রিকের বুক থেকে মাথা সরালো অথৈ। ডাগর ডাগর চোখজোড়া নিয়ে তাকালো রুদ্রিকের দিকে।বলল,’ হুম বলুন।’
রুদ্রিক নেশাকাতর হয়ে দৃষ্টি তাক করে আছে অথৈয়ের ওষ্ঠজোড়ার দিকে।আলতো করে স্পর্শ করলো অথৈয়ের ঠোঁটজোড়া।কেঁপে উঠল অথৈ। চোখ বন্ধ করে নিলো।রুদ্রিক শুকনো ঢোক গিলছে।ভীষণভাবে টানছে ওকে ওই নরম ঠোঁটজোড়া।একটুখানি ছুঁয়ে দিলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে?রুদ্রিক অস্থির গলায় বলে উঠে,’ এখানে যদি আমার অধরের একটুখানি ছোঁয়া ছাপিয়ে দেই তোমায়।তুমি কি খুব বেশি রাগ করবে?’

রুদ্রিকের এহেন কাতর কণ্ঠের আবদার যেন অথৈয়ের হৃদয় নাড়িয়ে দিলো।শিরশিরে অনুভূতিতে ছেঁয়ে গেলো সর্বাঙ্গ।কি বলবে অথৈ?কিভাবে জবাব দিবে?লজ্জা’রা যেন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে ওকে।অথৈয়ের মৌনতায় রুদ্রিক ব্যাকুল হয়ে বলে,’ প্লিজ অথৈ স্যে সামথিং!’
অথৈ নড়েচড়ে উঠল।রুদ্রিকের গলায় বেধে রাখা হাতদুটোর বাঁধন আরও শক্ত করল।চোখজোড়া বন্ধ করে মুখশ্রীটা উঁচু করে রুদ্রিকের মুখের কাছাকাছি আনলো।আলতো স্বরে বলে উঠল,’ ইয়্যু ক্যান।’

রুদ্রিকের হৃদয় যেন প্রশান্তিতে ছেঁয়ে গেলো অথৈয়ের জবাবে।আলতো হাতে গাল স্পর্শ করল অথৈয়ের।অথৈ নিভু নিভু চোখে তাকালো।রুদ্রিক ফাঁকা ঢোক গিলে নিলো।আস্তে আস্তে ঠোঁট এলিয়ে নিলো অথৈয়ের কাছে।সামান্য একটুখানি অধর ছোঁয়ালো অথৈয়ের অধরে।রুদ্রিকের বক্ষস্থল কেঁপে উঠল।অথৈয়ের ঠোঁটে আলতো ঠোঁটের একটুখানি স্পর্শ করতেই মনে হচ্ছে ওর শরীরে বৈদ্যুতিক ঝটকা লেগেছে।এদিকে অথৈ খামছে ধরে আছে রুদ্রিকের ঘার।

লোকটা চুমুও খায়নি। শুধু একটুখানি ছুঁয়ে দিয়েছে ঠোঁটজোড়া দিয়ে।তাতেই যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে অথৈয়ের।অথৈ ঘণ ঘণ শ্বাস নিচ্ছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।কিন্তু রুদ্রিক বোধহয় তা হতে দিলো না।অথৈ কিছু বুঝে উঠার আগেই রুদ্রিক এইবার অথৈয়ের ঠোঁটজোড়ায় তার ঠোঁটজোড়া গভীরভাবে স্পর্শ করল।বরফ শীতলতায় ছেঁয়ে গেলো অথৈয়ের তনমন।রুদ্রিক যেন নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে গিয়েছে।

সে প্রিয়তমাকে ভালোবাসার স্পর্শ দিতে মত্ত হয়ে উঠেছে।একহাত অথৈয়ের পিঠে আড়াআড়িভাবে রেখে আরেক হাত অথৈয়ের কোমড় চেপে ধরে অথৈকে নিজের আরেকটু কাছে টেনে নিলো।উন্মাদের ন্যায় চুমু খেতে লাগলো অথৈকে।অথৈ কিছুক্ষণ থম মেরে ছিলো।পর পর রুদ্রিকের লাগামহীন স্পর্শে নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে পারলো না।পর পর নিজেও সারা দিতে লাগল রুদ্রিকের সাথে।হাজার হোক লোকটা তার স্বামী।

কোন স্ত্রীই বা না চাইবে তার স্বামী তাকে ভালোবাসুক,তাকে সোহাগ করুক।অথৈও চায়,খুব করে চায়।এইভাবে কেটে গেলো কতোক্ষণ কেউ জানে না।দুজনে দুজনার মাঝে এতোটাই হারিয়ে গিয়েছিলো।অথৈ যখন দেখলো যে সে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না।তখন ছটফট শুরু করে দিলো।রুদ্রিক যেন হুঁশে নেই।অথৈ জোড় করে অনেক কষ্টে নিজেকে ছাড়িয়ে আনে রুদ্রিকের কাছ থেকে।রুদ্রিকের বুকে কপাল ঠেকিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে মেয়েটা।

রুদ্রিকও হাপাচ্ছে।রুদ্রিক নিজেকে শান্ত করতেই ওর ঠোঁটের কোণে চওড়া হাসি ফুঁটে উঠল।অথৈ যে তার হৃদয়ের ঠিক কতোটা জুড়ে আছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না রুদ্রিক।রুদ্রিকের মন চায় হৃদয়ের সবটা ভালোবাসা উজাড় করে দিতে মেয়েটার কাছে।মেয়েটা যদি তাহলে তার ভালোবাসার গভীরতা অনুভব করতে পারে।এইযে অথৈকে যে বুকে জড়িয়ে নিয়ে আছে।এতে যে তার কি শান্তি লাগছে। মনে হচ্ছে সে পরিপূর্ণ।

আজীবন ওকে এই বুকের মাঝে আগলে রাখতে চায় রুদ্রিক।হারাতে দিবে না কোনোদিন।খুব,খুব ভালোবাসবে।রুদ্রিক অথৈয়ের চুলের ভাঁজে চুমু খেলো।অথৈ তখনও নিজেকে স্বাভাবিক করতে ব্যস্ত।হঠাৎ রুদ্রিকের একটুখানি দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে করল অথৈয়ের সাথে।রুদ্রিক দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,’ অথৈ আমার ভালোবাসাগুলো মন থেকে অনুভব করেছ তো?নাকি আরও গভীরভাবে ভালোবাসব?’

অথৈ থম মেরে গেলো।লজ্জায় হতভম্ব সে।হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছে ওর।লজ্জায় সর্বমুখশ্রী রক্তিম আভায় ছেঁয়ে গেলো।অথৈ রুদ্রিকের বক্ষে আলতো হাতে আঘাত করে মিনমিনিয়ে বলে,’ অসভ্য লোক।খুব,খুব খুব খারাপ আপনি।’
রুদ্রিক উচ্চস্বরে হেসে উঠল।সেই হাসির মায়াজালে আটকে গেলো অথৈ।রুদ্রিককে সচরাচর এমন প্রাণখোলা হাসি হাসতে দেখা যায় না।তাই অথৈ সে হাসিটা মন ভড়ে দেখলো।রুদ্রিক হাসি থামিয়ে অথৈয়ের গালে হাত রেখে ওর চোখে চোখ রাখল।প্রগাঢ় স্বরে বলল,’ তুমি একটুখানি ছোঁয়ার জন্যে,ভালোবাসার জন্যে যদি আমাকে খারাপ হতে হয় অথৈ। তবে আমি হাজারবার খারাপ হতে রাজি।তুমি আমার থাকলেই হবে।’

অথৈ মুচঁকি হাসলো।লোকটার হুটহাট এমন আবেগঘন কথা অথৈয়ের হৃদয় ভীষণভাবে নাড়িয়ে দেয়।অথৈ জড়িয়ে ধরল রুদ্রিককে।ধীম কণ্ঠে আওড়ায়,’ ভালোবাসেন আমায়?’
‘ ভালোবাসা এই শব্দটা অতি সহজ আবার অতি কঠিন।সে এই শব্দটা বুঝতে সক্ষম হয় বুঝে নেবে সেও ভালোবাসে।বুঝলে প্রিয়,

ভালোবাসাটা পিথাগোরাসের উপপাদ্য নয়,
যে প্রমাণ করতেই হবে।
ভালোবাসাটা রবিঠাকুরের শেষের কবিতার মতো,
যা শুধু উপলব্ধি করতে হয়।এখন বলো তুমি কি আমার ভালোবাসা উপলব্ধি করো না?’

অথৈ রুদ্রিকের বুকে মুখ ঘষে নরম গলায় বলে,’ খুব করে অনুভব করে।একদম হৃদয়ের সবটুকু গভীরতা দিয়ে।’
রুদ্রিক অথৈ দুহাতে জড়িয়ে নিলো।চোখজোড়া বন্ধ করে বলে উঠল, ‘ তোমাকে আমি বলে বোঝাতে পারবো না আমি ঠিক তোমাকে কতোটা চাই অথৈ। আমার চোখে তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নারি।তবে তুমি কতটা সুন্দর তা বলার জন্য আমার এই শব্দগুলি যথেষ্ট নয়।

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৩৪

লোকে বলে যে মানুষ নাকি কেবল একবার প্রেমে পড়ে, তবে এটি সত্য হতে পারে না … যতবার আমি তোমাকে দেখি, আমি আবার প্রেমে পড়ে যাই নতুন করে।বলো তো কেন এমন হয় আমার সাথে?’
অথৈ কি বলবে তার কাছেও এ এটার জবাব নেই।তাই সে মৌন হয়ে চুপচাপ পরে রইলো রুদ্রিকের বক্ষপিঞ্জরের মধ্যে।

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৩৬