তুমি আমি দুজনে পর্ব ২২

তুমি আমি দুজনে পর্ব ২২
হুমাইরা হাসান

-তুমি এখানেও চলে এসেছ আমার পিছু পিছু!
আহানের কথার আগা মাথা না বুঝে টুনি এক হাত মুখের কাছে দিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল।
আহান প্রচন্ডরকম বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল
-কত বড় সাহসে তুমি এসেছ আমার পিছু। ঘরে থাকলে বালিশে এসে শুয়ে পরো আবার জগিং করতে এসেও পিছু নিয়েছ?
খানিক থেমে আবারও বলল

-তুমি আসলেই একটা আপদ,আমার মাথার উপর আপদ। আমার গলায় কি মাছ ঝুলানো আছে যে চুইংগামের মতো পিছু করা ধরেছ? যাও, তোমার মালিকের কাছে ফিরে যাও
কিন্ত কে বুঝে কার কথা,টুনি আগামাথা কিছু না বুঝেই ভীষণ নাদুস নুদুস চেহারা করে বলল ‘ম্যাও’
আহান আবারও কিছু বলতে গেলেও থেমে গেলো। এবার নিজেকেই পাগল মনে হচ্ছে, একটা আজাইরা বিড়ালের সাথে সে এতক্ষণ পকপক করছিল। বিড়াল কি আর মানুষের কথা বুঝে। সব দোষ ওই মেয়ের ওই মেয়েটা বিড়ালের সাথে পকপক করে এখন আহান ও তাই করেছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বিরক্তিতে চ জাতীয় শব্দ করে আবারও হাঁটা ধরল। টুনিও আহানের পিছু পিছু হাঁটছে। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর কি মনে হতে আহান পিছু ফিরে তাকাল। কিন্তু টুনিকে কোথাও পেলো নাহ। কোথায় গেল বিড়ালটা?এখনই তো পিছনেই ছিল। এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে তাকাল। কিন্তু কোথাও টুনিকে দেখতে পেল না। ভালো হয়েছে, আপদ টা পিছু ছেড়েছে।

ভেবেই আবারও হাঁটা শুরু করতেই পেছন থেকে ম্যাও করে ডেকে উঠল। আহান ঘুরে তাকিয়েও টুনিকে কোথাও দেখতে পেল না কিন্তু সে তো স্পষ্ট শুনেছিল টুনির ডাক। আবারও ম্যাও করে ডেকে উঠতেই আহান বাম দিকের বেঞ্চির পেছন দিকটাই তাকাল। ছোট খাটো একটা গর্তের মতো, তার মধ্যে গলা সমান ডুবে শুধু মাথা টা উঁচু করে ম্যাও ম্যাও করছে টুনি। আহান এগিয়ে যেতে ওকে দেখেই আরও জোরে জোরে ডাকাডাকি শুরু করল টুনি।

-যেমন হেড তার তেমন অ্যাসিস্ট্যান্ট,, নিজের তো ধুপধাপ পরার অভ্যাস আছেই সাথে বিড়াল টাকেও তাই বানিয়েছে। একেবারে ট্রেনিং প্রাপ্ত করে ফেলেছে তোমাকে এই কয়দিনে। তোমার মালিক নিজে আসতে পারেনি তো কি হয়েছে তোমাকে পার্সেল করে দিছে আমার পেছনে আমার মাথা নষ্ট করার জন্য
বলেই এগিয়ে গেল। ঘাড় ঘুরিয়ে পাশেই একটা কাঁঠাল গাছ দেখতে পেলো। সেখান থেকে বড় বড় দুইটা পাতা ছিড়ে হাতে নিয়ে টুনিকে ধরে টেনে তুলল। গর্ত থেকে বের করার সাথে সাথে টুনি আহানের পায়ের কাছে এসে কাচুমাচু মুখ করে বসে ম্যাও ম্যাও করতে লাগল।

-সাট আপ, একটা সাউন্ড করবে না। সোজাসুজি কি হাঁটতেও পারো না? হাঁটছিলে তো রাস্তা দিয়ে পরলে কি করে তুমি? ডিসগাস্টিং
বলেই আহান আবারও হাঁটা শুরু করল। তবে এবার টুনিকে নজরে নজরে রেখে হাঁটছে,যাতে আবারও কোথাও গিয়ে মুখ থুবড়ে না পরে।

সকালের নাস্তা সব চুমকির সাথে সাথে এনে টেবিলে রাখল তুরা। আমেনা আর মিনু তাদের খোশ গল্প নিয়ে বসেছে। রান্নাঘরে রুবি খাতুন নাস্তা বানাচ্ছেন আর তুরা আর চুমকি তাতে সহায়তা করছে। খাবার গুলো সব টেবিলে এনে রাখতেই দরজার সামনে এসে দাঁড়াল দারোয়ান আলম।

-ম্যাডাম, বড় সাহেব বাজার পাঠিয়েছে
আলমের কথায় তুরা সেদিক তাকিয়ে বাজারের ব্যাগ গুলো নেওয়ার জন্য এগোতে নিলেই পাশ থেকে চুমকি ছুটে এসে বলল
-আপনে বসেন ভাবিজান আমি আনছি

বলেই বেণি দুটো সামনে এনে, লাজুক লাজুক হাসি দিয়ে এগিয়ে গেল। আলম কে দেখেই চুমকির ভাবসাব কেমন পালটে গেছে দেখেই তুরা ভ্রু কুচকে চেয়ে রইল। চুমকি গালে এক ফালি হাসি নিয়ে এগিয়ে বাজারের ব্যাগ টা নিতেই আলম ও তার মতই একটা হাসি দিল। আলম বাজারের ব্যাগ টা চুমকির হাতে দিলেও চুমকি এক হাতে ব্যাগ ধরে চেয়ে আছে আলমের দিকে, আর আলম চুমকির দিকে। যেন জনম জনম পর নায়ক নায়িকার দেখা। আর এদের এমন ফিল্মি স্টাইলের দেখাদেখি হা করে দেখছে তুরা। দুটির ভাবসাব সুবিধার নাহ। ব্যাপার টা তো দেখতে হচ্ছে?

-কি ব্যাপার ব্যাগ আনতে গিয়ে কি তোমার ভীমরতিতে ধরল নাকি,ওমন সংয়ের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
মিনু ফুফুর ভারি গলার ধমক শুনে হড়বড়িয়ে ব্যাগ টা ধরিয়ে দিয়েই উল্টো পথে হাঁটা দিলো আলম। আর চুমকি মেকি একটা হাসি দিয়ে মিনুর দিকে ঘুরে বলল

-ওই আসলে দেখছিলাম সব ঠিকঠাক আছে কি না
-সেসব তোমাকে দেখতে হবে না,রুবি যে রান্নাঘর থেকে কয়বার ডাক দিলো কানের মধ্যে পৌঁছায়নি?
ফুফুর কথায় তুরারও হুস এলো। না তো চুমকি আর আলমের দৃষ্টি বিনিময় দেখতে গিয়ে সেও হা করেই চেয়ে ছিল। ভাগ্যিস ফুফু খেয়াল করেনি। সেখান থেকে সরে এসে টেবিলের পাশ থেকে ছোট বাটিটা নিয়ে ওতে ক্যাট ফুড ঢেলে রেখে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগল,,টুনি টুনি বলে বেশ কয়েকবার ডাক ও দিলো কিন্ত টুনির কোনো সাড়া নেই। এই তো রান্নাঘরে যাওয়ার আগেই তো দেখল গেলো কই?

-কি খুঁজছো নাতবউ?
আমেনা বেগম তুরাকে এদিক ওদিক ঘুরেফিরে কিছুর তালাশ করতে দেখে জিজ্ঞাসা করল।
-টুনিকে খুঁজছি দিদুন। ওকে পাচ্ছিনা তো
-তোমার বিড়ালটাকে তো এখানেই দেখেছিলাম কোথায় আর যাবে, তোমার ঘরে দেখেছ?
মিনু ফুফুর কথায় তুরা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে রাইমার ঘরে ঢুকে সব জাগায় খুঁজেও টুনিকে না পেয়ে আহানের ঘরেও খুঁজলো । অবশেষে কোথাও না পেয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে নিচে নেমে আসলে ওর এমন শুকনো মুখ দেখে আমেনা বলল

-কি হলো নাতবউ, পেলে না তোমার বিড়ালছানা টাকে?
-না দিদুন,উপরে সব ঘরে দেখেছি। কোথাও নেই ও
-ওমা সে কি কথা সকাল বেলা করে কোথায় যাবে? বাগানের দিকে গেছে নাকি?
ফুফুর কথা শুনে তুরা বাগানের দিকে ছুটতে যাবে তখন রাইমা হাতে দুটো গোলাপের ফুল নিয়ে ঢুকল ঘরে। তুরাকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে দেখে বলল

-কি হয়েছে, এভাবে কোথায় যাচ্ছিস তুরা?
-টুনিকে ঘরে কোথাও পাচ্ছিনা আপু, তাই বাগানের দিকটাতে দেখতে যাচ্ছি।
-কিন্ত আমিতো এতক্ষণ বাগানেই ছিলাম। ও ওখানে কোথাও নেই তো
এবার তুরার কাঁদো কাঁদো মুখটা আরও করুন হয়ে আসল। চোখের কোণায় টসটস করছে পানি,যেন যখন তখন গড়িয়ে পরবে। এত আদরের বিড়াল বাচ্চাটা গেল কোথায়,হারিয়ে গেল না তো। সাত পাঁচ ভাবনার মাঝেই দরজা দিয়ে গটগট করে ঘরে ঢুকল আহান। আহানের দিকে তাকাতেই দেখল ওর পেছন পেছন টুনিও ঢুকছে। টুনিকে দেখেই তুরার অধর কোণে হাসি ফুটল। ছুটে গিয়ে কোলে তুলে নিলো টুনিকে।

-বাবু, এই বিড়াল টাকে তুই সাথে করে নিয়ে গেছিলি?
মিনু ফুফুর কথায় রাশভারি স্বভাবের আহান মুখ খানার বেজায় গাম্ভীর্য ছড়িয়ে বলল
-ওকে সাথে করে নেওয়া লাগে? চুইংগামের মতো চিপকে আছে আমার পেছনে।
আহান পুরোটা শেষ করার আগেই তুরা বলল
-ও কোথায় গেছিল, কোথায় ছিলো এতক্ষণ?
আহান তুরার দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে বলল

-তোমার এই আপদ বিড়াল টাকে বলে দাও নেক্সট টাইম যদি আমাকে ফলো করে তাহলে ওকে ড্রেনে ফেলে দেবো আমি। একটারে নিয়েই বাচি না আবার সহোদর জুটেছে
বলেই গটগট করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। আহানের যাওয়ার পানে তুরা হা করে চেয়ে রইল হতভম্ভের মতো। কি বলে গেলো লোকটা? টুনি উনাকে ফলো করছিল? তুরা কোলে থাকা টুনির দিকে তাকিয়ে দেখল ওর গায়ে মাটি ময়লা লেগে আছে
-ইশ কি করেছিস গায়ে ময়লা বাঁধিয়ে, কে বলেছিল তোকে ওই জল্লাদ লোকটার পেছনে যেতে
বলেই সামনে এগোতে নিলে দেখল মিনু আড়চোখে জহুরি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকই। গাল টেনে মেকি একটা হাসি দিয়ে বলল

-ওই আসলে ও ছোট তো বুঝতে পারেনি,আর যাবে নাহ
বলেই গা বাঁচিয়ে দৌড়ে উপরে উঠে এলো। উফ জল্লাদ লোকটাকে কিছু বলাও যাবে নাহ। জল্লাদ ই তো। একটু নাহয় গেছিল উনার পিছু পিছু, কোলে তো উঠতে চাইনি। এমন হম্বিতম্বি করার কি আছে তুরা ভেবে পাই না।

মধ্যাহ্নের শেষ সময়, সূর্যের প্রখর রোদ এখন অবলীলায় মৃদু লালীমায় পরিনত। বেলা গড়িয়ে ব্যস্ত পাখিরাও ক্লান্তিতে ফেরারা তাড়া শান্তির নীড়ে। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে বসেছে সকলে ড্রয়িং রুমে। সফেদ টাইলস এর ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রঙ বেরঙের সুন্দর জিনিস গুলোতে। মাঝে শুধু একটা রাত,কালই রাইমার গায়ে হলুদ গাড়ি গাড়ি ভরে উপহার তত্ব এনেছে ইনসাফ। সেগুলোই গুছাতে বসেছে রুবি, রাইমা,চুমকি আর তুরা। আমেনা আর মিনু সোফার উপর বসে সবটা পর্যবেক্ষণ করছে,আর খোশ গল্প জুড়েছে। এর মাঝেই কলিং বেলের শব্দ বেজে উঠল। এই অসময়ে কে আসতে পারে ভেবেই কিঞ্চিৎ বিব্রত হলো রুবি। কিন্তু উপরে তা স্বাভাবিক রেখেই উঠতে নিলে তুরা থামিয়ে দিয়ে বলল

-আমি দেখছি মা,আপনি বসুন
বলে উঠে দরজা খুলতেই চার পাঁচজনের একটা দল এক সাথে চেঁচিয়ে বলে উঠল ‘সারপ্রাইইজজজ’
কিংকর্তব্যবিমূঢ় তুরা হা করে চেয়ে আছে,সামনে থাকা জন কয়েক মানুষের চেহারা বুঝে উঠার আগেই একজন হুমড়ি খেয়ে তুরার উপর পরে জড়িয়ে ধরল। তুরা এখনো ভাবশূণ্য ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে, ঘটনার আকস্মিকতায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে, এটা কি হলো? কোত্থেকে এসে একদল ঝাপিয়ে পরল?
-আরেহ.. জায়মা, আরমান, তনু, রুহি!!

তোরা? তোরা সবগুলো??
পেছন হতে রাইমার কথা শুনে তুরাকে জড়িয়ে ধরা মেয়েটা এক ঝটকায় সরে গিয়ে দাঁড়াল,,হতভম্ব দৃষ্টিতে একবার রাইমা একবার তুরার দিকে তাকাচ্ছে। এক হাতে মাথা চুলকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে বলল
-এ্যাহহ,,রাই আপু তুমি এখানে,,তাহলে আমি কাকে জড়িয়ে ধরলাম
মেয়েটা বলার সাথে সাথেই পেছন থেকে আরও একটা মেয়ে খুব প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি দিয়ে বলল
-এই পুতুলের মতন দেখতে মেয়েটা কে রাই আপু?

-আল্লাহ রুহি তুই কার উপর হামলা করলি বলদি?
আরও একটা মেয়ে একথা বলতেই রাইমা সকলকে থামিয়ে বলল
-আরে থাম থাম,,আগে ভেতরে আই বলছি সব। দিনে দুপুরে তো তোরা ভয় পাইয়ে দিয়েছিস।
বলেই দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো, তিনটা মেয়ে সহ আরও একজন ছেলে ঘরে প্রবেশ করতেই রুবি আর আমেনা খাতুন অবাক দৃষ্টিতে চেয়েও জ্বলজ্বল চোখে মুখে হেসে উঠে দাড়াল।

-কিরে,তোরা। বলা নেই কওয়া নেই এভাবে হুট করে চলে আসলি?
-ওমাহ এসে কি ভুল করলাম মামী,,রাই আপুর বিয়ে আর আমরা কি না বাড়ি বসে হলুদের দিনেই আসব। বলি আমরা না আসলে তোমার বাড়িতে হইহট্টগোল কারা করবে। বলেই থপ করে সোফার উপর বসল রুহি নামের মেয়েটা।
-একদম। বেশ করেছিস বনু। এই না হলে আমার নাতনিরা,তোর বাপ মা কাল আসুক আর না আসুক তোরা এসেছিস এতেই আমি খুশি

দিদুনের কথার সাথে সাথে লম্বা চিকন গড়নের মেয়েটা এগিয়ে দিদুনকে জড়িয়ে ধরে বলল
-আমরা না এসে কি পারি, রাই আপুর বিয়ে নিয়ে সেই কবে থেকে প্ল্যানিং করছি আর বাবা মা বলছে হলুদের দিনেই আসবে,তা কি হয়? তাই চলে এলাম তোমাদের সারপ্রাইজ দিতে
-আমাদের সারপ্রাইজ দিতে এসে সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ টা তোরা তুরা কে দিয়ে ফেলেছিস,বেচারি এখনও হতভম্ব হয়ে আছে
বলেই ফিক করে হেসে দিলো রাইমা। রাইমার কথা অনুসরণ করে সোফা থেকে রুহি নামের মেয়েটা উঠে দাঁড়িয়ে বলল
-আসলেই তো,,এই মেয়েকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না। না চিনেই জড়িয়ে ধরে ফেলেছি
বলেই বোকা একটা চাহনি দিয়ে মাথা চুলকালো।

-মেয়ে নয়,ভাবি বল রুহি। ও তুরা,আহানের বউ। তোদের সবার বড় ভাবি
রাইমার কথা শেষ হওয়া মাত্র দিদুনকে জড়িয়ে ধরে রাখা মেয়েটা ধপ করে উঠে দাড়াল। রুহি নামের মেয়েটা বড়বড় চোখ করে তুরার দিকে চাইল যেনো অষ্টম আশ্চর্য দেখে ফেলেছে। রাইমার পেছনে দাঁড়ানো মেয়েটা এগিয়ে এসে বলল
-আরিইই,ভাবিই!! আরে ভাবিকে দেখার জন্যেই তো তোড়জোড় করে আসলাম আমরা দেখি দেখি সর তো
বলেই এগিয়ে এসে তুরার সামনে দাঁড়িয়ে বলল

-হ্যালো ভাবি, মাইসেল্ফ তনু আপনার অনেক গুলো ননদের মাঝের একমাত্র ননদ,,আহান ভাইয়ের ফুফাতো বোন
তনু নামের মেয়েটার কথায় তুরা বিস্ময় কাটিয়ে সামান্য হেসে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পাশ থেকে রুহি বলল
-এই তাহলে তো আমি একদম ঠিক জাগায় ল্যান্ড করেছি গাইস। আরেকটা হাগ হয়ে যাক
বলেই আবারও হুড়মুড়িয়ে এসে তুরাকে জড়িয়ে ধরে বলল

-ভাবিই আমি রুহি আমিও আহান ভাইয়ের ফুফাতো বোন ওই যে ওই গাধাটার ছোট বোন।
জায়মাকে দেখিয়ে বলল,,তুরা জায়মার দিকে তাকালে জায়মাও মিষ্টি হেসে এগিয়ে এসে তুরার সাথে কুশল বিনিময় করে নিজের পরিচয় দিয়ে বলে

-আমি জায়মা। আহান ভাইয়ের চাচাতো বোন। ভাবি, বিশ্বাস করেন যবে থেকে শুনেছি আহান ভাই বিয়ে করেছে আমরাতো পারিনি রকেটে করে উড়ে আসতে। দ্যা ওয়ান এ্যন্ড অনলি বিয়ে বিদ্রোহী আহান ভাই বিয়ে করেছে ভাবতেও পারিনি তাই তো…
পুরোটা শেষ করার আগে, বাধা দিলো বেশ হাসি খুশি চেহারার সুদর্শন একটা ছেলে,যে এতক্ষণ অপেক্ষারত সবার কথা শুনে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছিলো, এবার জায়মাকে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই হড়বড় করে এসে এক ধাক্কায় জায়মা কে সরিয়ে তুরার সামনে ঝুকে পা ছুঁয়ে বলল

-আশির্বাদ করুন ভাবি,আমি আপনার একমাত্র দেবর আরমান
একের পর এক অপ্রস্তুত ঘটনায় তুরা বাকরুদ্ধ হয়ে কথায় খেই হারিয়ে ফেলেছে,কি বলবে কেমন প্রতিক্রিয়া করবে যেনো ভুলতে বসেছে। এত বড় দামড়া ছেলেটা তুরার পা ছুঁয়ে সালাম করাই তুরা সরে এসে কিছু বলতে নিবে তার আগেই আরেকটা পুরুষালি কণ্ঠে তাকায় দরজার দিকে
-হেই স্টপ। একমাত্র না দুইমাত্র দেবর বল

আরও একটা অনাকাঙ্ক্ষিত বাক্যবাণে তুরা তাকিয়ে দেখল। বেশ লম্বা চওড়া সুগঠিত শরীরের একটা ছেলে দাঁড়িয়ে, কাধে ব্যাগ পায়ে জুতা আর চোখে চশমা। তুলনামূলক বেশি সুদর্শন ছেলেটা,,দেখতে অনেকটা আহানের মতই। তুরাকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে দেখে অপেক্ষাকৃত সুদর্শন ছেলেটা এগিয়ে এসে বলল
-আমাকে রেখেই তোরা চলে এলি। সো আনফেয়ার,, যাই হোক
বলেই তুরার সামনে এক হাত বাড়িয়ে চোখের চশমা টা খুলে গাল ভরা হাসি দিয়ে বলল

-আমি বিহান, আহানের কাজিন। যদিও বয়সে প্রায় ওর সমানই তবুও আপনার দেবর। নাইস টু মিট ইউ ভাবি
পরপর এতগুলো ঝটকায় তুরা হতভম্ব হয়ে গেছে, একসাথে এতগুলো মানুষ,কাকে ছেড়ে কাকে মনে রাখবে। মুখের খেই হারিয়ে হতবিহ্বল হয়ে তাকাল রাইমার দিকে। রাইমা সবটা বুঝতে পেরে এগিয়ে এসে তুরার পাশে দাঁড়িয়ে বলল

-আরে চিল গাইস। আস্তেধীরে গ্রেটিংস কর। বেচারি ভয় পেয়ে যাবে তো তোদের এমন লাফালাফি দেখে। এসেছিস এখনই চলে তো যাবি না, পরিচিত হওয়া যাবে। তা না তোরা আগেই হড়বড় করে বেচারিকে কনফিউজড করছিস
রাইমার কথা শুনে সকলে বেশ যেনো লজ্জিত বোধ করল। আসলেই তুরাকে দেখে এক্সাইটমেন্ট আটকাতে পারেনি, ওদের সবাইকে থামিয়ে মিনু ফুফু বলল

তুমি আমি দুজনে পর্ব ২১

-ওরে তোরা এদিক আই আমার বাবুর বউটারে এসে থেকেই একেবারে ঘেটে ফেলেছিস,,বেচারি এমনিতেই নরম সরম।
ফুফুর কথার বিহান এগিয়ে এসে বসল মিনু পাশে, রুহি, জায়মা, তনু আগের মতোই তুরাকে ঘিরেই দাঁড়িয়ে আছে,ওদের এতসব জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশের মাঝে থমথমে গলার রাশভারি কণ্ঠে বলল
-তোরা? তোরা সবগুলো কখন এলি

তুমি আমি দুজনে পর্ব ২৩