তুমি আমি দুজনে পর্ব ২১

তুমি আমি দুজনে পর্ব ২১
হুমাইরা হাসান

-তুরায়ায়া,,তোমার এই আপদ বিড়াল টারে সরাও।
বলেই চেঁচিয়ে উঠল আহান। তুরা সবেই রাইমার ঘর থেকে বেরিয়েছিল,আহানের এভাবে আকস্মিক হুংকারে হন্তদন্ত হয়ে ঘরে এসে দেখল আহান এক হাতে টিস্যুর বক্স নিয়ে দাঁড়িয়ে আরেক হাতে নাক মুছছে,আর প্রায় প্রচন্ড ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে টুনির দিকে। তুরা টুনিকে আহানের বালিশের উপর দেখে ছুটে গিয়ে কোলে তুলে নিল।

-তোমার এই আপদ বিড়াল টা আমার বালিশে এসে শুয়েছে,কত বড় সাহস হলে এমনটা করতে পারে ও!
আহানের হুংকার শুনে টুনি টিপটিপ করে চেয়ে আছে ওর দিকে,যেন ভীষণ আগ্রহের কিছু দেখছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তুরা টুনিকে নিয়ে ঘর থেকে বেরোতে নিলে পেছন থেকে আহান ডেকে বলল
-বেডশিট চেঞ্জ কর,তোমার এই আপদ বিড়ালটার পশমে ভরে গেছে
-ওর নাম টুনি আপদ না
চোখ মুখ কুচকে বিড়বিড়িয়ে বলল তুরা, আহান ক্রুর দৃষ্টিতে তুরার দিকে চেয়ে বলল

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-টুনি হোক বা টুনা আমার জন্য আপদ ই,শিগগির এটাকে সরাও ভুলেও যেন আমার আশেপাশে না আসে
তুরা ভ্রু কুচকে ওয়ারড্রব থেকে নতুন একটা বেডশিট বের করে সেটা বিছিয়ে পুরোনো টা তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। আহান গিয়ে দাঁড়িয়েছে বারান্দায়,হাতের টিস্যু দিয়ে অনবরত নাক মুছতে মুছতে
তুরা বেডশিট টা নিয়ে ঝুড়িতে রেখে টুনিকে নিয়ে রাইমার ঘরে বারান্দায় রেখে দিল। টেবিলে রাখা ছোট বাটিতে টুনির জন্যে আনা দুধ ঢেলে ওকে খেতে দিয়ে বলল
-খবরদার ওই জল্লাদ লোকটার আশেপাশে যাবি নাহ আর। কত বড় ব’জ্জাত হলে এমন ছোট্ট বাচ্চাটাকে আপদ বলতে পারে! উনি নিজেই তো আপদ,হুহ

বলেই উঠে চলে গেল। আহান তুরার যাওয়ার পানে চেয়ে হা করে রইল। সে নাকি আপদ! রাইমা আর আহানের রুম পাশাপাশি হওয়ায় বারান্দা টাও একসাথেই শুধু মাঝখানে এক হাতেক ফাঁকা। তুরা না দেখলেও বারান্দায় দাঁড়িয়ে পেছন থেকে তুরার সব কথায় শুনেছে আহান। তাকে আপদ বলা,আসুক আজ ঘরে। ক্রুর দৃষ্টিতে তুরার যাওয়ার দিকে চেয়ে, টুনির দিকে তাকাল আহান। বিড়াল টা চপচপ করে দুধ খাচ্ছিলো, আহান তাকাতেই খাওয়া বাদ দিয়ে ওর দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে ‘ম্যাওও’ করে উঠল। টুনির দিকে তাকিয়েই ডিসগাস্টিং বলে আহান ঘরে ঢুকে গেল।

-ভাবিজান শপিং করতে কবে যাইবেন
চুমকির প্রশ্নেও তুরার ভাবনাচ্যুত হলো নাহ,আনমনেই ‘হু’ বলে উত্তর দিল
-বলি আপার তো বিয়ে শপিং করবেন না?
বেশ উঁচু গলায় বলা কথাত তুরা ভাবনা ভেঙে বলল
-আম হ্যাঁ দেখি
তুরাকে কথা সম্পূর্ণ না করতে দিয়েই চুমকি বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল
-আপার সাথে আপনিও একটা বেনারসি নিয়েন ভাবি। একদম লাল টুকটুকে, আপনাকে যা মানাবে না ভাইজান তো চোখ ই ফিরাইতে পারব না

হড়বড় হড়বড় করে বলে আবারও সবজি কাটায় মন দিল চুমকি। সন্ধ্যার সময়টাতে বসার ঘরে বসে আছে তুরা, রাইমা এতক্ষণ সাথেই ছিল ফোন আসাই সে উপরে গেছে,মা রান্নাঘরে সবার জন্য সন্ধ্যার জলখাবার প্রস্তুতে ব্যস্ত। দিদুন মাগরিবের নামাজ পরে এখনও বের হয়নি। রাতের রান্নার জন্য সবজি কাটতে বসেছে চুমকি। কিন্তু তার তো টিভি ছাড়া চলে না তাই টিভির সামনেই বসেছে ঝুড়ি ভরা সবজি আর বটি নিয়ে। টিভি দেখতে দেখতেই প্রশ্নটা করেছিল তুরার উদ্দেশ্যে।
চুমকির কথায় তুরা সামান্য সৌজন্যমূলক হাসি দিল। কোন ভাবনায় বুদ ছিল নিজেও বুঝতে পারেনি। আর শাড়ী! ওটা পরা তার কম্য নয়। সেদিন যেই হাল হয়েছিল। তুরা কিছু বলবে তার আগেই পাশ থেকে মিনু ফুফু বলল

-হ্যাঁ তা ঠিক বলেছিস চুমকি। মেয়ে বউদের তো শাড়িতেই মানাবে,আমিতো বলেও ছিলাম শাড়ি পরতে সে আর শুনে কই।
-কিন্ত আমি শাড়ি ঠিকঠাক পরতেই তো পারিনা ফুফু আম্মা, আর পরলেও সামলাতে পারিনা
মিনু হেলতে দুলতে এসে বসল তুরার পাশে,ভ্রু কিঞ্চিৎ জড় করে বলল
-তুমি পারোনা তো কি,বলেছিনা বাবুকে বলবে। বউ পারবে না জামাই পরাবে ব্যস হয়ে গেলো
মিনুর কথায় তুরা লাজে বিমূঢ়তায়,বিহ্বলতায় মুখের খেই হারিয়ে ফেলল, আমতাআমতা করে কিছু বলতে নিবে তার আগেই পাশ থেকে চুমকি বলে উঠল

-তা যা বলছেন ফুফু,,আমিতো দেখছি বাংলা ছবিতে, অপু বিশ্বাস শাড়ি পরতে পারেনাই বলে সাকিব খান পরিয়ে দিলো। কি রুমান্টিক সিন আল্লাহ আল্লাহ
বলেই এক হাতে আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে ফিকফিক করে হেসে দিল চুমকি। এক তো ফুফুর এসব কথা তার উপর চুমকির এসব অহেতুক বিব্রতকর কথায় তুরা বেশ অপ্রতিভ হয়ে পরল,হতবিহ্বল হয়ে থম ধরেই বসে রইল।মিনু ফুফু পাশ থেকে খোঁচা দিয়ে তুরার কাছে কিঞ্চিৎ সরে এসে বলল
-কি ব্যাপার বলোতো বউ মা,,আজ সকাল থেকেই মুখটা টসটস করছে,কিছু বললে লজ্জাও বেশ পাচ্ছো দেখছি,জল কি তবে গড়িয়েছে কিছুদূর?

তুরার অসস্থিকে আরও কয়েক ধাপ বাড়িয়ে দিলো মিনু এহেন কথায়, মুহুর্তেই একরাশ তটস্থতা আর ব্যগ্রতা ঘিরে ধরল তুরাকে। একে তো সে নিজের মাঝেই লজ্জায় মুছড়ে যাচ্ছে তার উপর ফুফুর এহেন কথায় তুরার মেদুর গালে ছেয়ে গেল রক্তিমা, ডাগর চোখ দুটিতে স্পষ্ট লজ্জার জানান,অভিব্যক্তি একেবারেই অপ্রস্তুত, কোনো রকমে গলা ঠেলে বলল
-সেরকম কিছুই না ফুফু,মানে এমনিতেই..

-থাক থাক,,চুলগুলো তো আর বাতাসে পাক ধরা শুরু করল না। আমিও বুঝি।
বলেই গা দুলিয়ে একটা হাসি দিল মিনু। চুমকি ততক্ষণে উঠে গেছে রান্নাঘরের দিকে। ছবি দেখায় ব্যস্ত থাকায় এতক্ষণের কথা সে খেয়াল করেনি। ভাগ্যিস শুনেনি,না তো তুরা লজ্জায় ম’রেই যেত। এই মিনু ফুফুর মুখেও আবার কিছু বাঁধে নাহ। তুরার অপ্রস্তুত অবস্থা দেখে মিনু ফুফু টেনে টেনে আবারও বলল
-হয় হয়,কত কিছুই হয়। এত লজ্জা পেলে কি চলে। আমার বাবুকে কিন্তু আঁচলে আঁচলে রাখতে হবে, কি ভাবে চল যে তোমারা দুজন দু মেরুর মানুষের মতো, যেন দেখা সাক্ষাৎ ই নাই। নতুন নতুন বিয়েতে তো বর তার বউ ছাড়া থাকতেই পারেনা,,আর ইনি একজন পালাই পালাই করে বেড়ায়।

মিনু ফুফুর কথায় তুরা অসহায় মুখ করে তাকাল,আঁচলে আবার কি করে রাখে,উনার সাথে তো কথাও বলতে ভয় হয়। আর কাল রাতের ওই ঘটনার পর তো তুরা সামনেও যেতে পারছে না আর।এর মাঝে রুবি চা নাস্তা নিয়ে আসল। রুবিকে দেখে মিনুও আর এসব কথা বাড়াল না,তুরাও যেন হাফ ছেড়ে বাচলো
রাতের খাওয়া দাওয়ার পর্ব বেশ তাড়াতাড়িই চুকে গেছে আজ। কাল থেকে মেহমান আসা শুরু হবে, পরশুই গায়ে হলুদ রাইমার সে নিয়ে বেশ ব্যস্ত ইনসাফ। সবটা সামলাতে বেশ তটস্থ তিনি।

টুনিকে খাবার খাইয়ে রাইমার ঘরের বারান্দায় রেখে তুরা নিজ ঘর অর্থাৎ আহানের ঘরের দিকে হাঁটা ধরল। বুকের ভেতর ধুপধাপ শব্দের দামামা চলছে, বিকেলে টুনির ওই কান্ডের জন্য আহানের সামনে কয়েক মুহূর্তের জন্যে গেলেও তার অসস্থি একেবারেই কাটেনি। যাবে কি করে এখন তো লোকটার নাম শুনলেও বুকে ঝড় উঠছে। আস্তেধীরে দরজার নব মুচড়ে ঘরের ভেতর উঁকি দিল তুরা, পুরো ঘর ফাঁকা, ওয়াসরুমের ভেতর থেকে পানির ট্যাপের টুপটুপ শব্দ। এই সুযোগে লোকটা বাইরে আসার আগেই তুরা ফটাফট বিছানায় গিয়ে চাদর মুড়িয়ে শুয়ে পরল। কোনো মতন রাত টা কাটতে পারলেই সে বাঁচে,সকাল হতেই পালাবে তাও মুখোমুখি হতে চাইনা।

ফেশ হয়ে বেরোতেই আহান দেখল তুরা আপাদমস্তক চাদরে ঢেকে চিত হয়ে শুয়ে আছে কোনো নড়চড় ছাড়াই। আহান ভ্রু কুচকে তাকাল একবার। মেয়েটা তার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এটা স্পষ্ট বুঝতে পেরেও কোনো প্রতিক্রিয়া করল নাহ,সে নিজেও এক প্রকার তুরার সামনে না পরলেই বাঁচে, উফ কেনো যে ওমন একটা ঘটনা হলো। তা না হলে এমন অসস্থির পাহাড় কিছুতেই ঘিরে ধরত নাহ।

বেশ অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে, তুরা চাদরের তলে চুপটি করে শুয়ে থাকলেও ঘুম মোটেও আসছে না,তার উপর এই ভ্যাপসা গরমে চাদর মুড়িয়ে থাকা যায় নাকি। আহান লাইট বন্ধ করে দিয়েছে অনেকে সময় হয়ে গেছে, এতক্ষণে নিশ্চিত ঘুমিয়ে গেছে। ভেবেই চাদরের ফাঁক দিয়ে চোখ বের করে দেখল আহান ওপাশ ফিরে শুয়ে, কোনো সাড়া শব্দ নেই দেখে আহানকে ঘুমন্ত ভেবেই তুরা চাদর টা সরিয়ে দিল। আহ এবার বেশ শান্তি লাগছে। কিন্তু তাও ঘুম আসার নাম নেই। আহান পাশেই শুয়ে একটু পরপর এপাশ ওপাশ করছে,মাঝে মধ্যে মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর বিরক্তিতে মৃদু শব্দ করছে। কোনো কারণে স্থির হচ্ছে নাহ।

আহানের কার্যক্রম তুরার চোখে ধরা দিতেই ও উঠে বসল,কিছুক্ষণ অবলোকন করে নিজের ভেতরে সমস্ত বিব্রতবোধ সরিয়ে দিয়ে এগিয়ে গেল। আহান চোখ বুজেই আছে, ইতস্ততভাবেই তুরা স্পর্শ করল আহানের কপাল। জ্বর আছে কি না বুঝার চেষ্টা করলো, না শরীরের তাপমাত্রা তো স্বাভাবিক। কিছুক্ষণ নিভৃতে কেটে যাওয়ার পরমুহূর্তেই আসল ব্যপার টা বুঝতে পেরে তুরা হাজারো ইতস্ততবোধ নিয়েই হাত টেনে নিয়ে গেল আহানের চুলের দিকে, খুব সন্তপর্ণে চুলগুলো টেনে দিতে লাগল।

প্রচন্ড মাথা ব্যাথার দাপটে অসহ্য পীড়ন অনুভূতির মাঝে মাথায় নরম হাতের স্পর্শ পেতেই আহানের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল কিঞ্চিৎ হাসির রেখা,আনমনেই ভেতরে অদ্ভুত প্রশান্তি জুড়ে গেল,প্রগাঢ় তন্দ্রাঘোরে আচ্ছন্ন হলো।

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে কয়েক প্রহর আগেই। পাখির কিচিরমিচির কলধ্বনি আর হিম অনিলে স্নিগ্ধ সকালের পরিবেশ।বারান্দা দিয়ে আসা মৃদুমন্দ বাতাসে ঘরের ভেতর টাও আচ্ছাদিত, অন্যদিনের তুলনায় আজ কিছুটা আগেই ঘুম ছুটে গেল তুরার। ঘুমে আধবোজা চোখ খুলে পিটপিট করে তাকাল, ঈষৎ নড়াচড়া করতে গিয়ে অনুভব হলো সে কারো দৃঢ বন্ধনে আবদ্ধ, ভ্রু কুচকে চোখ টানটান করে তাকালো। রাতে আহানের চুল টেনে দিতে দিতে ওভাবেই ঘুমিয়ে গেছে,স্পষ্টভাবে তাকাতেই দেখলো ঘুমের ঘোরে আহান তুরার কোমর জড়িয়ে ধরে আছে, অজান্তেই মুখ জুড়ে একটা হাসি ফুটে উঠল তুরার,আহানের চেহারা পানে তাকাতে হাসিটা আরও সমৃদ্ধ হলো,

আহানের চুলগুলো এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কপালে, শুষ্ক ঠোঁট দুটির রুক্ষ শুক্ষ অবস্থা। বাদামী বর্ণের টি-শার্ট টা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে শরীরে। এই প্রথম আহানকে এভাবে খুটিয়ে দেখল তুরা,মোহাগ্রস্থ হলো অগোছালো পুরুষটির উপর, অত্যন্ত সুপ্তভাবেই মনের বৃহৎ একটা জায়গা জুড়ে বরাদ্দ হলো একান্ত পুরুষটার নামে।

লজ্জায় দৃষ্টি নত হলো তুরার, মেদহীন গালটাতে রক্তিম আভায় সজ্জিত হলো,,একবার নিজের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করলো তুরা, কাল আহানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে বুঝতে পারেনি। একপাশে কাত হয়ে আধশোয়া হয়ে সারারাত অতিবাহিত হওয়ায় পিঠে কেমন টাস ধরে এসেছে তুরার, ঘাড় মেরুদন্ডের আশপাশ জুড়ে সুক্ষ্ম ব্যথার আবির্ভাব হয়েছে। আহানের দিকে এক নজর চাইল। ঘুমের ঘোরেই চোখের পাতা নড়ছে,এলোমেলো চুলগুলো অবিন্যস্ত পরে আছে, তুরা মুচকি হেসে হাত গলিয়ে দিলো আহানের চুলের মাঝে,,ঘুমের মাঝে নড়েচড়ে উঠল আহান,স্পর্শ আরও নিবিড় হতেই তুরা পুরো জমে গেলো, লজ্জায় কুকড়ে যাওয়ার অবস্থা, প্রখর কাঁপন ছড়িয়ে গেলো সর্বাঙ্গে,, আরও কিছুক্ষণ অতিবাহিত হলে তুরা খুব সতর্কতার সঙ্গে আহানকে ছাড়িয়ে নিলো নিজ থেকে, যেন তার ঘুম না ভাঙে, এমন অপ্রিতিকর পরিস্থিতিতে আবারও পরতে চাইনা সে, আহানের বন্ধন ছাড়িয়ে উঠে ওয়াসরুমে ঢুকলো ফ্রেশ হতে।

সকালের নাস্তা শেষে ইনসাফ মাহবুব বেরিয়ে গেলেও আহান এখনো নিচে নামেনি, তুরা বারবার উপরে তাকাচ্ছে আহান নামছেনা কেনো দেখতে,যদিও সকাল বেশি হয়নি,সবে সাতটা বাজলো। আজ ঘুম একটু তাড়াতাড়িই ভেঙেছে তুরার। রাইমার বিয়ে উপলক্ষে ভার্সিটিতে যাওয়া বেশ কয়েকদিন বন্ধ তুরার। চোখ তুলে সিড়ির দিকে তাকাতেই দেখল আহান নামছে তবে,পরনে রোজকার মতো ফরমাল গেট আপের পরিবর্তে সাদা রঙের টি-শার্ট আর কালো ট্রাউজার তার সাথে জুতা। তুরার কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে এলো। এভাবে কোথায় যাচ্ছে লোকটা? তুরার ভাবনার মাঝেই আহান নেমে আসল। কোনো দিকে না চেয়েই সদর দরজা দিয়ে বেরোতে নিলে আমেনা খাতুন বলল

-দাদুভাই কোথায় যাচ্ছো?
-জগিংয়ে দিদুন
ছোট্ট জবাব দিয়ে প্রত্যুত্তরের অপেক্ষা না করে বেরিয়ে গেলো। তুরা হা করে চেয়ে রইল যাওয়ার পানে, তুরাকে হা করে চেয়ে থাকতে দেখে মিনু বলল
-রাইমার বিয়ের জন্য ও ভার্সিটিতে যাবেনা কিছুদিন, একমাত্র ভাই সব দ্বায়িত্ব তো ওর ই। এটাও নিশ্চয়ই জানতে না তুমি?
মিনুর কথা শুনে তুরা চুপচাপ ঘাড় নামিয়ে হাত কচলাতে থাকলো। আসলেই তো জানতো না সে,আর জানবেই বা কি করে লোকটা কি তাকে কোনো কিছুই জানিয়ে করে নাকি।

তুমি আমি দুজনে পর্ব ২০

বেশ আধা ঘণ্টা যাবৎ একভাবে হাঁটার পর,রাস্তার পাশে বেঞ্চিতে বসলো আহান, ভার্সিটি থাকায় এখন আর রোজ জগিংয়ে আসা হয়না। সাস্থ্য সম্পর্কে বেশ সচেতন সে। এখন আগের মতো রোজ আসতে না পারলেও ছুটির দিনগুলোতে মিস দেয়না। হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাশে তাকাতেই চমকে উঠে বলল
-তুমি, এখানে!!

তুমি আমি দুজনে পর্ব ২২