তুমি আমি দুজনে পর্ব ২০

তুমি আমি দুজনে পর্ব ২০
হুমাইরা হাসান

অনবরত বেজে চলা অ্যালার্মের বিরক্তিকর শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো আহানের,,চোখ বন্ধ রেখেই কপালে ভাজ ফেলল,ঘুমে বুজে আসা চোখটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও খুলে তাকাল। দেওয়াল ঘড়িতে আটটা বেজে সতেরো মিনিট, সময়ের কাটার অবস্থান বুঝতেই আহানের ঘুম ছুটে গেলো।

তড়িঘড়ি করে উঠে ওয়াসরুমে ঢুকলো। সময় স্বল্পতার কারণে দশ মিনিটের মধ্যেই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আইভরি রঙের শার্টটার বোতাম লাগাতে লাগাতে চোখ গেলো নিজের বুকের উপর। একদম মাঝখান বরাবর তীক্ষ্ণ নখের আঁচড়ের দাগ,,ফর্সা বুকে লাল হয়ে আসা তিনটা নখের দাগ চোখে বাধতেই আহানের গত রাতের কথা মনে পরে গেলো

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিবিড় আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে আহান তুরার ঠোঁটে ডুবে ঠিক কতখানি সময় মত্ত ছিলো তা হিসেবের বাইরে। চারপাশে হুট করেই অদ্ভুত ভাবে সৃষ্ট শীতল পরিবেশ আর একে অপরের শরীরের উষ্ণতায় দীর্ঘ একটা মুহূর্ত পার হওয়ার পর মুখ তুলে তাকাল তুরার আধো নিদ্রাচ্ছন্ন ঘোর লাগা চোখ দুটিতে।

একভাবে মায়াবিষ্ট চাহনিতে চেয়ে আছে তুরা আহানের দিকে,আহানের ভীষণ ইচ্ছে হলো তুরার ঘন পাপড়ি বিশিষ্ট আখিযুগল আপন হাতে ছুঁয়ে দিতে, কিন্তু তখনই তুরার চোখ থেকে গাড়িয়ে পরল দুফোঁটা অশ্রুবিন্দু। চমকে উঠে হুস ফিরল আহানের,সে কি করছিল এতক্ষণ!

সাময়িক আবেগের বশীভূত হয়ে এত বড় ভুলটা সে কি করে করতে পারল? নিজের ব্যক্তিত্বকে যেন ভীষণ ঠুনকো লাগল আহানের,সে কি করে পারলনা নিজেকে সংযত করতে,,তার উপর তুরার চোখের পানি তার ভেতরের অপরাধ বোধ তড়তড় করে বাড়িয়ে দিল,তুরার মায়াবী মুখের অশ্রুবিন্দুতে দিকে চেয়ে আহানের নিজেকে অনেক বড় অপরাধী মনে হলো, তড়িৎ গতিতে সরে আসলো তুরার কাছ থেকে ভীষণ অপ্রতিভ হয়ে তুরাকে বলল

-আ আ’ম সরি তুরা আমি আসলে,আমি তোমাকে কাঁদাতে চাইনি,কি করে হয়ে গেলো আমি বুঝতে পারিনি তুমি প্লিজ..
পুরো কথা শেষ হবার আগেই তুরা উঠে জড়িয়ে ধরল আহানকে, কিন্তু আহান এবার আর তুরাকে ধরল না, আহানের স্পর্শ না পেয়েও প্রচন্ড শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তুরা,কিন্তু মানুষটা যেন আর আঁকড়ে ধরতে চাইছে না,,আধখোলা বুকটাতে নিবিড় ভাবে মাথা পেতে রইলো তুরা। নিঃশ্বাস ভরে আহানের গায়ের ঘ্রাণ নিতে লাগল,,যে ঘ্রাণে নিজেকে মাতোয়ারা করে ফেলেছে সে,হৃদয়ের এমন ওঠাপড়া অদম্য অনুভূতি গুলো তাকে বেহায়া নারী করে তুলছে যেন।

বুকের মাঝে স্ত্রী নামক মেয়েটা যখন লেপ্টে বাধ ভাঙানো অনুভূতির জোয়ারে ভাসমান তখন আহান নিজের ভেতর সৃষ্টি হওয়া অনুভূতি গুলোকে স্ব স্ব গন্ডিতে আগলে নিলো। অদম্য চাহিদার প্রখরতাকে বাড়তে না দিয়ে তুরাকে এক হাতে আগলে শুইয়ে দিলো বিছানাই। ছোট্ট করে বলল ‘ঘুমাও তুরা’। তুরার জিদ্দি মন যেন মুহুর্তেই শান্ত হয়ে গেলো আহানের চোখের দিকে চেয়ে,নিজের ভেজা ভেজা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বহুক্ষণ, স্বামী হওয়া সত্ত্বেও আহান নিজেকে আদর্শ পুরুষের পরিচয় দিয়ে সামলে নিলো সকল পীড়াদায়ক অনুভূতি৷ নিগূঢ় প্রলোভন সামলে পরম আবেশে চুপচাপ তুরাকে টেনে নিয়ে দু বাহুর মাঝে জড়িয়ে ধরল।

ফোনের অ্যালার্মের রিমাইন্ডার আবারও বেজে উঠতেই ভাবনাচ্যুত হলো আহানের, গত রাতের অনাকাঙ্ক্ষিত কথাটা মনে করতে যেন হারিয়ে গেছিল। নিজের অনুভূতি গুলোকে যেন মরীচিকার মতই ঠেকছে৷ কিছু মানুষ কারো জীবনে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে অন্তরে তার মায়া আর টান দিয়ে এত গভীরভাবে দাগ কেটে ফেলে যে সে মানুষটার সকল অভ্যাস আর স্বভাবের সাথে ব্যক্তিত্বকেও নাড়িয়ে দেয়। অহর্নিশি শুধু বেনামি চিন্তাভাবনা আর চুম্বকের ন্যায় টানে সেই মানুষটার পানে।

অতল চিন্তাভাবনায় ডুবে গেলো আহান,নিজেকে যেন আজ বড্ড অচেনা লাগছে,আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিবিম্বকেই সে চিনতে পারছে না, আসলেই কি সে সেই আগের মানুষটা যে কি না কিছুদিন আগ পর্যন্তও বিয়ে নামক বেড়াজালের নামেও অতিষ্ঠ ছিল? মনের খোরাকে যে আদও বিশ্বাসী ছিলো নাহ! আজ কি হলো তার? এইটুকু মেয়েটা তাকে কি করে ফেলল! তুরা নামক মেয়েটা এখন তাকে চুম্বকের মতো টানছে নিজের দিকে, অজানা ছটফটানিতে অজস্র অহেতুক অনুভূতি জড় হয়।

ধপ করে চোখ বন্ধ করে ফেলল আহান,ব্যস! আর ভাবতে চাইনা এসব নিয়ে। সে ভুল করে ফেলেছে আর সে ভুল নিয়ে আর ঘাটতে চাইনা।
রেডি হয়ে পেছনে ফিরে ব্যাগটা হাতে নিতে গেলে দেখল ব্যাগের পাশেই ধোঁয়া উঠা কফির কাপটা রাখা। কাপটা হাতে নিয়ে দেখল এখনও বেশ গরম, কফিটা যে তুরাই রেখে গেছে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই তার,,নিশ্চিত যখন সে বাথরুমে ছিলো তখন রেখে গেছে, চোখের সামনে না এসেও এই ছোট যত্নটা বেশ লাগল আহানের, মুচকি হেসে কাপটা হাতে তুলে নিলো।

ড্রয়িং রুমে ইনসাফ মাহবুব এর সাথে রুবি আর আমেনা বসে ব্যস্ত আলোচনায়। বিয়ের আর বেশি দিন বাকি নেই,অনেক বড় দ্বায়িত্ব, সবটা সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করাটাই এখন একমাত্র উদ্দেশ্য। আহানকে দ্রুত পায়ে নেমে আসতে দেখে মিনু প্রশ্ন করল
-বাবু,আজ তোর দেরি হলো যে?
-ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে গেছে ফুফু, আসি অলরেডি অনেক লেট হয়ে গেছে
বলেই গটগট করে বেরোতে নিলে আমেনা খাতুন ডেকে বললেন

-নাস্তা টা তো করে যাও দাদুভাই
-আজ থাক দিদুন, অনেক লেট হয়ে গেছে
-সে কি,তুরাও বলল দেরি হয়ে গেছে তোর ও তাই? ওউ না খেয়েই ছুটলো একটু আগেই। কত করে বললাম তোর সাথে যাওয়ার কথা,সে আর শুনল কই ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে বলেই ছুটল

মিনু ফুফুর কথায় আহান দাঁড়িয়ে খানিক ভাবল।তার জানামতে আজ তেমন কোনো ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস নেই যার জন্য এত সকালেই তড়িঘড়ি করে বেরোতে হবে। সে যে আহানের থেকে পালিয়ে বেরানোর জন্যেই এমনটা করেছে তা আহানের নিকট স্পষ্ট। আর কাল ব্যপন না করে আহানও বেরিয়ে গেলো। গাড়িটা বের করে স্টার্ট করেই ছুটালো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

-হেই মিস সুইটি?
অপরিচিত কণ্ঠে পিছু ফিরে তাকাল তুরা, বেশ লম্বা চওড়া শরীরের সুদর্শন একটা ছেলে দাঁড়িয়ে, হালকা সবুজ রঙের টি-শার্ট এর সাথে কালো প্যান্ট তার উপর একটা জ্যাকেট। এখন তো শীত ও না,তবুও ছেলেটাকে জ্যাকেট পরিহিত দেখে তুরার বেশ বিরক্ত লাগল। তবে ব্যাপার সেটাও না,সুইটি? আশেপাশে তাকিয়ে খোঁজার চেষ্টা করল আদও কাকে ডাকল ছেলেটা

-ইয়েস,ইউ। তোমাকেই ডেকেছি
বলেই এগিয়ে এসে একদম তুরার সামনে দাঁড়াল ছেলেটা।
-আসলে তোমার নাম তো জানি নাহ,মিষ্টি রঙের জামা পরা দেখে সুইটি নামটাই মাথাই আসল,ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ
বলেই উত্তরের অপেক্ষা না করেএক হাত এগিয়ে দিয়ে বলল
-হাই, আই আম সিফাত, সিফাত চৌধুরী
সামনের ছেলেটা হাত বাড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও তুরা তার প্রত্যাশাকে পরিহার করে নিজ হাত গুটিয়ে রেখেই বলল
-তাকওয়াতুল তুরা।

তুরার সূক্ষ্মভাবে এড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপার টা সিফাতেরও চক্ষুগোচর হলো নাহ। তবুও সেসব অগ্রাহ্য করে আবারও হাসি মুখেই জিজ্ঞাসা করল
-ফার্স্ট ইয়ার?
-জ্বি

ছোট্ট জবাব তুরার,বিনিময়ে মৃদু হেসে সিফাত এগিয়ে এসে বলল
-দ্যান ইউ হ্যাভ ক্লাস ইন টেন মিনিটস,,চলো সামনে এগোতে এগোতে কথা বলি
এই অপরিচিত ছেলের সাথে আবার কিসের কথা,চেনা নাই জানা নাই কোত্থেকে এসে বলে দিল এগোতে এগোতে কথা বলি, হুহ যত্তসব!

কথা গুলো তুরা মনে মনে বললেও উপরে মেকি একটা হাসি দিয়ে আগাতে লাগল। প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও তুরা ছেলেটার সাথে হেঁটে ক্লাস অব্দি এলো, এতক্ষণে ছেলেটার হাজার টা পকপক শুনতে হলো। ছেলেটা কথা মন্দ বলে না,তবে তুরার অপরিচিতদের সাথে কথা বলতে একটু বেশিই অনিহা। কথা বলতে বলতে ক্লাসের সামনে এসে দাঁড়াতেই সিফাত বলল
-আচ্ছা তাইলে ক্লাসে যাও,নাইস টু মিট ইউ

প্রত্যুত্তরে তুরা স্মিত হেসে বিদায় জানিয়ে ক্লাসে ক্লাসে ঢুকল। ক্লাসে ঢুকতেই সংকোচিত মুখমন্ডলে ক্রমশেই এক ফালি হাসির রেখা বয়ে গেলো, বাম পাশের দ্বিতীয় সারির বেঞ্চ থেকে তুরাকে দেখা মাত্র হাত নাড়ালো ফারিহা। তুরাও খুশিতে বাকবাকুম হয়ে পা বাড়িয়ে গিয়ে বসল কাঙ্ক্ষিত আসনে
-ডিয়ার,এতদিন কই ছিলি,আই মিসড ইউ

-হুহ,আমায় বলছিস,তোরা দুটিতেই তো আসিস নি গতদিন
ফারিহার কথায় কপট অভিমান দেখিয়ে বলল তুরা। ফারিহা বোকা একটা চাহনি দিয়ে বলল
-আব মানে সরি ইয়ার,,হঠাৎ করেই এক আত্মীয়ের বাড়িতে যেতে হয়েছিল,আর এই টিনম্যান ও নাকি বাড়িতে গেছিল। তাই কো-ইন্সিডেন্সলি দুজনই আসিনি,তাই কি এখন তো এসে গেছি। এখন চিল করব
গড়গড় করে কথা গুলো বলেই হেসে দিল ফারিহা। ওর এমন পাগল সূলভ কথা বার্তায় তুরাও হেসে উঠল। পাশ থেকে সাদমান চোখের চশমা টা ঠিক করে বলল

-হ্যাঁ আমিও সরি। আর আমিতো তোমায় জানাতাম। কিন্তু তোমার ফোন নাম্বার ই নেই আমার কাছে,তাই এইটারে বলেছি
-আচ্ছা নো প্রবলেম। এখন আসছ এতেই হবে
বলেই আড্ডাবাজি দেওয়া শুরু করল। ফারিহা আর সাদমানকে বন্ধু হিসেবে পেয়ে তুরা ভীষণ খুশি, স্কুল বা কলেজে বন্ধু বলতে তেমন কেও ই ছিল নাহ। ভার্সিটির মতো অচেনা জাগায় এসে এমন অমায়িক বন্ধু পাওয়াকে তুরা নিতান্তই সৌভাগ্য মনে করে।

তিনজনে আড্ডা পড়াশোনা, ক্লাস করে প্রায় দুপুর গড়িয়ে গেল। লাস্ট ক্লাস টা না করেই তুরা বেরিয়েছে বোর লাগছে বলে, সাথে সাদমান আর ফারিহাও। একসাথে তিনজন হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ এসে সাদ আর ফারিহা একদিকে আর তুরা রিকশা নিয়ে বাড়ির গন্তব্যে যাত্রা দিল।
বিশ মিনিটের মাথায় এসে নামল রিকশা থেকে,,
সকাল বেলা বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়েছে ক্লাসের নাম করে আর এখন ভার্সিটি থেকে তাড়াতাড়ি বেরোলো বোর লাগছে বলে,,কিন্তু আসল কারণ হলো আহান।

তুরা মূলত আহানের থেকেই পালিয়ে বেঁচে বেরাচ্ছে। রাতের ওই ঘটনা মনে পরে থেকে লজ্জায় আয়নার সামনে দাঁড়াতেও তার বিব্রতবোধ হচ্ছে, কি করে পারল সে ওতটা বেহায়া, হতে। স্বামী নামক সুপুরুষ টার এত কাছাকাছি, হাতে হাত রাখা, জড়িয়ে ধরা ঠোঁটে…নাহ,আর ভাবতে পারল না তুরা। লাজুক স্বভাবের নিজেকে জীবনের এ পর্যায়ে এসে এমন বেহায়া স্বরূপে দেখে তুরা নিজেই প্রচন্ডভাবে লজ্জিত,বিহ্বলিত।

কি করে যাবে সে লোকটার সামনে,যার কি না আবেগের বসে সারাটা রাত বুকের মাঝে মিশে ছিল,মনে মনে তার স্পর্শের আকাঙ্খা বারবার করেছিল। ভাবতেই তুরার চোখ মুখ খিঁচিয়ে আসে অসস্থিতে। বাড়ি ঢুকেই তুরা ঘরে গিয়ে গোসল সেরে নিল। জামা কাপড় পালটে নিচে এসে ড্রয়িং রুমে শুধু রাইমা আর মিনু ফুফুকেই পেল। চুমকি আর রুবি খাতুন গেছে বাজারে কিছু কেনাকাটা করতে,আর দিদুন তার ঘরে
-তুরা,এসেছিস। আই খেতে বস। সেই সকালে বেরিয়েছিস খাওয়ার এত অনিয়ম করলে হবে বল
রাইমার ডাকে তুরা এগিয়ে গিয়ে বসল তার পাশে,

-হ্যাঁ খাব আপু,তুমি খেয়েছ?
-নাহ তোর সাথে একসাথে খাব বলে বসে আছি, আই খেতে বসি খুব খিদে পেয়েছে আমার
রাইমাকে যতই দেখে ততই বেশি ভালোবেসে ফেলে তুরা,,রক্তের সম্পর্ক বাদেও যে কোন বোন এতটা আপন লাগে তা ওর জানা ছিল নাহ। এ বাড়িতে এসে থেকে একচ্ছত্র ছায়া হিসেবে পাশে পেয়েছে রাইমাকে। তাই রাইমা যতটা তুরাকে স্নেহ করে, তুরাও ঠিক ততই রাইমাকে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসে, হাসিমুখে দুজন মিলে খেতে বসল একসাথে
-ভাবি আর ননদিনীতে তো বেশ ভাব,তা দুইদিন পরেই তো ননদিনী নিজ ঠিকানায় চলে যাবে, তখন এত খেয়াল কে রাখবে হুম?

পাশে রাখা পাত্রে মুখ থেকে পানের পিক ফেলে টেনে টেনে কথা গুলো বলল মিনু। মিনুর কথা শুনে তুরার মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো, আসলেই তো রাইমার বিয়ে হয়ে গেলে তো সে চলেই যাবে,থাকবে কি করে তুরা একা
-কে আবার,আমিই রাখব। বিয়ে করেছি বলে তো আর হারিয়ে যাচ্ছি না। রোজ রোজ ফোন করে খোঁজ নেব,প্রয়োজনে দুই দিন পরপরই চলে আসব

-দুইদিন পরপর কেনো আপু,তুমি এ বাড়িতেই থেকে যাও৷ দরকার হলে ইমান ভাইয়াকেও রেখে দাও
বাচ্চাদের মতো করে গাল ফুলিয়ে বলল তুরা,,তুরার এমন বাচ্চাসুলভ কথা শুনে মিনু বলল
-তা আর কি করে হয় রে মা,,মেয়েদের তো এই নিয়তি। বিয়ের পর শ্বশুড়বাড়িই তার আসল ঠিকানা সেটা ছাড়া আর কি অন্য কোথাও থাকা যায়। এই যে তুমি এসে আছ এ বাড়িতে তেমনি রাইমা কেও থাকতে হবে ওর শ্বশুড়বাড়িতে।

-আর আমার ভাই কিন্তু কম যায় না। ওউ তোর খেয়াল রাখবে। আমাদের চেয়ে অনেক বেশিই খেয়াল রাখবে। যেই আহান বিয়ে নামে পালাই পালাই করছে নাহ,দুদিন বাদে দেখ বউ বউ করে পাগল হবে
মিনুর কথার পৃষ্ঠে রাইমা বেশ মজা করে বলল কথাগুলো, রাইমার কথা শুনে মিনু ফুফু গা দুলিয়ে হেসে উঠল,সাথে রাইমা নিজেও
কিন্তু ওদের দুজনের হাসি পেলেও তুরার ভীষণ লজ্জা লাগল। ওই লোকটার কথা মনে পরলেই তো রাতের কথা গুলো মনে পরে যাচ্ছে, উফফ কোথায় লুকাবে সে,লাজে সারা মুখ জুড়ে টকটকে হয়ে গেল।

দারোয়ান দরজা খুলে দিতেই কার গাড়িটা গ্যারাজে ঢুকিয়ে পার্ক করে বেরিয়ে এলো আহান। এক হাতে ব্যাগ টা ধরে আরেক হাতে টাই ঢিলে করতে করতে বড় বড় পা ফেলে বাড়িতে ঢুকে সোজা ঘরের দিকে গেল। সিড়ি বেয়ে উঠার সময় নারী কণ্ঠের রিনিঝিনি শব্দে খিলখিলিয়ে হাসির শব্দে পা দুটো থামিয়ে দাঁড়াল।

রাইমার ঘরের দরজা টা সামান্য ঠেলা দিতেই দেখল তুরা আর রাইমা বিছানায় আধশোয়া হয়ে গল্প করছে,,রাইমা গল্প করছে আর তুরা সেসব শুনে একটু পরপরই খিলখিল করে হেসে উঠছে, হাসির চমকে গোলগাল গাল দুটো টকটক করে উঠছে,আজ যেন একটু বেশিই সুন্দর লাগল তুরাকে আহানের চোখে! এক রাতের মাঝেই তুরার সৌন্দর্য যেন দুই গুন বৃদ্ধি পেয়েছে, শুনেছিল স্বামীর ভালোবাসা পেলে নাকি মেয়েদের রূপ বেড়ে যায়,কাল রাতে আহানের ওইটুকুনি ছোঁয়াতেই কি তবে তুরাকে আজ এত বেশি সুন্দর লাগছে?

এসব ভাবতেই আহান নিজেই নিজেকে দুটো গালি দিল। এসব কি ভাবছে সে? দিন দিন জ্ঞান বুদ্ধিও কি লোপ পাচ্ছে তার,যা নয় তা ভেবে চলেছে।
নিজের অহেতুক ভাবনাকে অগ্রাহ্য করে ঘরে এসে ঢুকল আহান। হাতের ব্যাগটা রেখে পরনের শার্ট টা খুলতেই দেখলো বিছানার উপর তার তোয়ালে আর পরার জন্য টি-শার্ট আর ট্রাউজার আগে থেকেই সাজিয়ে রাখা। ভ্রু যুগল সামান্য কুঞ্চিত করে হাতে তুলে বাথরুমে ঢুকল। খানিক বাদে শাওয়ার নিয়ে বেরতেই দেখল টেবিলের উপরে শরবতের গ্লাস রাখা,আহান খুব স্বাভাবিক ভাবেই গ্লাসটা তুলে চুমুক দিল যেন সে আগে থেকেই জানত এটার কথা।

হুট করে আহানের মনে হলো তুরা মেয়েটা তার চিন্তাভাবনা আর ধ্যান ধারণার সাথে দৈনন্দিন কাজেও জড়িয়ে যাচ্ছে। হাতের গ্লাসটা রেখেই দুম করে বিছানায় শুয়ে পরল,বেশ ক্লান্ত লাগছে,একটা ঘুম দিলে ফ্রেশ লাগবে। মিনিট খানেকের মাথায় ঘুমে চোখ লেগে আসতেই গালে নরম কিছুর খোঁচা লাগল। ঘুমের ঘোরে ব্যাপারটা পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও বেশ ভালোই লাগছে আহানের,ঘুমের ঘোরেই পাশ ফিরে নরম জিনিস টাকে জড়িয়ে ধরে মুখ লাগালেই ‘হাইইচ্ছু! হাহাহাইচ্ছু!!

তুমি আমি দুজনে পর্ব ১৯

পরপর কয়েকবার হাঁচি দিয়েই ধড়ফড়িয়ে উঠল আহান,পাশ থেকে রুমাল টা নিয়ে নাখ মুছে ভালো ভাবে তাকাতেই দেখল তুরার সেই বিড়ালটা আহানের বালিশের উপর গুটিশুটি হয়ে বসে আছে। আহান তাকাতেই চোখ মুখ জ্বলজ্বল করে বলল ‘ম্যাওও’

তুমি আমি দুজনে পর্ব ২১