তুমি আমি দুজনে পর্ব ২৩

তুমি আমি দুজনে পর্ব ২৩
হুমাইরা হাসান

-হেই ব্রো,হাউ আর ইউ?
এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো আহানের সামনে
-নট ব্যাড
চোখে মুখে গাম্ভীর্যের ছাপ বহমান রেখে আরমানের সাথে হাত মিলিয়ে বলল আহান,প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল
-তোরা এভাবে উইদাউট ইনফর্ম চলে এলি যে?

-কি করব ভাই,তুমি বিয়ে করলে আমরা তো ডান্স ও করতে পারলাম নাহ,কিন্তু ভাবিকে দেখার এক্সাইটমেন্ট আর ধরে রাখতে পারিনি,তাই আগে ভাগেই চলে এলাম
ভাবি দেখার কথা শুনে প্রথমে ভ্রুকুটি করলেও পরমুহূর্তে সেটাকে অগোচর করে পকেটে হাত ঢুকিয়ে আহান বলল
-বাহ, ভালো করেছিস। এবার সব গুলো কাজে লেগে পর। এমনেও সব কাজ আমারই করা লাগত তোরা যখন এসছিস, দল ভারি না করে চুপচাপ কাজে লেগে পর
আহানের এরূপ কথায় জায়মা মুখ খানা ছোট করে বলল

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-সে কি ভাই। বিয়ে করেছ সেই উপলক্ষে কই ট্রিট দিবা তা না তুমি এসেই কাজের কথা বলছ
-তোদের মতো ওকাজের কথা আসেনা আমার,,আর যদি কথা হয় ট্রিট দেওয়ার তাইলে এই ষ্টুপিডের ডিব্বাটারে পেয়ে সকাল বিকাল যেই ট্রিট পাচ্ছি সেই হজম হচ্ছে না আবার আমি দেব ট্রিট
প্রথম লাইন টা জোরে সোরে বললেও শেষের লাইন টা বিড়বিড়িয়ে বলে সোফাতে গিয়ে বসল আহান। আহান পাশে বসতেই বিহান পাশ থেকে বলল

-ভাই যেই এটম টা মুখ দিয়ে ছুড়লি আমি ল্যান্ড করাই দি,কি বলো?
বিহান ফিসফিসিয়ে বলল আহানের কানের কাছে মুখ এনে,আহান এক পলক বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল
-ভাই এই বাড়ির ওয়ার্ল্ড ফেমাস বউমার চক্করে সকাল বিকাল আমার নাকানি চুবানি খাওয়ার অবস্থা তুই আর ঘাটিস না প্লিজ
মুচকি হেসে চোখ টিপল বিহান সে আহানের পুরো কথাটাই বেশ ভালো মতোই শুনেছে, আহান আর বিহানের বয়সের পার্থক্য এক বছর মাত্র। বিহান আর তনু হলো আহানের চাচাতো ভাই অর্থাৎ ইনসাফের একমাত্র ভাই ইউসুফ এর ছেলে।

বিহানের বাবা তার চাকরিসূত্রে সিলেটের অধিবাসী বর্তমানে, বিহান আর বাকিরা আপাতত রাইমার বিয়ের জন্যেই একত্রিত হয়ে এসেছে।
ওদের সাথে সামান্য আলাপচারিতা সেরে আহান বাইরে বেরোনোর উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়ালে রুবি খাতুন বলল
-তুমি কি কোনো কাজে বেরোচ্ছ আহান?
-হ্যাঁ মা,একটু কাজ আছে, বেশি সময় লাগবে না সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরব,তোমার কিছু লাগলে বলিও
বলেই পা বাড়াতে নিলে রাইমা পেছন থেকে ডেকে বলে

-ভাই দারা৷ আমিও বেরবো, আমাদেরকেও সাথে নিয়ে চল। বাড়ির গাড়িটা তো বাবা নিয়ে বেরিয়েছে
-কোথায় যাবি? আর আমরা কারা?
-আমরা মানে আমি আর তুরা। আমার একটু পার্লার যাওয়া দরকার,ফেসিয়াল করাবো। নিয়ে চল না প্লিজ ভাই
-উফ আপি! কিন্তু
-কোনো কিন্তু নাহ,নিয়ে যেতেই হবে। তুই দুই মিনিট দারা আমরা এক্ষুনি রেডি হয়ে আসছি
বলে তুরার হাত ধরে উপরে উঠতে নিলে তুরা বলল

-কিন্ত আপু আমি কেনো,আমিতো ওসব করাবো না
-একদম চুপ করে থাকো তুমি চুপচাপ চলবে আমার সাথে
বলে ওখানে উপস্থিত জায়মা তনু আর রুহির দিকে তাকিয়ে বলল
-তোরা ফ্রেশ হয়ে রেস্ট কর আমরা একটু পরেই চলে আসব। তারপর জম্পেশ আড্ডা হবে
ওরাও সহমত দিয়ে রুবির সাথে গেস্টরুমে যায় ফ্রেশ হতে। রাইমা আর তুরা রেডি হয়ে কিছুক্ষণ পরই নেমে আসলে আহানের সাথে বেরিয়ে পরে।

দশ মিনিট গাড়ি চলার পর এসে থামল রাস্তার পার্কিং সাইডে। পার্লারটা পাশের চিকন গলির ভেতর। তাই গাড়িটা পার্ক করে নেমে হাটতে শুরু করল আহান আর রাইমা। তুরা পেছনের সিটে বসায় ও পরে বেরিয়ে আসে। আহান আর রাইমা আগে আগে হাঁটছে আর তুরা পেছনে। তুরা রাস্তার দুপাশের দোকান গুলো দেখতে দেখতে হাঁটতে গিয়ে বেশ পিছিয়ে পরেছে ওদের থেকে। উপরের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎই কিছু একটার সাথে হোঁচট খেয়ে পরতে নিলে কেও এক হাত টেনে ধরে উঠিয়ে নিলো। অপ্রস্তুত ঘটনায় তুরা ঘাবড়ে গিয়ে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে স্বাভাবিক হলো। আর একটু হলেই মুখ থুবড়ে পরতো রাস্তার মাঝে। ভাগ্যিস বেঁচে গেছে।

-ঠিক আছো? কোথাও লেগেছে?
চেনা জানা কণ্ঠের কথায় তুরা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল তার পাশেই দাঁড়িয়ে মাহিদ স্যার। তুরার এক হাত এখনো ধরে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উত্তরের অপেক্ষায়। তুরা মাহিদ স্যারের সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত সাক্ষাতে হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় মাহিদ আবারও বলল

-তোমার কি কোথাও লেগেছে? আর ইউ অলরাইট?
সামান্য জোর গলায় বলায় তুরা ভাবনাচ্যুত হয়ে নিজেকে ধাতস্ত করে সরে দাঁড়ালো। একরাশ ব্যগ্রতা ঘিরে ধরল ওকে,,আবারও, আবারও এই স্যারটার সামনেই তার পরতে হলো? লজ্জায় মাটি ফাঁক করে ঢুকে যেতে ভীষণ ইচ্ছে হলো তুরার। তবুও অযাচিত ভাবাবেগ বাদ দিয়ে সৌজন্যসূচক হেসে বলল

-না স্যার আমি একদম ঠিক আছি, থ্যাংকিউ।
-সিউর তো?
-জ্বি স্যার।
মাহিদ সদা সর্বদার মতো অমায়িক হেসে বলল।

-গুড, বাট একটু দেখে শুনে চলাফেরা করো কেমন? এভাবে হোঁচট খেতে থাকলে তো কোনদিন হাত পা ভাঙবে
বলেই রসিকতার ছলে হেসে উঠল। তুরা মাহিদ স্যারের তাকে নিয়ে রহস্য করা কথায় প্রথমে বেশ বিব্রতবোধ করলেও মাহিদের হাসি দেখে হঠাৎই চমকে উঠে। এই হাসিটা,এই হাসিটা ভীষণ চেনা জানা লাগছে তুরার! কোথায় একটা দেখেছে মনে হয়। ভীষণ কৌতুহল নিয়ে খুতিয়ে চেয়ে রইল তুরা। ভেতরে ভেতরে কেমন খচখচ করছে। বার বার চেষ্টা করেও কিছুতেই মনে করতে পারছে না। তুরা অপলক চেয়ে থাকা অবস্থায় ই মাহিদ হাসি থামিয়ে বলল

-তুমি এসময় এখানে কি করছ? একাই এসেছ?
মাহিদের প্রশ্নে তুরা তটস্থ হয়ে তাকাল। আসলেই তো। রাইমা কই? হড়বড় হড়বড় করে বলল
-হ্যাঁ তাই তো,আমি আপুর সাথে এসেছিলাম। নিশ্চয় দূরে চলে গেছে, আমি আসি স্যার, থ্যাঙ্কিউ

বলেই দৌড় দিল। তুরার যাওয়ার পানে চেয়ে মাহিস স্মিত হেসে, হাঁটা ধরল। খানিকটা দৌড়ে সামনে এসেই থেমে যায় তুরা। চুপচাপ ঘাড় নামিয়ে নিয়ে দাঁড়ায়। অভিব্যক্তি ধরা পরা চোরের মতো। হাতের আঙুলে ওড়না পেচাতে থাকে। তুরার ঠিক সামনেই বুকে হাত গুজে দাঁড়ানো ছাই রঙা শার্ট পরিহিত সুপুরুষ। আপাতত তার রেশপূর্ণ দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই ভস্ম করে দেবে। তুরা আমতাআমতা করে কিছু বলতে নিবে তার আগেই আহান মন্থর গলায় বলল
-কোথায় ছিলে?

উত্তরে তুরা এক পলক আহানের সুরত পানে চেয়ে আবারও ঘাড় নামিয়ে হাতের আঙুলে ওড়না পেচাতে লাগলো।
-উত্তর দিচ্ছ না কেনো, এ্যান্সার ড্যাম ইট!
ভারি গলার ধমকের দাপটে কেঁপে উঠল তুরা, ভয়ার্ত দৃষ্টিতে অবলোকন করল আহানের মুখ, আবারও নাকের পাটা লাল হয়ে গেছে লোকটার।কিন্তু এবার তো তুরা কোনো অকাজ করেনি তাও রেগে কেনো গেলো।

তুরার মৌনতা দেখে আহানের মেজাজ সপ্তমের চূড়ায় পৌঁছালে রাগে ক্রুর হয়ে তুরার দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই দেখল আশেপাশের লোকজন বেশ আড়চোখে দেখছে তাদের, তাই ভরা রাস্তায় আর সিন ক্রিয়েট না করে তুরার একহাত চেপে ধরে টানতে টানতে হাঁটা ধরল। প্রচন্ড জোরে হাত চেপে রাখায় ভীষণ লাগছে তুরার, আর হাটার তালে হুমড়ি খেয়ে পরার মতো অবস্থা। সে কিছুতেই বুঝত পারছে না লোকটা হুট করেই এত রেগে কেনো গেলো। সে তো কিছুই করেনি।

বেশ ঘন্টা খানেক সময় ব্যয় করে বেরোলো একতালা বিশিষ্ট ছিমছাম বিল্ডিংয়ের কর্ণার সাইড থেকে। রাইমার ফেসিয়াল করানো সহ হাত পায়ের কাজ করাতে প্রায় অনেকটা সময় লেগেছে। রাইমা তুরাকেও বেশ কয়েকবার বলেছে ফেসিয়াল করানোর কথা, কিন্তু সেই করেনি। এসব তার একেবারেই ভালো লাগে নাহ।

সে তো সারাটা সময় মুখ খানা চুপসে রেখেছিল। ব’জ্জাত লোকটা চেপে ধরায় হাত লাল হয়ে গেছে, তখন ওভাবে টেনে এনে রাইমা আপুর কাছে দিয়ে বেরিয়ে গেছে ওমন মুখ করেই। লোকটার মেজাজ কি সবসময়ই তুঙ্গে উঠার টিকিট কেটে রাখে তুরা ভেবে পাইনা। আর যত হম্বিতম্বি তার উপর। মনে মনে দু চারটা ভেংচি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ রাস্তার পাশে। রাইমা বলল তার গণ্যমান্য ব’জ্জাত ভাই নাকি এখনই চলে আসবে,তাদের পার্লারে রেখে তার কার্য সাধনে গেছেন। লোকটা না আসুক আসলেই আবার রাক্ষসপনা শুরু করবে ভেবেই তুরা মুখ বিকৃত করল। কিন্তু তুরার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে আগমন ঘটল গণ্যমান্য.. থুরি আহানের।

ব্রেক কষে গাড়ি থামালেই রাইমা বলল
-তুরা তুই সামনে বস। আমি পেছনে বসব
বলেই পেছনের সীটে বসে পরল। তুরা এক নজর আহানের গম্ভীর মুখ পানে চেয়ে আস্তেধীরে উঠে বসলো গাড়িতে। তুরা বসা মাত্র আবারও গাড়িটা চলতে আরম্ভ করলো। খানিকটা পথ এগোতেই রাস্তার পাশে আইসক্রিম পার্লার দেখে রাইমা পেছন থেকে বলে উঠল

-আইসক্রীম খাবি তুরা
রাইমার বলার সাথে সাথে তুরা চোখ মুখ জ্বলজ্বল করে উত্তেজিত হয়ে বলল
-হ্যাঁ খাবো। ওই যে লাল আইসক্রিম খাবো। যেটা খেলে গাল মুখ লাল হয়ে যায় ওটা খাবো
-সাট আপ! সুযোগ পেলেই বাঁদরের বাঁদরামি শুরু হয়ে যায়। কোনো আইসক্রীম খাওয়া যাবে না। যত্তসব আনহাইজেনিক
তুরার কথা শেষ হওয়ার আগেই আহান গমগমে ধমকে থামিয়ে দিলো। আহানের ধমকে তুরার মুখ খানা চুপসে এইটুখানি হয়ে গেলো। এভাবে বলল লোকটা? সবসময়ই কি এমন করতে হবে তার সাথে! নিমিষেই তুরার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সে তো শুধু ঠোঁট লাল করা আইসক্রিম ই খেতে চেয়েছিল। বাকিটা পথ তুরা আর কোনো শব্দও করেনি। কেনো বলবে সে কিছু বললেই তো যা তা শুনিয়ে দেবে লোকটা।

-দেখ ভাই ওতসব আমি বুঝিনা আমিতো কালা চাশমা গানে ডান্স দিবো ব্যস
-আবে থাম, তুই কালা চাশমা দে আর হলুদ চশমা সেই তো ডান্স স্টেপ ভুলে গোলমাল করে দিবি
জায়মার কথায় প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়ে রুহি তাকালো। আঙুল দিয়ে নাক ঘঁষে বলল
-ডোন্ট আন্ডারেস্টিমেট রুহি। এবার আমি সব ডান্স ভালো করে মনে রাখব। প্রয়োজনে মুখস্থ করে গিলে খাবো তাও কোনো ভুল হবে নাহ

-তুই প্রত্যেকবার এ কথা বলে নাচার সময় স্টেপ ভুলে ঘাপলা করে ফেলিস রুহি।
তনুর কথায় আরমান ওকে থামিয়ে বলল
-তোরা কালা চাশমা দে আর স্টেপ ঘুটে খেয়ে ফেল। আমিতো ভাবির সাথে একটা রোমান্টিক গানে ডান্স দেবোই দেবো। কি বলেন ভাবি?
বলেই তুরার দিকে তাকালে তুরা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
-হ্যাঁ? ডান্স? আমি?
-ইয়েস ভাবি। আপনি আমাদের একমাত্র ওয়ান এ্যন্ড অনলি ভাবি, বড় ভাবি। আপনি না নাচলে এই বেচারা সিঙ্গেল দেবরের কি হবে বলুন
আরমানের ভনিতা করা দেখে জায়মা বলল

-তোর ওভার অ্যাক্টিং বন্ধ কর,,আমি কি বলি ভাবি আর আহান ভাইয়ের একটা পারফরম্যান্স হয়ে যাক, রোমান্টিক গানে দুজনের নাচ হবে, দুর্দান্ত সিন,ওয়াহহ
-এই না না,,আমি রাজি আমি তোমাদের সাথেই নাচতে রাজি
একদমে হড়বড়িয়ে বলে ফেলল তুরা, সে কি না নাচবে ওই জল্লাদের সাথে? অসম্ভব! ওই লোক নাচতে গেলে মিউসিক ও পালাবে, সে তো শুধু পারবে গোমড়ামুখো চেহারা করে রাখতে আর তুরাকে বকতে, ওর সাথে নাচা মানে জেনে শুনে নিজেকে ফ্রী তে অপমান করার টিকিট পাওয়া। না না তার চেয়ে এদের সাথে কিছু একটা নেচে দেবে।

-বাহহ,,আর কোনো কথা শুনবো না,ভাবি রাজি,ব্যস আর কি লাগে। কাল আমি ভাবির সাথে ঝাক্কাস একটা পারফরম্যান্স দেবো
তুরার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে বলল আরমান। তুরা এবার পরল আরেক বিপাকে। এবার সে কি করবে নাচের ন টাও তো জানে না। ওই বজ্জাত লোকটার কাছ থেকে বাঁচতে হ্যাঁ তো বলে দিলো। কিন্তু এখন! চুপচাপ হ্যাবলাকান্তের মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ওদের সবার হৈ-হুল্লোড় দেখছে।তাছাড়া আর কি করার। কাল যে সে আবার কোনো ঘাপলা করে ফেলবে না এ ব্যাপারে এখন নিজের ও সন্দেহ হচ্ছে।

ঘড়ির ছোট কাটা একের ঘর ছুতেই ঢং শব্দ করে এ্যালার্ম বেজে উঠল। সাথে আহান ও চোখ ঘুরিয়ে সময় দেখে নিলো। এ দিয়ে চতুর্থ বার ঘড়ির দিকে তাকালো সে। রাত একটা বেজে গেল অথচ এখনো মেয়েটা ঘরে আসলো না। তখন বাড়ি ফেরার পর ওই যে দৌড়ে ঘরে ঢুকেছে আর ভুলেও আহানের সামনে আসেনি এতক্ষণে। আহানের একবার বেশ অনুতপ্ত লাগলো তখন তুরার সাথে ওভাবে কথা বলার জন্য।

তারপর ভাবলো ঠিক ই করেছে, ওর সাহস কি করে হলো আবারও মাহিদের সাথে ঘেসাঘেসি করার। তখন পার্লার যাওয়ার সময় গাড়ি থেকে নেমে হাঁটার সময় পাশে তুরাকে না দেখে এগিয়ে আসলেই মাহিদকে তুরার হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মাথায় রক্ত চড়ে গেছে আহানের। সাহস কি করে হলো ওর, কি করে ধরল তুরার হাত সে! রাগে নিজের মাথা ফেটে যাচ্ছিলো আহানের। মাহিদকে তুরার পাশে একেবারেই সহ্য হচ্ছিল না তার। তাই মেজাজ খারাপ করে বকে দিয়েছে।

কিন্তু এখন তুরার ঘরে না আসায় বেশ চিন্তাও হচ্ছে৷ কয়েকবার বিছানায় গা এলিয়ে এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসেনি। ভাবনার মাঝেই খট শব্দ করে দরজার নব মোচড়ানোর শব্দে তড়িৎ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখল তুরা ঘরে ঢুকল। তুরাকে দেখে আহান কিছু একটা বলতে নিবে তার আগেই কোনো দিক না চেয়েই ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো তুরা। ওর যাওয়ার পানে হা করে চেয়ে রইল আহান। মিনিট পাঁচেক পর ওয়াসরুমের দরজা খোলার শব্দে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে হাতে রাখা বইয়ের দিকে মনোযোগ দিলো।

তুরা ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরল কোনো দিক না তাকিয়েই, আহান আড়চোখে লক্ষ্য করছে তুরাকে, আর ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে। মেয়েটার সাহস কত ভাবা যায় এমন একটা ভাব করছে যেনো এই ঘরে কেও নেই। কই অন্যান্য দিন তো এসেই পকপক করে মাথা খেয়ে ফেলত ‘স্বামী আপনার কিছু লাগবে? এটা লাগবে, এটা দেবো’ এসব বলে বলে,,আর আজ কি না ঘুরেও তাকাচ্ছে না। বেশ কিছুক্ষণ পার হওয়ার পরেও তুরার কোনো হেলদোল নেই,সে আপনমনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে বেণি করছে। ধপ করে হাতের বইটা বন্ধ করে দিলো আহান। হুট করেই মেজাজ টা তার বিগড়ে গেলো। খাট থেকে নেমে এসে তুরার পেছনে দাঁড়িয়ে বলল

-মাহিদের সাথে তোমার কি সম্পর্ক
আচানক আহানের মুখ থেকে এমন উদ্ভট অনাকাঙ্ক্ষিত কথা শুনে তুরা প্রশ্নসূচক তাকিয়ে বলল
-মানে?
-মানে মাহিদের সাথে তোমার কি এত। যখন না তখন দেখি ওর সাথেই হাহাহিহি করো। এত কিসের খোশগল্প তোমার ওর সাথে
তুরা আহানের এমন বিভ্রান্তিকর কথা শুনে কিছু বলবে তার আগেই আহান আবারও বলে
-শোনো তোমাকে লাস্ট বারের মতো বলে দিচ্ছি মাহিদের আশেপাশেও ঘুরবে নাহ,নাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেও হবে নাহ
আহানের এমন অভিব্যক্তি আর উল্টাপাল্টা কথার আগামাথা না বুঝে তুরা বোকার মতো করে বলল
-কিন্তু কেনো?

-কারণ আমি বলেছি। নেক্সট টাইম যেন আমি তোমাকে ওর ধারেকাছেও না দেখি
কিন্তু আহানের এবারের কথাকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে তুরা ঘুরে বিছানার দিকে যেতে নিলেই আহান পেছন থেকে খপ করে ওর হাত ধরে ফেলল। তুরাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে এক ধাক্কায় বিছানার উপর ফেলে দিয়ে হাঁটুতে ভর দিয়ে তুরার উপর ঝুকে তুরার দু হাত বিছানার সাথে চেপে ধরে। আকস্মিক আক্রমণে তুরা বাক্য শব্দ হারিয়ে হতবিহ্বলতার চূড়ান্তে পৌঁছে গেছে, কিছু বুঝে উঠার আগেই আহানকে নিজের ভীষণ কাছে আবিষ্কার করল। তীক্ষ্ণ চোখ, খাড়া নাক পুরু ঠোঁট আর গালভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ির সুদর্শন পুরুষকে সজ্ঞানে আরও একবার নিজের এত কাছে দেখে অযাচিত চিন্তাভাবনায় মস্তিষ্ক নিরেট হয়ে গেলো। নিজেকে সংযতচিত্তে কিছু বলতে নিবে তার আগেই আহান হিসহিসিয়ে বলল

-তোমার সাহস কি করে হলো আমার কথার অগ্রাহ্য করার,হু? এসে থেকেই দেখছি আমাকে ইগনোর করতেছ, বেশি সাহস বেড়েছে তোমার মেয়ে! ডানা গজিয়েছে? ডানা কি করে ছেটে দিতে হয় তা ইরফান মাহমুদ আহান বেশ ভালো করেই জানে
দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে বলল আহান কথাগুলো। কথার সাথে আরেকটু ঝুকে আসায় দুজনের মধ্যবর্তী দূরত্ব হলো কিঞ্চিৎ ইঞ্চি সমান। নিজের শরীরের উপর পুরুষালি ভরে তুরার সারা শরীরে মিইয়ে নিস্তেজ হয়ে গেছে, কথার সাথে আছড়ে পরা আহানের উষ্ণ শ্বাস আর এতটা নৈকট্য তুরার বক্ষ স্পন্দনবেগের গতানুগতিক ধারার উচ্চমাত্রায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছে, কণ্ঠনালীতে শব্দগুচ্ছ আটকা পরেছে। সকল অস্থিরতা মনস্তাপ জুড়িয়ে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই আহান এক হাতের তর্জনী উঠিয়ে তুরার অধরের মাঝ বরাবর চেপে ধরে বলল

তুমি আমি দুজনে পর্ব ২২

-হুসস,নট অ্যা ওয়ার্ড।তোমার কোনো কথা শুনতে চাইনা আমি
তুরা আরও কয়েক ধাপ থমকালো,পিটপিট করে তাকালো,অজান্তেই আহানের গভীর দৃষ্টির ফাঁদে জড়িয়ে গেলো। মধ্যকার দূরত্ব একেবারেই ক্ষীণ। আহানের স্থূলদৃষ্টি হুট করেই ক্রোধ আর ক্রুরতা ছাড়িয়ে কেমন অবাধ্য মলাটে ছেয়ে গেলো। তুরার অধরের উপর রাখা তর্জনীর অবাধ্য বিচরণ শুরু করলো তুরার অধরের চতুর্দিকে অবিরাম।
নিগূঢ় কৃষ্ণাভ নয়নের ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকাল তুরার চোখে

তুমি আমি দুজনে পর্ব ২৪