তুমি নামক অনুভূতি গল্পের লিংক || Lutful Mehijabin (লেখা)

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ১
Lutful Mehijabin (লেখা)

আপুর ভাসুরের ঘরে বউ সেঁজে বসে আছি। গরমে আমার অবস্থা নাজেহাল। একটু আগে আপুর শাশুড়ি অর্থাৎ আমার শাশুড়ি আম্মু আমার হাতে একটা কমলা দিয়ে গেছে, তাই একটা একটা করে খাচ্ছি আর ঘটে যাওয়া ঘটনা স্মরণ করছি। আপুর সাথে বাবা মা আমাকেও বিয়ে দিয়ে দিবে তা কখনো ভাবিনি। আজ আমার ফুপির মেয়ে জেবিন জারা আপুর বিয়ে ছিল।

এক সপ্তাহ আগে থেকেই আপুর বিয়ে খাওয়ার জন্য দাঁত মেজে বসে ছিলাম। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় হচ্ছে আজকে যে আমার ও বিয়ে হয়ে যাবে তা আমার ধারণার বাইরে। ইশ, তিন ঘণ্টা আগেও আমি সিংঙ্গেল ছিলাম আর এখন মিংঙ্গেল! নো ওয়ে আমি সইতে পারছি না। তাও আবার আপুর ভাসুর? ওরে বাবা, লোকটা তো অনেক রাগী। কারো সাথে তেমন কথা বলে না।মুহূর্তে দরজার বাইরে চ্যচামেচির আওয়াজ কর্নপাত হতেই আমার আকাশকুসুম চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটল।
দরজার বাইরে সমুদ্রকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে তার কাজিনরা। তাদের দাবি টাকা না দিলে তারা সমুদ্রকে ভিতরে ঢুকতে দেবে না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–ভাইয়া টাকা দেও। না দিলে আমারা তোমাকে,,
সমুদ্রের কাজিন ইতির কথাগুলো শেষ হওয়ার আগেই সমুদ্র কর্কশ গলায় বলে উঠলো,
–স্টপ ইডিয়েট! কিছু বলছি না বলে তোরা মাথায় উঠে পড়েছিস? আমার ঘরে ঢোকার জন্য, আমাকে তোদের টাকা দিতে হবে, হাও ফানি! এক সেকেন্ডের মধ্যে এখান থেকে চলে যা নয়তো,,
সমুদ্রের দাঁতে দাঁত চাপা ধমক শুনে সবার মন খারপ হয়ে গেল। সমুদ্রের রাগ সম্পর্কে সবার ধারণা আছে। তাই সবাই তাড়াতাড়ি চলে করে গেল।

বাইরের আওয়াজ কর্নপাত হতেই আমার আগে শিউরে উঠল। সংকীর্ণ মনে বিছানার চাদর খামচে ধরে কুঁকড়ে রইলাম। আল্লাহ কী কন্ঠ লোকটার? ভেবেই কাঁপতে শুরু করলাম। এলোমেলো শাড়ি ঠিক করে পরিপাটি হয়ে বসলাম। আমি মেহের। এবার ক্লাস এইটে পড়ি। বয়স ছুঁইছুঁই ষোলো। এতো অল্প বয়সে আমাকে যে বিয়ে নামক মায়াজালে বন্ধী হতে হবে তা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। তাও আবার বড় বোন জারা আপুর স্বামীর বড় ভাইকে।

সে কী করে তা আমার কাছে আজানা। শুনেছিলাম লোকটা জিজুর চেয়ে দুই বছরের বড়। তার মানে আজ থেকে জারা আপু আমার ছোট জা। আমি আপুর চেয়ে সম্পর্কে বড়ো। এখন থেকে আপুর সাথে আমাকে এক বাড়িতে থাকতে হবে? জারা আপু এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। দেখতে মাশাল্লাহ অনেক সুন্দরী। আপুর সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে সময়ে-অসময়ের ঘুম। সকাল, বিকেল, দুপুর সন্ধ্যায় দেখা যায় আপু ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে। আর বাদবাকি সময়টুকু সে বইয়ের পাতায় ডুবে থাকে। আপু একজন বই প্রেমী। আমার কাছে মনে হয় আপু বইকে যতটা ভালোবাসে ঠিক ততোটা আমার জিজুকে বাসতে পারবে কীনা সন্দেহ। আপু অনেক নরম ভদ্র মেয়ে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে খুব সহজেই রেগে আগুন হয়ে যায়।

আমার আজগুবি চিন্তার মাঝে উনি ভিতরে ঢুকে পড়লেন। সাথে সাথে আমি চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললাম।
রুমে প্রবেশ করতেই সমুদ্রের চোখ পড়ল বিছানায় গুটিয়ে বসে থাকা মেহেরের উপর। সে আশেপাশে একপলক পর্যবেক্ষণ করে বিছানার উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে সে যেন অবাকের সপ্তম আকাশে পৌঁছে গেল। অবশেষে তাকে কীনা একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করতে হলো! ভেবেই রাগে সমুদ্রের শরীর গরম হয়ে উঠেছে। মাথায় একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে, এত পড়ালেখা করে তার কপালে বাচ্চা যুটলো। সে নিজের চুলগুলো টেনে নিজেকে শান্ত রাখতে মরিয়া হয়ে উঠল। পরিশেষে ব্যর্থ হয়ে কর্কশ গলায় বলল,

–এই পুঁচকি মেয়ে, কোন ক্লাসে পড়ো?
এতো ভয়ঙ্কর ঠান্ডা কন্ঠ কর্নপাত হতেই আমার হৃদয় স্পন্দন দ্রুত গতিতে চলতে আরম্ভ করল। শত চেষ্টা করেও মুখ দিয়ে কোন প্রকার শব্দ বের করতে পারলাম না।

অন্যদিকে, ঘড়ির কাঁটায় এগারটা ছুঁইছুঁই। জারার স্বামী ইয়াদের এখানো ঘরে আসার নামগন্ধ নেই। তারপর ও জারার নিশ্চিতে বইয়ের পাতায় মুখ ডুবিয়ে রেখেছে। কিন্তু তার নেএপল্লব ঘুমে বন্ধ হয়ে আসছে। অবশেষে ঘুমের কাছে ব্যর্থ হতে হলো জারাকে। ঘুমপাগলী লাইট অফ করে চশমা না খুলেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে উঠল।
বর্তমানে ইয়াদের ঘরের সামনে সব কাজিনরা হাত পেতে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দাবি টাকা না দিলে ইয়াদকে ভেতরে ঢুকতে দেবে না। ইয়াদ মাথা ঠান্ডা রেখে, পকেট থেকে ম্যানিব্যাগ বের করে কাজিনদের দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
–সবাই এবার এখান থেকে যা।

ইয়াদের কথা মতো সবাই খুশি মনে চলে গেছে। এরপর সে আস্তে করে ভিতরে ঢুকে পড়ল। দরজা চাপানোর জন্য পা দিয়ে ধাক্কা দিতে মৃদ্যু ক্রিয়া হয়ে দরজা বন্ধ হয়ে গেল। সারা ঘর জুড়ে অন্ধকার দেখে সে থমকে গেল। কয়েক সেকেন্ড পরে বেলকণি থেকে নির্গত আলো পুরো ঘর জুড়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। হাল্কা আলোতেই ঘরে অবস্থিত সব কিছু ইয়াদের চোখে দেখা দিল।

জারাকে বিছানার উপর এলোমেলো হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে তার মুখ থেকে বিরক্তির ‘চ’ শব্দটা বের হয়ে এলো। বেশি কিছু না ভেবেই সে ছোফার বসে পড়ল। কয়েক সেকেন্ড নেএপল্লব বন্ধ রাখল। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে জারার দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করল। পরাপর দুটো নিশ্বাস ত্যাগ করে এগিয়ে এলো বিছানার দিকে। কিছুটা মুহূর্ত্য জারার দিকে পলকহীন দৃষ্টি রেখে তাকিয়ে রইল। জারার চোখে অবস্থানরত চশমাটা খুলে টেবিলে উপর রেখে দিল। ব্যথিত নিশ্বাস ফেলে ছোফায় গিয়ে চুপটি করে শুয়ে পড়ল সে। নেএপল্লব বন্ধ করে, আস্তে বিরবির করে বলে উঠলো,
–এর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে মিসেস ইয়াদ।

প্রায় মিনিট পাঁচেক মেহেরের নিরবতা সমুদ্র মানতে পারল না। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
–আমি কী কিছু জিজ্ঞেস করেছি? ইস্টুপিড!
তার ধমক শুনে আমি ছিট্টে উঠলাম। আর নিশ্চুপ থাকা আমার দ্বারা হয়ে উঠল না। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
–ক্লাস নাইট এ উঠ,,
মেহেরের কথা শুনে সমুদ্র অস্কুটস্বরে বলল,

–ওহ্ শেট।
বলেই উনি বেলকণিতে চলে গেলেন। আর আমি চোখে থেকে চশমাটা খুলে পাশে রেখে দিলাম। শরীরে অসম্ভব কাঁপুনি নিয়ে গুটিয়ে শুয়ে পড়লাম। যে রাগী লোক রে বাবা! যদি আমাকে ঘর থেকে বের করে দেয়? না, এই শীতের রাতে আমাকে বের করে দিলে আমি শেষ। তাই চোখ বন্ধ করে ঘুমাতে চেষ্টা করতে করলাম।

শীতের রাত। কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে সারা শহর। বেলকণিতে লোহার গ্রিল ভিজে রয়েছে শিশিরের পানিতে। চারপাশে ককুরের কুরুণ ডাক আর মৃদু্শব্দে খেঁকশিয়ালের স্বমসুরে হুককাহুয়া চিৎকার নীরব রাতের বাতাসে সৃষ্টি করে চলছে আদিম মাদকতা। লেপ তোষকে মুড়ি দিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন প্রতিটি মানুষ। শুধু ঘুম নেই সমুদ্রের চোখে। তার খুব মনে পড়ছে তার মায়ের কথা। তার মা আজকে পুঁচকি মেয়ে মেহেরকে দেখে রেসপন্স করছে। কথা বলার চেষ্টা করেছে। তাইতো মায়ের পছন্দের দিকটা বিবেচনা করে আজ তাকে মেহেরকে বিয়ে করতে হয়েছে। কিন্তু সে কেন মানতে পারছে না মেহেরকে। তার পেস্টটিজে বিঁধছে, এই পুঁচকে মেয়ে তার বউ? ভাবতে ভাবতে সে সারা রাত নির্ঘুমে পার করে দেওয়ার ব্রত নিয়েছে। হয়তো আজ চেষ্টা করলেনও তার চোখে ঘুমের ছিঁটেফুঁটে দেখা যাবে কী সন্দেহ!

জানালা ভেদ করে ইয়াদের উপর সূর্যের মিষ্টি আলো এসে উপচে পড়তেই, সাথে সাথে ইয়াদের আরামের ঘুম ভেঙে গেল। কয়েক সেকেন্ড আশপাশে পর্যবেক্ষণ করে, গম্ভীর মুখ নিয়ে ছোফা থেকে উঠে দাঁড়াল সে। জারার দিকে একপলক তাকিয়ে ওয়াশরুমের দিকে রওনা হলো।

কিন্তু হঠাৎ তার পায়ের সাথে জারার টলির সংঘর্ষ হলো। ব্যথায় চাপা আর্তনাদ বেরিয়ে এলো তার মুখ থেকে। রাগে তার মুখ কুঁচকে এলো। টলির উপর পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে রাগ কন্ট্রোল করতে চেষ্টা করল। মুহূর্তে তার খেয়াল হলো ব্যাগের চেন খোলা। সে বেশিকিছু না ভেবে ব্যাগটা খুলল। সাথে সাথে যে যেন অবাকের শেষের সীমান্তে চলে গেল।

হাল্কা শব্দ পেয়ে, জারার ঘুম ভেঙে গেল। উঠে বসে সে ইয়াদের হা হওয়ার মুখের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ইয়াদে অবাক হওয়া ডগর ডগর চোখের দিকে তাকাতেই বিব্রত হয়ে উঠল। লজ্জায় জারার গাল দুটো টমেটোর রক্তিম বর্ন ধারণ,,,

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ২