তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ২১

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ২১
Lutful Mehijabin (লেখা)

–জানিস আজকে তোর ফ্লাইটে কে এসেছিল?
সমুদ্র আকাশের কথার প্রত্যুত্তরে বলল,
–কে এসেছিল? যারা সকিনা খালাকে হুমকি দিয়ে তাকে শহর ত্যাগ করিয়েছে, তারা!
আকাশ নিজ পকেট হতে ফোন বের করে সমুদ্রের সামনে উপস্থাপন করল। অতঃপর বলল,

–দেখ, কে এসেছিল। আমি ছবি তুলে রেখেছি।তুই যাকে বিশ্বাস করে বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে নিযুক্ত করেছিস।
আকাশের কথা অনুযায়ী সমুদ্র তৎক্ষণাৎ দৃষ্টিপাত ফোনের স্কিনে আবদ্ধ করল। মুহূর্তেই স্তম্ভিত হয়ে পড়ল সে। চোখ যুগল বন্ধ করে মাথার চুল গুলো হাতের মুঠো বন্ধি করে বিরবির করে বলল,
–বিউটি খালা!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–হুম। এখন দেখ। তুই এতোদিন হূদাই স্কুলে ক্লাস নিলি। আমি আগে থেকেই বলেছিলাম স্কুলের হেন্ড মাস্টারের পাশাপাশি অন্য অন্য ইস্টাফদের উপর নজর রাখিস। কিন্তু তুই তো অত্যধিক বিশ্বাস করছিস বিউটি খালাকে।
প্রচন্ড রাগ হচ্ছে সমুদ্রের। অতিরিক্ত রাগে হাত পা কাঁপতে আরম্ভ করেছে। খানিকক্ষণ মস্তিষ্কে শীতল করার উদ্দেশ্যে চোখ যুগল বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস গ্রহণ করল। অতঃপর সে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগল।

–দেখ আকাশ তুই কেসটা যতটা সহজ ভাবে নিচ্ছিস ততোটা সহজ কিন্ত নয়। আমি সিউর এই কেসটা অর্থাৎ ড্যাক্স পাচারে ওই স্কুলের হেড মাস্টার জড়িত। তাছাড়া তুই বিউটি খালাকে দেখেও ছেড়ে দিল কেন?
আকাশ মোবাইল পকেটে রেখে। সমুদ্রের প্রত্যুত্তর বলে উঠল,

–আমি তোর উপর অনেক রাগ করে এখানে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম তুই যখন এসিপি স্যারের কাছ থেকে ফিরবি তারপর তোকে ইচ্ছে মতো বকবো। কিন্তু এখানে এসেই যে এমন পরিস্থিতি দেখব তা কল্পনাও করি নি। আমি বিউটি খালার পা অনুসরণ করে তার পিছু নিয়েছিলাম। কিছুটা পথ অতিক্রম করতেই দেখলাম অনেক গুলো ছেলে। সবাই কালো পোশাক পড়া। ছেলেগুলো গ্যংয়ের ছিল তাই একা কিছু করতে যাই নি। তাছাড়া আমার কাছে রিভালবার নেই।
কথাগুলো সমাপ্ত করে মিনিট পাঁচেক বিরতি নিয়ে পুনরায় সমুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–প্লিজ সমুদ্র হুট করে কোন সিদ্ধান্ত নিব না। ভাবিকে একটু বোঝার চেষ্টা কর। বাচ্চা মেয়ে। কষ্ট দিস না ওকে।
আকাশের কথা কর্ণপাত করার খানিক বাদে সমুদ্র ঠোঁট জোড়া সংকুচিত করে শক্ত কন্ঠে বলল,
–তুই এখন বাসায় যা। যা বোঝার আমি বুঝে নিব। আর আমার কানের কাছে ভাবি ভাবি করবি না।

সমুদ্রের বলা বাক্যগুলো শুনে আকাশের হৃদয় গহীন বিষণ্ণ হয়ে উঠল। মুখশ্রীতে অসীম ব্যর্থতার আবির্ভাব ঘটল। মনে মনে ভাবতে লাগল, তার প্রাণ প্রিয় বন্ধু হঠাৎ এতো কঠিন হৃদয়ের মানুষ হয়ে উঠল কেন ? সমুদ্র তো এমন রুক্ষ অন্তরের অধিকারী ছিল! বারংবার সমুদ্র মেয়েদের হতে একশ হাত দূরে থাকত। কিন্তু তাই বলে এমন স্নেহ বর্জিত নিষ্ঠুর মানুষে পরিণত হলো ! আকাশ একরাশ অভিমান ভরা কন্ঠে অস্কুটস্বরে বলল,

–ওকে যাচ্ছি। ওর খেয়াল রাখিস।
বলেই আকাশ সমুদ্রের বাসা হতে প্রস্থান করল। সমুদ্র কিছুটা সময় বেলকনিতে অতিবাহিত করল। অবশেষে তপ্ত শ্বাস নির্গত করে মেহেরের রুমে ধাবিত হলো। সঙ্গে সঙ্গে লাইট অন করল সে। মুহূর্তেই লাইটের কৃত্রিম আলোতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল পুরো ঘরটা। সমুদ্র সতর্ক দৃষ্টিপাতের সহিত রুম জুড়ে পর্যবেক্ষণ করল। ফ্লোরে পড়ে থাকা ভাঙা ফুলদানির টুকরো গুলো তুলে পরিষ্কার করল।

অতঃপর বিছানার এক কোণে দাঁড়িয়ে মেহেরের মুখশ্রী মনোযোগের সঙ্গে দৃষ্টি মেলে দেখতে লাগল। প্রায় খানিকক্ষণ তার অবাধ্য অন্চলপ্রান্ত চোখ যুগলের দৃঢ় দৃষ্টি পড়ে রইলো মেহেরের ঘুমন্ত পাণ্ডর, মলিন এবং ভীত গ্রস্ত চেহারাতে। পরক্ষণে তার হৃদয়মনে কিছুটা অস্থিরতার ঝড় হাওয়া বইতে লাগল। এ যেন যে সেই ঝড় নয়। এই বাজে অনুভূতি সম্পূর্ণ অন্তরের পরিস্থিতিকে বোধহয় কোন এক ঝড় রাত্রির উত্তাল সমুদ্রের ন্যায় হৃদয়মনে বহমান আশন্ত, অস্থির অবস্থাকে বোঝায়।

বড্ড ব্যথা করছে তার বুকের বা পাশটাই। সমুদ্র বুঝতে পারছে না, কেন তার মনে বিষণ্ণতার আবির্ভাব ঘটেছে ! কী আছে ওই ফ্যাকাশে মুখশ্রীতে? যার তার রাতের নিদ্রা ছিনিয়ে নিয়েছে। কী এমন মায়াজাল ঘিরা ওই পুঁচকি মেয়ের মধ্যে যা সমুদ্রের শান্ত মনে অশান্তর আবিষ্কার করার মতো ক্ষমতা রাখে। সমুদ্র যেন না চাইতেই মেহেরের যাদুর মায়াজালে ডুবে যাচ্ছে। ফজরের আযানের সুমধুর, অন্তর শীতল করার ন্যায় ধ্বনি কর্ণপাত হতেই ঘোরের ব্যাঘাত ঘটল।

সে কী সব আজেবাজে কথা চিন্তা করছিল! বিষয়টা ভাবতেই একরাশ বিরক্তির উপস্থিত ঘটে সমুদ্রের মন গহীনে। বিরক্তে মুখ হতে বিরক্তির ‘চ’ শব্দ বের করল। নিজের উপর বড্ড ক্রোধ হচ্ছে তার। শেষে কীনা সে এক পুচকি মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করে নিজের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করল? রাগে তার কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ উৎপত্তি ঘটল। অবশেষে মেহেরের শরীর ভালো ভাবে উষ্ণ চাদর ঢেকে দিয়ে দ্রুত পা সে মেহেরের ঘর হতে প্রস্থান করল।

স্বচ্ছ শুভ্র রঙের সকালের আবির্ভাব ঘটেছে খানিক পূর্বে। শিশির ভেজা কুয়াশার চাদের গ্রাস কৃত সূর্যি মামা মাত্রই বার্তা জানিয়েছেন। ঘড়ির কাটাতে ছুঁইছুঁই সাড়ে নয়টা। মেহেরের বিছানার পাশে গম্ভীর মুখ করে বসে রয়েছে সমুদ্র। হাতে তার গরম সুপ ভর্তি বাটি। হাল্কা বাষ্পের ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে সুপ হতে। সমুদ্র মেহেরের মাথা থেকে ভেজা কাপড় বারংবার এপিঠ ওপিঠি করে দিচ্ছে। প্রায় দু ঘন্টা যাবৎ এ কর্মে নিযুক্ত ছিল সমুদ্র।

হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে মেহের। সেই কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল প্রচন্ড জ্বরে ভুগছে মেয়েটা। কিছুতেই জ্বর বিদায়ের নাম নিচ্ছে না। তাই মাঝখানে স্বল্প বিরতি নিয়ে মেহেরের জন্য খাবার তৈরি করেছে। খাবার খেয়ে ওষুধ খেলেই হয়তো জ্বর কমে যাবে। কিন্তু সমুদ্র ভেবে পাচ্ছে না, কীভাবে মেয়েটাকে ঘুম থেকে জাগ্রত করবে। একরাশ অস্বস্তি এসে চেপে ধরেছে সমুদ্রকে। পরিশেষে সমুদ্র খানিক এগিয়ে এলো মেহেরে দিকে। অতঃপর ইতস্তত বোধ নিয়ে হাত জোড়া আলত করে ছুঁয়ে দিল মেহেরেল গাল যুগলে। মুহূর্তেই হাল্কা কেঁপে উঠল মেহের। ঘুমের মধ্যেই মেহেরের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ভেসে উঠল। মেহেরের মুখ দিয়ে অস্কুটস্বরে আর্তনাদ বের হতে আরম্ভ করল।

মেহেরের পরিস্থিতি বোধগম্য হতেই সমুদ্র অস্থির হয়ে উঠল। জ্বরে মেহেরের গা পুড়ে যাচ্ছে । অত্যধিক তাপ নির্গত হচ্ছে মেহেরের শরীর হতে। মেহের ঠোঁট জোড়া বেগতিক গতিতে কাঁপছে। সমুদ্র দূরে বসে মেহেরের বিরবির করে কী বলছে তা শোনার প্রয়াস চালাল কিন্তু কিছুই শুনতে পেল না। তৎক্ষণাৎ সমুদ্র অশান্ত মনে কান এগিয়ে নিলো মেহেরের ঠোঁট যুগলের নিকট। কর্ণপাত করতে চেষ্টা করল মেহেরের বিরবির করে বলা বাক্যগুলো। মেহের অস্কুটস্বরে অশ্রু মাখা কম্পনিত কন্ঠে বলছে,

–আমাকে বাঁচান,, আপনি কোথায়। আমার ভয় করছে তো,,,
সমুদ্র তার হতটা হাল্কা ঝাকাল। চিন্তা গ্রস্ত কন্ঠ মেহেরের উদ্দেশ্য ফিসফিস করে বলল,
–ভয় পেও না পুচকি। আমি আছি তো। কিছু হবে না।
মেহের কান্না যুক্ত কন্ঠে ফির বিরবির করে বলে উঠল,

–জানেন কেউ একজন সেদি,, ন রাতে আমা র রুমে এসে ছিল। কি করছে জানে নে,,,, আম র গলায়,,,,
তৎক্ষণাৎ সমুদ্র দৃষ্টি ফেলল মেহেরের বন্ধ চোখ জোড়াতে। খানিকটা ঝাকিয়ে নিম্ন কন্ঠে বলল,
–ওপেন ইউর আইস পুচকি। চোখ খুলো।

শেষোক্ত বাক্যটা কিছুটা জোড়ে বলে উঠল সমুদ্র। ফলে মেহের শিউরে উঠল। দু চোখ জোড়া খোলার প্রয়াস চাললো। বহুক্ষণ ধরে চেষ্টা করে মেহের চোখ উন্মুক্ত করতে সফল হলো। কিন্তু প্রায় পাঁচ সেকেন্ড বাদে পুনরায় চোখ জোড়া আপনি আপনি বন্ধ হয়ে গেল। ফির মেহের চোখ বন্ধ অবস্থায় অস্কুটস্বরে বলে উঠল,
–কেউ আমা কে ছোঁয়েছে,, আপ,,,,

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ২০

মেহেরের সম্পর্কে কথা শুনতে পেল না সমুদ্র। কিঞ্চিৎ থতমত স্তম্ভিত হয়ে পড়ল সে। অতঃপর মলিন কন্ঠে মেহেরের কানের কাছ মুখ নিয়ে ঠোঁট যুগল সংকুচিত করে আস্তে করে বলল,
–আরে বোকে অন্য কেউ তোমাকে ছুঁই নি। সেদিন আমি ছিলাম।

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ২২