তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৩২

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৩২
Lutful Mehijabin (লেখা)

মেহেরের হাতে আলতো স্পর্শ করে একটা ফাঁকা রুমের ভেতর টেনে নিয়ে এলো সমুদ্র। আকস্মিক সমুদ্রের উপস্থিতি বিশ্বাস করতে পারছেনা মেহের। তার হাত পা ব্যাপকভাবে কাঁপছে! অস্তিত্ব দেখা দিয়েছে তার অন্তরালে!
লহমায় সমুদ্র মেহেরকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে, দ্রুত দরজা বন্ধ করে দিলো। অতঃপর আসেপাশে পর্যবেক্ষণ না করে মেহেরের নিকটবর্তী ধাবিত হতে লাগল। সমুদ্রের মস্তিষ্ক এতোটাই কেয়ারলেস রূপ ধারণ করেছে যে ওয়াশরুমে কেউ অবস্থান করছে বিষয়টা বোধগম্য হলো না তার।

একপর্যায়ে সমুদ্র মেহেরের অত্যধিক কাছে চলে এলো। এমন পরিস্থিতিতে স্বীকার হতে হবে তা মেহের কখনো কল্পনাতেও আনে নি। ফলে অস্বাভাবিক লাগছে তার। প্রচন্ড ভয় হচ্ছে অকারণেই। সমুদ্র মেহেরের মুখশ্রীতে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। তার চোখে মুখে গম্ভীর ভাব স্পষ্ট! এক কথায় অনেকেটা রেগে আছে সমুদ্র। চোখ জোড়া ক্রোধের আগুনে জ্বলজ্বল করছে! অথচ নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে ব্যস্ত সে। মিনিট পাঁচেক মেহেরের ভীতি মুখশ্রীতে কঠোর দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করে রইল সমুদ্র। মেহের অতিরিক্ত হারে কাঁপছে! তৎক্ষণাৎ সমুদ্র নিজ মস্তিষ্ক শীতল করার প্রয়াসে স্নিগ্ধ, শীতল বায়ু টেনে নিলো। নিজেকে কিছুটা শান্ত করে, গম্ভীর গলায় নিম্ন স্বরে বলে উঠল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–আমাকে রাগাতে আপনার খুব ভালো লাগে! তাই তো ম্যাম?
সমুদ্রের কথাগুলো কর্ণপাত হতেই চমকে উঠল মেহের। সমুদ্রের মুখে ‘আপনি’ সম্বোধন মেহেরকে বিব্রত করে তুলেছে। অপ্রতিভ হয়ে পড়েছে সে। কন্ঠস্বরে রাগের উপস্থিত স্পষ্ট! দম বন্ধ হয়ে আসছে তার।

মেহের হৃদয় গহীনের অদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দাঁত দাঁত চেপে চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে। ঝড় উঠেছে তার অন্তরালে, এ যেন কালবৈশাখীর তুমুল ঝড়! কী আছে ওই কন্ঠস্বরে? যা মেহেরের হৃদয়ে অদ্ভুত এক নাম না জানা অনুভূতির উৎপত্তি ঘটিয়েছে! অস্তিত্ব হচ্ছে খুব। সমুদ্র মেহেরের অবস্থা খানিকটা আন্দাজ করতে পারল। অতঃপর কন্ঠস্বরে গম্ভীর ভাবটা বজায় রেখে বলে উঠল,
–ওপেন ইউয়ার আইছ, পুচকি।

মেহের চোখ জোড়া উন্মুক্ত করতে পারল না। ফির সমুদ্র তাকে চোখ খোলার জন্য আদেশ করল। অবশেষে ভয়ে চোখ জোড়া উন্মুক্ত করল সে। নত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শুভ্র স্বচ্ছ ফ্লোরে দিকে। সমুদ্র কটমট দৃষ্টি ফেলল মেহেরের মুখশ্রীতে। তপ্তশ্বাস ছেড়ে দাঁত দাঁত চেপে কর্কশ গলায় বলে উঠল,

–তোমাকে এভাবে সেজে গুঁজে ঘুরে বেড়ানোর অধিকার কে দিয়েছে? আমাকে রাগাতে তোমার ভালোলাগে বুঝি?
সমুদ্রের কথাগুলো মেহেরের কর্ণকুহরে পৌঁছনো মাত্রই বিচলিত হয়ে পড়ল মেহের। আশ্চর্য! সে তো সাজেনি তাহলে সমুদ্র এ কথা কেন বলল? তৎক্ষণাৎ মেহের ইতস্ততের সহিত মিনমিন কন্ঠে বলে উঠল,
–আমি তো সাজি নি।

মেহেরের কন্ঠস্বর হতে নির্গত কম্পনিত বাক্যটা শুনে ভ্রূ যুগল কুঁচকে ফেলল সমুদ্র। মুহূর্তেই গভীর দৃষ্টিতে মেহেরকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। মেহের মিথ্যা বলেছে, নাকি সত্যি! সমুদ্র কিছুই আন্দাজ করতে পারল না। সমুদ্রের কিছু বলে উঠার পূর্বে ওয়াশরুমে দরজা খোলার শব্দ পেয়ে স্বল্প সময়ের জন্য বিব্রত বোধ করল সে। বিরক্তিতে তার চোখ মুখ পাংশুটে বর্ণ ধারণ করল! আচ্ছা এই পৃথিবীর সবাই কী তাকে বিরক্ত করে শান্তি পায়।

পরক্ষণেই তার মনে হলো ওয়াশরুমে যদি অহনা বা তার টিমের কেউ হয়? ভেবেই সজোরে নিজের চুলগুলো টেনে ধরল সমুদ্র। অতঃপর রুম থেকে প্রস্থান করতে পা বাড়ল সে। কিন্তু তার যাওয়ার পূর্বে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো আদিবা।
মেহের এবং সমুদ্রের মুখশ্রীতে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আদিবা। মোটেও মেহেরকে এখানে প্রত্যাশা করে নি সে। সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখল, তাকে দেখে কোন প্রকার অস্বস্তি হচ্ছে না সমুদ্রের। অবশ্য আদিবা কে দেখে সমুদ্র একপ্রকার স্বস্তির নিশ্বাস ত্যাগ করল। সমুদ্রকে লক্ষ করে মুচকি হেসে উঠল আদিবা। বর্তমানে মেহেরের অবস্থান তার নিকট গুরুত্বহীন। মেহেরকে উপেক্ষা করে সমুদ্রের উদ্দেশ্য বলে উঠল,

–স্যার, কেমন আছেন? তিন দিন হলো স্কুলে আসেন না কেন?
আদিবা বলা প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে সমুদ্র গম্ভীর কন্ঠ বলে উঠল,
–ভালো। ব্যস্ত আছি তাই স্কুলে যাওয়া হয় নি। তুমি এখন রুম থেকে যেতে পারো।

সমুদ্রের আকস্মিক রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলাতে নিমিষেই আদিবার মনটা খারাপ হয়ে এলো। মুহূর্তেই তার ঠোঁটের কোণের ফুটে ওঠা মিষ্টি হাসিটা গ্রাস করে নিলো মন খারাপের কালো মেঘ। কেন জানি না চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হলো তার। এতো বড় অপমান! মন খারাপের সহিত বলে উঠল,
–কেন স্যার? এখানে তো মেহের ও আছে! তাহলে আমি থাকলে সমস্যা কোথায়?

আদিবার কথাগুলো শুনে ধবক করে উঠল মেহেরের অন্তরাল! আদম্য আগ্রহ জাগল সমুদ্র প্রত্যুত্তর জানার। নত দৃষ্টি উঠিয়ে দৃঢ় দৃষ্টিপাত ফেলল সমুদ্রের মুখশ্রীতে। মেহেরকে অবাক করে দিয়ে সমুদ্র বলে উঠল,
–তুমি যাও। মেহেরকে আমার একটু দরকার আছে।
সমুদ্রের বলা বাক্যগুলো শুনে আদিবা দ্রুত বলে উঠল,
–আমি করে দেই। কি কাজ আমাকে বলুন?

সমুদ্রের অগ্নি দৃষ্টিতে আদিবা দিকে তাকাল। বিরক্তি তার কপালে সুক্ষ্ম ভাজের আবির্ভাব ঘটল। অতঃপর কন্ঠে শীতলতা বজায় রেখে বলল,
–তুমি পারবে না। মেহের ছাড়া পৃথিবীতে বুকে কারো সাধ্য নেই আমার কাজটা সম্পূর্ন করার। তাই তুমি যাও। আর হ্যাঁ, এখন জিজ্ঞেস করবে না কী কাজ। আমি তোমাকে বলতে বাধ্য নই। সো গেট আউট।

সমুদ্রের তিক্ত ভাষা শুনে বিষণ্ণ হয়ে উঠল আদিবা। সন্দেহ দানা বাঁধল তার হৃদয়মনে। কী এমন কাজ সমুদ্র মেহেরকে দিয়ে করাবে! অত্যধিক অপমানিত বোধ করল সে। মেহেরের সামনে সমুদ্রের অবহেলিত ব্যবহার তাকে লজ্জয় ফেলেছে। তৎক্ষণাৎ আদিবা রুম থেকে অনিচ্ছুক এবং বাধ্য হয়ে বেরিয়ে গেলো। কিন্তু মনে মনে তাদের উপর নজর রাখার পরিকল্পনা করল। যে করেই হোক তাকে সমুদ্র আর মেহেরের সম্পর্কে জানতে হবে। একরাশ সন্দেহের উদ্ভাবন ঘটেছে তার মনে!

আদিবা প্রস্থান করার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র দ্রুত গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। অতঃপর ফির এগিয়ে এলো মেহেরের নিকটবর্তী। মেহের তো ভয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে। কী কাজ সমুদ্র তাকে করতে দিবে? ভেবেই ভয়ে তার হাত পা ব্যাপকভাবে কাঁপছে। অকারণেই অতিরিক্ত অস্তিত্ব হচ্ছে তার। সে জানে, আর যাই হোক সমুদ্র তাকে মারবে না। কিন্তু বকা দিতে পারে! লোকটা সত্যিই অত্যধিক নিষ্ঠুর।
মেহেরকে দ্বিগুণ অস্বস্তি গ্রস্ত করার লক্ষ্যে সমুদ্র মুহূর্তেই বলে উঠল,

–দুপুরে কী কিছু খেয়েছেন?
মেহেরের সঙ্গে সঙ্গে দ্বিধা গ্রস্ত হয়ে উঠল। হঠাৎ তার অন্তরে লজ্জর আবির্ভাব ঘটেল। আবার খানিকটা ভয়ও হলো ভবিষ্যতে তার সঙ্গে কী হতে চলেছে ভেবে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠ অস্কুটস্বরে বলল,
–খাই নি। আসলে,,,
মেহেরকে কথা বলতে না দিয়েই সমুদ্র ভর্ৎসনা স্বরে বলে উঠল,

–তা খাবে কেন? তুমি তো ডায়েট করছ!
মেহের স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সমুদ্র ফির মেহেরকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–ওয়েট, আজ তোমার ডায়েটের একদিন কী আমার একদিন।
বলেই সমুদ্র পকেট থেকে মোবাইল বের করে আকাশকে কল করল।
–শোন, দু প্লেট খাবার নিয়ে এক্ষুনি দক্ষিণ দিকের সিরির পাশের রুমটা আই। জাস্ট পাঁচ মিনিটের মধ্যে তোকে দেখতে চায়।

প্রায় মিনিট পাঁচেকের মধ্য দুটো প্লেট খাবার নিয়ে উপস্থিত হলো আকাশ। দরজা বাইরে দাঁড়িয়ে ক্রমাগত নক করতে লাগল। আকাশে উপস্থিতি আন্দাজ করতে পেরেই দ্রুত গতিতে দরজা খুলে দিলো সমুদ্র। মুহূর্তেই তার কানে ভেসে উঠল তার আন্ডারে কর্মরত অফিসার রিয়ার কন্ঠস্বর,
–স্যার, এই নিন খাবার।

রিয়া দ্রুত সমুদ্রকে স্যালুট জানিয়ে রুমের ভেতর প্রবেশ করে। টেবিলের উপর প্লেট রেখে স্টাচু ন্যায় সমুদ্রের সামনে দাঁড়ায়। অবশেষে কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করে মেহেরকে। অনেকটা সন্দেহ হয় রিয়ার হৃদয় গহীনে। সমুদ্রের কী হয় মেয়েটি? পরক্ষণেই ভাবল, হয়তো সমুদ্রের ছোট বোন হবে হয়তো।

রিয়ার পরিস্থিতি দেখে মেহের স্তম্ভিত। একটু আগে যেই মেয়েকে দেখে তার ভয় হচ্ছিল সেই মেয়ে এখন ভয়ে চুপসে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মেহেরের ভাবতেই অবাক লাগছে, শক্তিশালী মেয়েটাও বুঝি ভয় পাই!
তৎক্ষণাৎ রুমের মধ্যে উপস্থিত হলো আকাশ। বাইরে থেকে তড়িঘড়ি এসেই সমুদ্রের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৩১

–ভাবির জন্য এনেছিস বুঝি? ভাবি খাইনি?
আকাশের বলা কথাগুলো শুনে রিয়ার চোখ জোড়া আপনা আপনি বৃহত্তর আকার ধারণ করে উঠল।

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৩৩