তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৪

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৪
Lutful Mehijabin (লেখা)

–ছাড়ুন,,,
ভীতিগ্রস্ত জারা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। তার হৃদয় গহীনে অস্থিরতা বিরাজমান। প্রতিনিয়ত তার কর্ণধারে প্রতিধ্বনি হচ্ছে ইয়াদের দাঁতে দাঁত চেপে বলা ভয়ঙ্কর বাক্য গুলো।

বেলকণি থেকে এসে জারার আঁচল টেনে ধরেছে ইয়াদ। তার চোখে মুখে রাগের আভাস স্পষ্ট। সে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রয়েছে জারার মুখশ্রীতে। জারা চোখ খিঁচে বন্ধ করে রয়েছে। জারার অবস্থা দেখে ইয়াদের মেজাজ খারাপের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অতঃপর ইয়াদ রাগ মিশ্রিত কন্ঠে ধমকের শুরে বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–হুয়াট আর ইউ থিংকিন, ইডিয়েট!
ইয়াদের বলা ছোট তিক্ত বাক্যটা কর্নপাত হতেই জারা হাল্কা কেঁপে উঠলো। পুনরায় সে অস্কুটস্বরে বলল,
–ছাড়ুন,,
ইয়াদ জারার আঁচল ছেড়ে দিয়ে বিরক্ত মাখা কন্ঠে বলল,
–এই মেয়ে, লুক ইট মি।
জারা তাকালো না। সে পূর্বের ন্যায় চোখ খিঁচে বন্ধ করে রইলো।

–পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে যদি চোখ না খুলো! তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।
ইয়াদের দাঁতে দাঁত চাপা শক্ত কন্ঠস্বর শুনে তৎক্ষণাৎ জারা ভয়ে নয়ন মেলে ইয়াদের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।
ইয়াদ জারার চশমার সরু কাঁচের আবরণে ঢেকে থাকা পাঁপড়ি কাঁপা চোখ যুগলের দিকে তার ভয়ঙ্কর চাহনি দিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলো,

–মাকে কী বলেছ তুমি?
তৎক্ষণাৎ জারা ইয়াদের চোখ যুগল হতে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। নতজানু হয়ে চুপ করে রইলো।
জারার নিস্তব্ধতা যেন ইয়াদকে অতিরিক্ত ক্ষুণ্ণ করে তুললো। সে ভারী নিশ্বাস ফেলতে লাগলো। এক কথাই রাগে ফুসতে ফুসতে বলল,

–তুমি মাকে কেন বলেছ যে আমার সাথে চট্টগ্রামে যাবে না? আর ইউ সিউর তুমি আমার সাথে যাবে না?
জারা মূহুর্তেই চটে গিয়ে কম্পনিত কন্ঠে বলে উঠলো,
–হ্যাঁ, আমি যাব না আপনার সঙ্গে। আপনি একা যাবেন।
জারার প্রত্যুত্তরে ইয়াদ ঠান্ডা গলায় বলল,

–কী বললে আবার বলো?
জারা নতজানু অবস্থায় চিৎকার করে বলে উঠলো,
–হ্যাঁ আমি যাব না আপনার সাথে। আপনি গন্ডা, খারাপ মানুষ।
জারার সম্পন্ন কথাগুলো শুনে ইয়াদের শরীর রাগে গিরগির করে উঠলো। অবশেষে সে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলো। পকেট থেকে রিভালবারটা বের করে আকস্মিক জারার কপালে ঠেকালো। হুমকি শুরে বলে উঠলো,

–অনেক সাহস না তোমার? কী বললে আমি গুন্ডা? খারাপ মানুষ তাই?
আবার রিভলবার চোখে পড়তেই জারা ভয়ে অস্থির হয়ে পড়লো। মুখ দিয়ে অস্কুটস্বরে আওয়াজ তুললো সে! অতিরিক্ত ভয়ে গলা কাটা মুরগির ন্যায় ছটফট করতে লাগলো। এতোক্ষণ সে শুধু মাত্র সন্দেহ করতো যে ইয়াদ খারাপ কাজের সাথে জড়িত। কিন্তু বর্তমানে সে মনে প্রানে বিশ্বাস করে, ইয়াদ একজন বাজে লোক। ভয়ে সে চোখ যুগল বন্ধ করে নিলো। ঠোঁট যুগল কামড়ে ধরে ভয় কমানোর চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে। মূহুর্তেই তার কর্ণধারে ভেসে উঠলো ইয়াদের শক্ত কন্ঠস্বর,

–হ্যাঁ আমি খারাপ মানুষ। এখানো তো তুমি আমার আসল রুপটা দেখনি। নেক্সট টাইম যদি আমার কথার অবাধ্য হও তাহলে আমার আসল রুপ দেখবে। মাইন্ড ইট?
কথাগুলো বলেই ইয়াদ রিভলবার পিছনে গুঁজতে গুঁজতে গাড়ি বের করতে চলে গেলো। খানিক বাদে তারা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।

গাড়িতে স্তব্ধ হয়ে বসে আছি। ঢাকা নামক ব্যস্ত শহরের উদ্দেশ্যে শো শো করে ছুটে চলছে গাড়ি। এর আগেও ঢাকা শহরে অনেকবার এসেছি। কিন্তু কখনো এমন অস্বাভাবিক অনুভূতি হয়নি। সমুদ্র নামক লোকটা গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে তিহ্ন মেজাজ নিয়ে ড্রাইভ করছেন। তার খারাপ মেজাজের কারণ কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি। দুই ভাইয়ের সম্পর্কে যে খুব একটা সুমধুর নয় তা আমার ছোট্ট মস্তিষ্ক আভাস পেয়েছে।

আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে জিজু তাকে কিসের যেন কাগজপত্র দিয়ে গেছেন। জিজুও অনেকটা গম্ভীর টাইপের। ওই বাড়ির সবগুলো মানুষ অদ্ভুত। শুধু মাত্র শাশুড়ি আম্মু ছাড়া সবাই রহস্য ময়। আমি ভাবছি বিয়ের দিন বাড়ি ভর্তি মানুষ থাকলেও পরের দিন পুরো বাড়ি ফাঁকা ছিল কেন? সবকিছুই আমার নিকট গভীর রহস্যময় লাগছে। এগুলো ভাবছি আর চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছি। অতিরিক্ত কান্নার ফলে আমর মাথায় প্রচন্ড ব্যথা করছে। কিন্তু আমার সামনে থাকা লোকটার কোন লক্ষ্য নেই আমার দিকে। সে ভ্রু যুগল কুঁচকে মনোযোগ সহকারে ড্রাইভিং করতে ব্যস্ত।

ছেড়া ময়লা বিবর্ণ লাল কাপড় পরিহিত, ভীতিগ্রস্ত চেহারা নিয়ে সকিনা বেগম দৌড়াচ্ছেন। তার হৃদয় গহীনে অসীম ভয় বিদ্যমান। তার পিছনে ছুটে আসছে একটা কালো ম্যাক্রো। এ যেন ছুঁয়াছঁয়ি খেলায় মেতে উঠেছে গাড়ির ভেতরে অবস্থিত মানুষগুলো। তারা সকিনা বেগমকে ধরার প্রায়েস চালাচ্ছে। অর্ধয়যস্ক সকিনা ভয় নিয়ে প্রাণপণে দৌড়াচ্ছেন।

দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত সে। তার চোখ মুখ জুড়ে অস্থিরতা বিরাজমান। অবশেষে হাটু ব্যথার সঙ্গে যুদ্ধ করে ব্যর্থ তিনি। তবুও সে হারবার প্রার্থী নন। কিন্তু প্রানের মায়া যে প্রত্যেকটা প্রানীর মতো তার মাঝেও বিদ্যমান। অবশেষে আর পেরে উঠলো না সে। রাস্তার মাঝখানে ইটের টুকরোর সাথে পা বেজে ধপাস করে পড়ে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে মুখ দিয়ে অস্কুটস্বরে আর্তনাদ করে উঠলেন। নেএপল্লব হতে দু ফোঁটা দুর্বোধ্য রহস্য টপটপ করে গড়িয়ে পড়লো রাস্তায়। সে উঠে বসার চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যর্থ হলেন।

সকিনা বেগমের পা থেমে যাওয়ার সাথে সাথে গাড়িটাও থেমে গেল। গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো চারজন কালো পোশাক পড়া যুবগ। প্রত্যেকের মুখ ম্যাক্স দিয়ে আটকানো। তাদের মধ্যে লম্বা একটা ছেলে এগিয়ে আসতে লাগলো সকিনা বেগমের নিকট।

শত চেষ্টা করেও উঠে দাঁড়াতে পারলেন না সকিনা বেগম। সজল চোখে মাথা ঘুরিয়ে তাকালেন ম্যাক্স পড়া লম্বা ছেলেটির দিকে। ভয়ে তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। তার নয়নে ছেলেটিকে মানুষ নয় দানব মনে হচ্ছে।
ছেলেটি সকিনা বেগমের কাছে এসে দাঁড়াল। বিকট শব্দে হেসে দিয়ে বলে উঠলো,

–খালা আমারা তোমাকে খুঁজি আর তুমি পালাতে থাকো! দেখ খালা আমি সজা ভাবে কথা বলতে ভালোবাসি। কিন্তু তুমি তো আমাদের খারাপ রুপটা দেখতে চাও। কী করতে যেন বলেছিলাম?
সকিনা বেগম ছেলেটার কথার জবাবে বলল,

–আমি করবার পারুম না। আপনাগো হুকুম শুনতাম না। আমি নেমুক হারাম না, যে পাতে খাইছি তার পাতেই লাথি মারতে পারতাম না।
ছেলেটা আবার নিস্তব্ধ পরিবেশ কাঁপিয়ে হেসে উঠলো। ইশ! খুবই বিদঘুটে হাসি। যে হাসির ঝংকার শুনে সকিনা বেগমের শরীরের লোমকূপ শিউরে উঠলো

ছেলেটা হাসি থামিয়ে বলল,
–শুনলাম খালা তোমার নাকি একটা মাইয়া আছে। কোন ক্লাসে পড়ে গো?
বাক্যটা শুনে সকিনা বেগমের বুক ধক করে উঠলো। এ যেন শরীরের ক্ষত চেয়ে মনের ভয়াবহ ক্ষতর আভাস। তার সবচেয়ে দুর্বল জায়গা। অতঃপর সকিনা বেগমের মুখশ্রী নিমিষেই আকাশের স্বল্পস্থায়ী ঘন কালো মেঘের ন্যায় হয়ে উঠলো।

ঘন্টা দুয়েক পরে আমরা ঢাকা নামক ব্যস্ত শহরে প্রবেশ করলাম। গাড়ি এতক্ষণ জ্যাম আটকে ছিল। জ্যামের ফলে প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে। চলন্ত গাড়ি থেমে গেলে আমার বমি পায়। কিন্তু গাড়ি চলতে থাকলে একটুও বমি পায় না। আজকে ও নিত্যদিনের মতো গাড়ি থামার ফলে আজও আমার বমি পাচ্ছে।

ক্রমশ মাথা ভারী হয়ে আসছে। বর্তমানে গাড়ি চলছে কিন্তু তাও আমার বমি পাচ্ছে। হঠাৎ আবার গাড়ি থেমে গেল। আসেপাশে পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম ফাঁকা জায়গায় গাড়ি থেমেছে। গাড়ির জানালার কাঁচ ভেদ করে বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলাম চারপাশে উঁচু উঁচু দালালে ভরপুর। গাড়ি থামিয়ে লোকটা আড় চোখে আমার দিকে তাকালান। ড্রয়ার থেকে দুটো ম্যাক্স বের করলেন। একটা নিজে পড়ে ফেললেন। অন্যটা পিছনে ঘুরে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে শিতল কন্ঠে বললেন,

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৩

–এই নেও, এটা পড়ো।
আমি ম্যাক্সটার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকালাম। আমার কাছে ম্যাক্সের বিষয়টা অদ্ভুত লাগছে। অনেকটা রহস্যময় মনে হচ্ছে।

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৫