তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৬

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৬
Lutful Mehijabin (লেখা)

অহনা গভীর দৃষ্টিপাত দিয়ে মেহেরকে পর্যবেক্ষণ করছে। মেহের অতিশয় অপ্রতিভ হয়ে পড়েছে। মেহের শহরের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও তার মধ্য লজ্জা, দ্বিধা টুইটুম্বুর। অহনার এমন আজব কথাবার্তা শুনে তার মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করে রয়েছে। সে যেন ব্যাপক বিচলিত!

অহনার উদ্ভট কথা শুনে সমুদ্রের কপাল কুঁচকে গিয়েছে। তার ধারণা ছিল, অনহা বাসায় আসলেই তার মাথা শেষ করে ফেলবে। মেয়েটা যখন শুনছে সমুদ্র বিয়ে করছে তখন থেকেই মেয়েটা সমুদ্রের মস্তিষ্কে ঢুকে সরু পোকার ন্যায় ভনভন করছে। ইনফ্যাক্ট সমুদ্রের ফোনে কল দিতে দিতে হ্যাং করে ফেলেছে। বর্তমানে সমুদ্র নিজের মাথার চুলগুলো টেনে, বিরক্তি নামক অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করার প্রায়েস চালাচ্ছে। আর ভাবছে বিয়ের কথা অহনাকে না বললেই বোধহয় ভালো হতো। এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতির স্বীকার তো হতে হতো না!
অহনা মেহেরের চিবুকে হাতের স্পর্শ করে বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–নাম কী তোমার?
আমি অস্তিত্বের সহিত অস্কুটস্বরে বলে উঠলাম,
–মেহের।
অহনা মেহেরের হাত টেনে সোফায় নিয়ে তার পাশে বসাল। হাত যুগল নিজের দুহাতের মাঝে আবদ্ধ করে বলল,
–হাই, আমি অহনা। তোমার স্বামী অর্থাৎ সমুদ্রের বেস্ট ফ্রেন্ড। আমারা একই ভার্সিটি থেকে অনার্স কমপ্লিট করেছি। জান সমুদ্র না,,,

অহনা সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে দিল না সমুদ্র। বিরক্তির সহিত বলে উঠলো,
–সেট আপ অহনা। কী দরকারে এসেছিস? আমি কী তোকে আসতে বলেছি?
সমুদ্রের কথা শুনে অহনা চোখ যুগল ছোট ছোট আকৃতি ধারণ করে বলে উঠলো,
-দেখ সমুদ্র তোর বাসায় আসার কোন সখ নেই আমার। আমি অবশ্যই দরকারে এসেছি। তোর সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল।
অহনার কথার প্রত্যুত্তরে সমুদ্র ভ্রূ কুঁচকে বলল,

–এতো ঢং না করে যা বলার তাড়াতাড়ি বলে এখান থেকে বিদায় হ।
অহনা মেহেরের হাত ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। একটু আওয়াজ করে বলে উঠলো,
–আমি আর নিরব অস্ট্রেলিয়াতে যাচ্ছি। এক মাসের সফরে। তাই তোর বউ কে দেখতে এসেছি। দেখ সমুদ্র, নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে শিখ। একদিন তোর এই রাগের জন্য পস্তাতে হবে।
এবার সমুদ্র কিছুটা হলেও চুপসে গেল। একপলক মেহেরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, অহনাকে বলল,

–আমার রুমে আয়।
অনাহা বুঝতে পারছে যে, ইতিমধ্যে মেহেরকে উপেক্ষা করলো সমুদ্র। জল ভরা নয়ন, পাণ্ডর মুখশ্রী নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে মেহের। মেয়েটা ছোট ঠিক কিন্তু বোকা নয়। সমুদ্র অবহেলা তাকে ব্যথিত করে তুলেছে। কেন সমুদ্র বুদ্ধিমান হয়েও কেন বুঝে না, মেহেরের বুকে যে তার প্রতি অভিমান নামক বিষাদ জমছে।
অহনা মেহেরের দিকে সান্তনা দৃষ্টিপাত দিয়ে বলল,

–মেহের তুমি কি রান্না করতে পারো?
অহনা আপুর কথায় প্রত্যুত্তরে আমি মুচকে হেসে বলল,
-জী আপু।মোটামুটি পারি।
মেহেরকে ব্যস্ত রাখার উদ্দেশ্যে অহনা তাকে বলল,
–যাও তো আমাদের দুজনের জন্য দু কাপ কফি করে নিয়ে এসো। প্লিজ, আমার তোমার হাতের রান্না খেতে খুব ইচ্ছে করছে।

আমি আপুর কথা শুনে মুচকি হাসি দিয়ে রান্না ঘরে চলে এলাম আপুদের জন্য কপি বানাতে।
মেহেরকে কিচেনে পাঠিয়ে অহনা সমুদ্র রুমে চলে এলো। সোফায় উপর বসে সমুদ্রের দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
–তুই এমন বাজে ব্যবহার করিস কেন মেয়েটার সাথে?
সমুদ্র ফোনের উপর দৃষ্টি রেখে সংক্ষিপ্ত জবাব দিল,
–ওই মেয়ে আমার যোগ্য নয়।
–কেন?

অহনার শক্ত কন্ঠস্বর শুনে সমুদ্রে হাল্কা নড়েচড়ে বসলো। খানিকক্ষণ নিরবতা পালন করে ক্রোধের সহিত বলে উঠলো,
-ওই মেয়ের বয়স ষোলো হবে কী সন্দেহ! আর আমার আটাশ। বয়সের পার্থক্য দেখেছিস! তাছাড়া,,,
–তাছাড়া কী?
বলেই সমুদ্র পরপর দুটো তপ্ত নিশ্বাস ফেলল। নিমেষে তার মুখটা ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করলো। ফোনটা হাতে থেকে রেখে বলল,

–আমার অনিশ্চিত জীবনের সঙ্গে কোন বাচ্চা মেয়ের জীবন জড়াতে চাই না।
অহনা বিরক্ত হলো সমুদ্রের প্রত্যুত্তরে। বিরক্তমাখা মুখশ্রী সহিত বলে উঠলো,
–অনিশ্চিত জীবন নাকি ইগো কোনটা?

সমুদ্র এবার তেড়ে উঠলো অহনার কথা শুনে। তার মুখশ্রীতে রাগ স্পষ্ট! ঠোঁট যুগল প্রসারিত করে ভর্ৎসনা করে বলল,
–বাজে কথা বাদ দে। যা বলতে এসেছিস জলদি বলে ফেল।
তৎক্ষণাৎ অহনা নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে, স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
–সকিনা খালা তার মেয়েকে নিয়ে তাদের দেশের বাড়িতে চলে গেছেন। যাওয়ার আগে আমাকে বলে গেছে, তোকে যেন কথাটা বলে দেই। সে আর কাজ করতে আসবে না।

সকিনা বেগমের কথা শুনে সমুদ্রের রাগ পানি হয়ে গেল। মনে পড়ে গেল সকিনা বেগমের অসহায়, অস্থির চাহনি। দীর্ঘ এক বছর যাবত সকিনা বেগম সমুদ্রের বাসার গৃহকর্মী হিসেবে নিযুক্ত। এই এক বছরে তার সঙ্গে সকিনা বেগমের গভীর সম্পর্ক। কিছুদিন ধরে সমুদ্র খেয়াল করছিল কাজে এলে, সকিনা বেগম গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। দুশ্চিন্তা গ্রস্ত ছেয়ে থাকত তার মুখশ্রীতে। কেন তা সমুদ্রের নিকট অজানা। কী হলো সকিনা বেগমের যে আকস্মিক শহর ত্যাগ করলেন। কি এমন হলো যে সমুদ্রের সঙ্গে দেখা না করেই চলে গেলেন?

সমুদ্র মুখশ্রী মূহুর্তেই চিন্তাগ্রস্ত হয়ে উঠেছে। সমুদ্র চিন্তিত স্বরে অহনাকে জিজ্ঞেস করল,
–খালা হঠাৎ কেন চলে গিয়েছে? তোকে কি কিছু বলছে?
–না। আমাকে শুধু বলেছি সে আর কোনদিনই এই শহরের পা রাখবে না।
সমুদ্র আর কোন কথা বলল না। এর মধ্য মেহের কফি নিয়ে হাজির হলো। মেহেরকে দেখে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। মেহেরের হাত থেকে কফি নিয়ে মেহেরকে তার পাশে বসিয়ে কফি খেতে আরম্ভ করে দিল। এক চুমুক মুখে দিয়ে বলে উঠলো,

–ওয়াও, অনেক ভালো হয়েছে মেহের। তোমার হাতে জাদু আছে। সমুদ্র খেয়ে দেখ কেমন হয়েছে?
সমুদ্র স্তব্ধ থেকে কিছু বলল না। গরম কফির ধোঁয়া বাষ্পে চোখের পলক রেখে চিন্তা গ্রস্ত হয়ে পড়েল।
কফি খেতে খেতে অহনা আপু আমার সঙ্গে কথা বলতে লাগলে। এমন সময় তার মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। আপু আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মিষ্টি হাসি দিয়ে ফোন ধরলেন। মিনিট দুই এক ফোনে কথা বললেন। অতঃপর সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালে। আমার নিকটবর্তী এসে জড়িয়ে ধরলেন। আমার গাল যুগল তার দুহাতের আঙুলে আবদ্ধ করে, ললাটে ভালোবাসার পরশ এঁকে বলে উঠলেন,

–আমাকে এখন বাসায় যেতে হবে মেহের। আমার ছেলেটার ঘুম ভেঙে গিয়েছে। আমাকে না দেখতে পেয়ে কান্নাকাটি আরম্ভ করে দিয়েছে। আমি এখন আসি মেহের।অন্য যেদিন আসব সেদিন তোমাকে আমার সঙ্গে নিয়ে যাবো।
অহনা আপুর কথা আমার কর্ণপাত হতেই আমি থতমত হয়ে পড়লাম। স্তম্ভিত নয়নে আপুর দিকে তাকিয়ে রইলাম। এত সুন্দর মেয়ের আবার বেবি আছে! আপুকে দেখলে সত্যি তার বয়স বোঝা অসম্ভব। আমার অবুঝ মন ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারছে না। আমি স্তব্ধ!

অহনা ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়াতে সমুদ্র গম্ভীর স্বরে তাকে ডেকে উঠলো,
–অহনা, কালকে সকালে বাসায় আসবি।
অহনা ঘর থেকে বের হতে হতে বলল,
–ঠিক আছে। কিন্তু কেন?

অহনার কথার প্রত্যুত্তরে সমুদ্র অবহেলিত গলায় জবাব দিল,
–কালকে তুই মেহেরকে স্কুলে ভর্তি করাতে যাবি।
অহনা এক গাল হেসে দিলো। তার হাসির ঝংকারে ঘর হাল্কা কেঁপে উঠলো।
–তোর স্কুলে?
সমুদ্র বিরক্তিত হয়ে জবাব দিল,
–হ্যাঁ আমার স্কুলে।

বিছানার উপর গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে বসে আছে জারা। খানিক আগে তারা বাসায় পা রেখেছে। ঘন্টা পাঁচেক দীর্ঘ পথ গাড়িতে অতিক্রম করে ক্লান্ততা ভর করেছে তার শরীরে। লং জার্নি জারা অভ্যস্ত নয়, তাই বার দুই গাড়িতে বমি করেছে সে। শরীরের কষ্টের চেয়েও মনের যন্ত্রণা তাকে ঘিরে রেখেছে। বারংবার জারার নেএ পল্লবে ভেসে উঠছে, রিভালবারের দৃশ্য! যতবার ভয়ঙ্কর স্মৃতি তার অন্তরালে হানা দিচ্ছে ঠিক ততোবারই তার শীরর শিউরে উঠছে।

টপটপ করে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ছে জারার গাল বেয়ে। এর আগে কতবার স্বপ্ন দেখছে সে চট্টগ্রামে যাবে, ডুবে যাবে চট্টগ্রামের প্রকৃতির ইন্দ্রজালে! কিন্তু আজ চট্টগ্রামে অবস্থান করেও তার মন গহীন তৃপ্তি পাচ্ছে না। সে পারছে না চট্টগ্রামের দৃশ্য মুগ্ধ হতে। মুগ্ধতা তার কাছে ধরা দিতে লজ্জিত! ব্যাপক ভয় নামক অনুভূতি তাকে গ্রাস করে নিয়েছে। এমনকি জারা বলতে পারবে না যে ইয়াদের এপার্টমেন্টের কয়টা রুম।

তাৎক্ষণিক জারার ঘরের দরজা হাল্কা শব্দ করে উঠলো। জারা বুঝতে পারল ইয়াদ চলে এসেছে। ইয়াদের কথা মস্তিষ্কে ভেসে উঠতেই সে সামনে দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। মিনিট পাঁচেক হলো ইয়াদ প্লেটে করে খাবার দিয়ে গিয়েছে তার সামনে। কিন্তু জারা অভিমান করে খাবার মুখে তুলে নি।

ইয়াদ ফ্রেশ হয়ে জারাকে দেখতে রুমে এসেছে। জারার সামনে খাবারের প্লেট পূর্বের ন্যায় দেখে ইয়াদের কপালে সুক্ষ্ম ভাজ পড়লো। জারার দিকে শক্ত দৃষ্টিপাত দিয়ে বলল,
–জারা এখনো খাও নি কেন?
জারা স্তব্ধ। কোন কথার জবাব দিল না।
–আমি কী তোমাকে কিছু আক্স করেছি?
জারা অস্কুটস্বরে প্রত্যুত্তর করল,
–আমি খাব না।

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৫

ইয়াদ জারার বলা কথার গুরুত্ব দিল না। পিছন থেকে রিভালবার বের করে টেবিলের উপর রাখল। প্লেটটা হাতে নিয়ে খাবার মাখাতে শুরু করল। জারার দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–খাবে না? তাই তো!
পুনরায় বিভালবারের দিকে দৃষ্টি পড়তে জারা কাঁপতে আরম্ভ করলো। সে হা করে খাবার মুখে দেওয়া পূর্বে ঢলে পড়ল ইয়াদের,,,

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৭